আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চুম্বক মানবেরা !

লোহার সঙ্গে তাদের গভীর মিতালি। শরীরের সামনে লোহাজাতীয় কোনো কিছু ধরলেই হলো, সেটা শরীরের সঙ্গে আটকে যায়। তারা চুম্বকমানব! বাস করে বিশ্বের নানা প্রান্তে। চলুন, অন্য রকম এসব মানুষের সঙ্গে পরিচিত হই। নিজ কক্ষে বসে গবেষণা করছিলেন অধ্যাপক রাসেল কাইব্রন।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ তাঁর কর্মস্থল। হঠাৎ চৌম্বকবিদ্যার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকের কাছে খবর এল, রুমানিয়ার বুদাপেস্ট শহরে এরিয়েল নামের এক যুবক আছে, যে লোহার বিভিন্ন জিনিস শরীরের সঙ্গে আটকে রাখতে পারে। প্রথমে ব্যাপারটাকে তেমন গুরুত্ব দেননি রাসেল। তবে যখন জানলেন, বুকের ছাতিতে ৫৭ কেজি ওজনের টেলিভিশন পর্যন্ত আটকে রাখতে পারেন ৪০ বছর বয়সী ওই লোক, তখন নড়েচড়ে বসলেন। এ ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে তা অবশ্যই বিশ্বরেকর্ড।

লোকটার সঙ্গে দেখা করতে ছুটলেন তিনি, নিজের চোখে দেখবেন বলে! ঠিক কিভাবে এই অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হলেন, জানেন না এরিয়েল। তবে বুকে-পিঠে ইস্ত্রি, চায়ের কেতলি, ব্যায়ামের যন্ত্রপাতি নিয়ে ছুটতে পারেন এই বিস্ময়মানব। নিজের এই অসম্ভব ক্ষমতা নিয়ে তেমন কোনো বাহাদুরি নেই তাঁর। তবে মানুষ যেমন প্রেমে ছ্যাঁকা খেলে কবিতা লিখতে শুরু করে, তেমনি তাঁর এই গুণের পেছনেও প্রেমের অদৃশ্য অবদান রয়েছে। তিন বছরের প্রেমের সমাপ্তি টানার পর বিষণ্নতা গ্রাস করেছিল তাঁকেও।

এটাই শাপে বর হয়ে গেল। একদিন বাসায় কাজ করতে করতে বুকের কাছে নিয়ে এলেন ঠাণ্ডা লোহার চায়ের কেতলি। মনে মনে বুনছেন প্রেমিকার সঙ্গে নানা সুখস্মৃতি। কেমন করে যেন কেতলি বুকের সঙ্গে লেগে গেল। ভয় পেয়েছিলেন প্রথমটায়।

পরে আস্তে আস্তে টের পেলেন, তিনি অন্যদের চেয়ে আলাদা। অসাধারণ এই ক্ষমতার প্রতি ভালোবাসা শুরু হয় তাঁরও। এখন শরীর দিয়ে লোহাজাতীয় পদার্থ টেনে নেওয়ার বিশ্বরেকর্ডটি এরিয়েল রাইলেনুর দখলে। ইভান স্টোলজেকভিক বয়সে এরিয়েলের ৩৪ বছরের ছোট। তারও রয়েছে অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটানোর সামর্থ্য।

অন্যদের মতো ভিডিও গেমস বা ফুটবলে লাথি মেরে বিনোদন খোঁজে না সে। ক্রোয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর কোপ্রিভিনিকায় নিজ বাড়ির উঠানে প্রতিদিন সকালে দাদুর সঙ্গে তার প্রথম কাজ হলো লোহা এবং চৌম্বকজাতীয় বস্তু (যেমন_চা চামচ, মোবাইল ফোনসেট, চায়ের কেতলি) নিয়ে খেলায় মেতে ওঠা। দাদু নাতির শরীরের দিকে এগুলো একে একে ছুড়ে দেন, আর নাতি অবিশ্বাস্য দক্ষতায় হাসতে হাসতে তা শরীরে আটকে নেয়। ছোট্ট এই ছেলেটি শরীরে সবর্ে্বাচ ২৫ পাউন্ড ওজনের বস্তুও আটকে রাখতে পারে। এ ছাড়া শরীরের কোথাও ব্যথা পেলে ইভান হাত দেওয়া মাত্রই তা সেরে যায়! মাত্র ১১ বছর বয়সেই ব্রাজিলের এক স্কুলছাত্র খ্যাতি পেয়েছে 'ম্যাগনেটিক বয়'।

গ্লোব টিভির এক প্রতিবেদনের কল্যাণে সারা বিশ্বের মানুষ জানতে পারে, এ দেশে এমন একটি ছেলে আছে, যে ছুরি, কাঁচি কিংবা কয়েন_লোহাজাতীয় যেকোনো জিনিস নিজ শরীরে আটকে রাখতে পারে। এ তথ্য প্রচারিত হওয়ার পর রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় পাওলো ডেভিড অ্যামারিম। জুনিয়র স্কুলের ছাত্র পাওলোর ব্যক্তিগত চিকিৎসক শহরের নামকরা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রোসাডো তাঁর ৩০ বছরের পেশাগত জীবনে এমনটি আর কখনো দেখেননি। তবে তিনি নিশ্চিত করেন, পাওলো শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। উত্তর লন্ডনের ব্রেন্ডা অ্যালিসন নামের ৫০ বছর বয়সী এক নারী তাঁর শরীরে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত কয়েন, সেফটি পিন_লোহাজাতীয় এমন সব বস্তু ধরে রাখতে সক্ষম।

এগুলো তাঁর শরীরের সঙ্গে এমনভাবে আটকে থাকে যে তিনি লাফালাফি বা নাচানাচি করলেও খসে পড়ে না। নিজের এই অদ্ভুত ক্ষমতার কথা অ্যালিসন প্রথম জানতে পারেন স্কুলে পড়ার সময়। ধীরে ধীরে তিনি খেয়াল করলেন, টেলিভিশনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে সেটার সাংকেতিক যোগাযোগ বিঘি্নত হয়। অনেক সময় লাইটের নিচে দাঁড়ালে তা আপনা থেকেই জ্বলে-নেভে। এখন অ্যালিসনের গাড়ির চাবি কিংবা সেফটি পিন খোঁজার জন্য হাতড়ে বেড়াতে হয় না।

হাতটা এদিক-সেদিক করলে আপনা থেকেই সেগুলো উঠে আসে হাতের আঙুলে। তবে তাঁকেও বিব্রত হতে হয়। শপিং মলের মেটাল ডিটেক্টরের সামনে যেতেই ওগুলো ক্যাঁ ক্যাঁ করে বাজতে শুরু করে বা ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়ালে বাতিগুলো আপনা থেকেই জ্বলে আর নেভে। তবে সব কিছু মিলিয়ে অ্যালিসন নিজের এই ক্ষমতা খুব উপভোগ করছেন। চিকিৎসকও জানিয়েছেন, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ।

তবে সবাই যে জন্মগতভাবে এমন ক্ষমতার অধিকারী হয়, তা কিন্তু নয়। সার্বিয়ার সিবিন ইভানোভিকের বয়স ৬৬ বছর। বছর কয়েক আগে হৃদরোগে গুরুতর আক্রান্ত হলে জীবন বাঁচানোর জন্য তাঁকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইলেকট্রিক থেরাপি নিতে হয়। এরপর তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন ঠিকই, তবে শরীরে দেখা দিল অসাধারণ এক ক্ষমতা। নিজ মোবাইল ফোনটি একদিন হঠাৎ আটকে গেল বুকে।

তারপর দেখা গেল, ধীরে ধীরে চামচ, পিন কিংবা টিভির রিমোট কন্ট্রোল_যা কিছুই তাঁর বুকের সামনে ধরা হচ্ছে, সবই আটকে যাচ্ছে একে একে। চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ। তথ্য সুত্র  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.