আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তেঁতুল! তেঁতুল! তেঁতুল!

ভালবাসি মা-মাটি-দেশ। স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর সকাল। এক নতুন সূর্যোদয়ের। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নারীদের দেখেছেন সম্মানের দৃষ্টিতে। কারণ তিনি ছিলেন বিশ্ব মানবের পথের দিশারী।

পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তার দৃষ্টিভঙ্গি উদার হবে এটাই তো স্বাভাবিক। তিনি নারীকে দিলেন সর্বোচ্চ মর্যাদা। তিনি ঘোষণা দিলেন মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। সে সন্তান বলতে নিশ্চয়ই পুরুষকেও বোঝানো হয়েছে।

পবিত্র কুরআন নারীকে মর্যাদার আসন দিল তার জন্মের সংবাদের মাধ্যমেই! সূরা নাহলের ৫৮ ও ৫৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ (৫৮) يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ (৫৯) “যখন কোন মুশরিককে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। ” (১৬:৫৮) “তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবতে থাকে,অপমান সহ্য করে তাকে (কন্যা সন্তানটিকে) রেখে দেবে, না কি তাকে মাটির নীচে পুঁতে ফেলবে। শুনে রাখ,তারা যে সিদ্ধান্ত নেয় তা খুবই নিকৃষ্ট। ” (১৬:৫৯) এই আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন কন্যা সন্তানের জন্মকে সুসংবাদ বলে ঘোষণা দিলেন।

নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন সূরা আত-তওবার ৭১ আয়াতে বলা হয়েছে, وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ (৭১) “মুমিন নর-নারী একে অপরের সহায়ক, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রসূলের আনুগত্য করে, খুব শীঘ্রই আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করবেন এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। ” (৯:৭১) কুরআনের এই একটি নির্দেশনাই প্রমাণ করে সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের নিষেধ শুধু পুরুষদের জন্যই প্রযোজ্য নয়। বরং এই নির্দেশ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুমিন মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। কাজেই এই আয়াত থেকে বোঝা যায় এই পবিত্র দায়িত্ব পালন, নামাজ কায়েম করা, যাকাত দেয়া আল্লাহ ও তার রসূলের প্রদর্শিত পথে চলা ইমানদারদের বৈশিষ্ট্য।

এখানে নারী পুরুষকে এক কাতারে দাড় করিয়ে দেয়া হয়েছে। নারীকে তেঁতুল বানিয়ে বৈয়ামে আবদ্ধ করে রাখতে বলা হয়নি। ঠিক একই ভাবে পরকালে শাস্তির ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে সূরা আলে ইমরানে ১৩০ ও ১৩১ নম্বর আয়াতে সুস্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُضَاعَفَةً وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (১৩০) وَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ (১৩১) “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ গ্রহণ করবে না এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও। ” “আর সেই আগুনকে ভয় কর, যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ”(৩:১৩১) অবিশ্বাসী নারী-পুরুষ উভয়ই হতে পারে।

তাদের শাস্তিও নিশ্চয়ই সমান। সূরা আন-নাবা র ১৭-২৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন- ১৭। إِنَّ يَوْمَ الْفَصْلِ كَانَ مِيقَاتًا নিশ্চয়ই বিচার দিবস নির্ধারিত রয়েছে। ১৮। يَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّورِ فَتَأْتُونَ أَفْوَاجًا যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তোমরা দলে দলে সমাগত হবে।

১৯। وَفُتِحَتِ السَّمَاء فَكَانَتْ أَبْوَابًا আকাশ বিদীর্ণ হয়ে; তাতে বহু দরজা সৃষ্টি হবে। ২০। وَسُيِّرَتِ الْجِبَالُ فَكَانَتْ سَرَابًا এবং পর্বতমালা চালিত হয়ে মরীচিকা হয়ে যাবে। ২১।

إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا নিশ্চয়ই জাহান্নাম প্রতীক্ষায় থাকবে, ২২। لِلْطَّاغِينَ مَآبًا সীমালঙ্ঘন কারীদের আশ্রয়স্থল রূপে। ২৩। لَابِثِينَ فِيهَا أَحْقَابًا তারা তথায় শতাব্দীর পর শতাব্দী অবস্থান করবে। উপরোক্ত আয়াত সমূহে এটাই কি স্পষ্ট হয়নি যে শাস্তি বিধানেও মহান আল্লাহ নারী-পুরুষে ভেদাভেদ করেননি? প্রাগৈতিহাসিক কাল ধরেই নারীকে ভোগের বস্তু হিসেবে দেখা হয়েছে- রোমান সভ্যতার প্রাক্কালে একজন নারীকে দাসী রূপে গণ্য করা হতো।

গ্রিকদের কাছে নারী ছিল বিকিকিনির পণ্য। পূর্বে খ্রিষ্টানরা নারীকে শয়তানের প্রতিভূ মনে করত। আদম আ:-এর বেহেশত থেকে পৃথিবীতে আগমনের জন্য তারা মা হাওয়াকে দায়ী করত। ইসলাম-পূর্ব যুগের আরব দেশে নারীদের, সব দুঃখ কষ্টের কারণ বলে গণ্য করা হতো। ফলে তারা শিশুকন্যাকে জীবন্ত কবর দিত।

রাজা অষ্টম হেনরি নারীদের বাইবেল পড়া নিষিদ্ধ করেছিলেন। ইতিহাসে এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যেখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। বিভিন্ন ধর্ম বারংবার চেয়েছে এই শৃঙ্খল ভেঙ্গে নারীকে মুক্ত করতে। আর তারই ধারাবাহিকতায় আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে নারীকে মর্যাদা ও সম্মানের আসনে আসীন করে এই দুর্দশার হাত থেকে মুক্তি এনে দেন মহানবী (সাঃ)। তিনি ঘোষণা দিলেন ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।

’ আজকের সভ্য সমাজ মনে করে নারী পুরুষের অর্ধাঙ্গ। দুয়ে মিলেই হয় পূর্ণ। নারী পুরুষের সমান অংশিদারিত্বে বিনির্মাণ হয়েছে আজকের পৃথিবী, এগিয়ে চলছে সভ্যতা। কিন্তু শফিদের কাছে এ সব অর্থহীন কথাবার্তা। তাদের কাছে নারী শুধুই ভোগের।

বড় জোর যেমন ইচ্ছে খেলার নিছকই এক রক্ত মাংসে গড়া খেলনা। তারা কোরআন হাদিসের জ্ঞান অনেক বেশি রাখেন। তার থেকেও যা বেশি রাখেন তা তাদের গোঁড়ামি এবং গোঁয়ার্তুমি। মানব সভ্যতার শুরু থেকে আজ অবধি শফিরা সব যুগেই ছিল বর্তমান। নারীও তাই নিগৃহীত হয়েছে সব সময়ই।

শফিরাই ছিল যার কুশীলব। কখনো ধর্মগুরু, কখনো মহাত্মা, কখনো মহারাজা, কখনো সন্ত্রাসী। মানসে সবাই এক। নারী তাদের কাছে কেবলই যৌনদাসি। নারী সন্তান উৎপাদনের একটি মেশিন বৈ আর কিছু নয়।

এরা কখনোই নারীত্বের মর্যাদা দেননি। নারী সর্বদাই এদের কাছে ভোগ্য পণ্য। তাই নারী দেখলেই তাদের দিল অস্থির হয়ে ওঠে। তারা লালায়িত হন। তেঁতুল জিভে জল আনে এটা যেমন সত্য তেমনি এটাও সত্য, মানুষ মাত্রই সে জল সংবরণে অভ্যস্ত।

আর যারা সেক্ষেত্রে অক্ষম তারা আর মানুষ থাকে না অমানুষ হয়ে যায়। তাদের হিংস্র থাবা আর উদগ্র বাসনায় নারী যুগ যুগ ধরে ধর্ষিতা হয়ে আসছে। সে স্ত্রী বা পরস্ত্রী যে রূপেই থাক না কেন। এখানে নারীর চাওয়া-পাওয়া, ইচ্ছা-অনিচ্ছা মূল্যহীন। সে অবরোধবাসিনীর কান্নার শব্দ কখনোই বদ্ধ ঘরের চৌকাঠ পেড়িয়ে বাইরে আসেনা।

কন্যা-জায়া-জননী এ তিন রূপের বাইরে নারীর অস্তিত্ব নেই। যারা এর বাইরে তাকে তেঁতুল বা অন্য কোন রূপে দেখতে চান তাদেরকেই বলতে হবে এর কোন অংশটিকে তারা এই দৃষ্টিতে দেখতে চান। নাকি নারীকে উপভোগ্য ছাড়া অন্য কোন রূপেই তারা দেখতে চান না। যদি তাই হয় তাহলে তাদের উপযুক্ত বিচার তাদের জন্মদাত্রীই করতে পারবেন। তিনি ছাড়া অন্য কেউ নন।

আমাদের দেশে প্রায় সবার মধ্যেই একটি জু জু’র ভয় কাজ করে আর তা হল, হুজুরের কথা-মুরব্বিদের কথা। এর অন্যথায় না জানি কি অঘটন ঘটে। আল্লাহ-রসুলের কাছ থেকে কতটা দূরে সরে গেলে এমন জুজু তে পেয়ে বসে তা বলাই বাহুল্য। এই জু জু’র ভয়ে সাধারণ এক সহজ সরল মাদ্রাসা ছাত্র বা ধর্মভীরু কিশোর নিমিষেই সকলের অজান্তে হয়ে যায় আত্মঘাতী জঙ্গি দলের সদস্য। শফি যখন বলেন তেঁতুল! তেঁতুল! তেঁতুল! তখন সেখানে উপস্থিত মানুষগুলোর চোখে একটিবারও কি তাদের মায়ের মুখটি ভেসে ওঠেনি? ভেসে ওঠেনি তাদের মেয়ের মুখ? কেন কেউ প্রতিবাদ করলেন না? কারণ একটাই, এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা খুব ভালই জানেন সামনে যারা বসে আছে এগুলো সব অন্ধভক্ত, বিবেচনাহীন, আহাম্মকের দল।

এদের কাছে হুজুরের কথাই হল ইসলাম। শফিরাই ইসলামী বিশ্বকোষ। এরা ইসলাম সম্পর্কে জানে না আর জানার চেষ্টাও করে না। এরা হুজুরের সাথে উর্দু ভাষায় করা মোনাজাতে কেঁদেই সারা। অথচ মোনাজাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে কি চাইল তাও জানে না।

এদের এই বুজুর্গ শাপলা চত্বরে রণক্ষেত্র দেখে সেখানে না গিয়ে আসছি আসছি বলে ধোঁকা দিয়ে উপস্থিত মানুষগুলোকে আটকে রাখে। মিথ্যে কথার ফুলঝুরি ছড়ায় হাজার হাজার লোককে মারা হয়েছে বলে। আমি সেই মিথ্যেকে বিশ্বাস করেই প্রশ্ন করতে চাই- আপনি মরলেন না কেন? আপনার কোন নেতা মরল না কেন? কেন সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে পালিয়ে গেল তারা? মিথ্যেবাদী কি করে ইমানদার হয়? হাজার হাজার থেকে যাদের মৃতের সংখ্যা ৬২ তে নেমে আসে তাদের কোন কথাটা সত্য? ইসলাম মডারেট ধর্ম। ইসলাম সেই ধর্ম, যা সব যুগে সর্বাবস্থায়ই আধুনিক। খণ্ডিত ইসলামকে মধ্যযুগে টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, পূর্নাংগ ইসলামকে নয়।

আর মধ্যযুগীয় ধ্যান ধারনা আক্রান্ত লোকজনই কেবল সেই ব্যর্থ চেষ্টাটা করে থাকে। আর এতে ইসলামের ক্ষতি হয়না। ক্ষতিগ্রস্ত তারাই হয় যারা এই কাজটি করে থাকেন। ইসলাম পর্দার কথা বলে, শালীনতার কথা বলে। নারীদের পাশাপাশি পুরুষের পর্দার কথাও সমান গুরুত্বের সাথে বলে।

শফিরা পুরুষের পর্দার কথা, পুরুষের বিধি নিষেধের কথা বেমালুম ভুলে যায়। তারা কেন বলে না- মহান আল্লাহ সুরা আন নূর-এ বলেন- (২৪:৩০) নবী ! মু’মিন পুরুষদের বলে দাও তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে ২৯ এবং নিজেদের লজ্জা স্থানসমূহের হেফাজত করে ৷ (৩০) এটি তাদের জন্য বেশী পবিত্র পদ্ধতি ৷ যা কিছু তারা করে আল্লাহ তা জানেন৷ মহান আল্লাহ পাক সুরা আন নূর-এ এ কথাও বলেন- (২৪:২৬) দুশ্চরিত্রা মহিলারা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষরা দুশ্চরিত্রা মহিলাদের জন্য৷ সচ্চরিত্রা মহিলারা সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষরা সচ্চরিত্রা মহিলাদের জন্য ৷ লোকে যা বলে তা থেকে তারা পূত-পবিত্র ৷ ২২ তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবিকা৷ তেঁতুল তেঁতুল করে চিৎকার করার সময় শফিদের কি পবিত্র কুরআনুল করিমের এই আয়াতের কথা মনে থাকে?  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.