আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঘা তেঁতুল!!

মাথায় লাথি মেরে টুপিকে সালাম করা হচ্ছে : আদালতে সালাউদ্দিন কাদের মেহেদী হাসান ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত এক বছর ধরে বন্দী বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ দিলেন ট্রাইবু্যুনাল। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজে কোনো আইনজীবী নিয়োগ না দেয়ায় ট্রাইব্যুনাল আজ সোমবার সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী বদিউজ্জামানকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে নিয়োগ দেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের আদেশ দেয়ার সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আপত্তি জানিয়ে বলেন, মাননীয় আদালত আমি বলেছিলাম আমি কোনো আইনজীবী নিয়োগ দেব না। আমার মামলা আমি নিজেই লড়ব। আপনি সে আবেদন গ্রহণও করেছেন।

আমাকে ওকালাত নামা বাতিল করার দরখাস্ত দিতে বলা হয়েছিল। আমি তাও করেছি। কিন্তু তারপরও আমার জন্য আইনজীবী নিয়োগ দিলেন। আপনি কি আইনপ্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের নির্দেশে এ আইনজীবী নিয়োগ দিলেন? সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আগে থেকেই বারবার অভিযোগ করে আসছিলেন, তাকে আইনজীবী নিয়োগে বাধ্য করছে আদালত। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সরকারী আইনজীবী নিয়োগের আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নিজের মামলা নিজে লড়ার অধিকার নেই।

আজ সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দায়ের করা ছয়টি আবেদনের শুনানি হয়। আবেদন ছয়টি হল (১) মানবতা বিরোধী অপরাধ বলতে কি বোঝায় তা পরিষ্কার করা, (২) বিচার কার্যক্রম সরাসরি রেডিও টিভিতে প্রচার করা, (৩) বিদেশী আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ থাকা, (৪) ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক হলে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ করা, (৫) ট্রাইব্যুনাল দেশী আদালত হলে দেশি আইন প্রয়োগ করা এবং (৬) রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মতো তাকেও ১১ মাস সময় দেয়া মামলার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা যেসব সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন তাকেও একই সুযোগ সুবিধা দেয়া। আবেদনগুলোর শুনানিতে অংশ নিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, মাথায় লাথি মেরে টুপিকে সালাম করা হচ্ছে। সংবিধান হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন।

কিন্তু সংবিধানকে লাথি মেরে ট্রাইব্যুনালকে সালাম করা হচ্ছে। সংবিধানের ১৪৯ ধারায় বলা আছে- যত আইন আছে সব বলবৎ থাকবে এই সংবিধান চালু হবার পরও। এখানে কোনো ‘শর্ত’ এবং ‘কিন্তু’ নেই। কিন্তু এই আদালতের আইনের ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যপ্রণালী বিধি এবং সাক্ষ্য আইন প্রয়োগ উহ্য রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, এমন কোনো অপরাধ নেই যা পেনাল কোডে উল্লেখ নেই।

কিন্তু তারপরও কেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলো। বিশেষ কোর্ট গঠন করা হয় বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার চেয়েও কি এই মামলা গুরুত্বপূর্ণ। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা কথায় কথায় বলেন, দেশে এখন যা কিছুই করা হয় তার সব নাকি যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য করা হচ্ছে। শেয়ার বাজার থেকে কত হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়া হল, জিনিসপত্রের দাম কি পরিমাণ বাড়ল, তেলের দাম কিভাবে বাড়ছে তার কোনো খবর নেই।

দেশে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যুদ্ধাপরাধের বিচার। যুদ্ধাপরাধের বিচার যদি এতই গুরত্বপূর্ণ বিচার হয় তাহলে সেটাকে সেভাবেই গুরুত্ব দিয়ে করেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার আবেদনের শুনানিতে অংশ নিয়ে আদালতে আরো বলেন, আমি আপনার কাছে অসুস্থ অবস্থায় এসেছিলাম। আপনি আমাকে পিজিতে পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি বলেছিলাম- আমাকে দয়া করা পিজিতে পাঠাবেন না।

পিজিতে পুলিশ কাস্টডিতে একজন অসুস্থ বন্দীকে মারা যাবার খবর দেখলাম দুইদিন আগেও। আমার বাবাকেও পুলিশ কাস্টডিতে মেরে এই ঢাকার জেল খানা থেকে লাশ করে বের করা হয়েছিল। আমাকেও পিজিতে পাঠালে এতদিনে হয়তো লাশ হয়ে যেতাম। এসব বিষয়ে আমি খুব সচেতন আছি। সেজন্যই আমি পিজিতে যেতে চাইনি।

সালাউদ্দিন কাদের বলেন, আল্লাহ যতদিন হায়াত বরাদ্দ করেছেন তার এক সেকেন্ড আগেও মরবো না, এক সেকেন্ড পরেও না। কিন্তু তারপরও একটু সতকর্তা অবলম্বন করি। কারণ, আমি পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত আছি। তিনি বলেন, আমার আবেদনের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ১২ মিনিটের বক্তব্যে ৯ মিনিট বক্তব্য দিলেন আমার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী কি কি অপরাধ করেছেন তার ফিরিস্তি দিয়ে। আর ৩ মিনিট বক্তব্য দিলেন তার পুত্র কি করেছেন তার বর্ণনা দিয়ে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করার দাবি জানিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, আপনি স্পষ্ট করে বলে দিন কয়টা ঘর পোড়ালে সেটা মানবতা বিরোধী অপরাধ হয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইনে, রোম সংবিধিতে এ সংজ্ঞা উল্লেখ করা আছে। বাংলাদেশ তাতে সাক্ষর করেছে। সংসদে পাশ করেছে। এটা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কোনো বিষয় নয়।

এটা বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র কর্তৃক সাক্ষর করা হয়েছে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারতের সাথে যে গঙ্গা চুক্তি এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছিলেন তা তো বিএনপি বাতিল করেনি। এসব চুক্তি না মানলে নিজেদের সভ্য হিসেবে বিশ্বে পরিচয় দেয়া যায়না। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল যদি আন্তর্জাতিক হয় তাহলে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলার ব্যবস্থা করুণ আর ডমেস্টিক আদালত হলে দেশে বিদ্যমান আইন প্রয়োগ করেন। শুনানী শেষে এসব আবেদনের বিষয়ে আগামী ১৯ ডিসেম্বর রায় দেয়ার জন্য নির্ধারণ করেণ আদালত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.