আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: স্পর্শের পর

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ ‘ ... প্রাচীন ভারতের মৌর্য আমলে (খ্রিষ্টপূর্ব ৩২১-১৮৫) মেয়েদের গুপ্তঘাতক হিসেবে গড়ে তোলা হত। সেই মেয়েদের শরীরের রক্ত কি এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে বিষাক্ত করা ফেলা হত। ওই মেয়েদের বলা হত: বিষকন্যা।

শক্ররাজ্যের রাজারা বিষকন্যাদের সংস্পর্শে এসে মারা যেত। কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্রে’ বিষকন্যার উল্লেখ আছে। কৌটিল্য বা চাণক্য ছিলেন মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যর তীক্ষ্মবুদ্ধি সম্পন্ন একজন উপদেষ্টা। অর্থশাস্ত্র ছাড়াও কল্কি পুরাণেও বিষকন্যাদের কথা উল্লেখ রয়েছে। বিষকন্যারা নাকি স্পর্শমাত্রই হত্যা করতে পারত।

সুলোচনা নামে এক বিষকন্যার কথা জানা যায়। সুলোচনা ছিল চিত্রগ্রিব গর্ন্ধবের স্ত্রী ...’ কথাগুলি পড়তে পড়তে তৃষার শরীর হিম হয়ে আসে। ঘরের আলো ম্লান মনে হয়। কেমন হতচকিত হয়ে পড়ে তৃষা । আজই হঠাৎ বাবার বইয়ের আলমারীতে একটি বইয়ের ওপর চোখ আটকে গিয়েছিল তৃষার।

আলমারী খুলে দ্বিতীয় তাক থেকে বইটি বার করে। কালো মলাট। হলদে অক্ষরে লেখা: Vishkanya: True stories of famous women spies of the world in story form. . বইটি Yashvant Mehta -র লেখা; ১৯৯৬ সালে বইটি প্রকাশ করেছে ভারতের গুরজার প্রকাশনী। বিষকন্যা বইটা পড়ার সময় তৃষার বুকটা ঢিপঢিপ করছিল। বিষকন্যা কি সত্যিই ছিল? মানে থাকা সম্ভব? যাদের স্পর্শে মারা যেত শক্ররাজ্যের রাজারা ... রূপকের কথা মনে পড়ে যায় তৃষার ।

তৃষা তখন ক্লাস টেন-এ পড়ে । সে সময় রূপককে স্পর্শ করেছিল তৃষা । পরের দিনই অ্যাক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল রূপক । রূপকরা ওদের তিনতলায় ভাড়া থাকত। ক্লাস এইটে পড়ত রূপক ।

গায়ের রং শ্যামলা । তবে ভারি সুইট দেখতে ছিল। ওই বয়েসে যেমন হয়, কল্পনায় রূপককে আদর করত তৃষা। মনে আছে একবার ... এক বৃষ্টির দুপুরে রূপক এল। বাসায় তৃষা একা ছিল।

সকাল বেলা বড়চাচার অসুস্থতার খবর পেয়ে মা-বাবা সিলেট গেছেন । সঙ্গে রাসেলও গেছে। দুপুরে খেয়ে বিছানায় শুয়েছিল তৃষা। খানিকটা ছটফট করছিল। কলিং বেল শুনে দরজা খুলে রূপককে দেখে ওর বুক ধক করে উঠল।

রূপকের হাত ধরে শোয়ার ঘরে ডেকে ‘আমার কেমন ভয়-ভয় করছে’ বলে রূপককে গভীর আবেগে বুকে টেনে নিয়েছিল। কী সের ভয় তৃষা আপু? রূপক জিগ্যেস করেছিল। জানিনা বলে রূপককে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছিল তৃষা। রূপক ভেবেছিল মজা তো। মজাটা অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।

রূপক জেগে উঠেছিল। তেরো-চৌদ্দ বছরের কিশোর। কিশোর হলেও পুরুষ। তৃষাও টের পেল ওর শরীরে লুকোনো সব তাপ লাভার মতো গলে গলে বেরিয়ে আসতে চাইছে ... পর দিন স্কুল থেকে ফেরার পথে বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসা বেপরেয়া ট্রাকের ধাক্কায় মারা যায় রূপক । তৃষা স্তব্দ হয়ে গিয়েছিল।

কেঁদেছিল। ... কলেজ পড়ার সময়ও ঠিক অমনই একটি অদ্ভূত ঘটনা ঘটেছিল। তৃষার বড় মামা খুলনায় থাকেন। বড় মামার ছেলে মিজান আইএ পাশ করে আর পড়াশোনা করেনি। বেকার।

কোরিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছে। ঢাকায় এসে তৃষাদের বাসায় মাসখানেক ছিল। মিজানের চোখে আগুন তৃষা ঠিকই টের পেয়েছিল । সে আগুনে পোড়ার সময় এক দুপুরে এল। দুটোর মতো বাজে।

কলেজ থেকে ফিরে গোছল সেরে টেবিলে খাবার বাড়ছিল তৃষা। সেদিন কাজের মেয়েটা সকালে ছুটি নিয়েছিল। রাসেল স্কুলে। মা ব্যাঙ্কে। বাবা অফিসে।

মিজান মতিঝিল গিয়েছিল। কলিংবেল বাজতেই তৃষাই দরজা খুলেছিল। বাসায় কেউ নেই টের পেয়ে তৃষাকে বুনো জন্তুর মতো জড়িয়ে ধরেছিল মিজান। তৃষা বাধা দেয়নি। ঘটনাটি ঘটেছিল ঠিক কোরিয়া যাবার একদিন দিন আগে।

পর দিন এয়ারপোর্টে যাবার সময় ট্রাকের ধাক্কায় মিজানের ট্যাক্সিক্যাবটা চুরমার হয়ে গিয়েছিল । আমি কি বিষকন্যা? কিন্তু, তা কি করে হয়? সকাল থেকে ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছিল। ইউনিভারসিটি থেকে বেরিয়ে এল তৃষা। পাশে সুরভি। সুরভিদের বাড়ি তৃষাদের বাড়ির খুব কাছেই।

ওরা একসঙ্গে ইউনিভারসিটি আসে। হঠাৎ সুরভি বলল, দেখ তো তৃষা। আজম ফলো করছে কিনা? তৃষা পিছন ফিরে তাকাল। একটা নীল রঙের ভারী মোটরসাইকেলে বসে আছে আজম । লোফারটা আজ কালো শার্ট পরেছিল।

মাথায় লাল রঙের হেলমেট। বলল, হ্যাঁ। ধ্যাত! এসব আমার আর ভাল্ লাগে না। রোজ রোজ এভাবে ফলো করলে আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাব। সুরভির কন্ঠে ক্ষোভ।

সুরভির ক্ষোভের কারণ আছে। সুরভির বিয়ে প্রায় ঠিক। ছেলে নিউজিল্যান্ড থাকে। আইটি স্পেশালিষ্ট। ছেলের বাবা সংসদ সদস্য।

এমন সম্বন্ধ সহজে পাওয়া যায় না। অবশ্য সুরভিও ফেলনা না। ছাত্রী হিসেবে ভালো। ছায়ানটে গান শিখছে। তার ওপর সাঙ্ঘাতিক রকমের সুন্দরী - যাকে বলে ক্লাসিক বিউটি।

এখন আজম ওর পিছনে লেগেছে। আজম ঠিক বখাটে কিংবা উঠতি মাস্তান নয়। ধানমন্ডিতে একটা জিম আর ফটো স্টুডিও আছে। রোজ সুরভিকে ফলো করে। সুরভিকে ফোন করেও ডিসটার্ব করে ।

কোত্থেকে মোবাইল নম্বর পেয়েছে কে জানে। উলটো দিক থেকে একটা সিএনজি আসছিল। খালি বলে মনে হল। তৃষা বলল, আজমের সঙ্গে আমার কথা বলা দরকার। ওর নাম্বার দে তো।

বলে হাত তুলে সি এন জি ডাকল। সিএনজি থামল। সুরভি সিএনজিতে উঠে তৃষাকে আজমের ফোন নম্বর দিল। সুরভি সিরিয়াস টাইপের মেয়ে। আজমকে ওর পছন্দ নয়।

বলে, আজম মডেলদের বাজে বাজে ছবি তুলে। মোটল সাইকেল নিয়ে আজও বাড়ি পর্যন্ত সিএনজি ফলো করল আজম। তৃষা শ্বাস টানে। সুরভি তৃষার খুব ভালো বন্ধু। সুরভির ক্ষতি হোক তৃষা চায় না।

আজকাল ছেলেদের অফার ফিরিয়ে দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েদের অ্যাসিড ছোড়ে। তৃষার ভয় এখানেই। সুরভিকে বাঁচানো দরকার। ফুলের মতো মেয়ে সুরভি। রাত ন’টার দিকে আজমকে ফোন করে তৃষা।

ওপাশ থেকে গম্ভীর টোন ভেসে এল। হ্যালো। আজম? হ্যাঁ। আমি তৃষা। সুরভির ফ্রেন্ড।

আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল। বলেন। টেলিফোনে না। আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। ওকে।

কোথায় আসব? কাল দুপুরে আমার জিমে চলে আসেন। বলে জিম-এর ঠিকানা দিল আজম। জিমটা সাতমসজিদ রোডে। নাম: ‘আজম’স জিম’। দুপুরের আগেই পৌঁছল তৃষা।

জিম- এর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল আজম । লম্বা। বলিষ্ট গড়ন আজমের। জিন্সের প্যান্ট আর কালো গেঞ্জি। গেঞ্জিতে হলদে রঙে লেখা; ‘কিং অভ রক’।

আজমের গায়ের রং তামাটে। মুখটা চৌকো । সানগ্লাস। আর্মির মতো ছোট ছোট ছাঁটা চুল। তৃষাকে সিএনজি থেকে নামতে দেখে হাসল।

হাত তুলে তৃষাকে ওপরে যেতে ইঙ্গিত করল। বাঁ পাশে একটা ষ্টিলের সিঁড়ি। ফটো স্টুডিটাটা দোতলায় মনে হল। আজমের পিছন পিছন তৃষা ওপরে উঠে আসে। দোতলার রুমটা বেশ বড়।

খানিকটা অদ্ভূত। দেয়ালে সবুজ রং। তাতে উঠতি মডেলদের পোষ্টার সাঁটা । সারিকাকে কেবল চিনতে পারল। ইন্ডিয়ান এক নায়িকার বিকিনি পরা পোস্টারও আছে।

সিলিংটা গোলাপি রঙের । মেঝেতে কম দামি কার্পেট। ঢাউশ কালো সোফা । রুমের বাতাসে এয়ার ফ্রেশনারের গন্ধ। সোফায় বসল তৃষা।

এসি ছেড়ে তৃষার পাশে এসে বসল আজম। বলল, বলেন কি বলবেন? কড়া পারফিউমের গন্ধ পেল তৃষা। সাঙ্ঘাতিক হ্যান্ডসাম দেখতে আজম । ভিতরে কাঁপন টের পায় তৃষা। বলল, আপনি সুরভির পিছনে লেগেছেন কেন? আমি ওকে ভালোবাসি।

আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। বলে কাঁধ ঝাঁকায়। তৃষা বলল, না, তা সম্ভব না। ওর বিয়ে ঠিক। ওর পিছনে আর ঘুরঘুর করবেন না প্লিজ।

ও কে। বলে ঝুঁকে তৃষার গালে চুমু খায় আজম । তৃষা খানিকটা হতচকিত হলেও সামলে নিল। আজম ততক্ষণে উন্মাদ হয়ে উঠেছে। তৃষাও আজমের চুলের জেলের গন্ধে অবশ বোধ করে।

অনেক ক্ষণ পর রুম থেকে বেরিয়ে আসে তৃষা ঘোরের মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আছে। জিম- এর সামনে একটা সিএনজি থেমে। ‘কলাবাগান’ বলে উঠে পড়ল। আজম কি মারা যাবে? আমি যদি বিষকন্যা হই তো ... বাড়ি ফিরে বাথরুমে ঢুকল তৃষা । অনেকক্ষণ কাটল বাথরুমে।

কাঁদল। আজ আজম আমাকে স্পর্শ করেছে। এই কথাটা সুরভি কখনও জানবে না। সুরভি বিয়ের পর সুখি হবে। তৃষা যাকে ছোঁবে সেই মারা যাবে বলে তৃষা সারাজীবন একা থাকবে।

বিষকন্যাদের জীবন তো একাই কেটেছিল। ভাতেই তৃষার শরীর শিরশির করে ওঠে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে সুরভিকে ফোন করল। মোবাইলে এনগেজ টোন। হবু বরের সঙ্গে কথা বলছে।

রাতে খেতে বসে মা বলল, আজ মহাখালীতে তোর বাবার সঙ্গে জামাল সাহেবের দেখা হয়েছিল। কোন জামাল সাহেব? তৃষা বিস্মিত। খাচ্ছিল। ওর হাত থেমে যায়। কেন তোর মনে নেই, জামান সাহেব আমাদের তিনতলায় ভাড়া থাকত।

তুই তখন স্কুলে পড়তি। রূপকের বাবা জামান সাহেব । ওহ্ । তৃষার বমি পায়। রূপকের মা মারা গেছে।

ক্যান্সার হয়েছিল। কথাটা শুনে তৃষা খাওয়ার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ে। কি হল? কিছু না। রাতে ঘুম আসছিল না। ছটফট করছিল।

বারবার রূপকের মুখটা ভাসছি। বিছনা থেকে উঠে খাওয়ার ঘরে এসে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল বের করে ড্রইংরুমে এসে বসল। টিভি ছাড়ল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত একটার মতো বাজে। এলোমেলো চ্যানেল ঘোরাচ্ছিল।

হঠাৎ মনিটরের নীচে ব্রেকিং নিউজ দেখে থমকে গেল তৃষা। রাত বারোটা তিরিশ মিনিটে সাতমসজিদ রোডের আজম’স জিম-এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। দমকল কর্মিরা একজন নারীসহ তিনজনের অগ্নিদ্বগ্ধ লাশ উদ্ধার করেচে। দমকল বাহিনীর কর্মীরা তাদের একজন আজম’স জিম- এর মালিক আজম আলম বলে নিশ্চিত করেছে । অন্যদের একজন জিম-এর কেয়ারটেকার পলাশ।

নারীর মৃতদেহটি একজন মডেল-এর বলে ধারণা করছে পুলিশ। তৃষা শীত বোধ করে। শরীর ভারী বোধ হল। গলার কাছে ভীষণ তৃষ্ণা। মাথা কেমন টলে ওঠে ওর ...দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে।

সুরভির বিয়ের দিন ঝরঝরে রোদ উঠেছিল। তৃষা প্রায় সারাক্ষনই সুরভির পাশে ছিল। বিউটি পারলার থেকে বিকের পাঁচটায় বরের গাড়িতে ওঠার সময় পর্যন্ত। তৃষা তখন কাঁদছিল। বুকের ভিতর বড্ড খালি খালি লাগছিল।

বাড়ি ফিরেও অনেকক্ষণ কাঁদল। ও জানে এখন জীবন অন্যরকম হয়ে যাবে। ভীষণ অন্যরকম। সম্ভবত সুরভির বিয়ে নিজের মেয়ের বিয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল তৃষার বাবাকে। তৃষার বাবা মেয়ের বিয়ের জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন।

মেয়ের বিয়ের তোড়জোর শুরু করে দিলেন। তৃষার শরীর হিম হয়ে আসে। মাকে বলল, মা আমি এখন বিয়ে করব না। প্লিজ,মা। তুমি বাবাকে বুঝিয়ে বল।

সে কি! বিয়ে করবি না কেন? তোর বড় চাচা সম্বন্ধ আনল। এখন রাজি না হলে তোর চাচার সম্মান। আর বিদেশ সব আসছে। আগে পড়াশোনা শেষ করি। তৃষা মরিয়া হয়ে বলে।

এসব কি বলছিস তুই! বিয়ের পরেও পড়াশোনা করা যায়। পাত্র পক্ষ এ ব্যাপারে মত দিয়েছে। তৃষার মা ঝাঁঝিয়ে উঠে বলেন। মা ছেলের ছবি দেখাল। পাত্রর নাম রায়হান।

এত সুন্দর। তৃষা অবাক হয়ে যায়। গোল ফ্রেমের চশমা। ছেলেটার জীবন নষ্ট হবে ভেবে আত্মগ্লানিতে কুঁকড়ে গেল তৃষা। একবার আত্মহত্যা করার কথাও ভাবল।

রাসেল-এর কচি মুখ ভেসে উঠতে দূর্বল বোধ করল। তৃষার বড় ভাই আদনান কানাডা থাকে। কানাডিয় মেয়েকে বিয়ে করেছে। স্টেলা ভাবীর সঙ্গে ভারী ভাব তৃষার। তৃষার বড় বোন দিশা আপার শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রাম।

দিশা আপা স্বামী আর বাচ্চাদের নিয়ে এল । ছোট মামা এলেন মানিকগঞ্জ থেকে। তাঁর সঙ্গে মামাতো ভাইবোনেরাও এল । বড় চাচা থাকেন সিলেট। পাত্রপক্ষ বড় চাচার পরিচিত বলে বিয়েতে তাঁর ভূমিকাই বড়।

বড় মামী (মিজান ভাইয়ের মা) এলেন খুলনা থেকে। । ঢাকা শহরের ছেলের মৃত্যু হয়েছে বলে বড় মামী ঢাকায় আসতে চান না। তৃষার বিয়ে বলেই এলেন। বিয়ের দিনটা কেমন ঘোরের মধ্যে কেটে গেল।

বিয়ের রাতে ভিতরে ভিতরে কাঁপছিল তৃষা। রায়হান দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি ভদ্র। বাসর ঘরে অনেকক্ষণ কথা হল দু’জনার । রায়হানকে কেমন লাজুক মনে হল। রাতটা হয়তো কথা বলেই কেটে যেতে ... কিন্ত, হঠাৎ তৃষার কোমল হাতটা তুলে নিতেই কেমন বদলে গেল রায়হান।

তৃষারও স্বামীকে স্পর্শ করতে ইচ্ছে হল। জীবনে স্পর্শই তো সব। তারপর কখন ঘুমিয়ে গেল দুজন ... ঘুম ভাঙল সকালে। ঘর ভরতি রোদ। আর একতলার বাগানে পাখির কিচিরমিচির।

তৃষা দেখল রায়হান হাসছে। রাতারাতি লাজুক ছেলেটি কেমন বদলে গেছে। অদ্ভূত এক ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় তৃষা। পরক্ষণেই বিষাদ আর আতঙ্কে গ্রাস করে ওকে। মনে হল আজ দিনটা বাঁচবে তো রায়হান ... দিনটা কীভাবে যেন কেটে গেল ।

বাড়িতে এত লোকজন। গ্রাম থেকে লোকজন এসেছে। সকালে বড় চাচা এলেন। সঙ্গে রাসেল আর দীপ্তি। দীপ্তি বড় চাচার ছোট মেয়ে।

সিলেট মেডিক্যালে পড়ে। তৃষার স্টেলা ভাবীর সঙ্গে ছবি তুলল রাসেল আর দীপ্তি। বিকেলে সুরভি এল ওর বরকে নিয়ে। মন খারাপ করা একটা খবর দিল সুরভি। এ মাসেই বরের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড চলে যাচ্ছে ... তৃষা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

ও জানে জীবন এখন অনেক অন্যরকম হবে। রায়হানদের বাড়িটা ডিওএইচএস-এর লেক- এর ধার ঘেঁষে । বেশ বড়। সন্ধ্যায় ঝিরঝির বাতাস বইছিল। রায়হানের সঙ্গে ছাদে এল তৃষা।

তৃষার ভালো লাগছিল। রাযহান জিগ্যেস করে, কোথায় হানিমুন করার ইচ্ছে তোমার? অনেক অনেক দিন আগে স্বপ্ন দেখেছিল তৃষা। কার সঙ্গে যেন সৈকত ধরে হাঁটছে। খুব প্রিয় কেউ। বলল, কক্সবাজার ।

ওকে। রায়হান কাঁধ ঝাঁকায়। হাসে। কি মিষ্টি হাসি! মোবাইলে কার সঙ্গে যেন হোটেল বুকিং সংক্রান্ত কী সব কথা বলল। তিন দিন পর।

কলাতলীর সমুদ্র সৈকতে হাঁটছিল তৃষা । রায়হানের পাশে। তখন ধীরে ধীরে সন্ধা হয়ে আসছিল। দূরন্ত বাতাসে তৃষাল আঁচল ঠিক রাখা দায়। দূরে জেলে নৌকাগুলি ফিরে আসছিল তীরে।

আরও অনেক দূরে আবছা দিগন্ত। দিগন্তরেখার ওপরে হলদে একটা চাঁদ ... তারও নীচে ... নোঙর করা জাহাজ। তার আলো ... হঠাৎই মহাকালের মাঝে কুড়িয়ে পাওয়া এই জীবনকে স্বপ্নের মতো মনে হল তৃষার ... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৬৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.