আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমিরাতের বাঙালি সফলজনেরা

সম্পাদনা করি আমিরাত-বাংলা মাসিক মুকুল। ভালবাসি মা, মাটি ও মানুষকে.. লুৎফুর রহমান সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় সাতটি স্বাধীন রাষ্টের একটি ফেডারেশন। আমিরাতের সাতটি স্টেট আবুধাবী, আজমান, দুবাই, শারজাহ, রাস আল খাইমাহ, ফুজাইরাহ ও উম্ম আল খাইওয়ম এর বুকে প্রায় ৯ লাখ বাঙালি অভিবাসী বাস করছেন। বিভিন্ন পেশার মাধ্যমে নিজেদের কৃষ্টিকে উপস্থাপন করছেন আমিরাতের বুকে। রয়েছে সুসংগঠিত বাঙালি কমিউনিটি।

আর প্রবাসী বাঙালি জনগোষ্ঠীর যারা প্রেরণার উৎস, চিন্তার খোরাক তারা আপন ভূবনে আপন আলোয় আলোকিত। এখানে বাঙালি কমিউনিটিতে রয়েছে আঞ্চলিক সংগঠন। আছে রাজনৈতিক সব দল। তার মধ্যে একেক দলের আবার বিভিন্ন গ্রপও রয়েছে। আমিরাতের এমন ক’জন বাঙালি সফলজনের সাতকাহন তুলে ধরবো এই লিখায়।

এটা পরিপূর্ণ কোনো লেখা নয়। এখানে অনেকের নাম ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যথাযথ তথ্যের অভাবে বাকি রয়ে গেছে। আশাকরি ক্রমান্বয়ে উনাদের নাম স্থান পাবে। আর এতে সচেতন পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মুক্তিযুদ্ধে আমিরাতের প্রবাসীরা যুদ্ধ সময় এসেছে সাগরে।

পাল তুলেছে নাবিক ঢেউ তুলা সাগরে। আরব আমিরাতে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার হাওয়া লাগে। আর সেই একি পাল তোলা জাহাজে হাওয়া লেগে বাঙালী পাড়ায়। ১৯৭১ এর পূর্বে যারা এদেশে এসেছেন সবার পাসপোর্ট ছিল পাকিস্তানী। কিন্তু সকলের একটি নতুন স্বপ্নের হাতছানিতে দেশ স্বাধীনের প্রাক্কালে মাটি ও মানুষের পাশে দাঁড়ায় আমিরাতের বাঙালি সমাজ।

শুরু হয় অর্থ সংগ্রহ ও প্রেরণের কাজ। সবাই যার যার জায়গা থেকে অর্থ পাঠাতে থাকেন। আবার কেউ দেশে ছুটিতে গেলে মুক্তিযুদ্ধের কারণে আসতে পারেননি তাই রণাঙ্গণে নাম লিখিয়েছেন। অর্থ সংগ্রহ ও যুদ্ধে অংশগ্রহণে আমিরাতে বসবাসরতদের মধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেটের বাসিন্দাদের ভূমিকা অনন্য। অন্যান্য এলাকার লোকেরাও বিছ্ন্নিভাবে কাজ করে গেছেন।

যুদ্ধ শুরু হলে চট্টগ্রামের বাসিন্দা কবির ট্রেডিং এর মালিক কবির আহমদ ও সিলেট বাসিন্দা আল-আইন শহরস্থ হারুন পারফিউমের আব্দুর রাজ্জাক এর তত্ত্বাবধানে এ মুক্তিযুদ্ধের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হয়। তাছাড়া তখন থেকেই আমিরাতে বসবাসরত পাকিতস্তানীদের সাথে মনোমালিন্য শুরু হয়ে যায় বাঙালিদের। বিচ্ছিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন ও অর্থ প্রেরণের কাজ অনেকেই করে গেছেন। কিন্তু যথাযথ তথ্য প্রমানের অভাবে আজ সেদিনগুলোর কথা খুব উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমিরাতের বাঙালি সফলজনেরা বাংলার মাটি ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন এমন ক’জন লোক-ই এখানকার সফলজন।

এরা নিজের সংসারের চাকা সচল করে বাঙালির নামকেও বিশ্বদরবারে উচু করে রেখেছেন। নিজের পেশাগত সেবার পাশাপাশি বাঙালি কমিউনিটির সেবা করে যাওয়া এক সফলজন ডা. আব্দুল মজিদ। বাড়ি সিলেটে। কর্ম নিয়ে আছেন দুবাই হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের আসনে। নাম কুঁড়িয়েছেন অনেক।

দিয়েছেন কমিউনিটি সমাজকে ঢেলে। উনার স্ত্রীও একজন নামকরা ডাক্তার। আরেক সফলজন মাটি ও মানুষের অকৃত্রিম স্বজন মাহতাবুর রহমান নাসের। বিশ্বখ্যাত পারফিউম কোম্পানী “আল হারামাইন পারফিউম’’ এর স্বত্ত্বাধিকারী। তাছাড়া ইউনাইটেড এয়ারএয়েজের সফল পরিচালক।

প্রবাসী বাঙালির দুর্দিনের সাথী জনাব নাসের সবসময় কমিউনিটির সব অনুষ্ঠান, বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানে দানসহ যার কেউ নাই বা অর্থাভাবে লাশ দেশে পাঠাতে পারছেনা তার লাশ বিনা খরচে দেশে পাঠিয়ে যাচ্ছেন অনেক দিন ধরেই। তাছাড়া বাংলাদেশী স্কুলগুলোতে সিংহভাগ অর্থদান করেই আসছেন। প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে জনাব নাসের একটি নাম ও ভরসাস্থল। দেশের একসময়কার সরকারী কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সালাম খান। বাঙালি কমিউনিটির একজন আপনজন।

কাজ করেন দুবাই সরকারের পানি ও বিদ্যুৎ বিভাগে। সকল ছোট সভা থেকে নিয়ে বড় সভা পর্যন্ত থাকে সালাম খানের সরব বিচরণ। কাজ করে যান নিরবে। বাংলাদেশ কমিউনিটির বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশ সমিতি। এই সমিতির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রফিক সিকদার।

তিনি আবুধাবীতে বসবাসকারী বাঙালিদের পরমাত্মীয়। কবিতার সাথে বসবাস করেও কমিউনিটিকে ধরে রেখেছেন সুচারুভাবে। কাজ করে যাচ্ছেন রাস আল খাইমাহ বেতারের বাংলা বিভাগের মহা পরিচালক হিসেবেও। দেশের এক সময়কার মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যাপক আব্দুস সবুর। আমিরাতে কমিউনিটি সমাজ গড়ার এক বলিষ্ঠ নেতা।

সাহিত্য-সংস্কৃতির যে কোনো অনুষ্ঠানে উনার বিশেষ আগ্রহে প্রবাসী সংবাদ ও সাহিত্য কর্মীরা স্বপ্নবুনেন নানারঙে। দুবাই শহরে আছেন সিলেট বিভাগ উন্নয়ন পরিষদের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল করিম ও ফখরুল ইসলাম। দুজনই সফল পুরুষ। বাংলার জন্য আর্থিক কাজ করতে দ্বিদাবোধ করেননা। একি সংগঠনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ এম আব্দুল্লাদের নাম ও গর্বভরে চলে আসে।

কমিউনিটি পাড়ায় একনিষ্ট এক নেতার নাম আল মামুন সরকার। দুবাই থেকে শারজাহ। আবার শারজাহ থেকে আবুধাবী আমিরাতের এদিক-ওদিককার সমস্যা সমাধানে নিরন্তর পথচলা তাঁর। শারজাহতে আছেন ড. নূর মোহাম্মদ। নূর ক্লিনিকের স্বত্ত্বাধিকারী।

নাম করেছেন আপন কর্মে। রয়েছেন বাংলাদেশ সমিতি শারজাহ শাখার সভাপতি হাফেজ আব্দুল হক এবং কমিউনিটি নেতা ব্যবসায়ী শিহাবুল আম্বিয়া। শারজাহ শহরের বাঙালিদের আরেক আপনজন ছিলেন প্রয়াত ড. নূরুন নবী। দুবাই শহরেরও অলি-গলির প্রিয় মানুষ ছিলেন মরহুম আলহাজ্ব মকবুল হোসাইন। আজ উনারা নেই কিন্তু বাঙালি পাড়ায় তাদের স্মৃতি আজো বেঁচে আছে।

যতদিন বাঙালি সমাজ থাকবে ততদিন-ই কর্মের মাঝে তারা বেঁচে থাকবেন। রাস আল খাইমার সফলজন পিয়ার মোহাম্মদ। রাস আল খাইমাহ বাংলাদেশ স্কুল থেকে নিয়ে প্রতি ক্ষেত্রে রয়েছে সফল বিচরণ। এছাড়াও আছেন বর্তমানে ইউএই এক্সচেঞ্জে কর্মরত আমিরাতের সাবেক রাষ্টদূত নাজিমুল্লাহ চৌধুরী। বর্তমানে দুবাইতে ইউএই এক্সচেঞ্জে’র বাংলাদেশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার আসনে আছেন।

এছাড়া রয়েছেন-দুবাই চিড়িয়াখানার মহাপরিচালক ড. রেজা খান, ইঞ্জিনিয়ার এসোসিয়েশেনের সভাপতি প্রকৌ. মশিউর রহমান, ড. আতিয়ার রহমান, ড. জহিরুল ইসলাম, কমিউনিটি নেতা ইফতেখার হোসেন বাবুল, জাওয়াদুর রহমান ও কাজী মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে আলোকিত নারীরাও অবদান রাখছেন এখানে তাদের মহিলা নেত্রী কাওসার নাজ চৌধুরী ও লেখিকা-শিক্ষিকা মোস্তাকা মৌলা উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া বর্তমানে আমিরিকা প্রবাসী মহিলা নেত্রী ফয়জুন নাহার লীনাও একজন সফল নারী। কাজ করেছেন অনেকদিন দুবাইতে। এখন নিউইয়র্কে বাস করছেন।

বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান সংগঠন আশার আলো এখানকার বাঙালি প্রতিষ্ঠানদের মধ্যে আবুধাবীতে শেখ খালিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল, বাংলাদেশ ইসলামীয়া স্কুল রাস আলখাইমাহ অন্যতম। দুবাইতে বাংলা স্কুল থাকলেও কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। আবারো দুবাইতে স্কুল স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখানে সামাজিক সংগঠনের মধ্যে বাংলাদেশ সামিতি আবুধাবী ও বাংলাদেশ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রাস আল খাইমাহ বিশাল জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া আঞ্চলিকভাবে সিলেট বিভাগ উন্নয়ন পরিষদ আমিরাত শাখা খুবই সচল।

এর সাথে পাল্লা দিয়ে জেগে ওঠেছে বরিশাল বিভাগ পরিষদ। কিন্তু চট্টগ্রামের বিশাল জনগোষ্ঠীর কেন্দ্রস্থল আমিরাতে নেই কোন চট্টগ্রামী সংগঠন। তবে তাবলীগ কমিটির নামে ইসলামী অনুষ্ঠান মিলাদ ও দোয়া মাহফিল চলে নিয়মিত। আমিরাতে বাঙালি সফলজনেরা প্রবাসী বাঙালিদের পরম আপনজনও। এদের বর্ণিল জীবনের বাঁকে রয়েছে নানা কর্মময় ঘটনা।

এখানে পরিচয় করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এমন ক’জন সফলজনদের। এদের বাইরেও অনেক থেকে গেছেন। উনাদের জীবন কাহিনী লিখার অপেক্ষায়। এজন্য চাই সকলের অকৃত্রিম সহযোগিতা। নিচের ইমেইলে জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো।

লেখক: সম্পাদক, মাসিক মুকুল, দুবাই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.