আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রলয়ের অপেক্ষায়!

আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই! অনেক দিন আগের ঘটনা, মনে হলো সবাইকে বলি একবার! তখন আমি প্রজেক্ট করছিলাম রেডন ডিটেক্টরের উপর, বাইরে ঠান্ডা ছিলো প্রতিদিন -৩০ এর মতো। আমার সাবেক রুম মেট আর আমি রাত তিনটার দিকে রান্না বান্না করে গান শুনতাম আর ঘুমের প্রিপারেশন নিতাম। সেদিন ছিলো শনিবার রাত, পার্টি নাইট। সোলেমন মাছ ভাজা আর মশুরীর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে আমি গান শুনছি রুমে আর রুম মেট বসে বসে খাজুর মাজুর করছে।

হঠাৎ রুম মেটের একটা ফোন: কে? : ও হ্যা কি খবর? : কেন কি হইছে? : ও আচ্ছা, কোনো সমস্যা নাই! এসে পড়ো! রুম মেটের এই কয়টা কথা শুনে তাকিয়ে রইলাম, রুম মেট হেসে বললো,"বস, একটা ভেজাল হইছে। নীচের তলায় সবুজ ভাইয়ের রুম মেট জামিল ভাই, পার্টিতে গেছিলো। তো পার্টি শেষ করবার পর নাকি একটা পাখি জোগাড় হইছে, তো রুম মেটের জন্য সবুজ ভাই আজকে রাতে এখানে শুতে চায়!" আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম,"হায়রে! এক লগে থাকলে কি সমস্যা, মাইয়া নিয়া রুমের এক কুনায় কাম করবো, সে লেপ মুড়ি দিয়া ঘুমাইবো। মাঝে মাঝে উকি ঝুকি দিবো, মাগনা মৌজ লইবো....যাই হোউক, এক্সট্রা জাজিম বিছায় দেন!" একটু পর সবুজ ভাই রুমে নক করে ঢুকে পড়লেন। আমি কানে হেড ফোন দিয়ে এমন ভাব করলাম যে আমি গান শুনছই।

আসলে আমি এদের আড্ডায় যেতে চাচ্ছি না। ঘটনা যেটা হবে শিওর রুমে আড্ডা বসবে। গান ছাড়িনি শুধু কথাগুলো শুনছি! : আরে সবুজ ভাই, আপনের রুম মেট দেখি কঠিন জিনিস। আমার তো এইসব বিষয় মাথাতেই ঢুকে না! : আর বইলেন না, খুবই ঘোড়েল চীজ। প্রতিসপ্তাহে পার্টিতে যাওয়া চাই, মাঝে মাঝে বোতলও নিয়া আসে!জামিল ভাই যে এত দ্রুত মানাই গেছে এইখানে এইটাও আশ্চর্য্য বিষয়! : হ, বছর দুয়েক ধইরা এইসব বুঝা সোজা কথা না, আর আমিতো মাত্র ২ মাস! : নারে ভাই, সে এইখানে ৭ বছর, এর আগে ইতালী থাইকা আসছে ২ বছর! আমার রুম মেট একটা কাশি দিয়া বললো চা বানাইবো নাকি।

সে গেল চা বানাইতে। আর আমি কম্পুতে খুব ভাব ধইরা একখান প্রোগ্রাম খুইলা সেইটার দিকে আন্দাজে চোখ চালাইতে থাকলাম। হঠাৎ রুমে আরেকখান বেলের শব্দ। রুমমেট দরজা খুইলাই শুনলাম হাসাহাসির শব্দ। একটু পর রুমে দেখি স্বয়ং জামিল ভাই।

আমি দেইখাই আর তর সইলো না, হেড ফোন নামাইয়া খাড়াই গেলাম গরম ঘটনা শোনার জন্য। সবুজ ভাই হাসতাছে, দুই জন মুখোমুখি আর আমার রুম মেট দুইজনের মাঝখানে। : আরে জামিল ভাই, এতো তাড়াতাড়ি কাম শেষ, একটু দেখাইলেনও না! : আরে ধুর মাইয়াটা ভালা না। রুমের সামনে আইসা কইলো ওর নাকি মানিব্যাগ হারাই গেছে। রুমে ঢুকলো তারপর টয়লেট ব্যাব হার কইরা গেলো গা।

কইলো ও নাকি ওর মানিব্যাগ নিয়া আবার আসবো!আসলে ওর ধান্ধা অন্য! : ও, তাইলে কি অখন আইবো? : আইতেও পারে আবার নাও পারে। সমস্যা নাই, আড্ডা দিতাছিলেন নাকি? আমি "না না" করতে যামু অমুন সময় রুম মেটের হাতে কফির দুই কাপ দেইখা জামিল কয়,"ও আচ্ছা আড্ডা বসছে মনে হয়। তাইলে আহেন আড্ডা দেই। আজকা ডিসকো তেমন জমে নাই!" আমি এমুন ভাব ধইরা খাড়া্য রইলাম যেনো আমার উপর একখান থাডা নাযিল হইছে। আমার রুমমেটের একখান সমস্যা আছে, সে স্হানীয় ব্যাংকে গেলে কফির ব্যাগ ফ্রিতে জ্যাকেটের চীপায় নিয়া আসবে আর দিনের মধ্যে দুইতিনবার কফি বানাবার সময় জিজ্ঞেস করবে,"বস চা বানাই?" এমনকি রাত তিনটার সময় ঘুমাতে যাবার আগেও তার কফি খাওয়া দরকার।

আর সকাল বেলা উঠে গম্ভীরগলায় বলবে,"ও্স্তাদ, ইদানিং রাতে ঘুম আসে না!" যাই হোউক জামিল ভাইরে রুমের ভিতর আড্ডায় বসতে দেইখা আমি কানে আবার হেড ফোন দিয়া জানাইলাম,"ভাই, প্রজেক্ট নিয়া দুনিয়া আমার কামরুখ কামাক্ষা হইয়া যাইতাছে। আমি একটু পরেই আড্ডায় আসতাছি!" শুরু হইলো তাগো আড্ডা, প্রথমে জামিলভাইয়ের ফ্লোর : আর কইয়েন না, সাইপ্রাসের মাইয়ারা যে কত খারাপ চিন্তা করতে পারবেন না। : কেন কি হইছে? : এই ধরেন আজকা ওরা আই লাভ ইউ কইছে আপনারে, কালকাই আবার আরেকটার লগে শুইতে গেছে গা। তয় ইতালির গুলান এই দিক থিকা ভালো। আগে তো এইখানে অনেকে মাইয়া দিয়াও পারমিশন লইছে! : এখন সমস্যাডা কুন জায়গায়? : সমস্যা কুনো জায়গায় না।

বিদেশীগো ওরা চিনা গেছে। আজকা পারমিশন পাইলে কালকা যে এ আর ঘরে আইবো না এরম কেস অনেক আছে! এখন এরা খুজে আ্ফ্রিকান পোলা, সব বড় বড় জিনিস! : ধুরো, দিন দিন সব কঠিন হইয়া যাইতাছে। দুইজনের কনভার্সেশনে আমার রুম মেট সুবিধা করতে পারতাছিলো না। হঠাৎ বইলা ফেললো,"অনেকদিন ধইরা কার্ড খেলি না, আসেন, এক দাঈং খেলি!" কার্ড খেলার কথা শুইনা আমার মনটাও নাইচা উঠলো। মেলা দিন টোয়েন্টি নাইন খেলি না।

হেড ফোন নামাইয়া একটা মোচড় দিলাম,"তো কি নিয়া আলোচনা?" ওমনি জামিল ভাই কইলো,"এই তো চারজন হইয়া গেছে। রনি ভাই, আপনেরা তো সরকারী হোস্টেলে ফাটাইয়া কার্ড খেলতেন তাই না?" আমি হাইসা কইলাম,"আবার জিগস, পয়লা তিন বছর তো গেলো কার্ড পিটাইয়া আর লেডিস হলে এডাল্ট সিডি পোস্টে পাঠাইয়া!" আমার রুম মেট তার ড্রেয়ার বো্র্ড থিকা কার্ড বের করতে করতে বললো,"আরে ওনারা তো ওস্তাদ মানুষ, আমরা কুষ্টিয়া ইউনিভর্সিটির হলে ধুমাইয়া খেলতাম পুরা ফোরথ ইয়ার পর্যন্ত। " সবুজ ভাই কার্ড হাতে নিয়া বলা শুরু করলো,"তাইলে আসেন হইয়া যাক। দাড়ান আমি ক্রিজ মাইরা দেই। ভালা কইরা ক্রিজ না মারলে নতুন কার্ডে সব একজায়গায় চইলা যায়!" আমি একটা গেন্জ্ঞি গায়ে দিয়া কইলাম,"ভাই আমি আসলে ঝানু প্লিয়ার না, কালারে মাঝে মাঝে গন্ডগোল হইয়া যায়।

সীটের হিসাবটা আপনেরা করেন!" ওমনি দেখি তারা পুরা কার্ড বাছা শুরু করলো, আমি কইলাম, "ভাইয়েরা, কি খেলবেন আপনেরা? আমি কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল ব্রিজ পারি না। খালি টোয়েন্ট নাইন আর কল ব্রিজ!" অমুন সময় জামিল ভাই কইলো,"ভাই আমরা তো ৯ কার্ড খেলুম, মিলান্তি। টোয়েন্ট নাইন তো অনেক দূরের কথা, কল ব্রীজও পারি না!" আমার রুম মেট হাসি দিয়া কয়,"আমি আসলে ৯ কার্ড খেলার জন্য কার্ড কিনছি এইখানে আইসা! তাও আবার একটু নিয়মটা কন!" নাইন কার্ডের কথা শুইনা মেজাজ চরমে খিচলো। মন চাইলো এই দুইটারে থাবড়া দিয়া বাইর কইরা দেই! কুনো মতো এক ঘন্টা খেইলা, জামিল ভাইরে জিগাইলাম,"ভাই, খিদা লাগছে। নুডলস বানাই?" জামিল ভাই হাসি দিয়া কইলো,"আবার জিগস, তয় নুডলসের পর আমাগো টোয়েন্টি নাইন শিখাইতে হইবো!" আমি নুডলস বানাইলাম একটু কম।

আসলে খিদা মেইন কথা না, মেইন কথা ছিলো নাইন কার্ড খেলা বাদ দেয়া। নুডলস সব তাগো দিতেই সব শেষ! দেইখা মনে হইলো রাতে এরা খায় নাই! আমি একটু ভাব নিয়া ইনডাইরেক্ট জিগাইলাম," আচ্ছা জামিল ভাই, দেশ থিকা টাকা আননের রাস্তা কি? : কখনো আনাই নাই, তয় আপনে শহীদ ভাইয়ের সাথে কথা বইলা দেখতে পারেন। কি টাকা আনাইবেন নাকি? আপনে তো মিয়া মাসে অনেক টাকা কামান! : আরে নারে ভাই, আরেকজনের জন্য দরকার। আপনে কখনো আনান নাই? : নারে ভাই, আনামু কেমনে? টাকা দেওয়ার সমর্থ নাই! : তাইলে আপনের এইখানে চলে কেমনে? : এই দুয়েকটা বিজ্ঞাপন বিলি আর মাঝে মাঝে এর ওর বাসায় কাজ কইরা দেয়া! জামিল ভাই শুরু করলো,"ভাই, অনেক কষ্ট করতাছি, এসাইলামের কেস করছি বছর দুয়েক। জানি টিকবো না, তবু যদি হয়! দেশে গেলে কি করুম, লোন আছে মাথার উপর, যা বাকী ছিলো তার সবকিছু বেইচা সাইপ্রাসে গেছিলাম।

গিয়া দেখি কিছু নাই। পরে ছোট একটা বোটে জানটা কোনো মতে হাতে নিয়া আসি ইতালীতে। যখন তীরে সাতার কাইটা আসি, তখন মনে পড়ে নৌকায় চাচাতো ভাইটারে পানির পিপাসায় সাগরের পানি খাইতাছে। তারপর এইখান ঐ খান ঘুইরা এখন এইখানে। " ____________________________________ আমার কাছে এসব ঘটনা খুব সাধারন মনে হয়, লোকটা যে পথে এসেছে, মারা যাবার কথা ছিলো ক্ষুধায় অথবা পানিতে ডুবে।

লোকটা কিছু অতিরিক্ত সময় বেচে আছে! ছোট একটা দেশ, বিপুল জন সংখ্যা। জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির হার কমলেও যেভাবে বাড়ছে সেটাও কম নয়। তার উপর চলছে দুর্নীতি। সম্পদের সুষম বন্টন তাই কল্পনা করা যায় না। যার সুযোগ হয় তারই দেশ ছাড়তে মন চায়।

যদি কালকে কোনো এক ইবলিশ বলে,"তোকে আমি ১ লাখ টাকায় এমন একটা দেশে নেবো যেখানে জাহান্নামের আগুনের মতো গরম!" মানুষ সেখানেও যাবে, কারন ১ লাখ টাকা খুব অল্প টাকা। আমরা আমাদের দেশটাকে পাল্টাতে পারিনি, যারা পাল্টাতে চান তাদেরকে আমরা টেনে ধরি, তাদের নানা দোষ বের করি, কারন আমরা হিংসা করি। আমরা সবাই অল্প বিস্তর মানসিক ভাবে অসুস্হ। সমালোচনা স হ্য করতে পারি, কারো ফিরিয়ে দেয়াটাকে ভালো চোখে দেখি না। দেশটা অন্ধকারে নিমজ্জিত।

আমার কাছে মনে হয় দেশটার সুদিন আসবে, খুব সুন্দর একটা সময় আসবে। কিভাবে যদি বলতে হয় তাহলে একটা থিওরীর কথা বলি যেটা এস্ট্রোফিজিক্সে একসময় খুবই জনপ্রিয় ছিলো। কোয়ান্টাম ইনফ্লেশনের কারনে মহাবিশ্ব সম্প্রসারনশীল কিন্তু একসময় এটা হঠাৎ করে সংকুচিত হতে শুরু করবে এবং সেটা একসময় কেন্দ্রবিন্দুতে সবকিছু চলে এসে আবারও বিগ ব্যাং ঘটাবে! আমাদের মধ্যে এই আধার ছড়িয়ে গেছে, যেটাকে আমরা রুখতে পারবো না। আমাদের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয়, সামাজীক অবক্ষয় নীতি ভ্রষ্টতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়ছে এবং বেড়েই চলেছে। একসময় প্রলয়ে সৃষ্টি হবে, আমরা এতটাই অসহনশীল হয়ে যাবো যে আমরা সবাই সবার মাথা খাবো।

এর ফলে আমাদের মাঝে আামাদের সংখ্যা বা অস্তিত্ব কমে যেতে থাকবে, ফলে আমাদের মধ্যে থেকে যারা হারিয়ে যাবে তারা তাদের আধার নিয়ে হারিয়ে যাবে। আস্তে দেখা যাবে প্রলয়ের একটা পর্যায়ে আমাদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যাক মানুষ আমরা বেচে আছি আর স্বভাবতই আমাদের মধ্যে তখন এই অন্ধকার জিনিসটার পরিমান কম হবে। তখন আমরা বুঝতে পারবো কিভাবে আমাদের নিজেদেরকে গড়তে পারবো। হাতে গোনা কয়েকটা মানুষকে আবারও শুরু করবো এই দেশের যাত্রা, এবং ঠিক তখনই আমাদের দেশটা হবে নিখুত একটা দেশ! ঈদের দিনে কিছু লোক আমরন অনশন করছে। তাদেরকে ঈদ মোবারক জানানোর খুব ইচ্ছে ছিলো, আর আফসোস হচ্ছে আমি দেশে নেই।

দেশে থাকলে আমিও ওদের দলে মিশতাম! আমি এই প্রলয়ের শুরু হওয়াটা দেখতে ভয় পাই! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।