আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদের দিনে হওয়া কিছু আজগুবী ঘটনা আর সেই সাথে সবাই কে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা

হাউকাউ পার্টি একবার ছোট বেলায় এক ঈদের দিনে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম, উমম হারিয়ে যাওয়া না বলে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলাম বলাটাই মনে হয় ঠিক হবে। সে সময়ে আমরা ঈদ করতে প্রতি বছর আমার দাদুবাড়ী মানিকগঞ্জে যেতাম, সে সময় গুলো ছিল আমার জন্য দমবন্ধ করা আনন্দের সব দিন! আশেপাশের প্রায় সমবয়সী ফুফুদের সাথে সারাদিন খেলা, বরশি দিয়ে মাঝ ধরা কিংবা পেয়ারা গাছ থেকে পেয়ারা পেরে খাওয়া। তখন সামাজিক পরিবেশটা এখনকার মতো এতটা ভয়াবহ ছিল না বলে, আমরা যখন ঈদের দিন নিশ্চিন্তে দল বেধে এদিক সেদিক কত দূর পর্যন্ত ঘুরে বেড়োতাম তখন মা বাবা তেমন কোন আপত্তি বা চিন্তা করতেন না। আমরা সেই সব পড়শী স্বজনদের সাথে এমন সব বাসাতেও ঘুরতে গেছি, যাদের আমি হয়ত চিনিই না! সারাদিন ঘুরেটুরে বিকালে ক্লান্ত হয়ে বাসার ফিরতাম আর ভাবতাম; ইশ ঈদের দিনটা শেষ হয়ে গেলো!! এক ঈদে আমার পাশের বাসার ফুফিদের সাথে বেড়াতে গেলাম ফুফির এক বান্ধবীর বাসায়। মানিকগঞ্জটা জেলা শহর হলেও একটা গ্রাম গ্রাম ভাব আছে, আমরা হেটেই বেড়াতাম।

তো যাদের বাসায় গেছি, তাদের বাড়িটা ছিল অনেকটা দ্বীপরে মতো! মানে চারিদিকে বর্যার পানি আর মাঝে উচু মাটিতে বাড়ি, এমন অনেক বাড়িই তখন দেখা যেতো খোদ শহরের মধ্যেই। এই সব বাড়িতে যাবার ব্যাবস্থা ছিল লম্বা লম্বা এক বা দুটি বাশ দিয়ে তৈরি সাকো! ফুফির যে বান্ধীর বাসায় আমরা গেলাম উনাদের বাসাটাও এমন লম্বা সাকো পেরিয়ে যেতে হবে, আমি তো ভয়েই শেষ। আমি অনেক ছোট তখন ৮/৯ বছর বয়স হবে, কিছুতেই সেই সাকো পার হবো না। অগত্যা ফুফিরা বললো, ঠিক আছে তুমি এখানে দাড়িয়ে থাকো আমরা যাবো আর আসবো। আমাদের সাথে আমার বাসার কাজের মেয়েটাও ছিল; আমারই বয়সী, আমরা দাড়িয়ে রইলাম।

দাড়িয়ে আছি তো আছিই ওদের আর আসার নাম নেই, বাসায় যে ফিরে যাবো সেই রাস্তাও ভাল করে চিনি না (কারণ আমরা বছরে মাত্র দুবার যেতাম)। তখন আমাদের মাত্তবর কাজের মেয়েটা বললো আপু চলো আমরা রিক্সায় করে মেলা দেখে আসি, তারপর বাসায় চলে যাবো, রিক্সাওয়ালাকে বললে সে আমাদের নিয়ে যেতে পারবে। সেই কথা শুনে আমিও ভাবলাম ভালোই তো, এই ভেবে দু'জনে তিন টাকা দিয়ে একটা রিক্সায় করে কালিবাড়ি রথের মেলা দেখতে চলে গেলাম। আগে মানিকগঞ্জে সাতদিন ধরে রথের মেলা হতো! আমরা মনের খুশিতে এক ঘন্টা ধরে মেলা দেখে দেখে চারটা আমড়া আর একটা স্প্রীং এর গলা ওয়াল বুমাথা নাড়া বুড়ো পুতুল কিনে ঘুরছি! আর ওদিকে ফুপিরা এসে দেখে আমরা নেই সেখানে, ওরা ভাবলো বোধ হয় কোন ভাবে বাসায় চলে গেছি। ভয়ে ভয়ে ওরা বাসায় এসো আমার মেঝ চাচিকে আমারা এসছি কিনা।

মেঝ চাচী বললো না, ও তো তোমাদের সাথে গেছে, সেই কথা শুনে ওদের যা চেহারা হলো তাতেই চাচী বুঝে গেলেন কিছু একটা হয়েছে। চেপে ধরাতে বললো; ওকে খুজে পাচ্ছি না। সেই কথা শুনে আমার চাচী সেন্সলেস হয়ে গেলেন, তার আবার ফিট হয়ে যাবার অভ্যাস আছে! আমার সেজ আর ছোট চাচা আর সেই ফুফির ভাইয়েরা সাথে সাথে হোন্ড নিয়ে বেড়িয়ে পরলো খুজতে, কারন ততক্ষনে ঘন্টা দুয়েক সময় পার হয়ে গেছে, আর সেখানে আমি কিছু চিনি না, আমাদের আর তেমন কোন স্বজনদের বাসায়ও নেই যে সেখানে যাবো। আমার মা বাবা তখনও কিছু জানতনে না কি হচ্ছে! ওদিকে আমি আর আমাদের সেই কাজের মেয়ে করেছি কি, মেলা দেখে রাস্তদিয়ে হাটছি এমন সময় একটা বাড়ি দেখে মনে হলো এই বাড়ি তো আমি চিনি, সেটা ছিল আমরা মেঝ চাচার শ্বশুড় বাড়ি। তখন সেই বাসায় গেলাম সেই বাসার নানা নানুতো আমাকে দেখে অবাক, আমি একা একা এসছি দেখে! সেই সময় তো আর মোবাইল টোবাইলের চল দিল না, তাই তারা তারাতরি আমাদের খাইয়ে দাইয়ে, সেলামী দিয়ে একটা পরিচিত রিক্সায় তুলে দিলেন বাসায় ফেরার জন্য।

ওদিকে আমাকে পাওয়া যাচ্ছে না প্রায় তিন ঘন্টা হয়ে গেছে, আমার মা জেনে গেছে ঘটনা, সে মোটামুটি শয্যাশায়ী। আমার দাদা দাদী একবার ঘরে যাচ্ছে একবার বাইরে, চাচারা তখন সম্ভব অসম্ভব সব জায়গা খুঁজে ফিরছে আর থানায় যাবার কথা ভাবছে! এই সময় আমরা দুই জনে হাতে করা চারটা আমড়া আর একটা বুড়োর পুতুল নিয়ে রিক্সা থেকে নামলাম বাসায়। আমাদের দেখে আমার দাদী যে ভাবে দৌড়ে এসে আমাকে কোলে নিয়েছিলেন সেই দৃশ্য আজও আমার মনে আছে। দাদী আজ আর নেই কিন্তু তার সেই ভয়, খুশি আর কান্না মাখানো মুখটা আজও আমার চোখের সামনে ভাসে। এরপর আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো আম্মুর কাছে, আম্মু সব শুনলেন প্রথমে এরপরে প্রথম মাইরাটা খেল মমতা, আর তারপরে আমি আমার জীবনের বেশির ভাগ রোজার ঈদেই এমন কিছু না কিছু ঘটনা আছে, আরেক বার হলো কি ঈদের দিন সকালে আমরা সব উঠোনে বসে আছি, এমন সময় একটা কুমির সাইজের গুইসাপ ঢুকে গেলো, আম্মুর বেড রুমে।

সেই সময় আমাদের বাসার পাশেই একটা পুকুর আর বাঁশের ঝার ছিল, ওখানে থাকতেন তেনারা। সেই গুই মিঞা ঢুকেই সোজা চলে গেলে আলমারীর পেছেন, আর বের করা যায় না, আলমারীর পেছনে লাঠি দিয়ে খোচাখুচিও করা যাচ্ছে না! গুইসাপ যে ফোস ফোস আওয়াজ করে সেটা ঐবার প্রথম শুনলাম! এর মধ্যে একজন আবার বললো গুইসাপ নাকি লেজ দিয়ে বাড়ি দেয় আর যেখানে লাগে সেই জায়গাটা পচে যায়! এই শুনে কেউ আর সাহস করে বেশি কাছেও যায় না। যাই হোক আমাদের সেই ঈদের সব আনন্দ মাটি করে করে দিয়ে গুই বাবাজী বিকালের দিকে নিজে থেকেই বের হয়ে চলে গেলেন ছোটবেলার এমন কি মেঝবেলারও ঈদের দিন গুলো ছিল সত্যিকারের ঈদের দিন, খুশির দিন। আগের রাতে পড়াতো আপুরা হাতে বাটা মেহেদীর নক্সা করে দিত, সকালে গোসলের পরে মা দিত হাতের পিঠে নেইল পালিশের গোল গোল ফোটার নক্সা করে! এরপর সারাদিন ঘুরাঘরি, হাতে সালামী রাখার ব্যাগ। একটু বড় হবার পরে যতই ঘোরাঘুরি করিনা কেন ঠিক দুপুর তিনটার সময় হাজির হতাম বাসায় বাংলা সিনেমা দেখার জণ্য, তখন তো একটাই টিভি চ্যানেল ছিল! বড় হবার সাথে সাথে আনন্দের পরিমানও আনুপাতিক হারে কমতে লাগলো! এখন ঈদ মানে আমার কাছে হাজারটা কাজের বোঝা, এই দরজা জানালরা পর্দা কচো , সোফার কাভার, বিছানার চাদর বদলাও, স্পেশাল বাসনপেয়ালা নামিয়ে পরিস্কার করে রাখো, আর রান্না তো আছেই।

ঈদ শেষ এই দঙ্গল আবার গুছিয়ে রাখো আজ রাইসুল ভাইয়ের ঈদ আনন্দমেলা নিয়ে একটা পোস্ট পড়তে গিয়ে মনে হলো আমি প্রায় গত ১০ বছর ধরে মনে হয় টিভিতে আনন্দমেলা দেখিনি, অথচ এক সময় ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখ নিয়ে জোর করে বসে থাকতাম এটা দেখার জন্য! যাই হোক সেদিন নাজনীন আপু, নীলু আর ইভান বলছিল ঈদের জন্য রেসিপি পোস্ট দিতে, কিন্তু রেসিপি পোস্ট দিতে গেলেই আমার শুধু বাঁশ বা মরিচ ভর্তার রেসিপি টাইপ পোস্ট দিতে ইচ্ছা করে। সেগুলো দেখলে আবার রন্ধনশিল্পী সুরঞ্জনা আপু আর অপ্সরা ওরফে শায়মার হাতে মাইর খাবার সমূহ সম্ভাবনা আছে তবে যেহেতু ঈদের সময় কাজ করতে করতে আমার হালুয়া টাইট অবস্থা হয়ে যায়, তাই কয়েকটা হালুয়ার রেসিপি দিলাম....... গাজরের ছানার হালুয়া.~ গাজর পরিমান মতো নিয়ে সবজি কুরানীতে মিহি করে গ্রেট করে নিন, এরপরে এই গাজরটা হালকা করে পানিতে ভাপিয়ে পানি ফেলে দিন! খেয়াল করবেন গাজরটা যেন একটু একটু শক্ত থাকে বেশি গলে না যায়। এরপরে ননস্টিকি প্যানে পরিমান মতো ঘি (এক কেজি গাজরে আধা কাপ ঘি) গরম করে এতে এলাচ, দারচিনি ভেঙে দিন, তারপরে গাজর কুরানোটা ঢেলে দিন। স্বাদ মতো চিনি মিশিয়ে ক্রমাগত নাড়তে হবে। হালুয়ার মজা বাড়ে কিন্ত এই নাড়ার উপরেই।

এরপরে এর সাথে দুই কাপ ঘন দুধ মেশান, আবার নাড়তে থাকুন! অণ্যদিকে ছানাটা (১ কেজি গাজরে ১/২ কেজি ছানা) হাত দিয়ে গুড়ো করে নিন, তারপর আরেকটা প্যানে ঘি, চিনি আর ছানা দিয়ে নাড়তে থাকুন। নাড়তে নাড়তে শুকিয়ে ছোট ছোট দানা বাধলে নামিয়ে রাখুন। এরপরে গাজরের হালুয়ার সাথে মিশিয়ে আবার নাড়ন, হালুয়ার পাত্রের গা থেকে আলাদে হয়ে আসবে আর ঘিটা উপরে গ্লেজ করবে, তখন বুঝবেন কাজ শেষ। একই ভাবে কাঁচা পেপের হালুয়াও বানানো যায়। এক্ষেত্রে পেপেটা খোসা ছাড়িয়ে সিদ্ধ করে খুব ভাল ভাবে থেতো করে নিন, এরপরে একটা কাপরে বেধে ঝুলিয়ে রাখুন পানি ঝরে যাবার জন্য।

পানি ঝরার পরে বাদ বাকি প্রসেস এক, শুধু এটাতে ছানা মেশাবেন না। ছানার পায়েস~ প্রথমে ছানাটা ভাল করে মথে, পরিস্কার একটা কাপড়ে পেচিয়ে শক্ত চৌকা কোন ওয়েট দিয়ে চাপা দিয়ে রাখতে হবে ২/৩ ঘন্টা। এর পরে সেটা বার করে ছুরি দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে নিন। আরেকটা পাত্রে ৪ লি: দুধ জ্বাল দিতে থাকুন, ঘনে হয়ে ২ লি: এর মতো হলে চিনি, দারচিনি, এলাচ দানা মেশান। এরপর ছানার টুকরো গুলো ছেড়ে দিন এর মধ্যে।

আচঁ কমিয়ে ৭/৮ মি: জ্বাল দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। বাটিতে ঢেলে উপরে জাফরানের কেশর ছিটিয়ে দিন। ছানার পায়েসের মূল বিষয়টা কিন্তু ছানা মথা আর চেপে রাখার উপর নির্ভর করছে। ছানা ঠিক মতো মথা না হলে আর শক্ত না হলে কিন্তু দুধের দেবার পরে ছাড়া ছাড়া হয়ে যেতে পারে অনেক বকবকানি হলো এবার সবাইকে ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.