আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদের দিন চলে আসুন শহীদ মিনারে, দেশের অথর্ব যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য দায়ীদের সমূলে উৎপাটনের আন্দোলনে আপনারও ভূমিকা আছে

মেঘমুক্ত নীলাভ দিঘীর কবোষ্ণতা খুঁজছে মন! গত ২৪ আগস্ট ছিল ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী জনতার আয়োজনে সড়কপথে দূর্ঘটনা রোধে প্রতিবাদ সভা ও ব্যর্থ যোগাযোগমন্ত্রী ও নৌমন্ত্রীর অপসারণ দাবিতে আন্দোলন। সকাল থেকে টিপ-টিপ বৃষ্টি পড়ছিলো। আস্তে আস্তে বৃষ্টির তোড় বাড়তে লাগলো। আমরা ভাবছিলাম আজকে এই প্রবল বৃষ্টিতে কি পারবো আমাদের প্রতিবাদ সভা সম্পন্ন করতে। ধীরে ধীরে এই প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও সবাই জমায়েত হওয়া শুরু করলো, ছাতা মাথায়, রেইন কোট বা কিছু ছাড়াই।

বৃষ্টির কারনে প্রথমে মাইকে ইলেকট্রিক লাইন দেয়া যাচ্ছিলো না, পরে অনেক কষ্টে সেটা ম্যানেজ করা গেল। আজকের এই প্রতিবাদ সভা যেন কিছুতেই ভন্ডুল না হয়। ছোটখাট বৃষ্টি কিছুই না,কত বড় বড় বাধা আমাদের সামনে। সবগুলো মিডিয়ার লোকজনও হাজির হয়ে গেল শীঘ্রই, পলিথিনে ক্যামেরা মুড়িয়ে তারা যথাসম্ভব ধারণ করলো। প্রতিবাদ সভা ফেসবুকে একটা ইভেন্ট ছিল ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই ’।

আয়োজনে ছাত্র-শিক্ষক পেশাজীবী সংগঠন থেকে শুরু করে দেশের সচেতন অনেকগুলি সংগঠন যোগদান করে। এ রকম একটা বিষয় নিয়ে যে প্রতিবাদ সভা হতে পারে তা হয়তো পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষের কাছেই অস্বাভাবিক ঠেকবে। কারন মৃত্যু সেটা স্বাভাবিক হোক আর অস্বাভাবিক সেটা কখনোই কাম্য নয়। আর অস্বাভাবিক মৃত্যু বলতে মূলত নানা দূর্ঘটনায় মৃত্যু বোঝায়। মোটামুটি ভাবে ধরা যায় দূর্ঘটনা ব্যাপারটাই মূলত আকস্মিক।

কিন্তু এখন সবাই জানে আমাদের দেশে দূর্ঘটনা বিশেষত সড়ক দূর্ঘটনা এখন আর আকস্মিক কোন ঘটনা নয়। প্রতিদিন ৪০-৫০ জন মানুষ গাড়ি চাপা পড়ে মারা যাবে এটাই নৈমত্তিক এখন। আর অন্যান্য দেশের পরিসংখ্যানের সাথে মিলিয়ে এটাও বলার উপায় নেই যে সড়কে এমন ঘটবেই কিছু করার নেই। উন্নতদেশের কথা বাদ দিলেও অনুন্নত অধিকাংশ দেশের তুলনায়ও আমাদের দেশের সড়ক দূর্ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে বেশী। তারমানে এখন আর বিষয়টি মোটেও দূর্ঘটনা বা আকস্মিক কোন ব্যাপার নেই।

এখন এটা পরিকল্পিত হত্যা। যে পরিকল্পনার নীল নকশা তৈরি হচ্ছে দেশের দুর্নীতিবাজ যোগাযোগমন্ত্রী আর নৌ-মন্ত্রীদের তত্ত্বাবধানে,যা দেখেও না দেখার ভান করছে প্রধানমন্ত্রী, তাদের সাফাই তিনি প্রতিদিনই গাচ্ছেন। তাই স্বাভাবিক মৃত্যু কামী মানুষের প্রতিবাদ সভা অনিবার্য হয়ে উঠে। ফেসবুকের এ ইভেন্টে সাড়া দেয় হাজারো মানুষ। বেলা সাড়ে ১১টায় প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে শহীদ মিনারে উপস্থিত হন ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।

সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। সভাপতিত্ব করেন কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। সভার দাবিসমূহ এবং ঘোষণা সভার দাবিগুলো এখন আমাদের দেশের প্রায় সকল নাগরিকের মনের কথা কিংবা ক্ষোভ। দাবিগুলো হল: ১.যোগাযোগ ও নৌপরিবহণ মন্ত্রীর অপসারণ ২.সড়ক সংঘর্ষের নামে হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ ৩.ড্রাইভিং লাইন্সেস প্রক্রিয়ায় অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ এবং ঘোষণা ছিল 'ঈদের আগে মন্ত্রীদের অপসারণ সহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন না হলে ঈদ হবে শহীদ মিনারে'! পরিসংখ্যান যা বলে আজকে জাফর ইকবাল স্যারের একটা লেখা (ঘুরে দাঁড়ানোর সময় ) পড়লাম পত্রিকায়। তিনি দু:খ করে বলেছেন আমাদের বড় একটা অর্জন আমরা পাকিস্তানকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজের দেশকে স্বাধীন করেছি।

পাকিস্তান নামক এই দুর্ভাগা দেশটিকে দেখে এখনও আমাদের করুণা হয় কারন সেখানে জঙ্গি হামলায় ৩০-৪০ জন মানুষ দৈনিক নিহত হয়। তিনি বলেছেন কিন্তু দু:খের বিষয় আমাদের দেশেও প্রতিদিন এই পরিমান মানুষ নিহত হয় সড়কে। তাহলে আমাদের এ অর্জনের মূল্য কি? জাফর ইকবাল স্যার যে কথাটি উল্লেখ করেননি সেটা হল, আমাদের দেশে সড়কে মৃত্যুর হার পাকিস্তানের তুলনায় চারগুন বেশি। শুধু পাকিস্তান নয় ভারত, শ্রীলংকাসহ মোটামুটি আশপাশের সবদেশ থেকে আমাদের দেশে এই হার অনেকগুন বেশি। কিছু পরিসংখ্যান দেখলেই আমরা কী অবস্থায় আছি তা বোঝা যায়- ■ এক যুগে সরকারি হিসাবে ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৩৮ হাজার লোক।

আহত হয়েছে ৩৫ হাজার। এ সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৫০ হাজার। ■ প্রতি ১০,০০০ নিবন্ধিত যানবাহনে বিপরীতে আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ এর বেশি। পাশের দেশ ভারতে এ সংখ্যা ২৫.৩, মালয়শিয়ায় ৫.৫ আর আমেরিকায় ২.১! ■সরকারি হিসাবে বছরে গড়ে তিন হাজারের বেশি লোক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ১২ থেকে ২০ হাজার।

■আমাদের দেশে এখন সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির ২ শতাংশেরও বেশি। ■ গুরুতর আহত ব্যক্তির সংখ্যা প্রতিবছর ১ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। এ অবস্থার নেপথ্যের নয় , প্রত্যক্ষ কারন ■সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীন জাতীয় ও আঞ্চলিক১৮ হাজার কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সড়কের দশা বেহাল ও ত্রুটিপূর্ণ ■বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী যোগ্যতার পরীক্ষা ছাড়া গত ১৮ বছরে এক লাখ ৮৯ হাজার লোককে পেশাদার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এখন আরও ২৮ হাজার প্রার্থীর জন্য লাইসেন্সের আবেদন করা হয়েছে। এগুলো করছেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী।

■২০০৭ সালের হিসাবে বলা হয়েছে, এ বছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ হাজার ৩৪ জন মারা যায়। বাংলাদেশের প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১২ দশমিক ৬ জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় (ডব্লিউএইচও) ■সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের তিন মাস পর পর বৈঠক করার কথা। কিন্তু এই সরকারের পৌনে তিন বছরে বৈঠক হয়েছে মাত্র তিনটি। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই তিনটি বৈঠকের একটি করা হয়েছে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের অনুরোধে। গত ২৭ জুলাই বৈঠকটি হয়।

এখানে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। উল্টো সাড়ে ২৪ হাজার পেশাদার চালককে পরীক্ষা ছাড়াই লাইসেন্স দেওয়া এবং পরিবহন খাতে চাঁদা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হয়। ■নৌমন্ত্রীর চাপে ২০০৯ সালে ১০ হাজার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল পরীক্ষা ছাড়া (আজকে জাফর ইকবাল এই ব্যক্তির কর্মকান্ড দেখে অবাক হয়ে বলেছেন: তিনি নৌপরিবহনমন্ত্রী, যদি লঞ্চের সারেং চাইতেন, আমি বুঝতে পারতাম। রাস্তায় গাড়ি চালানোর ড্রাইভার চাওয়ার অধিকার তিনি কোথা থেকে পেয়েছেন, আমি সেটা বুঝতে পারছি না। বিষয়টা অনেকটা অশিক্ষিত ২৪ হাজার মানুষকে স্কুলের মাস্টার করে দেওয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবদার করার মতো।

তিনি সম্ভবত যুক্তি দিতে পারতেন, মাস্টারদের লেখাপড়া জানতে হবে কে বলেছে? বইয়েই তো সব লেখা আছে, মাস্টাররা ছাত্রদের পেটাবে, ছাত্ররা পড়বে!) ■যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বুয়েটের এআরআই গত বছর জুনে সারা দেশের ২১৬টি স্থানকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ (ব্ল্যাক স্পট) হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সওজের কাছে পাঠায়। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু এক বছরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ■সড়ক দুর্ঘটনাকে নরহত্যা হিসেবে গণ্য করে দায়ী চালকদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার আইন করা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর চাপে সরকার পরে আইন সংশোধন করে।

এখন চালকের ভুলে দুর্ঘটনা হলে এক থেকে তিন বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। আইনটি যুগোপযোগী করতে ২০০৭ সালে একটি কমিটি করেছিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। কমিটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে। খসড়াটি চার বছর ধরে এ-টেবিল ও-টেবিল ঘুরছে, আইনে পরিণত হয়নি। ফলে একটি দুর্ঘটনার পর কয়েক দিন হইচই হলেও বাস্তব কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

আরও কিছু কারনের মধ্যে রয়েছে- সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যে প্রচারণা সেটার অভাব। যেটা করার কথা ছিল বিআরটিএর। যাদের ওয়েবসাইটে ঢুকলে খুব ঠান্ডা মাথার মানুষ না হলে আপনা হতেই্ আপনার মুখে গালি চলে আসবে। ইংল্যান্ডে একদম বাচ্চা বয়সেই “look right, look left, then right again” মেসেজ সবার মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের প্রচারনার কোন বালাই নেই।

তাই ড্রাইভার যদি ওভারটেক করে একটু আগে যায় যাত্রীরা তাতে খুশিই হয়, বরঞ্চ সুযোগ পেলে তা যদি কোন ড্রাইভার না করে তখন গালাগালি শুনতে হয় ড্রাইভারকে। একজন তারেক মাসুদ,মিশুক মুনীর কিংবা আশরাফুল ইমাম কিংবা নাম না জানা হাজারো হত্যা ২৪ আগস্টের প্রতিবাদ সভায় সবচেয়ে বেশি যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছিল তারা হলেন সিলেট মেডিকেলের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। কারন তাদের হৃদয়ের ক্ষতটা এখনও দগদগে। ২০ আগস্ট তারা হারিয়েছেন তাদের অতি প্রিয় একটা মুখ- আশরাফুল ইমাম শাকিল। পঞ্চম বর্ষে সবে পা দিয়েছিলেন তিনি।

সন্ধানী সিওমেক ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। ২০ আগস্ট সকালে ইউনিক বাসে করে সিলেট থেকে ঢাকা আসছিলেন বোনের বাসায় ঈদের ছুটিতে। বাস ড্রাইভারের বেপরোয়া চালানোর কারনে ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়। (দোষটা বাস ড্রাইভারেরই ছিল-বাসের পরিচিত যাত্রীদের থেকে শুনেছি, পত্রিকার লোকজন বাস কোম্পানীর নাম মুখে আনতে চায় না, পত্রিকাগুলো সবাই ট্রাক-ড্রাইভারের দোষ দেয়) ড্রাইভাররা নিজেদের বাচিয়ে নেয় শেষমুহূর্তে। অন্তিম মুহূর্তে তারা এই কাজটা খুব ভাল পারে।

আহত-নিহত হয় যাত্রীরা। বোঝাই যাচ্ছে নামকরা পরিবহন সংস্থাগুলোও যাচাই করে চালক নিয়োগ দিচ্ছে না। লাইসেন্সই যেভাবে দেয়া হয় তাতে সে উপায়ও হয়তো সীমিত। মারা যান শাকিল। যিনি আগের দিনও সন্ধানী কার্যালয়ে থেকে রক্ত সরবরাহ করেছেন মুমূর্ষ রোগীদের জন্য।

যার সাপ্লাই করা রক্তের ব্যাগগুলো দিয়ে সেই বাসের তারই সহযাত্রী আহত কয়েকজন বেঁচে যায়। থেমে যায় একটা হৃদয় যেটা ছিল মানুষের বিপদে ছিল উৎসর্গীকৃত, যিনি শীঘ্রই হয়ে উঠতেন পরোপকারী শুভ্রমনের ডাক্তারদের দুর্লভ তালিকার একজন। কিছুদিন আগে সড়কে মারা যান দেশের প্রতিভাবান দুজন সন্তান-তারেক মাসুদ,মিশুক মুনীর। তাদের নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে, বিক্ষোভ হয়েছে। মারা যান তাদের সাথে থাকা আরও তিনজন।

প্রতিদিনই এমন অসংখ্য খবর পত্রিকার পাতা জুড়ে থাকে সে খবরগুলো কিন্তু আমাদের চোখেও পড়েনা । অপরিচিত কিংবা হতদরিদ্র এসব মানুষের মৃত্যুতে যেন আমাদের কিছুই যায় আসে না, তাই বছরে ১২ থেকে ২০ হাজার মৃত্যুর পরও কোনো সরকারের কোনো দিন টনক নড়েনি, টনক নড়েনা আমাদেরও। কিন্তু নিহত মানুষটির পরিবার আর বন্ধুবান্ধবদের কাছে ব্যাপারটা দেশের কৃতী সন্তানদের থেকে লক্ষগুন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রতিবাদের জন্য পত্রিকাগুলোতে এক ইঞ্চি কলামও থাকে না, থাকার কথাও না। পত্রিকা তাহলে হয়ে যাবে শোকপত্র।

২৪ আগস্টের প্রতিবাদ সভায় মিশুক মুনীরের কাছের একজন বলছিলেন, তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনীরের মৃতদেহ শহীদ মিনারে আনা হল, কিন্তু তাদের সাথের বাকী তিনজনের মৃতদেহ শহীদ মিনারে আনা হল না কেন। প্রতিটি মৃত্যুই কি সমান নয়! তারেক মাসুদ যে সড়কে মারা যান গত বছরের ৩১ জুলাই সচিব রাজিয়া বেগম এবং অতিরিক্ত সচিব ও বিসিকের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছিল এই একই সড়কে। কিছুদিন আগে ভুয়া চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৪০এর অধিক খুদে শিক্ষার্থীর করুণ মৃত্যু হলো ২৮ জুলাই বেপরোয়া ট্রাকচালকের কারণে বগুড়ার শাহজাহানপুরে ১৮ জন সাধারণ মানুষের ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ রাস্তায় পড়ে রইল উপরের পরিসংখ্যান পড়ে আপনার কি এখনো মনে হয় এগুলো নিছক দুর্ঘটনা। না পরিকল্পিত হত্যা! ঈদ হোক এবার শহীদ মিনারে আলোচনা সমালোচনা বহু হল, সান্ত্বনা- আহাজারিও নৈমত্তিক। যত যাই করেন না কেন দিন শেষে মন্ত্রী মহোদয় বলবেন: আমি সঠিকভাবেই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি কিংবা যাত্রীদের এই বিড়ম্বনার জন্য আগের সরকার দায়ী আর প্রধানমন্ত্রী বলবেন আমাদের সিভিক সেন্সের অভাব আছে গৎ বাঁধা সব কথা বলবে সব রাজনীতিক নেতারাই।

কারন এভাবেই তারা সব দমন করেন, সমস্ত ক্ষোভ আর তাদের যত ব্যর্থতা উড়িয়ে দেন বাগাড়ম্বরে। প্রতিবাদ সভায় আবুল মকসুদ বলেছেন, ‘তারেক-মিশুকের মৃত্যুর পর আমরা ভেবেছিলাম যোগাযোগমন্ত্রী নিজেই পদত্যাগ করবেন। কিন্তু সেই বোধ তাঁর নেই। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা তাঁকে পদচ্যুত করার দাবি জানাচ্ছি। এ দাবি মানা না হলে আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঈদ পালন করব।

’ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘৩১ আগস্টের মধ্যে ব্যর্থ মন্ত্রীরা পদত্যাগ না করলে শহীদ মিনারে ঈদ পালনের যে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, আমরা তাতে যোগ দেব। ’ মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক কামাল লোহানী, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ,সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার,মিশুক মুনীরের ছোট ভাই আসিফ মুনীর সহ সাধারণ অনেক মানুষ আহ্বান করেছেন এবং প্রতিজ্ঞা করেছেন এ আন্দোলনে যোগদান করার। তাই যারা দেশের জন্য একটু হলেও ভাবেন, কিংবা নিজের পরিবার পরিজনের কথা ভাবেন কিংবা আপনার সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভাবেন তারা চলে আসুন। যারা যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে দেশের বাড়ি যেতে পারেননি,ঢাকায় বাধ্য হয়ে রয়ে গেছেন তারাও আসুন। সবাই আসুন-শহীদ মিনার মানুষে যেন ছেয়ে যায়।

তখন সেটা আর জাতীয় নয়, ইন্টারন্যাশনাল নিউজ হবে। নেতা-মন্ত্রীরা কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবে, বাধ্য হয়ে কিছু করতে মাঠে নামবে। আসুন,আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিনটা ছিল আমাদের সাধারণ মানুষের অনেক বড় এক অর্জনের দিন-এমন কথা যেন আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারি! চলে আসুন! উৎসব হোক অর্জনের! তথ্যসূত্র ও সংযুক্তি: ১.unescap এর রিপোর্ট : The Status Paper On Road Safety Problems In Bangladesh ২.যোগাযোগমন্ত্রীকে পদচ্যুত না করলে শহীদ মিনারে ঈদ ৩.Death On The Asphalt ৪. ফেসবুক ইভেন্ট : এবারের ঈদ হোক শহীদ মিনারে... ৫.ভাগ্য বুঝি সড়কপথেই আমাদের অনিবার্য মৃত্যু লিখে রেখেছে ৬.সড়ক নিরাপত্তা উপেক্ষিত ৭. ঘুরে দাঁড়ানোর সময় -মুহম্মদ জাফর ইকবাল ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.