আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলাম পূর্ব জেরুজালেম।

প্রবাসী পৃথিবীতে সবচে’ বেশী সংখ্যক মানুষের কাছে ধর্মীয় পবিত্র ভুমি কোনটি? সবচে বেশী যুদ্ধ, রক্তপাত হয়েছে কোন নগরীকে ঘিরে? সবাই বিনা দ্বিধায় বলবেন সেই নগরী হল জেরুজালেম। পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশের ও বেশী মানুষের কাছে পবিত্র এ নগরী। ৫০০০ বছরের মানব সভ্যতার ইতিহাস সম্বৃদ্ধ , তিন একেশ্বর বাদী ধর্ম ইসলাম, খৃস্টান এবং ইহুদী ধর্মের পবিত্রভুমি জেরুজালেম। ২৩ বার অবরুদ্ধ হয়েছে এ নগরী , হাত বদল হয়েছে ৪৪ বার, আক্রান্ত হয়েছে ৫২ বার ,আর সম্পুর্নভাবে ধ্বংশ হয়েছে দুই বার, পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এ নগরী। হিব্রু ভাষায় নাম ইয়েরুশালেম, ইংরেজীতে জেরুজালেম আর আরবী ভাষায় আল-কুদস।

হিব্রু ভাষার অর্থ শান্তির পবিত্র ভুমি আর আরবী শব্দ আল কুদস শব্দের অর্থ হল শান্তির অভয়ারন্য। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়েছে এ নগরীকে উরুসালিম(Urusalim) সালেম(, Salem) মাউন্ট মরিয়া(, Mount Moriah) আদোনাই উরাহ(, Adonai Urah), জেবুস( Jebus) জীয়ন(, Zion) সিটি অফ ডেভিড( the City of David) এরিয়েল(, Ariel) ,আলিএয়া ক্যাপিটোলিনা(Aelia Capitolina). জেরুজালেম নগরীর কেন্দ্রস্থল হল পুরাতন জেরুজালেম বা Old City. আয়তন মাত্র 0.৯ বর্গ কিলোমিটার। চারদিকে দেওয়াল দিয়ে ঘেরা এই জায়গাটায় হল পবিত্রতম স্থান। এখানে রয়েছে “Temple Mount” বা Temple Moriah. চারদিকে দেওয়ালে রয়েছে ১১টি গেট বা প্রবেশদ্বার, যার মধ্যে ৪টি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া এবং ৭ টি এখন খোলা আছে। গেট গুলো হল, জাফা গেট,জীয়ন গেট, দুঙ্গ গেট, গোল্ডেন গেট, হেরড’স গেট, লায়নস গেট, দামাস্কাস গেট, এবং দি নিউ গেট।

এখানেই রয়েছে মুসলমানদের কাছে পবিত্র “ মসজিদে আল আকসা, ডোম অফ দি রক” খৃস্টানদের পবিত্র গীর্জা “চার্চ অফ দি সেফুলক’র” ইহুদীদের পবিত্রতম স্থান পশ্চিম দেওয়াল বা ওয়েলিং ওয়াল” .ওল্ড সিটি বা পুরান শহরের রয়েছে ৪ টা অংশ বা কোয়ার্টার মুসলিম কোয়ার্টার, ইহুদী কোয়ার্টার, আর্মেনিয়ান কোয়ার্টার, এবং খৃস্টান কোয়ার্টার। সময়পঞ্জীঃ- খৃঃপুঃ (BCE) প্রোটো ক্যানান ৪৫০০- ৩৫০০, জেরুজালেমের “গিহন” ঝর্নার পাশে মানুষের বসবাসের সবচে পূরান পুরতাত্বিক নিদর্শন ২০০০ BCE: মিশরের মধ্যম রাজবংশের শিলালিপিতে জেরুজালেম নগরীর উল্ল্যেখ পাওয়া যায়। তখন নাম ছিল রুসালিমুম । আরবী শব্দ “সালাম” বা হিব্রু শব্দ “ শালোম” বা ক্যানান ধর্ম অনুসারে অন্ধকারের দেবতা “শালিম” অনুসারে নাম এ রকম হয়ে থাকতে পারে। ১৮৫০ BCE: বাইবেল এবং এবং কোরানে বর্নিত হযরত ইব্রাহীম বা “আব্রাহাম” ছেলে ইসাক কে ইশ্বরের নির্দেশে কুরবানী করতে উদ্যত হন এই সময়কালে ১৭৫০ BCE: শহরের চারপাশে পাথরের দেওয়ালের প্রাচীনতম পুরাতাত্বিক নিদর্শন।

. কেনান এবং নতুন মিশরীয় সাম্রাজ্যকাল- ১৫৫০-১৪০০ BCE: জেরুজালেম মিশরের নতুন সাম্রাজ্যের অংশ। . ১৩৩০ BCE: মিশরের সম্রাট আমেনহোটেপের কাছে জেরুজালেমের “কেনান” শাসক আব্দিহেবার লেখা চিঠি “আমর্না” বর্ন মালায়। তখন নাম ছিল উরুশালিম। ১১৭৮ BCE:মিশরীয় রাজা রামেসীস- ৩ এবং জলদস্যুদের মধ্যে যুদ্ধ। ১০০০ BCE: জেবুসীয়দের জেরুজালেমে বসবাস।

স্বাধীন ইজরায়েল এবং জুডাহ সাম্রাজ্যকাল ১০০০ BCE: রাজা ডেভিড স্বাধীন ইজরায়েল রাস্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। জেরুজালেম ইজরায়েলের রাজধানী এবং “ ডেভিডের নগরী” হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ৯৬২: রাজা সলোমন “প্রথম মন্দির” নির্মান কাজ শুরু করেন। ৯৩১-৯৩০ BCE: রাজা সলোমনের মৃত্যু। রাজা সলোমনের মৃত্যুর পর রাজ্য দক্ষিনের জুডাহ এবং উত্তরের ইজরায়েল অংশে ভাগ হয়ে যায়।

৯২৫ BCE: মিশরের ফারাও শিশঙ্ক জেরুজালেম দখল করেন। ৮৫৩ BCE: এসীরিয় সম্রাট শালমানেসের এবং ইজরায়েল ও জুডাহের মধ্যে কারকারের যুদ্ধ। ৮৫০ BCE:আরব, ইথিওপিয়ান এবং ফিলিস্তিনিদের জেরুজালেম দখল ও লুন্ঠন। ৮৩০ BCE: আরাম দামাস্কসের হাজায়েল জেরুজালেম দখল করেন। . ৭৮৬ BCE: উত্তরের ইজরায়েল জেরুজালেম সহ দক্ষিনের জুডাহ রাজ্য দখল করে শাসক আমাজিয়াহকে বন্দি করে।

৭৪০ BCE: এসীরিয় লিপিতে তিগলাথ পিলেসার ৩- এর জুডাহ দখলের উল্ল্যেখ। নিও এসীরিয় এবং নিওব্যাবিলনিয়ান সাম্রাজ্যকাল। ৭৩৩-৭১২ BCE: এসীরিয়া কর্তৃক জেরুজালেম অবরোধ। শিলালিপিতে জেরুজালেমের ২০ মাইল পশ্চিমের “গেজের” দখলের উল্ল্যেখ (নিমরুদের এসীরীয় রাজকীয় প্রাসাদে সংরক্ষিত)। ৬২৭ BCE: নিও এসীরীয় সাম্রাজ্যের স্থলে নিও ব্যাবিলনিয়ান সাম্রাজ্য।

৬০৯ BCE: মিশরের ২৬তম রাজবংশ জেরুজালেম দখল। ৫৮৭-৬ BCE: ব্যাবিলনিয়ান সম্রাট নেবুচাদনেজার জেরুজালেম দখল করেন। পার্সিয়ান(আকামেনিড) সাম্রাজ্যকাল ৫৩৯ BCE: পারস্য সম্রাট সাইরাস দি গ্রেট জেরুজালেম সহ ব্যাবিলন দখল করেন ৫১৬ BCE: পারস্য সম্রাট দারিয়ুস দি গ্রেটের রাজত্বকালে দ্বিতীয় মন্দির নির্মান। ৪১০ BCE: জেরুজালেম এ সম্মেলন. ৩৫০ BCE: পারস্য সম্রাট আর্টাক্সেরেক্সেস-৩ জেরুজালেম বিদ্রোহ দমন করে পুনর্দখল করেন এবং ইহুদীদের কাস্পিয়ান সাগর তীরে পুনর্বাসন দেন। . ম্যাসিডনিয়ান(টলেমিক/ সেলেউসিড) ৩৩২ BCE: আলেকজান্ডার দি গ্রেট পারস্য সম্রাট দারিউস৩ কে পরাজিত করেন।

সমগ্র পারস্য সাম্রাজ্যের সাথে জেরুজালেম ও গ্রীক দখলে আসে। ৩০১ BCE: টলেমি-১ জেরুজালেম দখল করেন। টলেমি-১ ছিলেন আলক্সান্ডারের সেনাপতি । তিনি মিশরের শাসক নিযুক্ত হন এবং মিশরে টলেমি বংশের গোড়াপত্তন করেন পরে ফারাও উপাধি ধারন করেন। ২০০ BCE: তে জেরুজালেম দখল করেন আলেকজান্ডারের প্রধান সেনাপতি সেলুকাস আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর ২১২ BCE: তে ব্যাবিলনের সম্রাট হন তিনি ।

১৪৫-১৪৪ BCE: সেলুসীয় সম্রাট দেমেত্রিয়াস জেরুজালেম দখল করেন। ১৪০-৬৩ BCE: হাসমোনিয়ান রাজারা জেরুজালেম শাসন করেন। হাসমোনিয়ানরা ছিলেন সেলুসীয় সাম্রাজ্যের অংশ পরে স্বাধীন রাজা হিসেবে রাজত্ব করেন। রোমান ৬৩ BCE: থেকে ১১৭ খৃস্টাব্দ প্রথম রোমান যুগ। জেরুজালেম রোমানদের দখলে আসে।

সম্রাট হেরড টেম্পল মাউন্টে মন্দির নির্মান করেন যা হেরডের মন্দির হিসেবে খ্যাত। এই সময়ে যীশু খৃস্টের জন্ম এবং ক্রুশবিদ্ধ হন। ১৩০ থেকে ৩১৩ খৃস্টাব্দ পরবর্তী রোমান যুগ সম্রাট হেড্রিয়ান জেরুজালেমের নাম রাখেন এলিয়া ক্যাপিটলিনা। তিনি জুপিটার বা বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে মন্দির নির্মান করেন। বাইজেন্টাইন-সাসানিদ-বাইজেন্টাইন জেরুজালেম।

৩২৪- ৬২৯। সম্রাট কনস্ট্যান্টাইনের মা হেলেনা হেড্রিয়ান মন্দির ধংশ করার নির্দেশ দেন এবং তিনি যীশু খৃস্টের ক্রুশ আবিস্কার করেন। ৬১০ সালে জেরুজালেম মুসলিম প্রার্থনা বা সালাহ র দিক বা প্রথম কিবলা হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে। ৬১৪ পারস্যের সাসানিদ সম্রাট জেরুজালেম দখল করেন, জেরুজালেমের অধিকাংশ স্থান জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংশ করে দেন। ৬২০ সালে হযরত মোহাম্মদের মিরাজ এবং ইস্রা।

৬২৪ সাল কিবলা জেরুজালেম থেকে মক্কার দিকে স্থান্নতরিত হয়। ৬২৯ সাল বাইজেন্টাইন সম্রাট সাসানিদদের পরাজিত করে জেরুজালেম পুনরায় দখল করেন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.