আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলাম খতরামে , ইসলাম ইন ডেঞ্জার , ইসলাম গেল ইসলাম গেল ।

সেই একই সুর , একই চিন্তা চেতনা । শুধু ভাষা ব্যবহারে ভিন্নতা । তাই বা কতটুকু , শুধু স্থানিক আর কালিক পরিবর্তন । স্থান আর সময়কে তো পিছনে নেয়া যাবেনা কিন্তু তাকেও বাংলাদেশ জিন্দাবাদের মোড়কে পাকিস্তানীকরণের নিরন্তর প্রচেষ্টারই ধারাবাহিক সহিংস মঞ্চায়ন শুক্রবারের তাণ্ডব । জাতির পতাকা খামচে ধরেছে পুরনো শকুন ।

স্মৃতির খেরোখাতা খুললে আমরা দেখতে পাই এই গো আজম গংরা কিভাবে ৭১ এ মিথ্যাচার করেছে , ইসলামের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে কি নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে বাংলার মাটিতে । তাদেরই ভাবশিষ্যরা একই কায়দায় একই সংহার মূর্তিতে আক্রমণ করছে রাষ্ট্রের উপর । আমরা ৭১ দেখিনি কিন্তু ২০১৩ দেখে কল্পনা করতে পারি তারা ৭১ এ কতটা হিংস্র ছিল । ৭১ এ তাদেরই পত্রিকা সংগ্রামে দেখেছি ইয়াহিয়াকে পাশে বসিয়ে গো আজম মুনাজাত করছে আল্লাহ যেন ইয়াহিয়ার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামকে বুলন্দ করে । ইয়াহিয়ার মদ্য আর নারীপ্রীতি তৎকালে সর্বজন বিদিত ছিল ।

এনিয়ে সর্বসাধারণে নানা মুখরোচক গল্প প্রচলিত ছিল । এমনটাও বলা হত ইয়াহিয়ার সামনে দিয়ে মাদী মাছি যেতেও ভয় পেত । দেখুন গো আজমের ভণ্ডামি সে মুনাজাত করছে এহেন ইয়াহিয়ার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামকে বুলন্দ করার জন্য । ৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের চাকাকে আবার পিছনে ঘোরানো হল । ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে মীমাংসিত সত্যকে সে দিনেই জলাঞ্জলি দেয়া হল ।

সেদিনের ধারাবাহিকতায় আজ বাংলার জমিনে দেখতে হচ্ছে অসুর আর দানবের খাণ্ডব নৃত্য । কি কারনে জয় বাংলাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে পাকিস্তানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ,পাকিস্তান জিন্দাবাদের আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ রাখা হল ,কি কারনে ৭১ এর উন্মাতাল দিনগুলিতে যে স্বাধীন বাংলা বেতার প্রেরনা জুগিয়েছে অনাহার আর অর্ধাহারে জীবনকে হাতের মুঠিতে রাখা যুদ্দ্বরত মুক্তিযোদ্বাকে সেই বাংলাদেশ বেতারের নাম বদলিয়ে পাকিস্তানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ রেডিও পাকিস্তানের আদলে রেডিও বাংলাদেশ রাখা হল । রেডিও টিভি তে জয় বাংলা নিষিদ্ব হল । । রেডিও টিভিতে মুক্তিযুদ্বের কোন চলচিত্র প্রদর্শিত হত না ।

পরে যদিও সিনেমা হল বা টি ভি তে ছবি গুলি দেখানো হত সে গুলি ছিল কর্তিত । জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনি গুলি কেটে দেয়া হত । দায়সারা ভাবে জাতীয় দিবস গুলি পালন করা হত । পাকিস্তানের নাম মুখে আনা যেত না । এটাকে শুধু নাম পরিবর্তন বলে সরলীকরণ করলে চলবে না ।

এটা হল কেবলা পরিবর্তন । সংবিধানে বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযুক্ত করা হল । যে লেফট রাইট করা সামরিক শাসকটি এটা করলেন তার কি উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে ইসলাম কায়েম করা নাকি পাকিস্তনী প্রেতাত্মাকে বাংলাদেশে পুনর্বাসিত করা । যে গো আজম ১৬ ই ডিসেম্বরের আগে পাকিস্তানে পালিয়ে যায় । সেখান থকে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে "পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্বার কমিটি " করে প্রচার চালায় যে বাংলাদেশে মসজিদ মাদ্রাসা ধ্বংস করা হচ্ছে এবং এর জন্য সে প্রচুর পেট্রো ডলার চাদা তুলে ।

অতঃপর সে লন্ডনে চলে যায় । জিয়াউর রহমানের পরামর্শ ক্রমে সে অসুস্থ মাকে দেখার জন্য পাকিস্তানের পাসপোর্টে এক মাসের ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে আস্তানা গেড়ে বসে । এর আগে ৭৫ এর ডিসেম্বরে দশ হাজার রাজাকারকে মুক্ত করে দেয়া হয় এবং জামাতকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয় । মুল কথা এখানেই কি ভাবে জামাত বাংলাদেশে রাজনীতি করে আজকের পর্যায়ে আসে । এখানে অবশ্য ইনিয়ে বিনিয়ে নানা বিতর্ক করা হয় কে কাকে কোলে বসিয়েছে , মাথায় বসিয়েছে,পায়ে হাত দিয়েছে ,মাথায় হাত বুলিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি ।

আর এক সামরিক শাসক যার দুর্নীতি , নারীপ্রীতিও সর্বজনবিদিত সে তার পূর্বসূরি সামরিক শাসক থেকে এক কাঠি সরস । সে এবার ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম বলে ঘোষণা করে । এখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করতে চাই আমি রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম করল কেন সে প্রশ্ন কিন্তু করছি না । আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এরশাদের ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করা এরশাদের ইসলাম প্রিয়তা নাকি ক্ষমতায় থাকার একটি কৌশল । আমরা একসময় শোনলাম ইসলামের জন্য খালেদা জিয়ার কারবালা মাতমের বাংলাদেশী সংস্করণ ইসলাম গেল্‌, ইসলাম গেল ।

উনি পাকিস্তানি প্রেতাত্তার নাকি সুরে ৯৬ সালে বলতে লাগলেন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে মসজিদে উলুধ্বনি হবে আর বাংলাদেশ ইন্ডিয়া হয়ে যাবে । দেখুন ইসলামের জন্য খালেদা জিয়া কত দরদী । অথচ তার গেট আপ মেক আপ দেখুন , তার জীবন যাপন প্রনালী (বাজারে অনেক গুজব , তার বাসভবনে পাওয়া দ্রব্যাদি , সে গুলি থাক ) দেখুন ইসলামের সাথে দূরতম কোন সম্পর্ক আছে কিনা । এবার আসা যাক বর্তমান শাহ বাগ আন্দোলন সম্পর্কে আরেক ইসলাম দরদী (?) মাহমুদুর রহমান কি লিখেছেন। মাহমুদূর রহমান গত ১৭ ই ফেব্রুয়ারী তার আমার দেশ পত্রিকায় স্বনামে লিখেছেন ।

"সরকারবান্ধব তাবত্ মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়লো একটি অনুল্লেখ্য জমায়েতকে মহিমান্বিত করার গুরুদায়িত্ব পালনে। খাদ্য, পানীয়, আনন্দ উপকরণের ছড়াছড়ি পড়ে গেল। নীতি ও আদর্শের ধ্বজাধারী একশ্রেণীর বাম তরুণরা লুটেরা, লুম্পেন, ভূমি দস্যুদের পাঠানো যাবতীয় খাদ্যসামগ্রী গো-গ্রাসে গলাধঃকরণ করতে করতে ‘গণবিপ্লবের’ প্রস্তুতি নিতে থাকলেন। আড়ালের ইন্ধনদাতারা ঘন ঘন পলিটব্যুরোর বৈঠকে বসতে লাগলেন। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র নেমে গেল আন্দোলনকারীদের সহায়তা প্রদানে, আরাম-আয়েশের বন্দোবস্তে।

এই প্রথম দেখলাম সরকার কিংবা এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে তরুণদের কোনো প্রতিবাদ, কোনো আন্দোলন হচ্ছে না। আমাদের তারুণ্যের সঙ্গে এ যুগের প্রজন্মের কোনো মিল খুঁজে পেলাম না। মহাজোটের সঙ্গী-সাথী আর স্বঘোষিত তরুণ প্রজন্মের নেতৃবৃন্দের এক এবং অদ্বিতীয় লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ালো দেশ থেকে সব ভিন্নমত বিতাড়ন। আবেগের জোয়ারে জ্ঞানবুদ্ধি হারিয়ে অনেকে শাহবাগ পিকনিককে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করারও ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। একবিংশ শতাব্দীর মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা শহরে পুলিশি প্রহরায় নাচানাচি করছেন, গান গাইছেন, হাতে হাতে বিরিয়ানির প্যাকেট ঘুরছে, রাত নামলে আলো-আঁধারিতে একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব বিনিময় হচ্ছে।

এই পরিবেশের সঙ্গে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রের চার দশক আগের পাকিস্তানি বর্বরদের বিরুদ্ধে সেই অবিস্মরণীয় সংগ্রামের তুলনা শুনলে গা গুলিয়ে ওঠে, বমনেচ্ছা হয়। এমন প্রতিক্রিয়াশীল , ইতর , অভদ্র নীচ প্রকৃতির মানুষের লেখা নিয়ে মন্তব্য করতে আমার ভাণ্ডারে কোন শব্দ তো নেইই আমার মনে হয় বাংলা ভাষায়ও নেই । লক্ষ লোকের সমাবেশকে বলছে অনুল্লেখ্য । এখানে অংশগ্রহনকারী তরুণদের ঘরে যেন আরাম আয়েশ নেই। আছে পিচ ঢালা পথে ।

ঘরে যেন বিরানী নেই । আছে রাস্তায় । সারাদিন অনাহারে অর্ধাহারে তরুণদের আন্দোলনকে এভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা একমাত্র পশু প্রবৃত্তির মানুষের পক্ষেই সম্ভব । প্রথম থেকেই শাহবাগ আন্দোলন সম্পর্কে খড়গ হস্ত মাহমুদুর রহমান রাজীব হত্যার পর এবার ফ্যাসিবাদের জিগির ছেড়ে রাজিবের ব্লগে কিছু লেখা নিয়ে রাজাকারদের সেই আদি ও অকৃত্রিম ইসলাম গেল ইসলাম গেল জিগির তুলেন । রাজিব দেড় বছর আগে এই ব্লগ গুলি লিখে ।

ব্লগ মত প্রকাশের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলেও অবশ্যই এটার পরিধি সীমিত । আর উদাহরণ স্বরূপ সামুতে সম্ভবত এক লক্ষ লোক ব্লগে লেখাগুলি পড়েন । এরমধ্যে গুটিকয় হাতে গোনা নাস্তিক আছে যাদের আমরা ব্লগেই তলাধুনা করি কিন্তু মাহমুদুর রহমান ঢালাও ভাবে বললেন শাহবাগ নাস্তিকদের আস্তানা । এই সীমিত পরিসরের লেখা গুলিকে আমার দেশ ব্যপকভাবে প্রচার করে মানুষকে উসকে দেয় । তারই প্ররোচনার ফলশ্রুতিতে শুক্রবারে জামাত শিবির তাণ্ডব চালায় সারা দেশ জুড়ে ।

। যে ভাবে তারা ধর্মের নামাবলী গায়ে দেশের নানা স্থানে গন জাগরন মঞ্চ , শহীদ মিনার ভেঙ্গেছে , ছিঁড়েছে জাতীয় পতাকা এমনকি মসজিদের জায়নামাজে অগ্নি সংযোগ করেছে , মসজিদের স্থাপনা ভেংগে ইট খুলে পুলিশের উপর ঢিল ছুড়েছে , এটাকে কিছুতেই ইসলাম প্রীতি বা নবী প্রীতি বলা যায়না । মওদুদী যেমন মিথ্যা উস্কানি দিয়ে কাদিয়ানী দাঙ্গা সৃষ্টি করেছিল তেমনি মাহমুদুর রহমানও চেয়েছিল দেশে দাঙ্গা বাঁধিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে যুদ্ব অপরাধীর বিচার বানচাল করতে । এটা মাহমুদুর রহমানের ধর্ম প্রীতি বা রাসুল প্রীতি নয় এটা হল তার পূর্বসুরী গো আজম, নিজামি, জিয়া, এরশাদ, খালেদার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা মাত্র । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.