আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রমজানের অনুশীলন : একটি সরল ব্যাখ্যা

মানুষ শরীরবৃত্তিয় প্রাণী এবং একাধারে আধ্যাত্মিক প্রাণী। মানুষের রয়েছে দেহ এবং মন। এই দুটি একে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয় অর্থাৎ একে অন্যের পরিপূরক। এ বিষয়টি বোঝানোর জন্যে একটি সহজ উপমা হচ্ছে- মানুষের মনে যখন দুঃখের উদয় হয়, তখন তার চোখ দিয়ে পানি পড়ে। আবার ঠিক উল্টোটিও হয়, কেউ যদি কৃত্তিম ভাবেও চোখে পানি আনে, তার মন এতে দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়।

শরীর ও আত্মা অথবা দেহ ও মনের এই পরস্পর সম্পর্কিত শ্রোতধারা মানুষকে মানুষ করে রেখেছে। আমাদের নবী(সাঃ) তাই শিক্ষা দিয়েছেন, অসুস্থ মানুষকে দেখতে গেলে আমরা যেন তাকে বলি যে, তার অসুখ তেমন কিছু না, এটা দ্রুত সেড়ে যাবে। মানষিক অনুপ্রেরণার মাধ্যমে শারীরিক রোগ সাড়াবার পথে এ ভাবেই তিনি আমাদের শিক্ষা দেন। শরীরের পুষ্টির জন্যে যেমন খাদ্য দরকার, আত্মার পুষ্টির জন্যে তেমনি খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে। শরীরের বিকাশ ও বৃদ্ধির জন্যে আমাদেরকে খেতে হয় বস্তু জগতের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য।

শুদ্ধ আত্মার বিকাশ ও বিনাশের থেকে রার জন্যে তেমনি আমাদেরকে আহোরণ করতে হয় আধ্যাত্মিক জগতের রুহানী খাদ্য । শারীরিক খাদ্য গ্রহনের ফলে যেভাবে শরীর বৃদ্ধিপায়, য় থেকে রা পায় এবং তাজা থাকে তেমনি আধ্যাত্মিক খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে আত্মা উন্নতির পথে পাড়ি দেয় ও তাজা থাকে। রূপক ভাবে বলা হলেও সহজেই এটা অনুমেয় যে ক্রমাগত পরিশীলতার দিকে প্রশিতি হয়ে পরিচালিত হবার মাধ্যমে আমরা এ খাদ্য আহোরণ করতে পারি। খোদার স্মরণে ও ভীতিতে মন্দ থেকে বিরত হয়ে ভাল কাজে ব্রত হওয়া(তাকওয়া)হল রূহানী খাদ্য সম। আল্লাহ তাআলা বলেন “তোমাদের উপর(রমজান মাসে) সওম ফরয করা হয়েছে যেমনভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর তা করা হয়েছিল।

আশা করা যায় যে, তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে। ” তাই রমজানের উদ্দেশ্য - তাকওয়া অর্জন। রমজানের উপকার দুইটি। (১) প্রথমত শারীরিক উন্নতি (২) চূড়ান্ত ভাবে আধ্যাত্মিক উন্নতি অর্থাৎ তাকওয়া অর্জন। আমরা সবাই জানি যে মানুষকে বাঁচার জন্য খেতে হয়।

আবার এই মানুষের মৃত্যুও হয় খাবারের কারণে। আপাত কথাটিকে বিপরীতাত্মক মনে হলেও এটি সঠিক। এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ আরো একটি বিষয় বর্ণনা করলে এটি বোঝা যাবে, যেমন আমরা বলতে পারি যে- বিজ্ঞানের বিকাশেই আমরা এখন আরাম আয়েশ ভোগ করে বেঁচে আছি তদ্রুপ বিজ্ঞানের কারণেই আমাদের ধ্বংস অনিবার্য হবে। খাদ্য গ্রহণের কারণে আমাদের পুষ্টি যেমন হয় এবং যেমন ভাবে আমার শক্তি অর্জন করি ঠিক তেমনি ভাবে খাদ্য গ্রহণের ফলে সৃষ্ট বর্জ্য যা প্রধানত: রোচনতন্ত্র (কিডনি সিস্টেম) ও পরিপাক তন্ত্রের(ডাইজেস্টিভ সিস্টেম) ক্রিয়ায় শরীর থেকে বেড়িয়ে যায় তার অতিরিক্তটুকু দেহে ক্রমাগত ভাবে বিশেষত কোষে ও শিরায় গাদ ও তিকর দ্রব্য হিসেবে জমা হওয়ার ফলে মানুষ দিনে দিনে বুড়িয়ে যায় ও একদিন মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীরে অনিবার্য ভাবে জমা হওয়া বর্জ্য নিষ্কাষণে রোজার একটি মাস ফলদায়ক হিসাবে কাজ করে।

দীর্ঘণ ধরে পানাহার বর্জনের প্রকৃয়া শরীরে জমা হওয়া মেদ-গাঁদ খসিয়ে দেয়। তবে এই ফল প্রাপ্তির জন্যে আমাদেরকে খাদ্য গ্রহণের কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে এবং খাদ্য গ্রহণে যাচাই বাছাইয়ের মানদন্ড অনুশীলন করতে হবে। সিয়ামের এক নাম হলো জ্বালিয়ে দেওয়া। বাহ্যিক বর্জ্যকে যেমন আমরা ইনসিনারেটারের মাধ্যমে জ্বালিয়ে দেই তদ্রুপ দেহের বর্জ্যকে আমরা এভাবে রমজানের সাধনার মাধ্যমে জ্বালিয়ে দিতে পারি। রমজানের দ্বিতীয় ও প্রকৃত উদ্দেশ্যটা হচ্ছে আধ্যাত্মিক পুষ্টি অর্জন।

রোজার মাসে জিহ্বা(আহার ও বাক নিয়ন্ত্রন) ও পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সংযমের মাধ্যমে আমরা কিছু কর্ম থেকে বিরত থেকে এবং কিছু কর্মে নিবেদিত হয়ে শারীরিক উন্নতির পাশাপাশি আধ্যাত্মিক পুষ্টি অর্জন করতে পারি। সিয়ামের অর্থ জ্বালিয়ে দেওয়া যা পূর্বে বলা হলো ,এভাবে আমরা রিপুর তাড়নাকেও জ্বালিয়ে দিয়ে পরিশুদ্ধ হতে পারি। আধ্যাত্মিকতার পথে শিক্ষা দেয়ার লক্ষে বোখারী শরীফের হাদিস হচ্ছে- “যে ব্যক্তি গর্হিত কথা ও গর্হিত কাজ পরিত্যাগ করতে পারল না তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নাই”। তদ্রুপ শারীরিক শিক্ষার লক্ষে বর্ণিত হাদিস হচ্ছে- “আদম সন্তানরা যে নিকৃষ্ট পাত্রটি পূর্ণ করে তা হল তার পেট”। হাদিস দুটি একটি আরেকটির পরিপূরক।

হাদিস দুটি পাশাপাশি পাঠ করলে একটি অভিন্ন পথে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশনা এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠে। শুধু রমজান মাসই নয় অন্য সকল সময়ই পরিমিত আহারের কথা আমাদের নবী (সাঃ) বলেছেন। প্রকৃতপে মানুষ কম আহারের জন্যে নয় বরং অধিক আহারের জন্যেই মৃত্যুর পথ ডেকে আনে। এখানে অবশ্য তাদের কথা বলা হচ্ছে না যারা খাবে কোত্থেকে! বরং দারিদ্রতার কারনে নিত্য অভাব গ্রস্থ, কবির ভাষায়-‘ হররোজ রোজা রাখে’। বরং হাদিসটির মর্ম উপলব্ধির জন্য বলা হচ্ছে যে, উদর পূর্তি কাজটি প্রয়োজনের তাগিদে করা হলেও দার্শনিক ভাবে নিকৃষ্ঠ।

(যেমন বলা হয়- তালাক বিষয়টি বৈধ হলেও খোদার কাছে তা পছন্দনীয় নয়)। চিকিৎসা বিজ্ঞানে কম খেয়ে রোগাক্রান্ত হওয়াকেই কেবল নয় বরং বেশী খেয়ে রোগাক্রান্ত হওয়াকেও অপুষ্টি বলে। আমাদের জন্যে খোদার তরফ থেকে দুইটি রুটি বরাদ্দ রয়েছে। একটি শারীরিক রুটি, আরেকটি আধ্যাত্মিক রুটি। এ দুটি একটি আরেকটির পরিপূরক।

রমজানের উদ্দেশ্য হচ্ছে শারীরিক রুটিটি কম ভোগ করে এই বরাদ্দটি আধ্যাত্মিক রুটিটিতে সংযোজিত করা। অথচ আমরা এখন দেখি যে, এর বিপরীতটিই রমজানে অনুসরণ করা হচ্ছে। শারীরিক আহারকে নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে আমরা রমজানে জিহ্বাকে নানাবিধ তুষ্টির কাছে সঁপে দিয়ে আধ্যাত্মিকতার পথকে রুদ্ধে করে দিচ্ছি অপর দিকে পানাহার বর্জন ব্যাতীত রমজানের কোন অনুশীলনেই মনোযোগী হচ্ছি না এ জন্যেই বোধ হয় আমরা রমজানের উপকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।