আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২০২০: কোথায় যাবে চাকুরীর বাজার????

দিল ঠান্ডা তো দুনিয়া ঠান্ডা। ২০২০ সাল। শুনতে যতটা দূরে মনে হয় আসলেই কি ততটা দূরে? ২০০১-এর কথাই মনে করুন না, নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে আছড়ে পড়ল জোড়া বিমান, আর বিশ্ব রাজনীতিতে ঘটল মহা আলোড়ন। খুব কি দূরের ঘটনা বলে মনে হয়? অথচ এরই মাঝে চলে গেছে গোটা একটা দশক। ঠিক সেভাবেই, এখন ২০২০-এর কথা শুনতে যতটা দূরের মনে হোক, বাস্তবে কিন্তু তা ততটা দূরের নয়।

কেমন হবে ২০২০ সাল? আসলেই কি ততদিনে আমরা উন্নত এক ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপ লাভ করতে পারব? নাকি সব থেকে যাবে এখনকার মতই? তবে আমরা যেমনই থাকি না কেন, বিশ্ব যে ততদিনে অনেকটাই পাল্টে যাবে তাতে সন্দেহ নেই মোটেও। ধনী দেশগুলো আরো ধনী হবে, কে জানে, ইতিহাসের নিয়ম মেনে হয়ত গরীবরা হবে আরো গরীব, বলা যায় না কিছুই! তবে একটা কথা বোধহয় কোনোরকম বিতর্কের ভয় না করেই বলা যায়, আর তা হল: ২০২০ সালের বিশ্বের এখনকার চাইতেও বেশি থাকবে তথ্যপ্রযুক্তির দাপট। প্রযুক্তির রঙের জীবনকে রাঙিয়ে দিয়ে নিত্যনতুন পরিবর্তনের ভেলায় গা ভাসাবে পৃথিবীর মানুষ। কেমন হবে তখনকার তথ্যপ্রযুক্তির চিত্রটি? আজ আমরা যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করি সেগুলোই কি থাকবে, থাকবে প্রযুক্তি পেশার এরকমই রূপ, নাকি একদম নতুন কোনো প্রযুক্তি আর নতুন কোনো পেশা এসে স্থান করে নেবে? পাশ্চাত্যের খ্যাতনামা কয়েকজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আর ফিউচারিস্ট-এর সঙ্গে কথা বলে খ্যাতনামা ম্যাগাজিন কম্পিউটারওয়ার্ল্ড এ প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে তারা জানার চেষ্টা করেছে আজ থেকে ১০ বছর পর তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং চাহিদাসম্পন্য চাকরি বা দক্ষতা হবে কোনগুলো।

আসুন, এ ফাঁকে আমরাও জেনে নিই সেই আইটি দক্ষতাগুলোর কথা। ১। উপাত্ত বিশেষণ ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বে প্রতিবছর যে পরিমাণ উপাত্ত জন্ম নেবে তার পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৫ জেটাবাইট, অর্থাৎ ৩৫ মিলিয়ন পেটাবাইটের মত। এ তথ্য জানিয়েছে বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান আইডিসি। যাদের কাছে পেটাবাইট আর জেটাবাইটকে হেঁয়ালীর মত লাগছে তাদের জন্য বলি: ৩৫ জেটাবাইট ডাটাকে ডিভিডির মধ্যে ভরে ডিভিডিগুলোকে একটার ওপর একটা সাজিয়ে রাখলে সেই স্তম্ভ পৃথিবী থেকে চাঁদ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে ! আরেকটু পরিস্কার করা যাক, এক গিগা বাইট এ থাকে ১০০০ মেগাবাইট।

একটি সাধারন ডিভিডি রিপ করা মুভি এর সাইজ হয় ৭০০ মেগাবাইট। সেই গিগা যদি ১০০০ হয়, তবে সেটা হয় টেরাবাইট। এক টেরা হার্ডড্রাইভ বাজারে এখন পাওয়া যায়। তাতে ১২০০ ডিভিডি রিপ মুভি রাখা যায়। ১০০০ টেরাবাইট হলে তাকে বলে এক পেটাবাইট।

১০০০ পেটাবাইট এ হয় এক এক্সাবাইট। ১০০০ একস্ বাইট এ হয় এক জেটাবাইট। এই পেটাবাইট, জেটাবাইট কত বড় বা কত দুর পর্যন্ত যেতে পারে, সেটা নিয়ে সামনে আরেকটি লেখা দেবার ইচ্ছা আছে। আপাতত কেবল কততে কি হয় সেটা জেনে রাখুন। আইডিসি-র প্রধান উপাত্ত বিশ্লেষক জন গ্যান্টজ মনে করেন সামনের দিনগুলোতে এমন প্রযুক্তি কর্মীদেরই চাহিদা বেশি হবে যারা কেবল প্রচুর পরিমাণে উপাত্তই বিশেষণ করতে পারবেন না, ব্যবসার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোন ধরনের উপাত্ত দরকার এবং কোথায় তা পাওয়া যাবে বলতে পারবেন তাও।

এ কারণেই এঁদের তথ্যপ্রযুক্তি দক্ষতা যেমন থাকতে হবে তেমনি বিজনেস প্রসেস এবং অপারেশনস সম্বন্ধেও ধারণা থাকতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফুট পার্টনারস এলএলসি-র প্রধান নির্বাহী ডেভিড ফুট বলেন, ‘এরা হচ্ছেন সেই সব মানুষ যারা জানেন কোন ধরনের তথ্য মানুষ তথা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে বেশি দরকার। এরা ডাটা সাপ্লাই চেইনকে পরিপূর্ণভাবে বুঝতে, অর্থাৎ তথ্য সৃষ্টি থেকে শুরু করে তথ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে টাকা আয় – এই চেইনটার প্রতিটি অংশেই অবদান রাখতে পারবে। ’ ২। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা জীবনে চলতে গেলে বিপদাশঙ্কা তথা ঝুঁকির সম্ভাবনাতো সব সময়ই থেকে সযায়।

সামনে দিনগুলোতেও তা বাড়বে বই কমবে না। ফিউচারিস্ট ডেভিড পিয়ার্স সড়বাইডার মনে করেন ২০২০ সাল নাগাদ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত দক্ষতার গুরুত্ব ও চাহিদা বেড়ে যাবে অনেকটাই; বিশেষ করে ব্যবসায় উদ্যোক্তাদেরকে যেভাবে দিনদিন তাঁদের বিনিয়োগের সর্বোচ্চ রিটার্ন পাওয়ার জন্য আরো বেশি করে ঝুঁকিপূর্ণ বা অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে তার পরিপ্রেক্ষিতে ঝুঁকিকে চিহ্নিত করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে ভীষণভাবে। সড়বাইডার বলেন, ‘আমাদের চারপাশে উদ্ভাবনের ঢেউ উঠছে। আগামী পৃথিবীতে নতুন নতুন সব উদ্ভাবনের পরিণতিতে চেইন রিঅ্যাকশনের মত ঘটে যেতে পারে নানা ঘটনা যার ওপর আমদের কোনো হাত থাকবে না। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সব তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের খুঁজবে যাঁরা ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার চ্যালেঞ্জগুলোকে বুঝতে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

তাঁদের মূল কাজ হবে প্রতিষ্ঠানকে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা সম্বন্ধে সতর্ক রাখা। ’ ৩। রোবোটিক্স ২০২০ সাল নাগাদ আরো অনেক কাজ রোবটদের হাতে চলে যাবে বলে মনে করেন প্রযুক্তি পরামর্শক এবং ফিউচারিস্ট জোসেফ কোটস। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে যেসব তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী রোবোটিক্স-এ স্পেশালাইজেশন করবে তাদের চাকরির সুযোগও বেড়ে যাবে অনেক। কোটস বলেন, ‘রোবোটিক্স বলতে কেবল মানুষের আদলে তৈরি যন্ত্রকেই আমরা বুঝি না, বরং স্বয়ংক্রিয় যে কোনো ব্যবস্থাকেই রোবোটিক্স-এর সংজ্ঞার মধ্যে ফেলতে হবে।

’ রোবোটিক্স সংক্রান্ত কাজের মধ্যে থাকবে রোবট তথা স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম-এর গবেষণা, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রকৌশল, সেবা ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে রোবোটিক্স ব্যবস্থাপনায় দক্ষ কর্মীদের চাহিদা প্রচুর পরিমাণে বাড়বে। ৪। তথ্যের নিরাপত্তা বিধান যেহেতু আমরা ক্রমশ্যই আরো বেশি করে সময় অনলাইনে কাটাচ্ছি সেহেতু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা ও পরিচয় যাচাইকরণের কাজের গুরুত্ব সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়বে। এর কারণ হচ্ছে, তখন সামনা সামনি দেখা হওয়া বা ইন্টার‌্যাকশনের পরিমাণ অনেক কমে যাবে, সবাই সব কাজ করতে চাইবে অনলাইনে।

এ কারণে অনলাইনে একজন যাতে অন্যের পরিচয় চুরি করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করার জন্য নানা ধরনের প্রযুক্তির উদ্ভব ঘটবে এবং এসব প্রযুক্তির প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনার কাজ যারা ভালমত করতে পারবেন তাদের চাহিদা বাড়বে। ডেভিড ফুট বলেন, ‘ভবিষ্যতের পৃথিবী হবে এখনকার চাইতে অনেক বেশি অনিরাপদ। আমরা অনেকেই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পছন্দ করি কিন্তু এ ব্যাপারে যেসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুসরণ করা উচিত তার কিছুই করি না। ২০২০ সালে কিন্তু নিরাপত্তাকে এতটা অবহেলা করা যাবে না, কারণ সরকারি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানই তখন একে প্রচুর গুরুত্ব দেবে এবং তাদের সেবা ব্যবহারকারীদেরও সেভাবেই চলতে হবে। ’ ৫।

নেটওয়ার্ককে পরিচালনা করা ২০২০ সালে নেটওয়ার্ক সিস্টেম ও ডাটা কমিউনিকেশনস ম্যানেজমেন্ট বিশেষ গুরুত্ব পাবে। কোম্পানিগুলো কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে আরো বেশি সতর্ক ও কৃপণ হয়ে যাবে। তারা এমন সব কনসালটেন্টকে খুঁজবে যারা তাদেরকে পরামর্শ দিতে পারবে কীভাবে কম কর্মী দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে নেয়া যায়। তবে কর্মী কাটছাঁট করারও তো একটা সীমা আছে। এ কারণে সীমিত কর্মীদের দিয়ে উৎপাদনশীলতাকে সর্বোচ্চ পযায়ে নিয়ে যাওয়াই হবে আসল চ্যালেঞ্জ।

ফলে কর্তাদের মাথায় কাজ করবে একটাই চিন্তা: আমার এমন লোক দরকার যে জানাবে বর্তমানে আমার হাতে যে প্রযুক্তি আছে তা দিয়েই কিভাবে বেশি বেশি কাজ আদায় করে নেয়া যাবে। নেটওয়ার্ক ব্যস্থাপনায় দক্ষ লোকদের চাহিদাও এ কারণে বাড়বে। আমরা কি প্রস্তুত, এই নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নের জোয়ারে এগিয়ে যাবার জন্য? ৯০ এর দশকে যে তথ্য প্রযুক্তির জোয়ার এসেচিল, তাতে আমরা পাল তুলে দিয়ে এগিয়ে যেতে পারিনি আমদের অদুরদর্শীতার কারনে। একটা কথা বলে মান বাচাবার চেষ্টা করা যায়, সে সময় কোথায় কি হচ্ছিল, তা সেভাবে জানবার উপায় ছিল না। তাই সব বুঝে সেভাবে ব্যবস্থা নেবার উপায়ও ছিল না।

কিন্তু সেই খোড়া অজুহাত তো এখন চলবে না। এখন ইন্টানেরট এর কারনে প্রত্যেকটা মানুষ এর সুযোগ রয়েছে সাম্ভাব্য প্রত্যেক তথ্যে পৌছাবার, সেগুরো দেকবার, সেগুলো ব্যবহার করে উপকৃত হবার। তাহলে কেন আমরা সেই সুযোগ নেব না? প্রযুক্তি বাজারে ভাল অবস্থান নিতে হলে আমাদের চিন্তা করতে হবে কয়েক ধাপ এগিয়ে। একটা মজার কথা মনে পড়ল, আমাদের দেশে একক সময় একক দিকে ক্যরিয়ার গড়ার দিকে ঝোক উঠে। এক সময় কম্পিউটার ইনজিনিয়ার বার দিকে ঝোক উঠল সবার, চারদিকে ব্যাঙ এর ছাতার মম তৈরি হল নান রকম প্রশিক্ষন সেন্টার, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যলয়গুলো খুলতে থাকলো একের পর এক টেকনোলজি বিষয়ক সাবজেক্ট।

তাদের প্রচারনায় এবং বিভিন্ন প্ররোচনায় সেই সব বিষয় এ ক্যরিয়ার তৈরির সোনালী স্বপ্নে বিভোর হয়ে এডমিশন নিতে লাগল ঝাকে ঝাকে ছাত্র-ছাত্রী। চার বছর পরে তারা যখন বার হল, দেখা গেল তাদের উপযোগী চাকুরীর বাজার তখনও ততটা ডেভলপ নয়। এই কম্পিউটার ইনজিনিয়ার পড়া মানুষগুলো কি করেছে তখন সেটা আমি জানি না। তবে তাদের অনুভুতি যে অথই পাথারে পড়ার মত হযেছিল, সেটা অনুমান করতে পারি। এরপরে এল বিবিএ র ঝোক।

যাকেই জিজ্ঞেস করা যাক কোথায় পড়ছেন, উত্তর একটাই; বিবিএ। চার বছর বিবিএ পড়ার পরে তারা যখন বার হলেন, অনেকেই দেখতে পেলেন, চাকুরী আছে বটে, কিন্তু বিবিএ সার্টিফিকেট ধারীর সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে, প্রতিযোগিতা আগের থেকে বেড়েছে, কমেনি। তাই এখন যারা ক্যরিয়ার নিয়ে চিন্তা করছেন, তাদের কাছে অনুরোধ, বর্তমানে কি ট্রেন্ড চলছে সেটার দিকে না তাকিয়ে আগামী দশ থেকে পনের বছর পরে ক্যরিয়ার এর জগতে কি ট্রেন্ড আসতে পারে, সেটা বিবেচনা করে ক্যরিয়ার ডেভলপ এর দিকে মন দিন। সময়টা দশ থেকে পনের বছর বলার কারন, আপনি পড়াশোনা শেষ করবেন চার থেকে পাচ বছরের মাথায়। তারপরে আবার আপনার পছন্দ মত সেক্টরে অবস্থান করে নেবার জন্যও দরকার সময়।

এর পরে আপনি যখন প্রস্তুত, কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট সেক্টরে, তখন হয়ত দেখতে পারবেন সবাই মাত্র এই বিষয়ে ক্যরিয়ার তৈরীর কথা ভাবতে শুরু করেছে। সময়ের আগে চিন্তা করার কারনে তখন আপনার অবস্থান থাকবে লিডিং পজিশনে। শুভেচ্ছা থাকলো সবাইকে। আমি একটা ব্লগ টাইপ সাইট ডেভলপ করছি। পাবলিক ব্লগ না, ব্যক্তিগত ব্লগ।

সেখানে নিয়মিত মুভি রিভিউ, ই রিভিউ, পিসি গেম রিভিউ সহ টুকটাক লেখারিখি পাবলিশ করি আমি। একবার দেখবেন নাকি? আমার সাইটটার একটা ফেবু পেজও আছে। সাইটটি ভাল লাগলে, এবং প্রতিদিন নিয়মিত পোস্ট আপডেট পেতে আগ্রহ বোধ করলে একটা লাইক দিন প্লিজ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.