আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দূষিত রক্ত হইতে সাবধান!!!!সচেতনতা মূলক পোষ্ট।

রাজধানীতে অবৈধ রক্তের ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। নগরীর অলি-গলি এমনকি ফুটপাতেও গড়ে তোলা হয়েছে মনুষ্য রক্তের দোকান। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে মাদকের বিনিময়ে এসব রক্ত সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এসব রক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই এক শ্রেণীর চিকৎসকদের সহযোগিতায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীদের শরীরে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চারপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ব্লাড ব্যাংক।

এর মধ্যে ৭৮/৩ নাজিম উদ্দিন রোড, চাঁনখার পুল চৌরাস্তায় ডোনার ব্লাড এন্ড প্যাথলজি সেন্টার, ৯/৫ লাইফ সেভ ব্লাড ব্যাংক এন্ড ট্রান্সফিউশন ও মেডিসিন লাইফ সেভ ডায়গনস্টিক, ১ নম্বর বকশী বাজার রোডে ঢাকা ব্লাড সেন্টার, শ্যামলীর ফেমাস ব্লাড সাপ্লাইয়ার ছাড়া নগরীর বিভিন্ন ব্লাড সেন্টারে সরেজমিনের গিয়ে খোঁজ নিয়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের রক্ত সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, দেশের নামীদামি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিানিকের কতিপয় ডাক্তার ও নার্সরা এসব মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের রক্ত সংগ্রহ করে দোকান খুলে ব্যবসা করছেন। রক্ত ব্যবসায়ী ঢাকা ব্লাড সেন্টারের ল্যাব-টেকনিশিয়ান এম আজিজুল হক জানিয়েছেন, তারা সরকারের নিয়ম মোতাবেক রক্ত সংগ্রহ ও ব্যবসা করে আসছেন। তাদের বৈধতা থাকার কারণেই বই মেলায় তারা স্টল পেয়ে ছিলেন। সেক্রেটারিয়েট রোডের লাইফ সেভ ব্লাড ব্যাংক এন্ড ট্রান্সমিফউশন নামক রক্তের দোকানের মালিক পরিচয়দানকারী জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে মিটফোর্ড হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক ট্রান্সফিউশনের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মুন্সি হাবিবুল্লাহ কর্তৃক পরীক্ষা নিরীক্ষার করার পর রক্তগুলো বিক্রি করা হয়ে থাকে।

নাজিম উদ্দিন রোডের ব্লাড ব্যাংকে গত ২০১০ সালে র‌্যাব-১০ এর ভেজাল বিরোধী ম্যাজিষ্ট্রেট অভিযান চালিয়ে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা ও ২ জনকে গ্রেফতার পূর্বক জেলা হাজতে পাঠায়। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তারা পুনরায় তাদের ব্যবসা শুরু করছেন। সূত্র জানায়, নগরীর বিভিন্ন পার্ক ও মাদক স্পটের পাশের গোপনীর রক্ত সংগ্রহের দোকান খোলা হয়েছে। এসব দোকানে মাদকাসক্তদের দেহ থেকে নিয়মিত রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। স্থানীয় থানা পুলিশ ও র‌্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাদের কাছ থেকে নিয়মিত হপ্তাহ আদায় করছেন।

বাংলামটর পার্কের পাশে একটি দোকান রয়েছে। সেখানে একটি রুমের ভেতরে প্রায় ১৫ জন মাদকাসক্ত লাইন ধরে বসে আছে। আর পাশের একজন একজন করে রক্ত দিচ্ছে। রক্ত দেওয়ার পর তাদেরকে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মাদকাসক্ত রক্ত বিক্রেতা মাসুদ রানা জানান, মানবতার জন্য আমরা রক্ত প্রদান করি।

আমার রক্তের বিনিময়ে আরেকটি প্রাণ জীবন পায়। দেশ স্বাধীন করার জন্য মা-বোনেরা রক্ত দিয়েছে। তাই আমরাও রোগীদের রক্ত প্রদান করে আসছি। আমাদের রক্তের জন্য তেমন কোন টাকা নেই না। শুধুমাত্র দুধ খাওয়ার জন্যই দোকানের মালিক সামান্য কিছু টাকা দেয়।

আর তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা রক্তের ব্যাগ ৪শ’ টাকা থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হয়ে থাকে। আবার অনেক রক্ত ব্যবসায়ীরা দালালের মাধ্যমে যেখানে সেখানেই ফেরি করে রক্ত কেনা-বেচা করছে। রক্তে হেপাইটিস বিসি ও ই এবং এইচ আই ভি এইডসের ভাইরাসসহ মরণব্যধি ভাইরাস যুক্ত রক্তদাতারা রক্ত দিচ্ছে। আবার নেশার টাকার জন্য অনেকেই রক্ত বিক্রি করছে। রক্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব রক্তের ১০০ ভাগই দুষিত।

আবার সরকারী, বেসরকারী চিকিৎসকরা রোগির আত্মীয়দের রক্ত ক্রয়ে বাহির থেকে বাধ্য করছেন। রোগির আত্মীয়দের রোগির দেহে দুষিত রক্ত পুশ করতে বাধ্য করছেন। আর এর বিনিময়ে তারা নিদিষ্ট অংকের একটি কমিশন পেয়ে থাকেন। প্রাইভেটর ক্লিনিকে মাদকাসক্তদের রক্ত ক্রয় করে। তা দালালের মাধ্যমে হাসপাতারে চিকিৎসাধীন রোগিদের দেহে পুশ করা হচ্ছে।

নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়গেষ্টিক সেন্টারে ভেজাল বিরোধী অভিযানে মাদকাসক্ত রক্তসহ অনেককে গ্রেফতার ও জরিমানা করা হয়েছে। তার পরও এসব রক্ত ব্যবসায়ীদের অবৈধ ব্যবসা থামছে না। চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব রক্ত রোগীদের দেহে পুশ করা হলে তা হবে অত্যান্ত বিপদজনক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পেশাদার রক্তের ডোনার বা রক্তদাতাদের মধ্যে ২৯ শতাংশ ব্যক্তি হেপাটাইটিস বিসি ও ই রয়েছে। আর ৫০শতাংশ ব্যক্তির এইডসের জীবানু রয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, সারা দেশে প্রাইভেট ব্লাড ব্যাংক রয়েছে অর্ধশত। তা ছাড়া নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিককে ঘিরে ব্যাঙের ছাতার মতো অলিগলিতে শত শত ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। রোগির দেহে রক্ত দেওয়ার আগে ৫টি মরণব্যধি হেপাটাইটিস বিসি, এইচআইভি ও এইডস, ম্যালেরিয়া ও সিফলিস পরীক্ষার নিয়ম রয়েছে। তা ছাড়া, ব্লাড ব্যাংকগুলোতে পরিসঞ্চালন বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক, প্রযুক্তিবিদ, টেকনিক্যাল সুপারভাইজার, ল্যাব সহকারী, নার্স, যন্ত্রপাতি ও রোগের পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। অথচ ৯৮ ভাগ ব্লাড ব্যাংকে এ সবের কিছুই থাকে না।

গত ২০১০ সালে র‌্যাবের ভেজাল বিরোধী অভিযানের সময় নগরীর ২১টি ব্লাড ব্যাংকে অভিযান চালানো হয়েছে। ওই অভিযানে ৪২ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার ও ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০ জনকে গ্রেফতার করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে। এসব অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের ভেজাল বিরোধী অভিযানের ম্যাজিষ্ট্রেট এএইচএম আনোয়ার পাশা। তিনি অভিযানের সময় এসব প্রতিষ্ঠানে রক্ত সংগ্রহ করার জন্য কোন প্রকার পরীক্ষা নিরিক্ষার ব্যবস্থা দেখতে পাননি।

এ ছাড়া তাদের কোন প্রকার যন্ত্রপাতিও পাননি। গ্রেফতারকৃতরা ভেজাল ও দুষিত রক্তের ব্যবসা করার কথা স্বীকার করেছেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.