আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৃতিতে 'মিশুক মুনির'।

পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/ মাটির ময়না সিনেমা থেকে তারেক মাসুদকে একটু একটু চিনি। কিন্তু দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার দরুন বাকি কাউকে তেমন একটা চিনি না, তবে মিশুক মুনিরের সাথে আমার বেশ ভাল সম্পর্ক আছে। অনেক ভাল মানুষ তিনি। ছোটদের অনেক বেশি স্নেহ করেন, অনেক গুনি মানুষও তিনি।

গত দুই মাস আগে তার মা অসুস্ত হয়ে ক্লিনিকে ছিলেন, তিনি একটি চ্যানেলের সিও হওয়া সত্বে সবসময় প্রচন্ড রকমের ব্যাস্ত থাকতেন কিন্তু মা অসুস্থ হওয়ায় তিনি সব ছেড়ে তার মা'র সাথে ক্লিনিকে রাত কাটাতেন। লিবিয়ায় সংঘর্ষ শুরু হবার পর বাংলাদেশীরা সেখান থেকে পালিয়ে আসা শুরু করলে তিউনিসিয়া লিবিয়া বর্ডার, 'রাস দির' এবং মিশর লিবিয়া বর্ডার 'সাল্লুম' এ প্রায় ৫০,০০০ বাংলাদেশি রিফিউজি ক্যাম্পে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে, তাদের অবস্থা কভার করতে কয়েকটি চ্যানেলের সাথে তিনিও তার চ্যানেল নিয়ে এসেছিলেন। আমি তাদের সকলের গাইড/সেচ্ছা সেবক হিসেবে কাজ করেছিলাম ফলে মিশুক মুনির স্যারের সাথে আমার বেশ ঘনিষ্টতা সৃষ্টি হয় এবং তার সাথে উঠাবসা করার সুযোগ হয়। আমার দেখা মিশুক মুনিরের সৃতিগুলো এইরকম........................ শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবি মুনির চৌধুরীর সন্তান।

দেশপ্রেম। তিনি কানাডার পাসপোর্টধারি ছিলেন, তিনি সেটা শুধু ব্যাবহারই করতেন কিন্তু কাউকে বলতেন না। বয়স হলেও তিনি ছিলেন টগবগে যুবকের ন্যায়। সাল্লুম বর্ডারে রিফিউজি ক্যাম্প থেকে হোটেলে ফিরতে ফিরতে একদিন রাত দুটো, হোটেলে পৌছে আমাকে বললেন, রাত চারটায় উঠতে পারবা? আমি বললাম কেন? তিনি বললেন ক্যাম্পে যাব ভোর রাতে তারা কিভাবে কি করে সেটা দেখব। ( ক্যাম্প থেকে হোটেলের দুরত্ন ৯০ কি.মি।

) তিনি ছিলেন সাহসি পুরুষ; তিনি আরবী জানতেন না তবুও তিনি আমাদের কাউকে সাথে না নিয়ে একা একা বাজার করতে যেতেন, অনেক রাত পর্যন্ত মার্কেটে কিংবা হাটাহাটি করতেন। আর এসে সুন্দর সুন্দর গল্প শুনাতেন। ম্যাডামকে অনেক বেশি ভাল বাসতেন; তিনি কায়রোতে ছিলেন বেশ কয়েকদিন, কিন্তু পিড়ামিড, ফেরাউনের মমি, সহ কোন বিখ্যাত স্থান ভ্রমন করেন নি, কারণ হিসেবে বলতেন, আমি মেডামকে ছাড়া কোন জিনিস উপভোগ করি না। আগামি ডিসেম্বরে ম্যাডামকে নিয়ে বেরাতে আসব তখন সব দেখব। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তিনার ম্যাডামও ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন দিয়ে তার অবস্থা জানতেন।

নাস্তা করেছে কি না? কি নাস্তা করল? লান্চ কয়টায় করবে, কিদিয়ে লান্চ করবে? ..................... আবার কথা বলার শেষে আইলাভ ইউ'ও বলতে ভুলতেন না। সাধারণ জিবন জাপন করতেন: কানাডিয়ান সিটিজেন, পুরু ফ্যামিলি কানাডাতে থাকে, তিনি একটি চ্যানেলর সিও তার পরও অতি সাধারণ জিবন জাপন করতেন। দামি হোটেলে থাকা কিংবা দামি খাবার খাওয়া কিংবা দামি পোষাক পড়ার প্রতি মোটেও তার আকর্ষন ছিল না, বরং বাকি দশজন যা খেত যেখানে থাকত যা পরত তিনিও তাই পছন্দ করতেন। কোন অহংকার ছিল না। তিনি সিও আর মুন্নি সাহা সাংবাদিক, অথচ তিনি ক্যামেরা ম্যানের কাজ করতেন আর মুন্নি সাহা রিপোর্ট করতেন।

মা'কে খুব ভাল বাসতেন ও শ্রদ্ধা করতেন। গত দুই মাস আগে তার মা অসুস্ত হয়ে ক্লিনিকে ছিলেন, তিনি একটি চ্যানেলের সিও হওয়া সত্বেও তিনি তার মা'র সাথে ক্লিনিকে রাত কাটাতেন। কাজের প্রতি নিষ্ঠা: একদিন আমাকে হটাৎ বললেন তোমাকে কিছু প্রশ্ন করব, তুমি তোমার মত করে জবাব দিবে। এই বলে তিনি প্রশ্ন শুরু করলেন এবং ভিডিও করতে লাগলেন। শেষ হলে তিনি বললেন, অমুকদিন এটা চ্যানেলে প্রকাশ পাবে।

আমি রিকোয়েস্ট করে বললাম, এটাতো প্রস্তুতি ছাড়া হয়েছে, প্লিজ পুনরায় নিন, আমি কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে নিই, তিনি কিছুতেই রাজি হননি বরং বললেন এটাই হলো এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিও। আমার বাড়িও মানিকগন্জ। আমি দেশে আসলে মানিকগন্জে আমার বাসায় তার বেড়াতে যাওয়ারও কথা ছিল, কিন্তু তিনি মানিকগন্জে গেলেন কিন্তু এমনভাবে গেলেন যা সারা জিবনের জন্য কেবল সৃতি হয়েই থাকবে আর ব্যাথা দিবে। তারেক মাসুদ, মিশুক মুনির সহ যারা প্রান হারিয়েছেন তাদের সকলের আত্নার প্রশান্তি কামনা করি আর যারা আহত অবস্থায় আছেন তাদের সকলের দ্রুত সুস্ততা কামনা করি সাথে সাথে, সরকারের নিকট আবেদন করি যেন রোড একসিডেন্ট কমানোর দীর্ঘ পরিকল্পনা নেয়া হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।