আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইন্টারনেটে অর্থ লেনদেন

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে আউটসোর্সিংয়ে বিশ্বের শীর্ষ ৩০টি দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। দেশের কয়েক হাজার ফ্রিল্যান্সার এখন আউটসোর্সিং করে ঘরে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। ফ্রিল্যান্সারদের এ আয়ের অর্থ আসে ইন্টারনেটে। তবে ইন্টারনেটে অর্থ লেনদেন আমাদের দেশে কড়া নিয়মনীতির বেড়াজালে আটকে ছিল। অনলাইনে অর্থ লেনদেনের নিরাপদ ও জনপ্রিয় মাধ্যমগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্যকর থাকলেও আমাদের দেশে ছিল অকার্যকর।

তবে সম্প্রতি এই প্রতিবন্ধকতা কিছুটা হলেও দূর করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিসেস [বেসিস] সদস্যদের জন্য বিশেষ ক্রেডিট কার্ড প্রদান এবং পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৫০০ ডলার দেশ থেকে উত্তোলনের সুবিধা দেওয়ায় ইন্টারনেটে আন্তর্জাতিক লেনদেনে নতুন দিনের সূচনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন : অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি বৈধ করতে গত ৭ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ সার্কুলার জারি করে। এতে হয়েছে, অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৫০০ ডলার পর্যন্ত দেশে আনা যাবে। প্রাপ্ত অর্থ অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হবে।

পরে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের হিসাবে ওই অর্থ জমা করবে। ফলে প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার পাশাপাশি অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও স্বল্প অর্থ লেনদেনে এ পেমেন্ট ব্যবস্থা সহজলভ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। বেসিস সভাপতি মাহবুব জামান জানান, পেপল কঠিন নিয়ম-কানুনের জন্য বাংলাদেশে আসতে চাইছিল না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালা জারি করায় তাদের এ দেশে আসাটা সহজ হবে।

অনলাইনে অর্থ লেনদেনে যত আয়োজন : অনলাইনে অর্থ লেনদেনের প্রধানত ক্রেডিট কার্ড [যেমন : ভিসা, মাস্টার কার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস ইত্যাদি] এবং আন্তর্জাতিক গেটওয়ে [যেমন :পেপল, মানিবুকার্স] ইত্যাদির মাধ্যমে হয়ে থাকে। ক্রেডিট কার্ড :ক্রেডিট কার্ডে যে কোনো জায়গা থেকে অনলাইনে পেমেন্ট করা যায়। তবে ক্রেডিট কার্ডে রয়েছে প্রকারভেদ এবং নির্দিষ্ট ক্রেডিট সীমা। সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে ভিসা ও মাস্টার কার্ড। অনলাইন পেমেন্টের ক্ষেত্রে ভিসা ও মাস্টার কার্ড পেমেন্ট সব সাইটে গ্রহণযোগ্য।

বাংলাদেশে দু'ধরনের ভিসা ও মাস্টার কার্ড প্রচলিত। এর মধ্যে লোকাল কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে পেমেন্ট করা সম্ভব নয়। তবে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডে অনলাইন পেমেন্ট করা যায়। অনলাইনে ভিসা বা মাস্টার কার্ড দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পেমেন্ট করতে হলে, অবশ্যই একটি এফসি অ্যাকাউন্ট দরকার হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিদেশ ভ্রমণের বাধ্যবাধকতা।

বিদেশ থেকে ঘুরে আসার এক মাসের মধ্যে ওই অ্যাকাউন্টে যে পরিমাণ ডলার জমা থাকে তা ভিসা বা মাস্টার কার্ডের লিমিট হিসেবে ধরা হয়। এই অর্থ ভাগে ভাগে বা এক সঙ্গে অনলাইনে ব্যয় করা যায়। তবে এফসি অ্যাকাউন্ট না থাকলে ইউসিবিএল ব্যাংকের আই কার্ড ব্যবহার করা যায়। এই কার্ডের জন্য বিদেশ যেতে হবে না। এই কার্ডের মাধ্যমে বছরজুড়ে সর্বোচ্চ ৫০০ ডলার খরচ করা যায়।

অনলাইনে কাজ করলে অনলাইনে পেমেন্ট করার মতো মাস্টার কার্ড পাওয়া সহজ হয়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত রয়েছে পেওনিয়্যর ওয়েবে [[www.payoneer.com].আর ই-কমার্স সাইটে ভিসা বা মাস্টার কার্ড দ্বারা পেমেন্ট রিসিভ করতে চাইলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে টুচেকআউট [2checkout.com]. এ ছাড়াও ব্র্যাক ব্যাংক শুরু করেছে দেশীয় মার্চেন্ট সার্ভিস। ফলে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে মার্চেন্ট সার্ভিস নিয়েও ই-কমার্স শুরু করা যায়। আন্তর্জাতিক গেটওয়ে : অনলাইনে অর্থ লেনদেনের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় সাইট পেপল [www.paypal.com]. এটি হচ্ছে অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসর। পেপলের মাধ্যমে অনলাইনে যে কাউকে তাৎক্ষণিক টাকা পাঠানো এবং সেই টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনও করা যায়।

এ ছাড়া ই-কমার্স সাইট করতে চাইলে যে কোনো মার্চেন্ট থেকে অ্যাকাউন্ট নিলেই প্রতিমাসে বিক্রয় হোক বা না হোক, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার দিতে হয়; কিন্তু মাধ্যম পেপল হলে প্রতি মাসে এ ধরনের চার্জ দিতে হয় না বিক্রয় মূল্য থেকে পেপল কমিশন রেখে দেয়। পেপলের পরই মানিবুকার্স [moneybookers.com] জনপ্রিয় পেমেন্ট প্রসেসর। পেপল বাংলাদেশে না এলেও মানিবুকার্স বাংলাদেশ সাপোর্ট করে। এ ছাড়া অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সিং সাইট মানিবুকার্স সমর্থন করে। বাংলাদেশ থেকে যে কেউ সাইটটিতে গিয়ে অ্যাকাউন্ট করে এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভেরিফাইয়ের মাধ্যমে অনলাইনে খরচ করতে পারেন বা অনলাইনে আয়ের অর্থ বাংলাদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে খুব সহজে উত্তোলন করতে পারেন।

মানিবুকার্স থেকে অন্য মানিবুকার্স অ্যাকাউন্টে তাৎক্ষণিকভাবেও টাকা পাঠানো যায়। এ ছাড়া ই-কমার্স সাইট করতে হলেও মানিবুকার্স হতে পারে প্রথম পছন্দ। কেননা মানিবুকার্সে কমিশন রেট পেপল থেকে অনেক কম এবং সব ধরনের ক্রেডিট কার্ড সমর্থন করে। পেপল এবং মানিবুকার্সের দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এলার্টপে [alertpay.com]. বাংলাদেশে থেকে বৈধভাবে এলার্টপে অ্যাকাউন্ট করা যায়। কিন্তু এলার্টপে থেকে টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সরাসরি ব্যাংকে পাঠানো হয় না।

তারা আর্ন্তজাতিক চেক বাংলাদেশি ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়। ওই চেক ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করে নিতে হয়। ই-কমার্স ব্যবসা, হাইপ বা অনলাইনে অর্থ গ্রহণের জন্য বিনামূল্যে অ্যাকাউন্ট করা যায়। পেমেন্ট ট্রান্সফার :বাংলাদেশে যেহেতু এখনও পেপল সমর্থন করে না, তাই অনেকে পেপলের ডলার মানিবুকার্সে নিতে চায়। কিন্তু, সাধারণভাবে এই এটি অসম্ভব।

তবে সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে মার্কেট স্পট [marketspot.cn] এই সেবা প্রদান করে থাকে। সেক্ষেত্রে পেপল থেকে এলার্টপে বা মানিবুকার্সে অর্থ স্থানান্তর করা যায়। এ ছাড়াও বাংলাদেশিদের জন্য অনলাইন পেমেন্ট সাপোর্ট প্রদান করছে http://www.onlinepaymentbd.com উত্তোলনের সীমা ৫০০ ডলার কেন :ইন্টারনেটে অর্থ লেনদেনের নিরাপদ ও জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান পেপলে বর্তমানে ১৯০টি দেশের সেবা রয়েছে। বাংলাদেশে পেপল কার্যক্রম পরিচালনা না করলেও অনেক ফ্রিল্যান্সিং সাইট পেপলে বিল প্রদান করে থাকে। সেক্ষেত্রে দেশের ফ্রিল্যান্সারদের একটি বড় অংশ বিড়ম্বনায় পড়েন।

ঝামেলা এড়াতে তারা তৃতীয় পক্ষের সহায়তা নিচ্ছে। তবে ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের অর্থ উত্তোলনে একটা বড় অংশই চলে যাচ্ছে তাদের হাতে। ইন্টারনেটে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা দেশের বাইরে অবস্থান করে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে পেপলের সেবা দিচ্ছে। এ ছাড়া অনেকে দেশ হিসেবে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে পেপলে চালাচ্ছেন। অনেক সময় তাদের অ্যাকাউন্ট লিমিটেড [অর্থ তোলার সুবিধা বাতিল] করে দিচ্ছে পেপল।

তবে সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করছেন, অনলাইনে লেনদেনে যে যুগান্তকারী সূচনা হয়েছে এর পরিসর দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। ফ্রিল্যান্সাররা দাবি করছেন ইন্টারনেটে অর্থ উত্তোলনে সীমা যেন আরও বাড়ানে হয়। অনেকে প্রতি মাসে কয়েক হাজার ডলার আয় করে থাকেন। সেক্ষেত্রে ৫০০ ডলার উত্তোলনের সীমায় তারা আটকা পড়ে সুবিধাবঞ্চিত হবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশ থেকে অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে অন্তত এই সীমা উঠিয়ে নিলে রেমিট্যান্স প্রবাহে নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।

সূত্র: সমকাল ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।