আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমকামিতা কি বিকৃত মানসিকতা?

জীবনটাকে জানতে চাই কিছুদিন আগে মুক্তমনা ব্লগে সমকামিতা নিয়ে একটা লেখা পড়লাম যেখানে বিভিন্ন ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে সমকামিতা একটা স্বাভাবিক যৌন প্রবৃত্তি। সেখানে আমি বিরোধিতা করায় আমাকে অভিজিৎ রায়ের সমকামিতা বইটা পড়ে সমকামিতা সম্বন্ধে জ্ঞান নিতে উপদেশ দেয়। সেই উপদেশের প্রেক্ষিতেই আজকের এই পোষ্ট। আমার ক্ষুদ্র বিচার ক্ষমতায় যেই বিষয় গুলো উঠে এসেছে তাই তুলে ধরলামঃ ১) অভিজিত রায় তার বইতে প্রানি জগতের সমকামিতার বিভিন্ন উদাহরণ দিয়েছেন এবং অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত সমকামিতা যে মানব সভ্যতায় বিদ্যমান তা তুলে ধরেছেন এবং এর প্রেক্ষিতে মন্তব্য করেছেন যে সমকামিতা বাস্তবতা ও স্বাভাবিক। - আমরা যদি মানব সভ্যতার দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাব ইনসেস্‌ট, ধর্ষণ (ওরাং ওটাং এ ধর্ষণ দেখা যায়) এর মত যৌনাচারও মানুষ ও প্রানি জগতে বিদ্যমান।

কিন্তু তাই বলে আমরা কিন্তু কক্ষনই এই প্রবৃত্তি গুলোকে স্বাভাবিক বলব না। আমরা মানুষ, আমরা নৈতিকতার ছাঁকন দিয়ে অনেক আদিম আচরণ ছেকে পৃথক করেছি যা আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। ২)তিনি তার বই তে উভগামিতা কে স্বাভাবিক বলেছেন। তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। - আমরা যারা বিষমগামী তারা তো বিপরীত লিঙ্গের যেকোন সুন্দর মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হই তাই বলে কি অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হতে হবে? পারিবারিক বিশ্বস্ততার মূল্য কোথায় থাকল।

অনেক পাখি সহ বিভিন্ন প্রাণী আছে যারা এক প্রজনন ঋতু তে একজন সঙ্গীকেই বেছে নেয়, কিছু কিছু পাখি আছে যারা সাড়া জীবন বা দীর্ঘ সময়ে কোন সঙ্গী পরিবর্তন করে না। আমরা মানুষেরা শুধু মাত্র প্রবৃত্তির বাধনে বাধা নই, বিশ্বস্ততা, ভালবাসার মত বিষয়গুলো আমাদের মাঝে উপস্থিত। তাহলে একজন উভগামি ব্যক্তি কে কি একজন ব্যভিচারী ব্যক্তি বলা যায় না? কারণ তার মাঝে বিশ্বাস বা ভালবাসা নেই আছে শুধুই যৌন তাড়না। যা মেটাতে তিনি নারী বা পুরুষ যেকোন মানুষকে বেছে নেয় কিন্তু কাউকেই ভালবাসে না, শুধুই সম্ভোগ করে। ৩)বিবর্তনের আলোকে সমকামিতা কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন “সমকামিতাকে যদি বাস্তবতা হিসেবে মেনে নেয়া হয় তবে আমাদের বের করতে হবে ডারউইনিয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর উপযোগিতা কি।

............................................. পিঁপড়ে, মৌমাছি,উইপোকা কিংবা বোলতার মত প্রজাতিতে এই ধরনের বন্ধ্যা সৈন্যের উপস্থিতি বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। এরা বংশবৃদ্ধিতে কোন ভূমিকা রাখেনা। কিন্তু নিজেদের গোত্রকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে জনপুঞ্জ টিকিয়ে রাখে। মানুষের জন্য কি এটা খাটে? বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার আলোকে একটু চিন্তা করা যাক। এমন কি হতে পারে যে, সমকামী পুরুষেরা সেই আদিম শিকারি সংগ্রাহক সমাজে বাচ্চা লালন পালনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল? নিজেদের মধ্যে মারামারি না করে যখন একাধিক পুরুষ দলবদ্ধ হয়ে গোত্রের দায়িত্ব নিত আর শিকার সন্ধান করত, সেই গোত্র হয়ত অনেক বেশী খাবারের যোগান পেত, কিংবা হয়ত বহিঃশত্রুর হাত থেকেও রক্ষা পেত অন্যদের চেয়ে বেশী।

ফলে টিকে থাকার প্রেরণাতেই হয়ত কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষে পুরুষে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো –যা গোত্রে এনে দিয়েছিল বাড়তি নিরাপত্তা। কিংবা হয়ত এমনও হতে পারে – যখন শক্তিশালী পুরুষ শিকারে যেত, হয়ত সে গোত্রের কোন গে চাচা রক্ষা করার দায়িত্ব নিত ছোট ছোট ছেলেপিলেদের। আর পুরুষটিও শিকারে বের হয়ে স্ত্রীর পরকীয়ার আশঙ্কায় ভাবিত থাকত না। ................................সমকামী প্রবৃত্তিটি হয়ত বিবর্তন প্রক্রিয়ার উপজাত........................যেমন হাড়ের সাদা রঙ বা চোখের নীল বা বাদামি রঙ কোন বাড়তি উপযোগিতা দেয় না- এটা প্রকৃতিতে আছে বিবর্তনের সাইড ইফেক্ট হিসেবে। সমকামিতাও বিবর্তনের সেরকম কোন উপজাত হতে পারে।

” - প্রথমেই আসি পিপড়া বা মৌমাছির বিষয়ে, এক্ষেত্রে শ্রম বণ্টন হয়েছে কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এরূপ শ্রম বণ্টন হয়নি। পিপড়া, মৌমাছি ইত্যাদির ক্ষেত্রে শুধু রাজা-রানী বংশবৃদ্ধির দায়িত্ব পালন করে, কর্মীরা খাবার সংগ্রহ ও বাসা পাহারার কাজ করে। মানুষের ক্ষেত্রে এরূপ হয়নি তাই এই উদাহরণ প্রযোজ্য নয়। আদিম সমাজে সমকামী পুরুষের যে ভূমিকার কথা ধারনা করা হল তাও গ্রহণ যোগ্য নয় কেননা এমন কোন বৈশিষ্ট্য সমকামীদের মধ্যে বিদ্যমান নাই, ইহা নারী সমকামিতা ও উভগামিতা ব্যাখ্যা করে না। যদি এই ধারনার সত্যতা থাকত তাহলে আমরা দেখতাম আফ্রিকান জংলিদের মাঝে কিছু মানুষ জন্ম থেকেই পরার্থে কাজ করছে ও যৌন পিপাসা মিটানোর ক্ষেত্রে সমকাম প্রবণ।

বা যদি দেখা যেত পরোপকারী ব্যক্তিরাই সমকামী তাহলে ধারনাটির সত্যতা প্রমাণ হত কিন্তু তা দেখা যায় না। তারপর সমকামকে ব্যাখ্যা করার জন্য যে উপজাত ধারনাটি দেয়া হল তাও গ্রহণ যোগ্য নয়, চোখের নীল বা বাদামি রঙ এর কারণে দর্শন ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে না কিন্তু সমকাম এর জন্য বংশবৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে। মানুষের চোখের, চুলের রঙের পিছনে ভৌগলিক কারণ ও রয়েছে। ৪) তিনি তার বইতে আরও উল্লেখ করেছেন যে, সমকামিতা সামাজিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে কাজ করে। - যৌন সম্পর্ক কে যদি সামাজিক সম্পর্কের মাধ্যম ধরি তাহলে বহুগামিতা সামাজিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে কাজ করে, সমকামীতা নয়।

বন্ধুত্ব হল সামাজিক সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রধান উপায়, সমকামীতা কি বাড়তি উপযোগিতা দেয়? ৫) এছাড়া তিনি তার বই তে বিভিন্ন গবেষণা তুলে ধরেছেন এবং আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন স্বীকার করে নেয় যে সমকামিতা রোগ নয় (১৫ই ডিসেম্বর ১৯৭৩) তা বলেছেন। - সমকামিতা নিয়ে যে গবেষণা হয়েছে সেগুলোকে আবর্জনা বললে ভুল হবে না কেননা কোনটাই সর্বসম্মত হয়নি ও এক দশকের বেশী টেকেও নি। এর কারণ হল পক্ষপাতদুষ্টতা। সমকাম নিয়ে গবেষণাকারী অন্যতম বিজ্ঞানী হলেন হ্যাঁমার, যিনি একজন সমকামী। আমেরিকার সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন ইনসেস্ট , পেডোফিলিয়াকেও যৌন রোগ মনে করে না।

কিন্তু ইনসেস্ট কে স্বাভাবিক যৌন প্রবৃত্তি ভাবলেই তো বমি আসে। এর জন্য কোন গবেষণা দরকার হয় না, স্বাভাবিক বোধই বলে দেয় ইহা বিকৃতি। ৬)এছাড়া তিনি তার বইতে ‘গে জিনের খোঁজে’ অধ্যায়তে উল্লেখ করেছেন যে- ‘সমকামী পুরুষেরা আসলে পুরুষ দেহে বন্দী নারী আত্নার অতৃপ্ত প্রকাশ’ - এই উক্তি টি কিন্তু অসম্পূর্ণ ভাবে সমকাম কে সমর্থন করে কারণ নারী সমকামিতা ও পুরুষ ‘টপ’ দের ক্ষেত্রে ইহা খাটে না। তার মানে এই উক্তির পেছনে তিনি যে কারণ দেখিয়েছেন সেগুলিও সমকাম কে ব্যাখ্যা করে না। সমকামিতা সম্বন্ধে আমার কিছু বক্তব্য সংক্ষেপে তুলে ধরছি - সমকামিতা যদি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হয় তাহলে ধরে নেই এই স্বাভাবিক প্রবৃত্তি দ্বারা সাড়া বিশ্বের সবাই তাড়িত তাহলে মানব জাতির বিলুপ্ত হওয়া কে আটকাবে? স্বাভাবিক প্রবৃত্তি তো বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দেবে না।

আশা করব সমকামী সমর্থক রা আমার এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন। - সমকামিতা যদি স্বাভাবিক হত তাহলে সমকামীরা যৌনরোগ দ্বারা অধিক আক্রান্ত হত না। কারণ মলাশয় গাত্র অস্থিতিস্থাপক ও পাতলা তাই ঘর্ষণে মেমব্রেন সহজেই ছিরে যায়। লিঙ্গের গঠন কিন্তু যৌনীর উপযোগী, মলাশয়ের নয়। - উন্নত প্রাণীদের মধ্যে বংশবিস্তার হয় যৌন জননের মাধ্যমে।

প্রজনন কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয় বংশবিস্তারের উপর ভিত্তি করে। প্রকৃতি তে সেসব প্রাণী টিকে আছে যারা বংশ বৃদ্ধি করেছে ও পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়েছে। এই পয়েন্টে সমকামিতার কোন গ্রহণযোগ্যতাই নেই। - রাগ, হিংসা প্রভৃতি মানবাচরণ গুলো কিন্তু বংশানুক্রমে সঞ্চারিত হয় তাই বলে কি আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করি না? - প্রচণ্ড ধার্মিক লোকদের মাঝে সমকামিতা দেখা যায় না, ইহা কিন্তু ভাবার মত বিষয়। - সমকামীরা নিজেদের মধ্যে মিলিত হবার সময় ‘টপ’ ও ‘বটম’ হয়ে মিলিত হয়।

তারা তো নারী বা পুরুষের ভূমিকা থেকে বের হতে পারেনি, সেই ভূমিকায় পৌছতেই হচ্ছে। ইহা কি সমকামের ব্যর্থতা নয়? সমকাম যদি প্রাকৃতিক হত তাহলে এদের যৌনাঙ্গের বিবর্তন হত, কিন্তু হয়নি। তাই আমি মনে করি সমকামিতা কোন স্বাভাবিক যৌন প্রবৃত্তি নয়। (পূর্বে নকশা ব্লগে প্রকাশিত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।