আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেলানীদের হত্যার লক্ষ্যে চাঁদা তোলা হচ্ছে, আমরা যারা চাঁদা দিবো...!!!

প্রতিবছর নিয়ম করে ভারতীয় বিএসএফ পাখি মারার মতো গুলি করে বাংলাদেশের নিরী্হ মানুষ হত্যা করে। আমরা এসব হত্যাকান্ডের খবর পড়ে আবেগে উদ্বেলিত হই, ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ আমাদের মনে ক্ষোভ আর হতাশার বিস্ফোরণ ঘটায়- আমরা সন্মিলীত ভাবে কিছু করতে চেষ্টা করি-- এই অসহায় অক্ষম আমরা আর কিছু না হলেও প্রতিবাদটা জানিয়ে আসি। তারপর......? ফেলানীদের হত্যা করতে বিএসএফ এর মূল্যবান বুলেট খরচ হয়, অতি হিসেবী ভারতীয় সরকার কি তা এতো সহজে মেনে নিবে! বহন করবে এমন মূল্যহীন সব প্রাণ নিধনের জন্য একটি অধিকতর মূল্যবান বুলেটের ব্যয়ভার!! বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মাঝে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে যে ভারত, জাতিগত ভাবেই যারা হিসেবী বলে পরিচিত তাদের সরকার তো এই হিসেবের বাইরে যেতে পারেনা... এই সমস্যার সমাধান আছে... ফেলানীদের হত্যার মূল্যবান বুলেট, আগ্নেয়াস্ত্রের খরচটা না হয় ঐ মুখপোড়া বাংলাদেশীদের কাছ থেকেই আদায় করে আনা হোক!! আর এই বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগতিার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের সামনে নতজানু হয়েই আছে অভাগা বাংলাদেশের বিশ্বাস ঘাতক কৃতঘ্ন সরকার!! সারা বছর জুড়ে বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্যের ব্যবহার এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যেখান থেকে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব মনে হয়ে। খাদ্য দ্রব্যের মাঝে আলু, পেঁয়াজ, চাল, ডাল, মশলা থেকে শুরু করে মাছ, গোশত এমনকি ফলমূল সর্ব ক্ষেত্রে ভারতীয় পণ্যের প্রতি তাদের নির্ভরশীলতা সাফল্যের সাথে নিশ্চিত করা হয়েছে। এমনকি সেদেশে কৃষকরা চাষ করতে চাইলেও চাষাবাদে ব্যবহৃত সার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরন্জ্ঞামাদি ভারতীয়..... বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতি আজ দেশের নাগরিকের কাছে দ্বিতীয় অপশন, কালে ভদ্রে বা বিশেষ দিবসে চ্যানেল পরিবর্তন করে দেশী টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান গলধঃকরন করা হয়- আর সারা বছরের নিয়মিত নির্মল বিনোদনের জন্য বরাদ্দ ভারতীয় সব চ্যানেল।

পোশাক, বা পরিধেয় বস্ত্রের ক্ষেত্রে ভারত নির্ভরশীলতার কথা নতুন করে কিছুই বলার নেই। একপাল স্থূল রুচীর নারী পুরুষের কাছে ভারতীয় পোশাক বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যক। । ইদানীং বাংলাদেশী পত্রিকায় ঘটা করে ভারতীয় জুতার বিজ্ঞাপণ প্রচার হয় বলে শুনেছি!! মেয়েদের গহনা, পোশাক আর আনুসঙ্গিক সরান্জ্ঞামাদির সাথে জুতো যোগ হয়ে যেনো ষোলকলা পূর্ণ হলো!! ঈদপার্বন এলে তো কথাই নেই... ভারতীয় ছায়াছবি বা তাদের বিভিন্ন চরিত্র এমনকি সঙ্গীতের নামানুসারে প্রবর্তিত পোশাক কেনাটা সমাজে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য! আর এই নির্লজ্জ আচরনের মাধ্যমে ভারতীয় সাজ পোশাকে নিজেদের সাজিয়ে তোলার সাথে সাথে সেই দেশের প্রতি পরোক্ষ আনুগত্য এবং নিয়মিত ভাবে ফেলানীদের হত্যা করায় প্রত্যক্ষ মদদ দেয়া হচ্ছে। ।

বছরের ৩৬৫ দিন যেখানে ভারতীয় পণ্যের প্রতি নির্ভরশীলতা সেখানে হঠাৎ চাঁদা তোলার প্রশ্ন এলো কেনো??? কারণ... ৩৬৫ দিনে খাদ্য দ্রব্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রতি সুক্ষভাবে যে নির্ভরশীলতা সৃষ্টি করা হয়েছে তা থেকে হঠাৎ বেড়িয়ে আসা সম্ভব নয়। তবে এই যে ঈদ উপলক্ষ্যে দেশের ১৬ কোটি না হলেও ১২ কোটির অধিক মানুষ যে পোশাক বা পরিধেয় বস্ত্র ক্রয় করবে, সেক্ষেত্রে ভারতীয় পোশাক বর্জন সম্ভব। কেউ ভারতীয় পোশাক কেনার ইচ্ছে পোষন করলেই ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবিটি সামনে তুলে ধরে জানবেন, আপনি এই মেয়েটিকে হত্যার জন্য দায়ী। বিএসএফ কর্তৃক নিরীহ বাংলদেশী হত্যায় যারা প্রতিবাদ মূখর, তাঁরা নিশ্চিত করতে পারেন নিজে ও পরিবার পরিজনের মাঝে কেউ যেনো ভারতীয় পোশাক ক্রয় না করেন। অন্তঃত আমার কাছে বাংলদেশী পোশাকের মান ভারতীয় পোশাকের চেয়ে ঢের বেশি ভালো।

আমাদের দেশের বিভিন্ন বুটিক ও দেশজ তাঁত শিল্পের কাপড় ভীনদেশি এমনকি পশ্চিমাদের কাছে সমাদৃত। আর দেশী পোশাকে নিতান্ত অরুচী হলে(যদিও তা একজন বাংলাদেশীর জন্য শুধু লজ্জাকর নয় হীনমণ্যতাবোধের পরিচায়ক) চায়না, জাপানের বা অন্য কোন দেশের কাপড় কিনে পোশাক বানিয়ে নেয়া যায়। শিশুদের জন্য দেশী পণ্যের বাইরে কিছু কিনতে চাইলে চায়না, হংকং, থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশের পোশাকও আমাদের দেশে সহজলভ্য। আর যদি এতো কিছুর পরও ভারতীয় পোশাকটিই কারো পছন্দের হয়, তাহলে নিজেকে ফেলানী ও তাঁর মতো বিএসএফের গুলিতে নিহত অগুনিত বাংলাদেশী নারী পুরুষের হত্যাকারী হিসেবে মেনে নিয়ে, মনের আনন্দে ভারতকে ফেলানীদের হত্যার চাঁদা প্রদান করা যায়। ।

। । সারা বছর প্রাত্যহিক জীবনের হাজারো জিনিস কেনা হয়, সেখান শুধু ঈদে ভারতীয় পোশাক বর্জন করে কি হবে, এমন ভাবনা অনেকের মনে জন্ম নিতে পারে....! - শুরুটা কোথাও থেকে হতে হবে, আর এমন উৎসবের পোশাক, জুতা, সাজের সরন্জ্ঞাম দিয়ে সেই শুরুটা অনেক বেশি সহজ... কারন এর বিকল্প প্রচুর!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।