আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হ্যালো, সিক্স জিরো ওয়ান ডাবল জিরো টু ম্যাডাম বলছেন?

ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে দীর্ঘ ৪০ বছর পর উচ্ছেদের আঘাত সয়ে উঠতে না উঠতেই মানি লন্ডারিং মামলায় ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ছয় বছরের জেল বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দুঃসহ রজনীকে দীর্ঘই করেছে। এরই মধ্যে খালেদার উত্তরসূরি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লন্ডন নির্বাসিত তারেক রহমানকে সম্পূরক চার্জশিটে একুশের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার আসামি করায় তার দুশ্চিন্তার মাত্রা বাড়ায়ইনি, বিএনপির রাজনীতিকে হতাশার চাদরে ঢেকে দিয়েছে। বিএনপির শাসনামলে কিছু মন্ত্রী-নেতার উন্নাসিক ক্ষমতার দম্ভ, দুর্নীতি, লুটপাট ও হাওয়া ভবনের কলঙ্কের বোঝা বিএনপি নামের দলটিকে বিগত নির্বাচনে টাইটানিকের মতো ডুবিয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের আঘাত বিএনপি নামের দলটিকে ভাঙাগড়ার খেলায়ই ফেলেনি। খালেদা জিয়াকে জেল খাটতে হয়েছে, বড় ছেলে তারেক রহমানকে জেলের ঘানিই নয়, নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন শরীরে নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দেশের বাইরে যেতে হয়েছে।

বিএনপির মন্ত্রী-নেতাদের হয় জেল-নির্যাতন, রিমান্ড না হয় পলাতক জীবনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। দুর্নীতি, দুঃশাসন, জঙ্গিবাদের উত্থান, দলীয়করণ, সর্বোপরি তারেক রহমানকে সামনে নিয়ে হাওয়া ভবন নামের প্যারালাল সরকারের সাম্রাজ্য তৈরি বিএনপিকে এতটাই অভিশপ্ত করেছিল যে, তার খেসারত বিএনপির চেয়ে জিয়া পরিবারকেই বেশি দিতে হয়েছে। ক্ষমতা যে চিরস্থায়ী নয়, সে দিনের বিএনপি-জামায়াত শাসকরা ভুলতে বসেছিলেন। একুশের গ্রেনেড হামলার মতো ঘটনা নিয়ে বিচার হয়নি, প্রহসনের জজ মিয়া নাটক হয়েছে। কিবরিয়ার মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

আহসানউল্লাহ মাস্টার খুন হয়েছেন। সারা দেশ পরিণত হয়েছিল সন্ত্রাসবাদের অভয়ারণ্যে। জামায়াত আর ডানপন্থিদের নিয়ে বিএনপি নাক ডেকে ঘুমিয়েছে ক্ষমতার প্রাসাদে। সেদিনের ঘটনা এখনো মানুষের স্মৃতি থেকে ধূসর হয়নি। আওয়ামী লীগের আড়াই বছর কতটা সুখের তা শাসকরা না জানুক মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

শুধু শেয়ার কেলেঙ্কারিতে ৩২ লাখ বিনিয়োগকারী রিক্ত-নিঃস্ব হয়েছে। অধিকতর তদন্তের নামে কেলেঙ্কারির নায়কদের রক্ষা করা হচ্ছে। মানুষের বুকের ভেতরের ক্রন্দন শাসকদের শোনার কথা নয়। কিন্তু বিরোধী দল বিএনপি কতটা শুনেছে? বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী থেকে সেনাশাসকের স্ত্রী হয়েছিলেন। ফার্স্ট লেডি হলেও বিত্তবৈভব বা বিলাসিতার প্রাচুর্যের সুখ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাকে দেননি।

কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর অথর্ব সাত্তার সরকারের ব্যর্থতা, মন্ত্রীদের দলাদলি-কোন্দলের মুখে রক্তপাতহীন আপস ফর্মুলার অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় এসেছিলেন সেনাশাসক এরশাদ। বিএনপির বড় নেতারা বানের সে াতের মতো প্রবেশ করেছিলেন সেনাশাসক এরশাদের হেরেমে। সেই দুঃসময়ে অকাল বৈধব্যের সাদা শাড়ির আঁচল মাথায় টেনে বেগম খালেদা জিয়া রাজপথে নামলে মানুষ তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েছিল। নীরু-বাবলু দুই সহোদরের লড়াই-সংগ্রাম-নেতৃত্বের মহিমায় তারুণ্যের মিছিলের সাহসী সংগঠনে পরিণত হয়েছিল ছাত্রদল। ইলিয়াস আলীদের জীবন বাজি রাখা সংগ্রাম খালেদা জিয়াকে শক্ত মাটির ওপর দাঁড় করিয়েছিল।

'৯১-এর নির্বাচনে যে ছাত্রদলের শক্তি আর আওয়ামী লীগ বিরোধী মানুষের সমর্থনে খালেদা হেসেছিলেন বিজয়ের হাসি, সেই খালেদা ওই শাসনামলে অনভিজ্ঞ হলেও ছিলেন সফল। তার মন্ত্রীরা ছিলেন বিতর্কের ঊর্ধে। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় নবযাত্রার সূচনা হয়েছিল সে সময়। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় এসে খালেদা প্রমাণ করলেন সত্যি এদেশের ইতিহাসে ব্রুটমেজরিটি কারও জন্যই শুভ নয়। টাইটানিকের মতো তার দল ডুবলেও তিনি ছিলেন উদাসীন।

হওয়া ভবন ও তারেক রহমানকে ঘিরে একটি চক্র জিয়া পরিবারের কপালে কলঙ্কের তিলক পড়ালেও খালেদা জিয়া দেখেননি। এমনকি আরাফাত রহমান কোকোর অন্যায় আবদারকেও যখন মেনে নিয়েছেন তখন তার শাসকের ভাবমূর্তি মানুষের চোখে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। এই দেশে দুই ভাগে বিভক্ত দলকানা প্রশাসন, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী এমনকি সমালোচক সংবাদকর্মীরাও রয়েছেন। খালেদা জিয়া তার অনুসারীদেরই জয়ধ্বনি শুনেছেন। মাঝপথে দাঁড়ানো বিবেকবান মানুষের কণ্ঠস্বর তার প্রাসাদে প্রবেশ করেনি।

এমনকি দল থেকেও তিনি বিচ্ছিন্ন ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আমলা আর জনবিচ্ছিন্ন লুটেরা প্রভাবশালী রাজনৈতিক স্টাফরা খালেদার এলাকাকে 'রেডব্লক' করেছিলেন। ওখানে মন্ত্রীরা পর্যন্ত যেতে পারতেন না! এমপি ও মফস্বল নেতারা দূরে থাক। আজ খালেদার সামনে যখন অন্ধকার, দুর্গমগিরি পথ পাড়ি দেওয়ার চ্যালেঞ্জ তখন ফের তার সামনে সেই আমলারা অবসর নিয়ে এসে হয় দলের নেতা, না হয় উপদেষ্টা হয়ে গুলশান কার্যালয়ে কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছেন। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বিরোধীদলীয় নেত্রীর কিছু স্টাফ, যাদের সঙ্গে বিশেষ জায়গার যোগাযোগও রয়েছে।

এমনকি সাবেক মন্ত্রীরা নাকি গুলশান কার্যালয়ে গেলে ওই দাপুটে স্টাফদের পায়ের উপরে পা তুলে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে দেখেন। কোনো মিডিয়ায় যোগাযোগ নেই, সুসম্পর্ক নেই, মানুষের ভাষা জানা নেই এসব আমলা ও স্টাফ গুলশান কার্যালয়েও খালেদা জিয়াকে 'রেডব্লকের' বাসিন্দা করেছেন। নেতাকর্মী বিচ্ছিন্ন খালেদা জিয়া রাতে গুলশান কার্যালয়ে এলেই একজন স্টাফ ও একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত টানা দুই ঘণ্টা ব্রিফিং করেন। দলের নিবেদিতপ্রাণ খালেদা জিয়ার দুঃসময়ের কর্মী সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও মাঠ নেতারা অপমান-লজ্জায়-অভিমানে দূরে থাকেন। পারতপক্ষে গুলশান কার্যালয়ে যান না।

ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের পরাজয় প্রমাণ করেছে এদেশে গণতন্ত্র মানেই শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। একজন আরেকজনের বিকল্প। একদল আরেক দলের বিকল্প। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জিএম প্যারেটোর এলিট আবর্তন তত্ত্বের সূত্রের মতোই গত কুড়ি বছর পালাক্রমে তারাই এসেছেন ক্ষমতায়। কিন্তু এবার বিরোধী দলে থাকা খালেদা জিয়া ত্রিশঙ্কু অবস্থায় পতিত।

কঠিন চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিতে হলে তাকে একজন উদার গণতন্ত্রীর পথ নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। এরশাদ জমানায় যখন খালেদা জিয়ার দল ছিল দুর্বল, তখন ছাত্রদলের মাঠ নেতারাও ক্যান্টনমেন্টের বাসায় ৬০১০০২ নম্বরে ফোন করে জানতে চাইতেন হ্যালো, সিক্স জিরো ওয়ান ডাবল জিরো টু ম্যাডাম বলছেন? এভাবেই মাঠের সঙ্গে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যোগাযোগ ছিল নিয়মিত ব্যাপার। স্বামী জিয়াউর রহমান সেনাশাসক হিসেবে উর্দি গায়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন। তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার পার্থক্য হলো খালেদা জিয়া স্বামীর ইমেজকে কাজে লাগালেও রাজপথে কখনো লাঠি, গুলি, টিয়ার গ্যাস, কখনো অবরুদ্ধ পরিস্থিতির মুখোমুখি লড়ে গণতন্ত্রের নেত্রী হিসেবে ক্ষমতায় অভিষিক্ত হয়েছিলেন। সেই খালেদা জিয়াকে যারা আজ মাঠ নেতাকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে 'রেডব্লকের' বাসিন্দা করেছে তাদের হটিয়ে তাকে মাঠ নেতাকর্মীর জন্য দুয়ার খুলে দিতে হবে।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যখন পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দুনিয়া তখন খালেদা জিয়াকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিনি পাকিস্তানি রাজনীতির জিগির তোলা তালেবানি স্লোগানধারীদের নিয়ে হাঁটবেন নাকি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শাসনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করে উদার গণতন্ত্রীদের নিয়ে অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে পথ হাঁটবেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলেন, এখানে বসে ভারতবিরোধী রাজনীতি করবেন আর ওয়াশিংটন বসে বলবেন ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চান তা বিশ্বাসযোগ্য হবে না। এখনো সময় আছে অসীম ধৈর্য নিয়ে জামায়াত ও ডানপন্থিদের বাদ দিয়ে সোজা পথে হাঁটুন। দলের অভ্যন্তরে যে দুটি ধারা বইছে সময় নিয়ে হলেও তাদের সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়ান। রেডব্লককে পিপলস্ ব্লক করুন মাননীয় খালেদা জিয়া।

এই দেশের রাজনীতির ইতিহাসে জনগণের হৃদয় হরণ করে যে মহানায়ক বাঙালি জাতিকে এক সুতোয় বেঁধেছিলেন তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার রাজনীতি থেকে পাঠ নিলেই কেবল দলকে গণমুখী ও জনপ্রিয় করা যায়। তার মতো আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা নিয়ে আর কোনো নেতার আবির্ভাব এদেশে হবে না। তার কাছে কর্মীরা ছিলেন সন্তানের মতো। তার কাছে মানুষ ও দেশ ছিল শেষ কথা।

দলের নেতাদের তিনি গুরুত্ব দিতেন খুব বেশি। রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি ওয়ার্কিং কমিটির বাইরে সৈয়দ নজরুল, তাজউদ্দিন, ক্যাপ্টেন মনসুর ও কামরুজ্জামানের সঙ্গে সারাক্ষণ শলাপরামর্শ করতেন। তার পরের স্তরেই ডাকতেন শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমদকে। তারপর নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম রব, আবদুল কুদ্দুস মাখনসহ অনেকেই ছিলেন। একেকটি অঞ্চলের একেকজন দলীয় কাণ্ডারির সঙ্গে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল।

চট্টগ্রামে জহুর-আজিজ, কুমিল্লায় জহিরুল-কাইয়ুম, নোয়াখালীতে মালেক উকিল, সিলেটে ফরিদ গাজী এরকম। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে যে শর্ত দিয়েছেন তার অন্যতম ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিনের অনুষ্ঠান করা যাবে না, বিএনপির মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করা যাবে না। এসব মানলে কাদের সিদ্দিকীর তেমন লাভ হবে না। বঙ্গবন্ধুও বড় হবেন না। ইতিহাস তাকে জাতির পিতা হিসেবে অমরত্ব দিয়েছে।

তবে এটি গ্রহণ করলে বড় হবেন খালেদা জিয়া। এমনকি যার স্বামী বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন সেই খালেদা জিয়া যদি শেখ মুজিবের নামের আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জুড়ে দেন তাহলে তার নিজের উচ্চতা তো বাড়বেই বরং প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের আবেগের রাজনীতির জায়গাটা হোঁচট খাবে। তাই সার্বিক বিবেচনা করে হিসাব-নিকাশের জায়গা থেকে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী করতে হলে খালেদা জিয়ার সামনে প্রথম দায়িত্বটিই হলো সুবিধাবাদী যে চক্রটি তাকে ঘিরে রেখেছে তাদের সরিয়ে পর্দা উন্মুক্ত করে দেওয়া। মাঠ নেতাকর্মীদের জন্য দুয়ার খুলে দেওয়া। যারা এরশাদ জমানায় খালেদার জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন সারা দেশে তারা আজ অভিভাবক পর্যায়ে।

বিএনপির ওই মাঠ নেতাদের জন্য দুয়ার খুলে দিন। সিলেটের ইলিয়াস আলী, উত্তরবঙ্গের মিজানুর রহমান মিনু, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সাইফুল ইসলাম, খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বরিশালের মজিবুর রহমান সরোয়ার, চট্টগ্রামের আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর নাছির উদ্দিনদের একে একে একান্তে ডাকুন। দলের চিত্র জানুন। কর্মী ও মানুষ কি চায় শুনুন। আন্দোলনের কর্মসূচি নিন।

হরতাল দিলে জনমত বিপক্ষে যাবে। মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা করেছে লক্ষ্মীপুরের শাসক দল। নাটোরে একদিন আপনারা ক্ষমতায় থাকতে ফজলুর রহমান পটলের লোকজন শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলি করেছিল। সেদিন বিএনপির লোকসানের পাল্লা ভারি হয়েছিল। আজ শাসক আওয়ামী লীগের লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে।

কিন্তু রাজপথে নামার আগে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে যান। একই সঙ্গে সংসদে যোগদানের পথ খোলা রাখুন। ওয়েস্ট মিনিস্টার গণতন্ত্রের কথা বলবেন। আর সংসদে যাবেন না তা হবে না। বেতন-ভাতা নেবেন জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে, মানুষের সমস্যা নিয়ে বিতর্কের ঝড় তুলতে সংসদে না গেলে সমালোচনার তীরে ক্ষতবিক্ষত হবেন।

বিলাসী রাজনীতির স্বর্গ থেকে দলের উচ্চাভিলাষী লুটেরা গোষ্ঠীকে শাসকের হেরেম থেকে বের করতে হলে, স্বর্গ থেকে নামাতে হলে আপনাকেই আগে কর্মী ও মানুষের দুয়ারে যেতে হবে মাননীয় খালেদা জিয়া। ছেলেদের কথা রেখে মানুষের কথা বলুন। মানুষের অধিকার আদায়ে সংসদে ঝড় তুলুন, সারা দেশ সফর করুন। সংসদে মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়াররা এখনো আছেন। বাইরে রাজনীতির মঞ্চে অসাধারণ বক্তা কিশোরগঞ্জের ফজলুর রহমানকে পাশে রাখুন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো ক্লিন পজেটিভ ইমেজের মহাসচিব তো আছেনই। সঙ্গে রাখুন এরশাদ জমানার ছাত্রনেতাদের। শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন থেকে রিজভি, ইলিয়াস এ্যানীদের। সানাউল হক নীরুদের ফিরিয়ে আনুন। রাজনীতির পথেই রাজনীতির চাকা ঘুরানো যায়।

রাজনীতিতে মানুষের শক্তিতেই নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো যায়। কেতাদুরস্ত জনবিচ্ছিন্ন অবসরপ্রাপ্ত আমলা, মোসাহেব কর্মচারী বা অনুগত দাসদের দিয়ে নয়। মোসাহেব একজন রাজনৈতিক নেতার জন্য শত্রু হতে পারে, মিত্র নয়। স্বাধীনবাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী এক টকশোতে বলেছেন, মাত্র নয়জন সদস্য নিয়ে দেশের প্রথম সংসদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন আতাউর রহমান খান। তিনি দাঁড়ালেই মাইক পেতেন।

সময়সীমা বাঁধা ছিল না। যত খুশি বলতেন। মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী আপনাকে অনুরোধ করব অনেকেই আজ বলছেন বিএনপি এভাবে চললে, আপনার ঘুম না ভাঙলে পরিণতি হবে মুসলিম লীগের। আমরা চাই দেশে কার্যকর শক্তিশালী বিরোধী দল থাকুক। তা না হলে শাসক স্বৈরশাসক হয়ে যায়।

গণতন্ত্রপিপাসু মানুষ তা চায় না। চায় ভারতের মতো সরকার ও বিরোধী দল মিলে গণতন্ত্রের মহিমাকে উজ্জ্বল করবে। জাতীয় ইস্যুর সমাধান করবে। তাই আপনি সংসদে যান। যত খুশি কথা বলুন।

যত খুশি ওয়াকআউট করুন। আপনি ন্যায্য থাকলে মানুষ আপনার সঙ্গে থাকবে। শাসকরা সমালোচিত হবে। জনপ্রিয়তা হারাবে। বিএনপি বাঁচলে আপনি বাঁচবেন, আপনি বাঁচলে আপনার ছেলেরাও থাকবে দুধে-ভাতে।

তাই সংসদ, কর্মী ও মানুষ হোক আপনার নিরাপদ ঠিকানা। - পীর হাবিবুর রহমান Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।