আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আর কত পুলিশী বর্বরতা দেখবে এ জাতি??????????????????

তিন মামলায় জামিন পাওয়ার পর হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে বেরিয়ে আসছেন আবদুল কাদের তিন মামলায় জামিন পাওয়ার পর হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে বেরিয়ে আসছেন আবদুল কাদের পুলিশের হাতে নির্যাতিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল কাদের গতকাল বুধবার তিন মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। সন্ধ্যা ছয়টা আট মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেল থেকে বেরিয়েই তাঁর ওপর নিষ্ঠুরতার বিচার চাইলেন কাদের। তিনি সাংবাদিকদের বললেন, ‘আমি নির্দোষ। যারা আমার মতো অসহায়ের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে, তাদের বিচার চাই। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, যেন সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তি দেওয়া হয়।

’ এ সময় কাদের তাঁকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের বিবরণ দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ওই রাতে সেগুনবাগিচার রাস্তায় ধরেই মারধর শুরু করে পুলিশ। এরপর খিলগাঁও থানায় নিয়ে আবার লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সারা শরীর জখম করে। সকালে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন এসে তৃতীয় দফা নির্যাতন করেন। কাদের বলেন, ‘সকালে সেন্ট্রি এসে বলে, “ওসি স্যার এসেছে, তোমাকে ডাকে।

” এরপর আমাকে ওসির রুমে নিয়ে যায়। ওসি বলেন, “তোর সঙ্গে আর কে কে আছে, দ্রুত নাম বলে ফেল। ” আমি বলি, স্যার, আমি তো কিছু জানি না। আমি ছাত্র। আমি কার নাম বলব।

কিন্তু মানতে রাজি নন। তিনি একটি চাপাতি হাতে নিয়ে বললেন, “বলবি, সবই বলবি। তার আগে দেখি, চাপাতিটা ধার আছে কি না। ” এ কথা বলেই তিনি আমার পায়ে কোপাতে শুরু করলেন। ’ বলতে বলতে কাদের আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না।

বললেন, ‘ওসির রুমের ফ্লোর রক্তে ভিজে গেছে। আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম, আর বাঁচব না। ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের ছাত্র আবদুল কাদেরকে ১৫ জুলাই রাতে খিলগাঁও থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর অপর এক ব্যক্তিসহ তাঁর বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর থানায় আগের একটি গাড়ি ছিনতাই মামলায়ও তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এরপর ২৬ জুলাই কাদেরের মুক্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করলে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর ২৮ জুলাই হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কাদেরের নির্যাতনের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তকালে খিলগাঁও থানার ওসি মো. হেলাল উদ্দিন, উপপরিদর্শক (এসআই) আলম বাদশা ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শহিদুর রহমানকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে হাইকোর্ট কাদেরকে বিএসএমএমইউতে সরকারি খরচে চিকিৎসার নির্দেশ দেন। এরপর ওই দিনই বিএসএমএমইউর প্রিজন সেলে কাদেরকে ভর্তি করা হয়।

তিন মামলায় জামিন: প্রথম আলোর আদালত প্রতিবেদক জানান, খিলগাঁও থানায় পুলিশের করা অস্ত্র আইনে ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক দুই মামলায় গতকাল জামিন পেয়েছেন কাদের। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হক কাদেরকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন। এর আগে গত সোমবার গাড়ি ছিনতাইয়ের অভিযোগে করা মোহাম্মদপুর থানার মামলায় জামিন পান কাদের। গতকাল কাদেরের পক্ষে আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু জামিন চেয়ে আদালতকে বলেন, কাদেরের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো পুলিশের সাজানো। কাদেরের ওপর নির্যাতনের ঘটনাটি সারা দেশের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে।

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর জীবন পুলিশের হাতে বিপন্ন। গুটি কয়েক অসৎ পুলিশের জন্য পুলিশ বিভাগের দুর্নাম হচ্ছে। এ সময় আদালত বলেন, পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করছে, যা মোটেই আইনস্বীকৃত নয়। তা ছাড়া আসামির কাছ থেকে যে চাপাতি উদ্ধার দেখানো হয়েছে, আইনের দৃষ্টিতে তা অস্ত্র নয়। কেননা চাপাতির জন্য কোনো লাইসেন্স প্রয়োজন হয় না।

রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি শাহ আলম তালুকদার বলেন, আইনানুগভাবে কাদেরকে অস্ত্র মামলায় জামিন দিলে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো আপত্তি নেই। তবে কাদেরের জামিনের বিরোধিতা করেন পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) আমিনুর রহমান। শুনানি শেষে আদালত ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় একজন আইনজীবীর জিম্মায় কাদেরকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন। মুক্তির পর আবার হাসপাতালে ভর্তি: গতকাল দুপুরের আগে আদালত কাদেরের জামিন মঞ্জুর করেন। বিকেল পাঁচটার দিকে জামিননামাটি আদালত থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়।

এরপর কারা তত্ত্বাবধায়ক পার্থ গোপাল বণিক ও জেলার মাহাবুবুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে জামিননামাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ডেপুটি জেলার আবু মুছার মাধ্যমে হাসপাতালের প্রিজন সেলে পাঠান। সেখানে পাঁচটা ৫৪ মিনিটে কাদেরকে তাঁর মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর পরপর আবু মুছা প্রিজন সেলের ফটকে এসে সাংবাদিকদের বলেন, কাদের এখন মুক্ত। কিন্তু কাদের চাইছেন, এখানে চিকিৎসা শেষ করে যাবেন। তাঁর আরও চিকিৎসার দরকার আছে কি না, চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত দেবেন।

সে ক্ষেত্রে তাঁকে অন্য ওয়ার্ডে ভর্তি হতে হবে। এরপর সন্ধ্যা ছয়টা আট মিনিটে মা ও এক কারারক্ষীর কাঁধে ভর করে কাদের খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তাঁর বাঁ পায়ে ব্যান্ডেজ দেখা যায়। প্রিজন সেল থেকে চিকিৎসকের খোঁজে মা ও ভগ্নিপতির কাঁধে ভর দিয়ে কাদের প্রথমে ভুল করে বি ব্লকে যান। সেখানে হাসপাতালের এক কর্মী বললেন, অর্থোপেডিক বিভাগ তো ডি ব্লকে।

তারপর উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতায় ডি ব্লক খুঁজে সেখানে যান কাদের। এভাবে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ৪৫ মিনিট হেঁটে ডি ব্লকে অভ্যর্থনা কক্ষে পৌঁছাতেই তিনি আরও ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অন্যদিকে কাদেরের বোন জান্নাতুল মাওয়া তারও আগে থেকে চিকিৎসার ফাইলপত্র দিয়ে চিকিৎসকদের খোঁজে এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। পরে রাত আটটায় কাদেরকে অর্থোপেডিক বিভাগের দুই নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি: আবদুল কাদেরকে নির্যাতনের ঘটনা তদন্তের জন্য গতকাল যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-২) আশীষ রঞ্জন দাসকে প্রধান করে এক সদস্যের কমিটি গঠন করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ গতকাল এ কমিটি গঠনসংক্রান্ত আদেশ জারি করে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে এই কমিটি গঠন করা হয় বলে জানিয়েছেন আইন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে আট সপ্তাহের মধ্যে এই কমিটি হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেবে। পুলিশের তদন্ত কমিটির তৎপরতা: এই ঘটনায় গঠিত পুুলিশের তদন্ত কমিটি গতকাল খিলগাঁও এলাকা পরিদর্শন করে। পুলিশ ওই স্থানটি চিহ্নিত করে ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগ ও অস্ত্র আইনে কাদেরের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় মামলা করে।

তদন্ত কমিটি সরেজমিনে সেদিনের ঘটনার ব্যাপারে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে। এর আগে তদন্ত কমিটি ১ আগস্ট কাদের ও তাঁর মায়ের বক্তব্য নেয়। তারা অভিযুক্ত খিলগাঁও থানার সাবেক ওসি, এসআই ও এএসআইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। কাদেরের কথিত সহযোগী মামুনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।

তদন্ত কমিটি আবারও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে। আর কত পুলিশী বর্বরতা দেখবে এ দেশ,এ জাতি???এ বিভীষিকার শেষ কোথায়??????????  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।