আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমিনা বাহরামীর ক্ষমা ঘোষণা: মহত্ত্ব না নরপশুর মানবাধিকার নিয়া ভাবা মিডিয়ার প্রতিনিয়ত চাপের ফসল

মেঘমুক্ত নীলাভ দিঘীর কবোষ্ণতা খুঁজছে মন! ১. কিছুদিন আগে রুমানা মনজুরের প্রসঙ্গে ইরানের একই ধরনের একজন ভিকটিম আমিনা বাহরামী’র কথা লিখেছিলাম । গতকাল নিউজে দেখলাম তিনি তার জীবনটাকে ধ্বংস করে দেয়া পাষন্ড মোভাহেদীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। দেখে হতবাক না হয়ে পারলাম না। ২০০৪ সালে অক্টোবরে তেহরান ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া তরুনী আমিনা বাহরামী কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলনে। তার ইউনিভার্সিটির সহপাঠী মোভাহেদী তাকে বেশ কিছুদিন থেকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল।

আমিনা শুরু থেকেই নেগেটিভ রেসপন্স করায় মোভাহেদী তাকে নানা সময়ে থ্রেট দিয়ে আসছিলো। সেদিন মোভাহেদী নারকীয় জঘন্য হামলা চালায় আমিনার উপর, এক জার এসিড ছুড়ে মারে আমিনার মুখে। ঝলসে যায় সাথে সাথে সারা মুখ,কদাকার একটা মাংসপিন্ডে পরিণত হয় সুশ্রী এক মুখমন্ডল। একটা চোখ সাথে সাথে ঝলসে নষ্ট হয়ে যায়। আরেকটা চোখও অন্ধ হয়ে যায় শীঘ্রই।

১৭ টা অপারেশন করা হয় মুখটাকে রিশেপ করার জন্য। লাভ হয় না কিছুই। পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায় আমিনা। ধরা পড়ে মোভাহেদী,ইরান হওয়ায় সে বিচার কিসাস ( শরীয়া আইনের একটি শাখা)এর আওতায় আমিনা এর বিচার চায় । কিসাস পদ্ধতির ব্যাপারটা হচ্ছে ভিকটিম তার ক্ষতির সমপরিমান ক্ষতি যেন অপরাধীকে করা হয় সে দাবি করতে পারে কিংবা ক্ষতিপূরণ-অর্থ চাইতে পারে।

আমিনা প্রথমটাই বেছে নিল। তার দাবি ছিল কোর্টে inflict the same life on him that he inflicted on me ইরান আদালত তাই রায় দেয় মোভাহেদীকেও এসিডের মাধ্যমে অন্ধ করে দেয়া হবে। কোর্ট আমিনাকে জিজ্ঞেস করেছিল, তার পুরো মুখ ঝলসে দিতে চায় কিনা সে, আমিনার রিপ্লাই ছিল, তার দর্কার নেই,তার উপর যা করা হয়েছে অতটা ভয়াবহ পরিণতি সে চায় না। কয়েক ফোটা এসিডই যথেষ্ট তার দুই চোখ অন্ধ করে দেয়ার জন্য, তাহলে সে বুঝতে পারবে অন্ধ হওয়ার কী যন্ত্রনা এখন সে ভোগ করছে। পাশাপাশি এটা এই ধরনের ক্রাইমের বিরুদ্ধে দারুন রোল প্লে করবে।

শাস্তির রায় ঘোষিত হয়ে যায়,কিন্তু আর্ন্তজাতিক নানা মহলের চাপে সেটা আর কার্যকর হয় না। কিছু মানবাধিকার সংঘ তথাকথিত সভ্য আইনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার দাবি জানায়। তাদের মতে এই শাস্তি বিধান ‘অমানবিক!!!’ তাই ২০০৮ সালে ঘোষিত এ রায় এতদিনেও কার্যকর হয় নি। এতদিন ধরে আমিনা লড়ে যাচ্ছিল শাস্তিটা যাতে কার্যকর হয়, যাতে ভবিষ্যতে আর কারও প্রতি এমন নারকীয় হামলা না আসে। নিউজে এখন দেখলাম এই সপ্তাহে সেটা কার্যকর হতে যাচ্ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে আমিনা ক্ষমা করে দিয়েছেন।

২. কথা হচ্ছে এই যে মহত্ত্ব দেখানো হল সেটা কেমন ব্যাপার হল। আন্তর্জাতিক নিউজ মিডিয়া, মানবাধিকার কয়েকটা সংঘ দেখলাম খুব আনন্দিত। কী দারুন মহত্ত্ব , আহা! সেখানে দেখলাম আমেনার মাও মেয়ের কান্ডে খুব খুশি সেটা ফলাও করে বলা হচ্ছে, মানে মানবিকতার চরম একটা নিদর্শন পেয়ে নিউজ-মিডিয়া যারপরনাই ব্যস্ত সেটা প্রচারে। এখন বোঝাই যাচ্ছে আমেনার এ শাস্তির দাবিটা ছিল মূলত পুরো মিডিয়ার সাথে লড়াই, কারন আগেও নিউজ এসেছিল পুরো বিশ্বের প্রতিবাদের মুখে মোভাহেদীর দন্ড স্থগিত হয়ে আছে। আমেনার বক্তব্য পড়েও এবং শুনে মনে হল, মানবাধিকার সংস্থা বা নিউজ মিডিয়া তাকে যথেষ্ট চাপে রেখেছিল, আমেনা উচ্চ-শিক্ষিত নারী,মিডিয়া দ্বারা তাই তিনি কিছুটা হলেও নাড়া খাবেন।

তাই তার বক্তব্য শোনা যায়, তিনি সেটাই করলেন যার জন্য চেয়ে আছে বর্হিবিশ্ব । অর্থাৎ বহির্বিশ্ব আমেনার সে ন্যায্য দাবির প্রতি সর্মথন নেই তা তাকে বিশ্বাস করানো হয়ে গেছে নিউজ কাভারেজের জন্য। ক্ষমা করার কারন কি সেই প্রশ্নের জবাবেই সেটা বোঝা যায়, আমেনা প্রথমে বলেছেন, তিনি ক্ষমা করেছেন কারন এটা তার রাইট। দ্বিতীয় কারন হিসেবে তিনি বললেন The second reason I decided to pardon him was because it seemed like the entire world was waiting to see what will happen বোঝাই যাচ্ছে চাপটা কীসের! আমার কাছে তাই এটা মহত্ত্ব মনে হয় না,কয়েকবারর চেষ্টা করেও শুধুমাত্র বাইরের চাপে যে দন্ড স্থগিত হয়ে ছিল, তা হঠাৎ করে ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে মওকুফ হলে আমার মনে হয় তাতে ঘাপলা আছে। হয়তো আমেনা বুঝতে পেরেছিল এ দন্ড কখনোই কার্যকর হবে না কিংবা হলেও তাকে থাকতে হবে বাইরের মিডিয়ায় একজন নিশংস নারী হয়ে।

কিছুদিন আগে করা তার সে দৃপ্ত ভঙ্গিটা হঠাৎ হারিয়ে গেল কেন বুঝলাম না "If I forgive, I get nothing for forgiveness," she says. "The same if I take his eyesight, I get nothing. But I want people like Majid to know that there is punishment." কিন্তু এই ক্ষমা ঘোষনা এই ধরনের অপরাধের প্রসারের জন্য যে হুমকি স্বরূপ একটা ভুমিকা রাখবার কথা ছিল তা নষ্ট হয়ে গেল। আর একজন জঘন্য অপরাধীকে ক্ষমা করে দেয়া আমার ব্যক্তিগত বিবেচনায় অপরাধ। হয়তো তার অনেক বছরের জেল হবে, ভালো দেশের জেলের পরিবেশও ভাল। সারাজীবন জেল হলেও তার কৃতকর্মের শাস্তি সে পাবে না। ৩. আমি সাধারণ মানুষ ।

কোন দেশের কোন এক ইরানী নারীর বিচার নিয়ে আমার মাথা-ব্যথা হওয়াটা পাগলামী । রুমানা মন্জুরের ঘটনায় শুধু তুলনা হিসেবে আনার জন্য আমি আমিনা বাহরামীর কথা বলেছিলাম, ভেবিছিলাম আমিনা যদি এমন একটা ফেয়ার অ্যাক্ট পায় সেটার মত করে হয়তো রুমানাও সেরকম ভাবে না হলেও সেই দৃষ্টান্ত ধরে সাঈদের বিচার চাইতে পারবেন। কিন্তু আমিনা’র এ ক্ষমা ঘোষণায় আমি যথেষ্ট মর্মাহত। আমি আগের পোষ্টেও বলেছি-আমার কাছে মনে হয় একজন সাইদ বা মোভাহেদী কে তথাকথিত এই সভ্য আইনের মাধ্যমে বিচার করাটা হল চরম এক অবিচার। lex talionis এর মাধ্যমে যদি তাদের বিচারের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে আমার মত ‘ নর-পশুর মানবাধিকার নিয়া না ভাবা’ মানুষ শান্তি পেতাম।

সাইদ পশুটার একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত ঠিক একই ভাবে ওর নাক কেটে ফেলা এবং চোখ উপড়ে ফেলা!আরেক পশু মোভাহেদীর শাস্তি হওয়া উচিত ছিল এসিড দিয়ে ওর মুখ ঝলসে দেয়া, নিদেন পক্ষে অন্ধ করে দেয়া। যদিও এসব নি:ষ্ফল আক্রোশের কথা। নর-পশুর মানবাধিকার সচেতন সভ্য মানুষরা এসব কথায় শিউড়ে উঠবে। ভিকটিমের যা ইচ্ছে হোক ব্যাপার না কিন্তু অপরাধীদের জন্য দরকার ফেয়ার প্রসিডিউর। রুমানা মন্জুর এখন পুরোপুরি অন্ধ ।

আগের পোষ্টে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম হয়তো ডান চোখটা ভাল হয়ে যাবে (তখনো ডান চোখের অপারেশন হয় নি)। কিন্তু কোনভাবেই চোখদুটোর একটাও বাঁচানো যায় নি। অপটিক নার্ভ পুরোপুরি বলা চলে ছিড়ে গেছে। আমাদের দেশের হাজারে নির্যাতনের মত সেটাও সবাই ভুলে যাচ্ছে- সেটাই সবচেয়ে কনসার্নিং। মোভাহেদী আর সাঈদদের কিছুই হয় না! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.