আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সানি ! (ছোট গল্প)

লিখতে মুঞ্চাই তাই লিখি । https://www.facebook.com/nostakak বিশাল এক ফ্লাটে গত ৩ মাস ধরে এক প্রকার বন্ধি অবস্থায় দিন কাটছে সানির । রূপক সাহেব প্রতিদিন রাত করে বাসায় ফিরে আর ততক্ষণে গভীর ঘুমে হারিয়ে যায় সানি। আবার তার যখন ক্লাস থেকে বাসায় ফেরার টাইম হয় তখনি রুপক সাহেব বাসা থেকে বেড়িয়ে পরে । সাপ্তাহে ১ দিন মাত্র দেখা হয় বাবা-ছেলের ।

দুপুরে একসাথে খেতে বসলে টুকিটাকি কথা হয় মাত্র। -সানি , একা একা থাকতে তোমার কোন প্রবলেম হচ্ছে না তো ? -নাহ বাবা, আমি ঠিক আছি। -লেখা পড়া কেমন চলছে? -ভালোই যাচ্ছে । -তুমি চাইলে তোমার মায়ের ঐখান থেকে বেড়িয়ে আসতে পার। -আচ্ছা , যাব একদিন ।

-যেদিন যাবে তার আগের দিন আমাকে এলার্ট করে দিও । -ঠিক আছে । তিন মাস আগে রূপকের সাহেবের সাথে কানিজের ডিভোর্স হয়ে যায় । তার পর থেকেই রূপকের সাহেবের সাথে একা একা থাকা লাগে, সানির । নতুন জায়গা , নতুন স্কুল আর এমনিতে ও খুব শান্ত স্বভাবের হওয়াতে তেমন কোন বন্ধু ও করে উঠটে পারেনি সে।

সারাটা দিন বাসায় বসে মা-বাবার ঝগড়ার সেই নোংরা বেপার গুলি নিয়ে চিন্তা করে সে । আজও তার স্পষ্ট মনে আছে সেই রাতের কথা ,পাশের রুম থেকে মা বাবার চিৎকার করে বলা কথাগুলি সে পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছিল । তোমার সমস্যা টা কোথায়? যেখানে তুমি আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারোনা সেখানে আমি যদি অন্য কারো কাছ থেকে সেটা আদায় করে নিতে পারি তা হলে তোমার জ্বলে কেন ? কানিজ দয়া করে চিৎকার করবা না । সানির ঘুম ভেঙ্গে যাবে। আর মাঝ রাতে আমাকে ইন্সাল্ট করে কোন লাভ নেয় ।

-ইন্সাল্ট ? আহাহাহাহহা ! রূপক গত ৩ বছরে সিঙ্গেল একটা রাতের জন্যও কি তুমি আমাকে সেটিস্ফাইড করতে পেরেছ ? কানিজ তুমি খুব ভালো করেই জানো ,ডক্টর তোমার সামনেই বলে দিয়েছে " মিস্টার রূপক আপনি আপনার এবেলেটী হারিয়ে ফেলেছেন"। ছেলেটা বড় হয়েছে, ক্লাস নাইনের পড়া একটা ছেলে আছে আমাদের । আর কিছু না হোক সানির মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও নিজেকে সুখি ভাবতে চেষ্টা কর । ঐ দিন রাতে রূপক আর কানিজের মাঝে আরো অনেক কথা হয়েছিল যা মনে হলেই গা গুলিয়ে আসে সানির। পর দিন দুপুরে সে স্কুল থেকে এসে দেখে মায়ের রুম একেবারেই ফাঁকা ।

বাবাকে অনেক বার জিজ্ঞেস করে ও কোন উওর পাওয়া যায় নি । সানি পরেঅবশ্যই জানতে পেরেছে তার মা কোশিক মামার ফ্লাটে গিয়ে উঠেছেন । প্রথমদিকে কিছু না বুঝলেও কিছুদিন পর বুঝতে আর বাকি রইল না , কোশিক মামার সাথেমায়ের বিয়ে হয়ে গেছে । 'কিন্তু কোশিক মামা কি করে এমনটা করতে পারল ? মা আর কোশিক মামার কথা শুনলে মনে হত তারা যেন আপন ভাই-বোন। আর সেই কোশিক মামাই কিনা মায়ের ।

' নাহ , আর ভাবতে পারেনা সে । এতসব ভাবতে ভাবতে একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে । দিনের পর দিন ঐ কথা গুলি মাথার ভিতর এক্কা দুক্কা খেলে চলছে । একমূহূর্তের জন্যও কথা গুলি ভুলে থাকতে পারে না সানি । ভুলবেই বা কি করে ? সে নিজেও যে বাবার মত ঐ পথের পথযাত্রী ।

ক্লাসের ভিতর বন্ধুরা যখন পর্ন দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠে সানি তখন বেঞ্চের এক কোণে চুপটি করে বসে থাকে। কেননা সে আর ৮/১০ জনের মত না । সানি তাদের দলের এই ভদ্র সমাজ যাদের নাম দিয়েছে " বৃহন্নলা" । কিন্তু তাকে দেখে বুঝার কোন উপায় নেয় । বলিষ্ঠ দেহ, হাত পায়ে বড় বড় লোম, নাকের নিচে সদ্য উকি দেওয়া পশম গুলি ও জানান দিচ্ছে কৈশোর কাটিয়ে যুকবে পরিণীত হতে যাচ্ছে সে ।

তবে নিজেরজীবনের কথা চিন্তা করলে বড় বেশি ভয় লাগে তার। যেই জীবনের কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নেয়। সমাজের অপবাদ আর গোটা কয়েক নোংড়ামি ঘেরা তার চারিপাশ। এই জীবনের চেয়ে ঐ বনের পশু গুলির জীবনটাও অনেক আনন্দের । মধ্যরাতে আকাশ ভেঙ্গে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে ।

সানির মনটা হঠাৎ কোন এক অজানা বাতাসে আনমনে হয়ে উঠল । ডায়েরি থেকে পুরাণ দিনের সুখের কথায় ভরপুর পাতা গুলি একটা একটা করে ছিঁড়ে আগুন লাগিয়ে দিল তাতে । বৃষ্টির কারনে আবহাওয়াটা যেন পাল্টে গেল,শীত শীত ভাব এসে গেছে । সানি রান্না ঘরে ঢুকে কড়া করে ২ কাপ চা করল । নিজের কাপে ২ চামচ , বাবার কাপে ১ চামচ চিনি দিয়ে কাপ দুটি টেবিলের উপর রেখে বাবার ঘরের দরজায় গিয়ে নক করল -বাবা আমি চা করেছি তুমি কি খাবে ? এত রাতে চা করেছ ? -হ্যাঁ , বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে তাই ভাবলাম তুমাকেও এক কাপ দেয় ।

বাবা চা কি ভিতরে এনে দিয়ে যাব । না লাগবে না আমি নিজেই আসছি । মাঝরাতে ছেলের সাথে এক টেবিলে বসে চা খেতে গিয়ে রূপক খিয়াল করল সানিকে আজ বড় বেশি ক্লান্ত লাগছে , যেন চা খাওয়া অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়বে । সানি তুমার কি ঘুম পেয়েছে ? -হুম । যাও চা টা শেষ করে ঘুমিয়ে পড় গিয়ে ।

-হে বাবা আজ ঘুমতে হবে , অনেক দিন ভালো করে ঘুমাতে পারি না খুব অস্থির লাগে । চা শেষ করে সানি নিজ ঘরের দিকে পা বাড়াল । পিছন থেকে রূপক বলল,সানি আজ তোকে বড় বেশি সুন্দর লাগছে রে বেটা, বড় বেশি সুন্দর লাগছে । সানি মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল । নিজের টেবিল এর নিচ থেকে সদ্য কিনা ব্লেডটা বের করে ডান হাতের একটা আঙ্গুল কেটে দিল ।

কিছুখনের ভিতর টেবিলের সাদা চাদর ফোটায় ফোঁটায় লাল রক্তে রঙ্গিন হয়ে উঠল । ডায়েরির পাতা ছিঁড়ে রক্ত দিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে সানি লিখতে শুরু করল "'এই দুনিয়াটা বড় বেশি অদ্ভুদ । আর দুনিয়ায় বসবাস করা মানুষ গুলি বড় বেশি রহস্যময়। রহস্য আমার ভালো লাগে না , একে বারেই ভালো লাগে না । আমি এই রহস্যময় জগত থেকে মুক্তি পেতে চায়, প্রান খুলে বাচতে চায় ।

আমার রক্তের সাথে অন্যদের রক্তের কোন পার্থক্য আছে বলে আমার জানা নেয়,আছে কিনা তা জানতে ও চায় না । তবে বলতে চায় 'আমিও মানুষ । দুঃখ,কষ্ট,ভালোবাসার অনুভূতি সম্পূর্ন মানুষ' । " চিরকুট খানি টেবিলের উপর রেখে দিয়ে মন্থর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে ছাদের দিকে উঠতে শুরু করল । ১২ তলা ছাদের রেলিং এর উপর উঠে আকাশের দিকে তাকালো সানি, টসটসে চাদটা ততখনে এক দিকে হেলে পড়েছে।

আকাশ থেকে টপটপ বৃষ্টি পড়ছে তবুও কেন জানি মনে হল শেষ রাতের তারা তার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হেঁসে উঠছে, আর বলছে "আজ তোকে বড় বেশি সুন্দর লাগছে রে বেটা , বড় বেশি সুন্দর লাগছে । সানি হাত উঁচিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে রেলিং এর উপর থেকে লাফ দিল । তখনও বৃষ্টি পড়ছিল,আকাশে ছিল পুডিং এর মত চাঁদ সাথে তারাদের অবাক করা মুখ । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.