আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলাম গ্রহণকারী প্রাক্তন যাজক ইউসুফ এস্টেসের কথা

বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। [১৭:৮১-পবিত্র কুরআন] Peace TV এর একজন অন্যতম জনপ্রিয় দায়ী ইউসুফ এস্টেস। ছোট বাচ্চাদের কাছে তো তিনি খুবই জনপ্রিয়। তিনি একজন প্রিচার এবং মিউজিকের মিনিস্টার ছিলেন।

তার বাবাও একজন মিনিস্টার ছিলেন। ইউসুফ এস্টেসের জন্ম ১৯৪৪ সালে আমেরিকার ওহিও (Ohio) অঙ্গরাজ্যে এক প্রটেস্ট্যান্ট (খ্রীস্টানদের একটি ফেরকা) পরিবারে এবং বেড়ে ওঠেন টেক্সাস (Texas) অঙ্গরাজ্যের হাসটন (Houston) শহরে। এখানে উল্লেখ্য যে প্রটেস্ট্যান্টদের মধ্যে যারা পুরোহিত বা যাজক অথবা যারা ধর্মীয় বাণী প্রচার করে তাদের বলা হয় পাস্তুর, মিনিস্টার, রেভারেন্ড, প্রিচার। তিনি ও তার বাবা দুজনেই ধর্মীয় কাজের পাশাপাশি ব্যবসা করতেন। একবার তার বাবা তাকে পরামর্শ দেন মুহাম্মাদ নামে মিশরীয় বংশোদ্ভুত এক ব্যবসায়ীর সাথে ব্যবসা করার জন্য।

মুহাম্মাদ তার বাবার পূর্ব পরিচিত ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ইউসুফ এস্টেস মুসলিমদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতেন। তাই তিনি একজন মুসলিমের সাথে ব্যবসা করতে অনিচ্ছুক ছিলেন তবুও বাবার অনুরোধে তিনি মুহাম্মাদের সাথে দেখা করেন। এরপর প্রায়শই তাদের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ হতো এবং প্রায় প্রতিবারই ইউসুফ এস্টেস চেষ্টা চালিয়ে যেতেন মুহাম্মাদকে খ্রীস্ট ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করার। একসময় তিনি মুহাম্মাদকে ১৫ ডলারের বিনিময়ে তার বাসায় থাকতে রাজি করিয়ে ফেলেন।

ব্যবসার জন্য তারা বিভিন্ন জায়গায় একসাথে ভ্রমণ করতেন। ইউসুফ এস্টেস অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন যে কোন জিনিস বিক্রি করার সময় মুহাম্মাদ সবসময় তার ক্রেতাকে নতুন ও ভালো জিনিসটি দিচ্ছে। তিনি মুহাম্মাদকে পুরাতন জিনিসগুলো আগে বিক্রি করার কথা বললে মুহাম্মাদ উত্তরে বলেন যে তার ধর্ম তাকে শেখায় যে ব্যবসার সময় জিনিস বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে সর্বোত্তম জিনিসটি দেয়ার জন্য। মুহাম্মাদের এই ব্যবহারে তিনি খুবই মুগ্ধ হোন। ইউসুফ এস্টেসের ইসলাম গ্রহণের কাহিণী পর্ব ১ ইতিমধ্যে ইউসুফ তার বাসায় আরেকজন প্রিস্টকে থাকার ব্যবস্থা করে দেন যার সাথে তার পরিচয় হয় এক হাসপাতালে।

প্রায় প্রতিদিনই রাতে খাবার টেবিলে তারা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। তো একদিন কথা প্রসঙ্গে ইউসুফ মুহাম্মাদকে জিজ্ঞাসা করেন যে তোমাদের কুরআনের ভার্সন কতগুলো? উত্তরে মুহাম্মাদ বলেন যে কুরআনের একটি মাত্র ভার্সন যা আরবীতে লিখিত। এই কথা শুনে ইউসুফ খুবই অবাক হলেন এবং প্রথমে তো বিশ্বাসই করতে চাননি। মুহাম্মাদের এই উত্তর ইউসুফকে চিন্তায় ফেলে দেয়। তিনি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন যে তাদের বাইবেলে কত অসংখ্য ভার্সন, এক ভার্সনের সাথে আরেক ভার্সনের কত ভিন্নতা আর কুরআনের মাত্র একটি ভার্সন।

আরেকদিন ইউসুফ এস্টেস মুহাম্মাদকে স্রষ্টা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে মুহাম্মাদ তাকে সূরা ইখলাস তেলাওয়াত করে শোনায়, (১) বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, (২) আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, (৩) তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি (৪) এবং তার সমতুল্য কেউ নেই। [১১২:১-৪ পবিত্র কুরআন] তিনি আরো অবাক হোন যখন জানতে পারেন যে পবিত্র কুরআন ট্রিনিটির কথা বলতে নিষেধ করছে। পবিত্র কুরআন বলে, হে আহলে-কিতাবগণ! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর শানে নিতান্ত সঙ্গত বিষয় ছাড়া কোন কথা বলো না। নিঃসন্দেহে মরিয়ম পুত্র মসীহ ঈসা আল্লাহর রসূল এবং তাঁর বাণী যা তিনি প্রেরণ করেছেন মরিয়মের নিকট এবং রূহ-তাঁরই কাছ থেকে আগত। অতএব, তোমরা আল্লাহকে এবং তার রসূলগণকে মান্য কর।

আর একথা বলো না যে, আল্লাহ তিনের এক, একথা পরিহার কর; তোমাদের মঙ্গল হবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ একক উপাস্য। সন্তান-সন্ততি হওয়াটা তাঁর যোগ্য বিষয় নয়। যা কিছু আসমান সমূহ ও যমীনে রয়েছে সবই তার। আর কর্মবিধানে আল্লাহই যথেষ্ট।

[৪:১৭১ পবিত্র কুরআন] পবিত্র কুরআন আরো বলে, নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলেঃ আল্লাহ তিনের এক; অথচ এক উপাস্য ছাড়া কোন উপাস্য নেই। যদি তারা স্বীয় উক্তি থেকে নিবৃত্ত না হয়, তবে তাদের মধ্যে যারা কুফরে অটল থাকবে, তাদের উপর যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি পতিত হবে। [৫:৭৩ পবিত্র কুরআন] স্রষ্টা সম্পর্কে ইসলামের ব্যাখ্যা তার মনপূত হয়, ইউসুফ তার প্রিচিং এর বক্তৃতায় ট্রিনিটি অস্বীকার করে স্রষ্টা সম্পর্কে কুরআনের ব্যাখ্যা উল্লেখ করতে লাগলেন। এখানে উল্লেখ্য যে ইউসুফের বাবাও কখনোই ট্রিনিটি বিশ্বাস করতেন না। ইউসুফ তার বাসায় যে প্রিস্টকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন সে একদিন মুহাম্মাদের সাথে মসজিদে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে মুহাম্মাদ তাকে তার সাথে মসজিদে নিয়ে যান।

প্রিস্টের নাম ছিল পিটার। ইউসুফ পরে পিটারের কাছে জানতে চান যে মুসলিমরা মসজিদে কি ধরণের মিউজিক ব্যবহার করে। তিনি খুব অবাক হোন যখন জানতে পারেন যে মসজিদে কোন মিউজিক ব্যবহার করা হয় না। ১৯৯১ সালে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে পিটার আবার মুহাম্মাদের সাথে মসজিদে যায় আর এইবার সে ইসলাম গ্রহণ করে। এই ব্যাপারটি ইউসুফকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়।

কিন্তু তার জন্য আরো বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। তিনি তার স্ত্রীর সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে তার স্ত্রী তার কাছে ডিভোর্স চেয়ে বসে। প্রথমে তিনি ভাবেন যে তার স্ত্রী বোধহয় ভাবছে তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন তাই সে ডিভোর্স চাচ্ছে। তিনি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে তিনি ইসলাম গ্রহণ করছেন না। কিন্তু তিনি জানতে পারেন যে তার স্ত্রী ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক আর এই কারণেই সে ডিভোর্স চাচ্ছে।

তখন ইউসুফ বলেন যে তিনি মুসলিম হতে চান কিন্তু তার স্ত্রী তার কথা বিশ্বাস করে না। ইউসুফ মুহাম্মাদের কাছে যান, তাকে সব খুলে বলেন। মুহাম্মাদ তাকে চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে বললেন। মুহাম্মাদকে ফজরের সালাতে সেজদায় যেতে দেখে ইউসুফ অন্য রুমে গিয়ে সেজদায় চলে যান আর আল্লাহ্ এর কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য। ঐদিন সকাল ১০ টায় ইউসুফ, মুহাম্মাদ ও নওমুসলিম ইয়াহিয়ার (প্রাক্তন প্রিস্ট পিটার) সামনে কলেমা শাহাদাৎ পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করেন, কিছুক্ষণ পর তার স্ত্রীও ইসলাম গ্রহণ করেন।

এর কয়েকমাস পর ইউসুফ এস্টেসের বাবাও ইসলাম গ্রহণ করেন। ইউসুফ এস্টেসের ইসলাম গ্রহণের কাহিণী পর্ব ২ ইসলাম গ্রহণের পর ইউসুফ এস্টেস ইসলামের প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি আরবী ভাষা ও কুরআন সম্পর্কে উচ্চতর শিক্ষার জন্য মিশর, মরক্কো ও তুর্কী ভ্রমণ করেন। তিনি টেক্সাস মিলিটারী ইন্সটলেশনে ইমাম হিসেবে কাজ করেন। ২০০০ সালের আগষ্টে জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় নেতাদের জন্য শান্তি সামিটে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন।

২০০৪ সাল থেকে তিনি নিয়মিত Peace TV এবং Huda TV এর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। ইংরেজী ভাষী মুসলিমদের জন্য তিনি বেশ কয়েকটি ইসলামিক ওয়েব সাইট পরিচালনা করছেন। এছাড়াও তিনি ধর্মীয় বিষয়ের উপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানও প্রযোজনা করছেন। তথ্যসূত্রঃ ইউসুফ এস্টেসের ইসলাম গ্রহণের কাহিণী পর্ব ৩ ইউসুফ এস্টেসের ইসলাম গ্রহণের কাহিণী পর্ব ৪ ইউসুফ এস্টেসের ইসলাম গ্রহণের কাহিণী পর্ব ৫ ইউসুফ এস্টেসের ইসলাম গ্রহণের কাহিণী পর্ব ৬ en.wikipedia.org/wiki/Yusuf_Estes The Deen Show প্রচারিত ইউসুফ ইসলামের সাক্ষাৎকার সমগ্র  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.