আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রপ্তানি উপযোগী সুগন্ধি বাংলামতি ধান

আমার অহংকারে, অহংকারী হয়ে , উষ্ণতার আগুন মেখে, পোড়াও আমাকেই : অচেনা দহনে... বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত বাংলামতি মাঠ পর্যায়ে আশাতীত ফলন ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ‘ব্রি ধান-৫০’ বা বাংলামতি বোরো মৌসুমে চাষ উপযোগী বাসমতি সদৃশ ধানের জাত। তবে বাংলামতি ধান মাড়াইয়ে কৃষক অনেক সমস্যার মুখে পড়ছে । ধানটি লম্বাকৃতি হওয়ার প্রচলিত মিলে মাড়াই করলে চাল ভেঙ্গে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সুগন্ধি চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

বাসমতি সদৃশ এ ধান কৃষকের ভাগ্য ফেরাতে পারে বলেও আশা করছেন ব্রি’র বিজ্ঞানী, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এবং মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা। নতুন উদ্ভাবিত বাংলামতি ধানের চাল বিদেশে রপ্তানি করা যাবে বলে আশা করছে তারা। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ ধানের আবাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে এবং ‘ব্রি ধান-২৮’ বা বোরো মৌসুমে আবাদকৃত অন্যান্য জাতের ধানের স্থলাভিষিক্ত হবে। এমনকি হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদও কমে যেতে পারে। কারণ এ ধানের ফলন হাইব্রিড ধানের কাছাকাছি।

মাঠ পর্যায়ে বাংলামতি প্রথম আবাদ হয় খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মেছাঘোনা গ্রামে। মাঠ পর্যায়ে বাংলামতি ধানের চাষ প্রবর্তক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান। তিনি জানান, তার পৈতৃক জমিতে বাংলামতি চাষ করে ফলন পাওয়া গেছে একরে ৭২ মণ ( হেক্টরপ্রতি ৭ মেট্রিকটন বা বিঘা প্রতি ২৪ মণ)। জাত উদ্ভাবন : ‘ব্রি ধান-৩০’ এর সাথে ইরি থেকে প্রাপ্ত কৌলিক সারি আইআর ৬৭৬৮৯ বি এর সাথে সংকরায়নের মাধ্যমে ‘ব্রি ধান-৫০’ এর গবেষণা শুরু হয়। পরে সাত বছর ধরে প্রচলিত প্রজনন পদ্ধতিতে মাঠ পর্যাযে গবেষণা চালিয়ে একটি বিশুদ্ধ অগ্রবর্তী সারি নির্বাচন করা হয় যার কৌলিক সারি নং-বি আর ৬৯০২-১৬-৫-১-১।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বোরো মৌসুমে ‘বিআর-২৮’ জাতের চাষাবাদ উপযোগী এলাকায় ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক হওয়ায় এই অগ্রহবর্তী কৌলিক সারিটিকে উফশীজাত হিসাবে ছাড়করণের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। জাতীয় বীজ বোর্ড ২০০৮ সালে এই অগ্রবর্তী কৌলিক সারিটিকে দেশের প্রথম সুগন্ধি এবং রপ্তানিযোগ্য উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে ‘ব্রি ধান-৫০’ এবং জনপ্রিয় ‘বাংলামতি’ নামে সারাদেশে বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন দেয়। বৈশিষ্ট্য : অঙ্গজ অবস্থায় গাছের আকার ‘ব্রি ধান-২৮’ এর চেয়ে খাটো, পূর্ণ বয়স্ক গাছের উচ্চতা ৮০-৮৫ সেন্টিমিটার। এ ধানের জাতের ডিক পাতা হেলানো এবং লম্বা। এ ধানের দানা পাকিস্তান ও ভারতের বাসমতি জাতের মত চিকন।

তবে দানার অগ্রভাগ একটু বাঁকানো। এ জাতের ধানগাছের জীবনকাল ১৫২-১৫৫ দিন। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২১ গ্রাম। উপযুক্ত পরিচর্যা করে ব্রি ধান-৫০ চাষ করলে ৬.০-৬.৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। সনাক্তকারী গুণ : ‘ব্রি ধান-৫০’ ঢলে পড়া প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন বা ভারত ও পাকিস্তানের বাসমতি জাতে নেই।

এ জাতে পরিপক্ক শিষগুলো ডিক পাতার উপরে অবস্থান করে বিধায় পুরো ক্ষেত ম্যাটের মত দেখার যা খুব আকর্ষণীয় হয়। ‘ব্রি ধান-৫০’ এর পরিপক্ক কাল শতভাগ ফুল আসার ১৫-২০ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হয় যা অন্যান্য উফশী জাতের দেখা যায় না। ‘ব্রি ধান-৫০’ এ সুগন্ধ আছে যা ফুল আসার সময় মাঠে গেলেই অনুভব করা যায়। ‘ব্রি ধান-৫০’ এর ফলন ভারত ও পাকিস্তানের বাসমতির চেয়ে হেক্টরপ্রতি ১ টন বেশি। এর চালের আকার পাকিস্তান ও ভারতের বাসমতি চালের অনুরূপ।

এই ধানের এ্যামাইলোজের মাত্রা পায় ২৮%। আঞ্চলিক উপযোগিতা : লবণাক্ত এলাকা ছাড়া দেশের প্রায় সকল বোরো চাষাবাদ অঞ্চল বিশেষ করে ‘ব্রি ধান-২৮’ জাতের ধানের চাষাবাদ উপযোগী এলাকায়, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের চাপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, নওগাঁ, রাজশাহীসহ কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও যশোর অঞ্চলে জাতটির অধিক ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। চাষ উপযোগী জমি : বেলে দোয়াঁশ, এঁটেল দোয়াঁশ, উঁচু এবং মাঝারি উচুঁ জমিতে ‘ব্রি ধান-৫০’ বা বাংলামতি চাষের জন্য উপযোগী। অর্থাৎ যে জমিতে ‘ব্রি ধান-২৮’ এর চাষ হয়ে যে জমিতেই বাংলামতি চাষাবাদ করা যাবে। চাষবাদ পদ্ধতি : ‘ব্রি ধান-৫০’ বা বাংলামতির চাষাবাদ পদ্ধতি ‘ব্রি ধান-২৮’ ও ‘ব্রি ধান-২৯’ জাতের ধানের চাষাবাদ পদ্ধতির মতই।

মিলিং পদ্ধতি : বাংলামতি লম্বাকৃতি হওয়ার প্রচলিত মিলে মিলিং করলে চাল ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা থাকে। এই ধান ‘রাবার রোল হলার’ যুক্ত অটো মিলে মাড়াই করতে হবে। এতে ধানের সুগন্ধ বজায় থাকবে। তাছাড়া অর্ধেক সিদ্ধ করা ধান ‘রাবার রোল হলার’ যুক্ত অটো মিলে মাড়াই করলে শতকরা ৭০-৮০টি আস্ত চাল পাওয়া যাবে এবং প্রাপ্ত চাল দেখতে ধবধবে সাদা হবে। বাংলাদেশের বাংলামতি, ভারত ও পাকিস্তানের বাসমতি চালের অন্যতম প্রতিযোগী হয়ে উঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলামতি ধান থেকে যে চাল পাওয়া যাবে তা বাসমতির মতো সুগন্ধি ও উন্নতমানের হওয়ায় এ চাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.