আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্লোজআপ ওয়ান তারকা আবিদসহ দুজনের মৃত্যু, একজন নিখোঁজ

তরুণ সংগীতশিল্পী ক্লোজআপ ওয়ান তারকা আবিদ শাহরিয়ার (২৩) মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দুর্ঘটনায় আবিদের সঙ্গে আরো একজন প্রাণ হারান। তাঁর নাম মুত্তাকিন মাহমুদ তুর্য (২৩)। দুজনই বিজ্ঞাপনী সংস্থা 'মাত্রা'য় কর্মরত ছিলেন। আশেক মোস্তফা (২২) নামের একজন এখনো নিখোঁজ।

মাত্রার কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম ও কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি আসাদ করিম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, ঢাকার মাত্রা অ্যাড ফার্মের ৪০ জনের একটি দল গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে এসে মোটেল শৈবালে ওঠে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে ক্রিকেট খেলছিলেন আবিদসহ সাত-আটজন। হঠাৎ বল হাঁটু পরিমাণ পানিতে চলে গেলে আবিদ, মুত্তাকিন ও আশিক বলটি আনতে ছুটে যান। ঠিক ওই সময় একটি ঢেউ এসে বলটিকে একটু দূরে নিয়ে যায়। তিনজন আরো গভীরে নামতেই মুহূর্তের মধ্যে একটি বড় ঢেউ এসে তিনজনকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

মিনিট তিনেক পর আরেকটি ঢেউ দুজনকে তীরের দিকে ঠেলে দেয়। সঙ্গীরা উদ্ধার করে আবিদ ও মুত্তাকিনকে সৈকতে তুলে নিয়ে আসেন। তাঁরা স্থানীয় লোকজনের পরামর্শে পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এভাবে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। একপর্যায়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে আবিদকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

মাত্রার কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, 'মুত্তাকিনের শরীরে তখনো প্রাণ ছিল বলে আশা করা হচ্ছিল। মাস্ক পরিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার একপর্যায়ে তিনিও মারা যান। ' মাত্রার ম্যানেজার রেজা গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা সবাই তিন দিনের জন্য কক্সবাজারে সৈকত ভ্রমণে এসেছিলাম। পর্যটন মোটেল শৈবাল থেকে বিকেলে গিয়েছিলাম কলাতলী সৈকতে। সেখানে এক গ্রুপ খেলছিল ফুটবল আর অন্য গ্রুপ ব্যস্ত ছিল ক্রিকেট নিয়ে।

ক্রিকেটের দলে আমিও ছিলাম। ' রেজা বলেন, 'আমরা সবাই সাগরের ঢেউয়ের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক ছিলাম। প্রত্যেককেই পানিতে না নামার জন্য বলে দেওয়া হয়। আমাদের খেলার সাথী ছিল আবিদ, মুত্তাকিন ও আশিক। খেলা শেষ হলেও সৈকতে ছোটাছুটি চলতেই থাকে।

একপর্যায়ে দেখি ওরা তিনজন সাগরের পানিতে নেমে গেছে। তখন বেশ বড় ঢেউ আসছিল। কিছুক্ষণ পরে দেখি, ওরা নেই; ঢেউ ওদের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ' আবিদ শাহরিয়ার ছিলেন মেধাবী ও সম্ভাবনাময় রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী। ২০০৫ সালে এনটিভিতে প্রচারিত ক্লোজআপ ওয়ান সংগীত প্রতিযোগিতায় গান গেয়ে তিনি ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

মিষ্টভাষী ও মার্জিত ব্যবহারের কারণে তিনি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেন। রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি ছিল আবিদের অগাধ ভালোবাসা। রবীন্দ্রসংগীত নিয়েই প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম অ্যালবাম 'এত ভালোবাসি'। সর্বশেষ অ্যালবামটিও রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে। 'নব আনন্দে জাগো' শিরোনামের অ্যালবামটি আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল।

তাঁর অন্য অ্যালবাম হচ্ছে আধুনিক গানের 'ভালোবাসার প্রহর'। সংগীতচর্চার পাশাপাশি উপস্থাপনায়ও সফলতা অর্জন করেছিলেন আবিদ। ক্লোজআপ ওয়ান সংগীত প্রতিযোগিতার সর্বশেষ আসরে তিনি ছিলেন উপস্থাপক। একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত সংগীত অনুষ্ঠানেরও তিনি ছিলেন উপস্থাপক। আবিদের গ্রামের বাড়ি খুলনায়।

বাবা-মা ও একমাত্র ছোট ভাই সেখানেই থাকেন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সেখান থেকে এমবিএ করে বিজ্ঞাপনী সংস্থা 'মাত্রা'য় সিনিয়র এঙ্িিকউটিভ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন কয়েক মাস আগে। আবিদ রাজধানীর আজিমপুরের ৪২ ললিত মোহন দাশ লেনের বাসায় বন্ধুদের সঙ্গে থাকতেন। কালের কণ্ঠ পরিবারের সঙ্গে আবিদের ছিল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।

তিনি কালের কণ্ঠে লিখতেন এবং শুভ উদ্যোগগুলোর সঙ্গে যুক্ত হতেন। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া মুত্তাকিন মাহমুদ তুর্য থাকতেন ঢাকার মিরপুরের হাউজিং স্টাফ কোয়ার্টারে। দুজনের লাশ কক্সবাজার থেকে আজ সকালে ঢাকায় আসবে বলে ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে নিখোঁজ আশেক মোস্তফার বাসা ঢাকার রামপুরায়। তাঁর বাবা কে জি মোস্তফা একজন চিত্রশিল্পী।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।