আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজধানীতে ডেঙ্গুজ্বর বেড়েছে, গুলশানে এডিস মশা বেশি

রাজধানী ও আশেপাশে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ ব্যাপকহারে বেড়ে চলেছে। রোগের বিস্তারের কিংবা কারো মৃত্যুর সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে প্রশাসনের টনক নড়ে। ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর মে, জুন ও জুলাইকে ডেঙ্গু মৌসুম বলে ধরা হয়। এ সময় ঘন ঘন কিংবা হালকা বৃষ্টিপাত হয়। এডিস মশা জমাট পানিতে বংশ বিস্তার করে থাকে।

এ কারণে ঐ সময়টাকে সিটি কর্পোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধন ও জনসচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম নিলে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকগণ জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে ডা. মাফরুহা সুমি নামে একজন চিকিত্সক ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন। এ ঘটনার পর ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে চিকিত্সকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা অন্যতম ব্যবস্থা। এ বিষয়টি অভিজাত শ্রেণী উপেক্ষা করে চলছে।

ডেঙ্গুজ্বর হাই সোসাইটির লোকদের মধ্যেও দেখা দেয়। অপরদিকে সিটি কর্পোরেশন মশক নিধন কার্যক্রম ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব না দেয়ায় নগরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। একইভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বর্তমানে মশার চরম উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় খোঁজ-পাচড়াসহ নানা সংক্রামক ব্যাধি বেড়ে যাচ্ছে। চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম. এন. হুদা বলেন, মশার কামড়ে খোঁজ-পাচড়াসহ নানা ধরনের সংক্রামক ব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর ইতিমধ্যে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি, লালমাটিয়া ও বেইলি রোডে বাসাবাড়ির আঙ্গিনার জমাট পানি পরীক্ষা করে। গুলশান এলাকায় এডিস মশার বিস্তারের উত্সস্থল বেশি বলে পরীক্ষায় প্রমাণ পায়। সংগৃহীত ঐ এলাকার পানির নমুনায় এডিস মশার লারভা থাকার প্রমাণ মিলে। এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের চিকিত্সা সেবার জন্য সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখার জন্য ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার মোঃ সিফায়েত উল্লাহ বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ১১১ জন।

দেড় মাস যাবত্ ডেঙ্গুজ্বর বাড়তে থাকে। এ জন্য অধিদফতর থেকে সচেতনতা বৃদ্ধি করার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অভিজাত এলাকায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহক এডিস মশার বংশ বিস্তারের স্থল। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। চিকিত্সা সেবা নিয়ে কোন ধরনের সমস্যা কিংবা বিলম্ব না হয় সেজন্য সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে মহাপরিচালক জানান।

বেসরকারি সূত্রে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের সংখ্যা ৪ গুণ এবং মারা গেছে ১ জন বলে জানানো হয়। যে স্থানে এডিস মশার বংশ বিস্তার ঃ এডিস মশা অন্য মশার চেয়ে ব্যতিক্রম। এ মশা অভিজাত এলাকায় থাকে। এ মশা ফুলের টব, এয়ারকন্ডিশনার, ফ্রিজ, বাসাবাড়ির বারান্দায় কিংবা আঙ্গিনায় ভাঙ্গা বাসনকোসন, ডাবের খোসা, পুরাতন টায়ার ইত্যাদিতে জমা স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে থাকে। মে, জুন ও জুলাই মাসে বিক্ষিপ্ত কিংবা ঘন বৃষ্টিপাত হয়।

এ সময় জমাট বাঁধা পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করে থাকে। এ কারণে এডিস মশার উপদ্রব বেড়ে যায় এবং ডেঙ্গুজ্বরের বিস্তার ঘটে। তবে এডিস মশা সাধারণত রাতে কামড়ায় না দিনে কামড়ায়। আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকগণ অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে মে, জুন ও জুলাইতে এডিস মশার উপদ্রব বেশি।

পরামর্শ ও চিকিত্সা ঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ও ডেঙ্গুজ্বরের অন্যতম বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে আতংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই। বাসা বাড়িতে ফুলের টব, ফ্রিজ ও এসিতে কিংবা বারান্দায় কোনভাবে পানি জমে থাকতে না পারে সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এডিস মশা বংশ বিস্তারের উত্সস্থল থাকবে না ও ডেঙ্গুজ্বর হবে না। ডেঙ্গুজ্বর হলে পর পর কয়েকদিন উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর হবে। মাথা ব্যথা, পিছনে ব্যথা, গায়ে লালচে র্যাশ দেখা দিবে, ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজার সময় রক্তপাত ও পায়খানা কালচে রং হবে।

এ উপসর্গগুলো থাকলে ডেঙ্গুজ্বর সনাক্ত করা যায়। তবে ঐ সময় কোন অবস্থায় এন্টিবায়োটিক, ভল্টারিন, এসপিরিন ও পেইন কিলার ওষুধ খাওয়া যাবে না। খেলে মৃত্যুসহ যেকোন জটিলতা হওয়ার আশংকা প্রায় একশত ভাগ। জ্বর হলে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, পানি ও সরবত সেবনের পরামর্শ দেন। উক্ত উপসর্গ থাকলে স্থানীয় চিকিত্সকের পরামর্শ নেয়ার কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার উপদেশ দেন।

প্রতিদিন তার চেম্বারে ৫ থেকে ১০ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী আসছে। গুলশান, বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, গ্রীন রোড ও বেইলি রোড এলাকা থেকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া যায় বলে তিনি জানান। এছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীরা আসছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। দিনের বেলায় ছাত্রছাত্রীদের ফুলসার্ট ও ফুলপ্যান্ট পরিহিত অবস্থায় স্কুলে যাওয়ার এবং বাসাবাড়িতে মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেন চিকিত্সকরা। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ১০টি অঞ্চলে মশক নিধন কার্যক্রম চলছে।

এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধে ও জনসচেতনতা কার্যক্রম চলছে বলে মেয়র জানান। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.