আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রমজানের বাজার এখন পাগলা ঘোড়া, এবারও বিফলে বাজার নিয়ন্ত্রণের তোড়জোড়!

উন্মাদ বালক বইলাই কিন্তু আমি পুরা উন্মাদ না, সামান্য কয়টা তার ছিড়া... রমজান ঘনিয়ে এলেই বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। দফায় দফায় বৈঠক হয়; দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়; বাণিজ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারির পর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন; ব্যবসায়ীরা আশ্বাসের পর আশ্বাস দেন; বাজারে নামেন ভ্রাম্যমাণ আদালত; আলোচ্যসূচিতে ফিরে আসে টিসিবির নাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফল হয় শূন্য। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এবার অবশ্য অনেক আগে থেকেই বাজার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

শত বছরের ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) প্রথা তুলে দিয়ে করা হয় পরিবেশক প্রথার আইন। অনেক আগেভাগেই প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। ব্যবসায়ীদের নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করার চেষ্টা করেন সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা। ব্যবসায়ীরাও রমজানে কম লাভে পণ্য বিক্রির প্রতিশ্রুতি দেন। সরকার ও ব্যবসায়ী_উভয় পক্ষ থেকেই জোর দিয়ে বলা হয়, রমজানে পণ্য সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই।

টিসিবিও তার সীমিত সামর্থ্য নিয়ে মাঠে নামে। চিনি বিক্রি শুরু করে আরেক সরকারি সংস্থা চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন। কিন্তু এত কিছুতেও কোনো সুফল মিলছে না। রমজানের আরো এক সপ্তাহ বাকি_এখনই কারসাজির জন্য বাজার থেকে চিনি উধাও, ছোলার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকার বেশি, পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছে। মাছ, মাংসের বাজারও আক্রা।

অবশ্য বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান এখনো বলছেন, রমজানে পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি আগেও বলেছি, এবার রমজানে জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক থাকবে। রমজানে যেসব পণ্যের ব্যবহার বেশি সেগুলোর মজুদ আছে, পাইপলাইনেও প্রচুর পণ্য আসছে। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির অপরাধে আমরা এর আগেও বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি, এখনো নিচ্ছি। ' বাজারে চিনি না পাওয়া সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, 'এ বিষয়ে আমরা খোঁজ নিয়েছি।

কারা এর পেছনে কাজ করছে এর কিছু খোঁজও পেয়েছি। বলে দিয়েছি, নির্ধারিত দামের বেশিতে বিক্রি করা যাবে না। মুনাফাখোররা ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়ের কথা বলে বিক্রি করতে গড়িমসি করছে। কাল-পরশুর মধ্যেই বিষয়টি ঠিক হবে। আমরা ব্যবস্থা নেব।

' রোজার আগ মুহূর্তে দাম বাড়ার মিছিল : এক মাস আগে রাজধানীর বাজারে ভালো মানের ছোলার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৬০-৬২ টাকা। এখন এর দাম ৮০-৮৪ টাকা। এ ছাড়া মাঝারি মানের ছোলা ৭০-৭৬ টাকা, আর নিম্নমানের ছোলার দাম কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা। নিউ মার্কেট বাজারের শতপণ্য স্টোরের বিক্রেতা মো. ইউসুফ জানান, তিনি ২০-২৫ দিন আগে যে ছোলা ৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করেছেন, সেটি এখন ৮৪ টাকায় বিক্রি করছেন। রোজার আগে ছোলার পাশাপাশি ভোজ্য তেল, অ্যাংকর ডাল, পেঁয়াজ, মুড়ি, চিঁড়া, গুড়সহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।

আর চিনি নিয়ে চলছে পুরো তেলেসমাতি কারবার। গত ২১ জুন পরিবেশক প্রথা চালুর প্রথম দিনই সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়। ওই দিন বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের ভোজ্য তেলের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। তীরসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের তেল বাজারজাতকারী কম্পানিগুলোও লিটারপ্রতি তিন টাকা বাড়ায় সয়াবিন তেলের দাম। যদিও তখন আন্তর্জাতিক বাজার ছিল পড়তির দিকে।

মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ২৪ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ সময় ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৮-২০ টাকা দরে। কিন্তু এরপর দাম বাড়তে বাড়তে এখন দেশি পেঁয়াজ ৩৬ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ২৮-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি মুড়ির দাম কেজিপ্রতি ছয় থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। আর চিঁড়ার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি তিন থেকে চার টাকা।

কারওয়ান বাজারের মুড়ি বিক্রেতা মো. শরিফ জানান, পাইকারি ব্যবসায়ীরা মজুদ করছেন বলেই এ দুটি পণ্যের দাম বাড়ছে। বতর্মানে হাতে ভাজা মোটা মুড়ি প্রতিকেজি ১০০ টাকা, হাতে ভাজা চিকন মুড়ি কেজি ৯০ টাকা ও মেশিনে ভাজা মুড়ি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, তিন ধরনের চিঁড়ার দাম প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যেগুলো কিছুদিন আগেও ৪৬ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর গত বছর রমজানে দাম ছিল ৪২-৪৪ টাকা। নির্ধারিত দাম কার্যকর হয় না : গত বছরের মতো এবারও রমজান আসার আগে বেশ কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়।

কিন্তু এ বছরও ওই সব পণ্য নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে বাধ্য করার ফল হচ্ছে উল্টো। খুচরা বিক্রেতারা জরিমানার ভয়ে বিক্রিই বাদ দিচ্ছেন। পরিবেশক প্রথার সুফল মিলছে না : ভোজ্য তেল ও চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সরবরাহ ঠিক রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে চালু হয়েছিল পরিবেশক প্রথা। কিন্তু ২১ জুন এ প্রথাটি চালুর পরই বাজারে এক দফা ভোজ্য তেলের সংকট তৈরি হয়।

আবার এখন চলছে চিনির সংকট। কম্পানিগুলো প্যাকেটজাত চিনি সরবরাহ একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খুচরা বিক্রেতারা। বোতলজাত তেলের সরবরাহও স্বাভাবিক নয় বলে দাবি করেছেন তাঁরা। আর এর সঙ্গে আছে আধা লিটার ও এক লিটারের বোতলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার পুরনো অভিযোগ। নিউ মার্কেটের মকবুল স্টোরের মালিক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, 'ভোজ্য তেল-চিনি কোনোটিরই সরবরাহ স্বাভাবিক নয়।

যতটুকু চাওয়া হয় সে পরিমাণ সরবরাহ করে না কম্পানিগুলো। গত ১৫-২০ দিন ধরে প্যাকেটজাত চিনির সংকট চলছে। আমার দোকানে প্রতিদিন দুই বস্তা চিনি দরকার। কিন্তু অনেক দিন পরপর হয়তো এক বস্তা দেওয়া হয়। ' এক বছরের চেষ্টা আর দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও রমজানের আগে পুরোপুরিভাবে পরিবেশক প্রথা চালু করতে পারেনি সরকার।

১ জুন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ও ২১ জুন থেকে পুরোপুরিভাবে পরিবেশক প্রথা চালুর কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনেক কম্পানি পরিবেশক নিয়োগ শেষ করেনি। কোনো কম্পানিই তেল ও চিনির ছোট ছোট প্যাকেট বাজারজাত করা শুরু করেনি। এখনো চলছে পুরনো ডিও প্রথা। আর ডিও ব্যবসায়ীরাই চিনির বাজারের সাম্প্রতিক অস্থিরতার জন্য দায়ী বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।