আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নুহার জন্য মানব বন্ধন: প্রিপারেটরি কাজের বর্ণনা, যারা ভবিষ্যতে করতে চান তাদের সুবিধার জন্য

ইতিহাস, নেই অমরত্বের লোভ/ আজ রেখে যাই আজকের বিক্ষোভ... জুলাই ১৯, মঙ্গলবার বেলা ১১ টা থেকে মানব বন্ধন শুরু হবার কথা। আগের রাতে একজন বলল পুলিশকে জানিয়ে রাখলে ভাল হয়। সকাল ৮.৩০ এ রমনা থানায় গিয়ে শুনি, প্রেসক্লাবের বিপরীত দিক পর্যন্ত রমনা থানার অন্তর্ভূক্ত; প্রেসক্লাব পড়েছে শাহবাগ থানায়। ছুটলাম শাহবাগ থানায়। দুজন অফিসার সিগারেট খাচ্ছিলেন বারান্দার কোণায় দাঁড়িয়ে; জানালেন থানায় এসব না জানালেও চলে।

পরামর্শ দিলেন স্পটে যে অফিসার আছে তাকে একটু ইনফর্ম করে রাখতে। শাহবাগ থেকে নীলক্ষেত গেলাম লিফলেট গুলো নিতে; জহিরুল (নুহার বাবা) একজনকে পাঠিয়েছে ব্যানার কালেক্ট করতে; ও নিজে হ্যান্ড মাইক আনবে; আমাদের আর্কিটেক্ট বন্ধু নিরু আর হাসিব প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসছে। প্রেস ক্লাবের ভেতরে গাড়ি ঢুকতে দেবেনা বলে চতুরতার আশ্রয় নিতে হল; ব্যাকডালায় যে লিফলেট আর আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র রয়েছে। প্রেসক্লাবের পেছনের গেটে গাড়ি আটকালে পর বললাম সামনেই যে এটিএম বুথ আছে ওখানে যাচ্ছি। গাড়ি ভেতরে চলে গেল, আমি এটিএম বুথের ভেতরে চলে গেলাম; দেড় মিনিট পর সিরিয়াস ভঙ্গি করে বেরিয়েও আসলাম।

এরপর পুলিশ অফিসারের খোঁজ নেয়ার পালা। এস আই রিয়াদকে পাওয়া গেল বাসস্ট্যান্ডের পাশে আরো কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সাথে কাঠের পাটাতনের ওপর বসে পা দোলাতে। সুবোধ বালকের মত হাত বাড়িয়ে দিলাম, নিজের পরিচয় দিলাম আর এক কপি লিফলেট বাড়িয়ে দিয়ে বললাম- 'আগে এটা পড়েন; বাকি কথা পরে বলছি। ' মাথা তুলে তাকাতেই বললাম- 'আমরা অরাজনৈতিক একটা ইস্যু নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব। সম্পূর্ণ সামাজিক একটা আন্দোলন, সমাজের একজন বাসিন্দা হিসেবে আপনার আমার সবার জন্যই এর আবেদন থাকার কথা।

' 'থানায় জানিয়েছেন?' এই প্রশ্ন করার জন্য মুখ খুলতেই নিজে থেকেই বললাম-'শাহবাগ থানায় গিয়েছিলাম, উনারা আপনার নাম বলে দিয়েছন আর আপনার সাথে সরাসরি আলাপ করতে বলেছেন। নেমপ্লেটে নাম দেখেই আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি। ' এত কথা লিখলাম, তার কারণ হল, আমার কাছে মনে হয়েছে, একটা স্মার্ট এ্যাপ্রোচ নিয়ে; পুলিশ কি কি বলতে পারে বা জিজ্ঞেস করতে পারে তা মাথায় রেখে আগেই যদি সেগুলো থ্রো করা যায়, তাহলে ওরা (যে কেউ) কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায়। আক্রমণই সবচেয়ে ভাল প্রতিরক্ষা। এস আই রিয়াদ অমায়ীক ভঙ্গিতে কতক্ষণ থাকব জানতে চাইলেন আর বললেন, 'কোন সমস্যা হবেনা, যতক্ষণ খুশি থাকেন, নো প্রবলেম'।

এগারটায় মাত্র ৪/৫ জন পৌঁছাল, কিছুক্ষণ পরেই দেখি, মৎস্যজীবি সমিতি তাদের একটা দাবি নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। ঠিক এই ভয়টাই করছিলাম, অন্য কোন গ্রুপ এসে জায়গাটা দখল করে না ফেলে; আর তাই হল। নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছি এই বলে যে আমাদের তো লোকজন বলতে গেলে আসেইনি, আস্তে ধীরে শুরু করা যাবে। গেটের অন্যদিকের জায়গাটার দিকে লোলুপ নয়নে তাকাচ্ছি এই ভেবে যে আমাদের ছেলেপেলেরা চলে আসলে পর ওখানে অন্তত দাঁড়ান যাবে। হায়! বিধাতা মনে হয় মুচকি হাসছিলেন।

আমাদের বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দিয়ে আচমকা বিদ্যুতের মত ঠিক ওই জায়গা বরাবর একটা মাইক্রোবাস হার্ড ব্রেক করে থামল। পিপিলিকার সুসংগঠিত সারির মত সুরসুর করে নেমে এলেন নারী অধিকার ফোরাম (বা এই জাতীয় কোন নারী অধিকার সংগঠন)। এক ঝটকায় বাতাসে মেলে সামনে জড়িয়ে চোখের নিমিষে দাড়িয়ে পড়লেন কয়েকজন ব্যানার হাতে করে। মাইক্রোবাসের পেছনের সিট থেকে প্ল্যাকার্ড হাতে দৃপ্ত পায়ে পেছনে এসে দাঁড়ালেন অন্যান্য কর্মীবৃন্দ। এতক্ষণে নজরে এলো, দশ মিনিট আগে ঠিক ওই জায়গার পেছনেই একটা ভ্যানে করে মাইকম্যান এসে মাইক পরীক্ষা করছিল।

এক মিনিটও লাগলনা পুরো ঘটনা ঘটে বক্তব্য শুরু হয়ে যেতে। অবশ্য তার চেয়েও কম সময় লাগল সাংবাদিকদের মৎস্যজীবি সমিতির মানব বন্ধন থেকে তীরবেগে নারী অধিকারের মানব বন্ধন কভার করতে ছুটে আসতে। ঈশ্বরকেও মনে হল নারীদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। মৎস্যজীবি সম্প্রদায় যখন অসহায় দৃষ্টিতে নারী অধিকারের মানববন্ধন দেখছে; দেখতে দেখতে বক্তব্য এবং শ্লোগান দেয়াও শেষ হল পুরো প্রফেশনাল ক্ষীপ্রতায়। আর তা শেষ হতে না হতেই শুরু হল ঝুম বৃষ্টি।

নারী অধিকার ফোরাম যেমন দ্রুততায় মাইক্রোবাস থেকে নেমেছিলেন, তেমন দ্রুততায়ই আবার মাইক্রোবাসে করে চলে গেলেন। সাংবাদিকরাও ক্যামেরা বাঁচাতে বাঁচাতে ছুটলেন প্রেসক্লাবের ভেতরে। মৎস্যজীবি ভাইয়েরা কিছুক্ষণ বিভ্রান্ত ভঙ্গিতে মাছের মতই ভিজে গিয়ে শেষে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেন। নুহার জন্য বিচার চাইতে আসা আমরা ৪/৫ জন উৎকর্ণ মনোযোগ দিয়ে পুরো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলাম আমাদের কারো ছাতা আর কারো রেইনকোটের আরামদায়ক আশ্রয়ে। মানববন্ধন শেষ পর্যন্ত দারুণভাবে সফল হয়েছিল।

কিভাবে, সেই বিত্তান্ত জানতে হলে আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। এই লেখাটা অপরিকল্পিতভাবে লম্বা হয়ে গেল; এর পরের পোস্টে জানাচ্ছি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।