আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাপানী মেয়েদের বিশ্বকাপ জয়

ভূমিকম্প, সুনামি এমনকি ফুকুশিমা নগরীর পারমাণবিক বিপর্যয়ের চার মাসের মধ্যেই জাপানের মেয়েরা দেশবাসীর জন্য আনন্দের লগ্ন বয়ে আনলো বিশ্বকাপ জিতে। টাইব্রেকারে যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে ফিফা আয়োজিত মেয়েদের বিশ্বকাপ জিতল জাপান। যে জাপান আগে কখনো মেয়েদের এই বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেনি, তারাই কিনা এবার একে একে মেয়েদের বিশ্ব ফুটবলের শক্তিধর দেশগুলোকে হারিয়ে যোগ দিল শিরোপা লড়াইয়ে। প্রতিপক্ষ হলো তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের চেষ্টায় ফাইনালে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের। গোটা টুর্নামেন্টে যাদের ভাবা হয়েছিল ‘আন্ডারডগ’, তারাই কিনা শেষ হাসি হাসল।

এ যেন রূপকথাকেও ছাড়িয়ে যাবার মতো ঘটনা। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুটে রবিবার অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ বিশ্বকাপের ফাইনালে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা ২-২ গোলে অমীমাংসিত থাকে। তাও আবার দু’বারই জাপান পিছিয়ে পড়েছিল। কিন্তু উভয় দফাতেই অদম্য সাহসে বলীয়ান হয়ে খেলায় ফিরে আসে জাপানি মেয়েরা। নির্ধারিত সময়ে জাপানের দ্বিতীয় গোলটি আসে খেলা শেষের মাত্র চার মিনিট আগে? আর তাতেই হয়তো মনোবল ভেঙে যায় মার্কিনীদের? এরপর টাইব্রেকারে ৩-১ গোলে জয়ী হয় জাপান? টাইব্র্রেকারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম তিনটি প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়।

তবে জাপান প্রথম চারটির মধ্যে তিনটিই জালে পাঠাতে সক্ষম হলে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে উদিত সূর্যের দেশ জাপান, তার সাথে পুরো এশিয়া। জাপানের মহিলা ফুটবলে এর মধ্য দিয়ে রচিত হলো নতুন রূপকথা। কেননা এর আগের পাঁচটি বিশ্বকাপের ১৬টি ম্যাচে খেলে জাপান জয়ের মুখ দেখেছিল কেবল তিনটিতে। তার মধ্যে সর্বোচ্চ অর্জন ছিল কেবল একবার গ্রুপ পর্যায় পেরোনো? সেটাও ছিল ১৯৯৫ সালের ঘটনা যাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৪-০ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের? অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এ ফাইনালের আগে খেলা ২৫টি ম্যাচের মধ্যে সবগুলোই ছিল হার। এ জয়ে জাপানে আনন্দের বান ডাকে।

৭৪ বছরের এক জাপানি কাতসু মুরি বলছেন, এই জয় তাদের বেঁচে থাকার ইচ্ছাশক্তিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে? সুনামি বিধ্বস্ত শহর মিনামি-সানরিকু’র ফুটবল সংস্থার প্রধান ইয়ুকিহিতো আবে বলছেন, দেশ পুনর্গঠনের কাজে এই জয় তাদের উত্সাহ জোগাবে? প্রভাবশালী জাপানি দৈনিক ‘আশাহি শিম্বুন’ অতিরিক্ত সংস্করণ বের করে শিরোনাম দেয়, ‘নাদেশিকো, বিশ্বের এক নম্বর’? নাদেশিকো মানে জাপানের এক গোলাপি ফুল। পুরুষ শাসিত জাপানে যে ফুলকে দেখা হয় নারীদের সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে। তাই ফুজি টেলিভিশনের এক ভাষ্যকার আনন্দে চেঁচিয়ে উঠে বলেন-এটা হলো নাদেশিকো জাপানের স্বপ্নপূরণের ঘটনা। তারা এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রকে হারাল। নাদেশিকোরা এ জয়ের মধ্য দিয়ে দুনিয়ায় সবচাইতে উঁচুতে আসন নিল।

জাপানের সর্বাধিক সমপ্রচারিত টেলিভিশন চ্যানেল এনএইচকেতে বলা হয়-নাদেশিকোদের মুখে হাসি ফুটিয়েই সবকিছুর শেষ হলো। জাপানে মেয়েদের ফুটবল প্রচলনের পর ৩০ বছরের মধ্যে এই প্রথম তারা বিশ্বের শীর্ষে আসন নিল। এ জয় ১১ মার্চ জাপানের উপর আঘাত হানা ভূমিকম্প ও তারপর পরই বয়ে যাওয়া সুনামি বিধ্বস্ত দেশটির ভঙ্গুর মনোবলে নবগতির সঞ্চার করবে বলেই মনে করছেন অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষক হোপ সোলো খেলার পর বলেন-আমি সত্যিই বিশ্বাস করি ফাইনালে জাপানের সঙ্গে আরও বড় কোনো শক্তি ছিল? সুনামি ও ভূমিকম্পের কারণে জাপানিরা সারা বিশ্বের সমর্থন পেয়েছে? জাপানের অধিনায়ক হোমারে সাওয়া এবারের টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতাও হন? এই খেলোয়াড়টিই ফাইনালের ১১৭তম মিনিটে গোল করে জাপানকে দ্বিতীয়বারের মতো খেলায় ফিরিয়ে এনেছিলেন? এদিকে সুইডেন শনিবার ২-১ গোলে ফ্রান্সকে হারিয়ে মেয়েদের বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান পায়। রোল অব অনার ১৯৯১ যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৫ নরওয়ে ১৯৯৯ যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ জার্মানি ২০০৭ জার্মানি ২০১১ জাপান ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।