আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিকারুন্নেসার ঘটনায় রাজনীতি: যেভাবে এবং যাদের দ্বারা

ভিকারুন্নেসার ছাত্রী ধর্ষনের ঘটনা এবং তার ধারাবাহিতকায় ঘটে যাওয়া পরবর্তী ঘটনা নিয়ে আলোচনা এখনও থামেনি, অবশ্য থামার কথাও না। কারণ, ব্যাপারটির কোন সঠিক সুরাহা হয়নি; আপাত:ভাবে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে মাত্র। এসব ঘটনা প্রবাহের মধ্যে আমার কাছে যে ব্যাপারটি খুবই উল্রেখযোগ্য মনে হচ্ছে তাহলো বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। এই বিষয়টির শুরু হয়েছে এ কারণে যে, প্রথমেই আমরা জেনে গেছি যে ধর্ষক পরিমল এবং হোসনেআরার ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সাথে সম্পর্ক আছে। এর ফলে জনগণের মনে একটি আশংকা তৈরি হয়েছে যে, ধর্ষক এবং অধ্যক্ষ'র রাজনৈতিক পরিচয় থাকার ফলে সঠিক বিচার ব্যাহত হতে পারে।

সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ এ আশংকাকে সত্যে পরিণত করেছে। অর্থাৎ ঘটনার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা শুরু হয়েছে ধর্ষক এবং তার সহযোগী বলে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ'র দিক থেকে। একথা তারা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারবেন না। ধর্ষিতা মেয়েটি, কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী এবং জনগণের পক্ষ থেকে যারা ঘটনাটির বিচার দাবি করেছেন তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ এখনও কেউ করেছে বলে শুনিনি। ঘটনাচক্রে অধ্যক্ষ'র দায়িত্ব গ্রহণ করা অধ্যাপক আম্বিয়ার নামে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এনে যে পোস্টার ছাপানো হয়েছে তা অধ্যক্ষ হোসনেআরার মদদে হয়েছে বলে আমরা শুনেছি।

অধ্যাপক আম্বিয়া কয়েক মাস পর রিটায়ার করবেন। ভিকারুন্নেসার শিক্ষক, বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যাপক আম্বিয়ার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছেন। ফলে এক্ষেত্রেও একজন সম্মানিত শিক্ষকের নামে অধ্যক্ষ'র মদদে করা ভিত্তিহীন অভিযোগ অধ্যক্ষ'র কলুষিত মনেরই পরিচয়। অপরাধীদের বিচার চাওয়া মানে কি সরকারের বিরোধীতা করা? কিছু মানুষ এই ব্যাপারটিকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন যে, ভিকারুন্নেসার ঘটনাকে ব্যবহার করে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারীরা লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে। হ্যাঁ, এই অভিযোগের একটা কারণ এই হতে পারে যে, বিরোধী দলীয় নেত্রী ভিকারুন্নেসার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারে একাত্নতা প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেছেন, "ভিকারুননিসার শুধু প্রিন্সিপালকে পদত্যাগ করলেই হবে না, তাদের কঠিন শাস্তি দিতে হবে। যদি না হয়, আমি মা-বোনদের বলতে চাই, আপনারা রাস্তায় নেমে আসুন, আমি আপনাদের পাশে আছি" (আমার দেশ, ১৪ জুলাই ২০১১)। আমি মনে করি, একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে হোক আর সাধারণ নাগরিক হিসেবে হোক, খালেদা জিয়ার এমন অবস্থান সঠিক। জনগণের পক্ষের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে খালেদা জিয়া মানুষের সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করবেন তাতে দোষের কিছু নাই, বরং সেটাই কাঙ্খিত। তবে আমাদের দেশে সবকিছুই হয় উল্টা।

সরকার সম্ভবত: খালেদা জিয়ার ঘোষণায় ব্যাপারটিতে বাড়তি মনোযোগ দিয়ে ব্যাপারটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। যেহেতু খালেদা জিয়া বিচার চাইছে সেহেতু বিচার করা যাবে না। যেহেতু খালেদা জিয়া হোসনেআরার পদত্যাগ চেয়েছে, সেহেতু পদত্যাগ করানো যাবে না। এখানে আইনের প্রয়োগ নেই, ধর্ষিতার বিচার পাওয়া অধিকার নেই। কী নির্মম, নিষ্ঠুর প্রহসন! তবে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকলেও আন্দোলনকারী শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, সাধারণ দেশবাসীর অংশগ্রহণে (তাদের কারো কারো ব্যক্তিগত রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও) সামগ্রিক আন্দোলনের দাবিতে কোন রাজনৈতিক চরিত্র ফুটে ওঠেনি।

কেউ সরকারের পদত্যাগ দাবি করেনি। তাই এখন পর্যন্ত ভিকারুন্নেসার ঘটনা যেটুকু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তার মূলে রয়েছে সরকার, সরকারের সমর্থক এবং সরকারী দলের সাথে সম্পৃক্ত দোষীরা। ব্যাপারটিতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা দেওয়া গেলে কার লাভ? এক কথায় সরকারের লাভ (এখানে ধর্ষক পরিমল এবং সহায়তাকারী হোসনেআরার স্বার্থকেও সরকারী লাভ হিসেবে গণ্য করতে বাধ্য হচ্ছি)। সরকার যে ব্যাপারটি করেছে তা হল, দোষীদের সাথে সরকারকে এক করে ফেলেছে; যেটা অবশ্যই একটা বড় ভুল। সরকারী দলের অসংখ্য সমর্থকসহ দেশের আপামর জনসাধারণ ধর্ষক পরিমল এবং অভিযুক্ত হোসনেআরা, লুতফর এবং অন্যান্য দোষীদের বিচার চায়।

তারা বিশ্বাস করে যে, এসব দোষীরা আইনের আওতায় শাস্তি পেলে সরকারের সম্মান বাড়বে; মোটেই সরকার বিরোধী আন্দোলন বেগবান হবে না বা এতে বিরোধী দল লাভবান হবে না। তারপরও সরকার আন্দোলনকারীদের দাবিকে রাজনৈতিক দাবি আখ্যা দিয়ে সে দাবিকে চ্যালেঞ্জ করছে। এর মাধ্যমে সরকার তার কল্পিত প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সুযোগে অপরাধীদেরকে ছাড় দেওয়ার পায়তারা করছে। এত সরকার যে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা বুঝতে পারছে না বা বুঝতে চাইছে না। ভিকারুন্নেসা ঘটনার বর্তমান অবস্থা: - পরিমল গ্রেফতার হয়েছে এবং পুলিশের কাছে তার দোষ স্বীকার করেছে।

- হোসনেআরা এখনও অধ্যক্ষ, কিন্তু তিনমাসের ছুটিতে আছে। চলতি দায়িত্ব হিসেবে মঞ্জুয়ারা বেগম দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষা মন্ত্রী বলেছেন, "নিয়মানুযায়ী হোসনেআরাই বৈধ অধ্যক্ষ"। আশা করা যায়, এর মধ্যে কোন নতুন সিদ্ধান্ত না হলে হোসনেআরাই আবার অধ্যক্ষ'রদায়িত্ব গ্রহণ করবে। - অভিযুক্ত বসুন্ধরা শাখার শাখাপ্রধান লুতফর রহমানকে আজিমপুর শাখায় বদলী করা হয়েছে।

- ভিকারুন্নেসায় ক্লাস শুরু হলেও একটা চাপা অস্বস্তি বিরাজ করছে; কারণ এখনও বিষয়টির কোন সুরাহা বা সমাধান হয়নি। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা এখনও সরকার এবং প্রশাসনের উপর আস্থা ফিরে পাচ্ছেন না। কিছু মানুষ, এই ব্লগেও অনেকে আছেন, তারা এখন পর্যন্ত নেওয়া সরকারের পদক্ষেপে ভীষণ খুশি এবং আপ্লুত। আবার অনেকের মত আমিও ভেবে পাই না, ভিকারুন্নেসার ব্যাপারে সরকার বা কলেজ প্রশাসন কী এমন করেছে যাতে বিগলিত হতে হবে? একজনের বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। তিনিতো গ্রেফতার হবেনই, এতে বগল বাজানোর কি আছে? একজন শাখা প্রধান এবং একজন অধ্যক্ষ, তারা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ধর্ষিতা মেয়েটি এবং তার পরিবারকে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে, ভয়ভীতি দেখিয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে, কিন্তু তারা গ্রেফতার হয়নি এবং তারা স্বপদে বহাল আছে। তাদের ব্যাপারে কিছু হবে কিনা তাও বোঝা যাচ্ছে না। আমার মতে, পুরো বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রলেপ দিয়ে একমাত্র লাভ হতে পারে পরিমল, হোসনেআরা, লুতফর রহমান এবং আরোও যারা অভিযুক্ত তাদের। তবে এরকম করা হলে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে সরকার যদি আপামর জনসাধারণের স্বার্থ এবং মনোভাব না বোঝে এবং সরকারের ভাবমূর্তি যদি ধর্ষক এবং তাদের সহযোগীর কাছে বন্ধক দিয়ে রাখে তবে আর কার কী বলার আছে? সে ক্ষেত্রে সরকারকে আড়িয়ল বিলের পরিণতি বরণ করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

কারণ, গণআন্দোলন রোখার সামর্থ্য কোন সরকারের থাকে না। ভিকারুন্নেসার আন্দোলনকে রাজনৈতিক পরিচয় দেওয়ার জন্য সরকার এবং সরকারের অন্ধ চাটুকাররা অহেতুক চেষ্টা করছে; তবে তাতে কোন লাভ হবে বলে মনে হয় না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.