আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্রী উত্ত্যক্তের নানা কৌশল পরিমলের

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ছাত্রীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতেন পরিমল। প্রেম নিবেদন করতেন আদি রসের শ্লোক শুনিয়ে। গতকাল পুলিশ, স্কুলের নিপীড়িত ছাত্রী ও অভিভাবক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা ও বসুন্ধরা শাখা প্রধান লুৎফর রহমানকে যে কোন সময় গ্রেপ্তার করা হতে পারে- এমন ইঙ্গিতই দিয়েছে পুলিশ। নিপীড়িত ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা জানান, পরিমল স্কুল ছাত্রীদের নানাভাবে যৌন নির্যাতন করেছেন।

ক্লাস ও কোচিং করতে যাওয়া ছাত্রীদের ব্যাকরণ পড়ানো বাদ দিয়ে বাছাই করা কুরুচিপূর্ণ কবিতা উপস্থাপন করে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতো। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর শাহাদত হোসেন বলেন, ধীরে ধীরে পরিমল যৌন নির্যাতনের সব ধরনের অপকৌশলই স্বীকার করছে। পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতনের ধরন সম্পর্কে মুখ খুলেছে। ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার মর্নিং শিফটের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রীরা অভিযোগ করেছে, কোচিংয়ে বাংলা ব্যাকরণ পড়ানো বাদ দিয়ে পরিমল শুধু প্রেমের কবিতা শোনাতো। পাঠ্য-বহির্ভূত প্রেমের গল্প করতো।

ছন্দে ছন্দে আবৃত্তি করতেন রাধা-কৃষ্ণের প্রেম কাহিনী। পরিমলের ঘনিষ্ঠ এক সহকর্মী বলেন, পরিমল বেছে বেছে বাংলা সাহিত্যের অশ্লীল কবিতাগুলো মুখস্থ করতো। পরে সেগুলো ছাত্রীদের শুনতে বাধ্য করতো। তিনি আরও বলেন, রাধা-কৃষ্ণ’র প্রেম-সংক্রান্ত আদি রসের কবিতা যেমন- ‘রূপ লাগি আছে ঝুরে গুণে মন ভোর/প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর’ প্রভৃতি পাঠ করতো। পরে সেগুলোর ব্যাখ্যা করে কোমলমতি ছাত্রীদের মন বিগড়ে দেয়ার চেষ্টা করতেন।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ভিকারুননিসা স্কুলে শিক্ষকতা করার আগে পরিমল রাজধানীর উত্তরা মডেল হাইস্কুল ও মাইলস্টোন কলেজে শিক্ষকতা করেছে। ওই দু’টি প্রতিষ্ঠান থেকেও তার চাকরি চলে যায়। তবে কি কারণে ওই দু’টি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিচ্যুত করেছিল জানা যায়নি। ইন্সপেক্টর শাহাদত বলেন, পরিমল ভয়ঙ্কর জিনিয়াস। তবে তার মেধার চর্চা ছিল অনৈতিক উদ্দেশে।

ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন নির্যাতনের শাস্তি সম্পর্কে জেনেও সে সচেতনভাবে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে। নিপীড়ন ও ধর্ষণের অভিযোগ ফাঁস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অশ্লীল ভিডিও চিত্রগুলো গায়েব করে ফেলেছে। কোনভাবেই সে সম্পর্কে স্বীকারোক্তি আদায় করা যাচ্ছে না। হোসনে আরা ও লুৎফর রহমানকে গ্রেপ্তারের চিন্তা-ভাবনা চলছে: মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর শাহাদত হোসেন বলেছেন, ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ভবনের অধ্যক্ষ হোসনে আরা ও বসুন্ধরা শাখার সাবেক প্রধান লুৎফর রহমানকে গ্রেপ্তারের চিন্তা-ভাবনা চলছে। ছাত্রীর দায়ের করা মামলার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়া গেছে।

তদন্ত সূত্রমতে জানা গেছে, ১০ম শ্রেণীর ধর্ষিতা ছাত্রী পরিমলসহ ওই দুই শিক্ষককে মামলার আসামি হিসেবে উল্লেখ করেছে। অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী জানায়, পরিমলের যৌন নির্যাতনের বিষয়টি অনেক আগেই শাখা প্রধান লুৎফর রহমানকে জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তিনি ত্বরিৎ কোন ব্যবস্থা নেননি। উল্টো বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ছাত্রীর অভিযোগ অনুযায়ী মূল ভবনের অধ্যক্ষ হোসনে আরা ও বসুন্ধরা শাখা প্রধান লুৎফর রহমান উভয়ই ছাত্রীদের ওপর যৌন নির্যাতন সম্পর্কে অবহিত ছিলেন।

কিন্তু তারা পরিমলের বিষয়টি ইচ্ছা করেই চেপে যান। এখন অভিযোগকারী ছাত্রীর সঙ্গে আরও একবার কথা বলে নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হোসনে আরা ও লুৎফর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হবে। অভিযুক্ত শিক্ষকদের গ্রেপ্তারে শিক্ষা সচিবের সিগন্যাল: এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষকদের গ্রেপ্তারের সিগন্যাল দিয়েছেন শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। গতকাল বিকালে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গভর্নিং বডির সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষা সচিবের বৈঠক শেষে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পর ডা. দিলীপ রায়ের সভাপতিত্বে স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাকক্ষে গভর্নিং বডির জরুরি সভা বসে।

সভায় ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। গভীর সমবেদনা জানানো হয় নির্যাতিত ছাত্রী ও তার পরিবারের প্রতি। গভর্নিং বডি একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ও অভিভাবকদের দাবির প্রতি সহানূভূতি প্রকাশ করেছেন। গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ডা. দিলীপ রায় বলেন, ইতিমধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আরও যারা অভিযুক্ত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র : মানবজমিন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।