আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডুলাহাজরার বাঁকে বাঁকে - ১

কিছুদিন আগে একটা ট্যুরে গিয়েছিলাম। শুরুতে প্ল্যান ছিল কক্সবাজারের সাথে বান্দরবান, এরপর সেটা একটু সংক্ষিপ্ত করে বান্দরবানের বদলে সোনাদিয়া দ্বীপ রাখা হয়। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে সেটাও বাতিল হয়ে যায়। আমাদের ট্যুরে শুধু কক্সবাজারে যাওয়া হবে শুনে মন একটু দমে গিয়েছিল। নতুন কোন জায়গা তাহলে দেখা হবে না? বান্দরবান, সোনাদিয়া দ্বীপ কোনটাই কপালে নেই? বান্দরবান যদিও গিয়েছি দুইবার।

কিন্তু নীলগিরির দিকটায় যাওয়া হয়নি। কি আর করা, সেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, ইনানী বিচ আর হিমছড়ি আবারও রিভাইজ দেয়া হবে। পরে শুনলাম ডুলাহাজরা সাফারী পার্কেও যাওয়া হবে। দেখা হয়নি জায়গাটা। যদিও কেউ কেউ যারা ওখানে আগে গিয়েছে, বলছিল ভালো লাগবে না, এটা বরং বাদ দেয়াই উচিৎ।

কিন্তু নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার আগ্রহ দমাতে পারলাম না। সকাল থেকেই ঝির ঝির বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির মধ্যে নাকি ওখানে ঘুরতে আরও বিচ্ছিরি। আগেই এত নেগেটিভ কথা শুনছি, বেশি নেগেটিভ শুনলে পরে কিন্তু ভালোই লাগে। এই আশা মনের মধ্যে নিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে যাচ্ছি।

সাথে আছে পিছনে বসা হাউকাউ পার্টির গান। মন্দ কী? সামনে আবার এক জুটিকে জোর করে একসাথে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। পিছনের হাউ কাউ পার্টির গানগুলো তাদের উদ্দেশ্য করেই। একটার পর একটা রোমান্টিক গান গেয়ে যাচ্ছে মহা উৎসাহে। রোমান্টিক গানও যে এমন কাউ মাউ করে গাওয়া যায় কে জানত।

মাঝে মাঝে থেমে গেলে আমিও একটু মনে করিয়ে দিই কোন গানটা গাওয়া যেতে পারে। আবার নতুন উদ্যমে শুরু হয়ে যায় কাউ মাউ। সামনের জুটি দেখি রাগে গজগজ করছে। যা হোক পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যে। ঢোকার আগেই মূল দরজার সামনে গ্রুপ ফটো তুলে নেয়া হল পটাপট।

এরপর একে একে ঢুকে পড়লাম সাফারী পার্কের ভেতর। শুরুতেই পার্কের একটা মডেল। টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যেই ক্যামেরা বের করে সবাই ছবি তুলে যাচ্ছে। আমার মোবাইলও থেমে নেই। অবশ্য আমার নিজের চেয়ে পার্কের ছবি তোলার প্রতি বেশি মনোযোগ।

পার্কে ঢোকার পর প্রথমে শুধু নকল প্রাণী। নকল ডাইনোসর, জিরাফ, সিংহ, বানর এসবের ছবিই সবাই মহা উৎসাহে তুলছে। দু'একটা যে আমিও তুলিনি তা না। তবে আমার ক্যামেরা এগুলোর চেয়ে নানান রঙের জবা ফুল, নানান রকম গাছ আর ঘাসফুলের দিকে বেশি ক্লিক করছিল। একটু এগিয়ে গেলাম।

এবার খাঁচায় বন্দী কিছু পশু-পাখী। লজ্জাবতী বানরগুলোর ঘুম ভাঙায় কার সাধ্য। জড়াজড়ি করে দুইটা তিনটা বানর গাছের ডালে চড়ে ঘুমাচ্ছে। খাঁচার ফাঁক দিয়ে জুম করে ছবি তুলতে গিয়ে মোটামুটি কাহিল অবস্থা। পাশের খাঁচায় আছে উল্লুক।

আমাদের দেখে প্রথমে বড় বড় হাত দিয়ে খাঁচার সাথে ঝুলে টারজানগিরি দেখিয়ে দিল। একটু পর আগ্রহ হারিয়ে একে অপরের উকুন বাছতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমাদের মধ্যে আবার তাদের সমগোত্রীয় কেউ কেউ ছিল, এতদিন পর দেখা হবার পর তারা হাই হ্যালো করে নিতে ভুলল না। পাখিদের মধ্যে ছিল ধনেশ, যার একটা ডালে বসে আরেকটা মাটিতে বসে ঝিমাচ্ছিল। এক জোড়া ঘুঘুও ছবি তোলার জন্য পোজ দিচ্ছিল।

একটা খাঁচা খালি দেখলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম খাঁচার গায়ে যে সাইনবোর্ড লাগানো তার ঠিক পেছনে একটা ময়না লুকিয়ে আছে। আমিও লুকিয়ে লুকিয়ে তার ছবি তুলে নিতে গেলাম। ময়না টের পেয়ে রাগ দেখাতে থাকল খাঁচায় ঠোকর মেরে মেরে। একটা টিয়া পাখিও ছিল।

বেচারা মনে হয় বানরের আশেপাশে থাকতে থাকতে নিজেকে ঐ গোত্রের কিছু মনে করছিল। খাঁচা বেয়ে বেয়ে ওঠার চেষ্টায় লেগে ছিল সারাক্ষণ। চলবে........................  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.