আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডুলাহাজরার বাঁকে বাঁকে - ২

ডুলাহাজরার বাঁকে বাঁকে - ১ এগিয়ে গেলাম আরও। সামনের একটা খাঁচায় ছিল এক দল তারকা কচ্ছপ। ওদেরকে মাত্রই খেতে দেয়া হয়েছে। টুক টুক করে হাঁটতে হাঁটতে সবাই চলে এসেছে খাবার খেতে। আর সেই সাথে বন্দী হচ্ছে আমাদের ক্যামেরায়।

এই খাঁচার ঠিক পাশেই একটা মরা গাছের গুড়ি ছিল যেটাকে অবলম্বন করে বেড়ে উঠেছে লতা গাছ। জানি না কেন খুব ভালো লাগল দৃশ্যটা। ক্যামেরা ক্লিক করতে ভুলিনি। আরেকটা খাঁচায় আরও কিছু তারকা কচ্ছপ ছিল। এর পাশের খাঁচায় তিনটা খরগোশ।

খাবার সময়, তাই সবাই খেতে ব্যস্ত। ফ্ল্যাশ দিয়ে ছবি তুলতেই তিন খরগোশ কান খাড়া করে চোখ তুলে তাকাল। সাথে সাথে আরেকটা ছবি তুলে নিলাম। এটা ওদের জন্য নিশ্চয়ই নতুন কিছু না। ওরাও তাই নিশ্চিন্তে আবার খাওয়ায় মনোযোগী হল।

এর পরের খাঁচার কাছে গিয়ে দেখি একটা ছোট সাদা মুরগী এক কোণা দিয়া হাঁটাহাঁটি করছে। নিশ্চয়ই শুধু এই মুরগীটার জন্য এই খাঁচাটা রাখা হয়নি। খুঁজতে থাকলাম খাঁচার আসল বাসিন্দাকে। আরেক কোণায় চোখ যেতেই পেয়ে গেলাম, চকচকে কালো শরীর পেঁচিয়ে আরাম করে ঘুম দিচ্ছে জনাব অজগর সাহেব। সাদা মুরগীটা হল এই জনাবের খাদ্য।

জুম করে জনাবের ঘুমের ছবি তুললাম। ঘুমের একটুও ডিসটার্ব করিনি কিন্তু। বাসের অপেক্ষায় আছি। একটা বাস আসার পর হুড়মুড় করে একদল উঠে পড়ল। ১০ মিনিট পরেই দ্বিতীয় বাসটাও এসে পড়ল।

এইবার উঠলাম আমরা বাকীরা। আমি একেবারে সামনের সিট দখল করলাম। বাস ছাড়ার সাথে সাথেই বুঝলাম এটাই সবচেয়ে ভালো সিট সাফারী পার্কে ঘোরার জন্য। প্রতিটা চড়াই উৎরাইয়ে মনে হচ্ছিল যেন উড়ে উড়ে যাচ্ছি রোলার কোস্টারে। ভিডিও করে রাখলাম এই মুহূর্তগুলো।

ভিডিও দিতে পারলাম না, দুইটা স্ন্যাপশট দিলাম। এরপর একে একে ময়ূর, মদনটাক, বাজ পাখী, ওয়াইল্ড বিস্ট, মিঠাপানির কুমীরের দেখা পেলাম। কুমীর বাবাজি তো কিছুতেই পানি থেকে মাথা উঠালেন না। এত করে ছবি তোলার লোভ দেখালাম তাতেও কাজ হল না। মনের দুঃখে শাপলা আর আশেপাশের ফুলেরই ছবি নিয়ে নিলাম।

কয়েকটা বানরের দেখাও পেয়েছিলাম যেতে যেতে। তারা আমাদের দেখে দৌড়ে পালিয়েছে। জলহস্তীর আড্ডায় এসে মুগ্ধ না হয়ে পারা গেল না। সমস্ত বিল জুড়ে কচুরীপানার ফুলের শোভা। জলহস্তীর চেয়ে ঐ দৃশ্যই দেখার মত।

যদিও সবাই জলহস্তীর সাথে ছবি তুলতেই বেশি ব্যস্ত ছিল। কয়েকজনকে দেখা গেল একটা চিপা খুঁজে নিয়ে দলে দলে সেখানে গিয়ে ছবি তুলতে। কী পেয়েছিল ঐ চিপায় কে জানে। এরপর রওনা দিয়ে হাতির আস্তানার কাছাকাছি চলে এলাম। একটা বাচ্চা হাতীকে দেখলাম মনের সুখে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে খানাপিনায় ব্যস্ত।

তার আনন্দ দেখে আমরাও আনন্দিত হলাম। সামনে এক হাতীকে দেখা গেল মাহুতকে পিঠে বসিয়ে দুলকি চালে হেঁটে আসছেন। আমাদের বাস দেখে সে সাইড দিয়ে একপাশে সরে গেল। ড্রাইভার ইশারা করল যাতে আমাদের কাছে চলে আসে। এবার সে তার বিশাল শরীর নিয়ে হেলে দুলে এগিয়ে এল আমাদের সামনে।

এসেই সালাম ঠুকে দিল। আমরাও ওয়ালাইকুম বলতে বলতে ছবি তুলে নিলাম। আমি অবশ্য ভিডিও করছিলাম এই সময়টায়। এরপর আবার সাইড দিল আমাদের যাবার জন্য। ভদ্র ছেলে।

বাঘ-সিংহের আস্তানায় গেলাম এবার। বাঘের দেখা পেলাম না। তবে আমাদের গুরু জানালেন এখানকার বাঘগুলো নাকি বিলাইয়ের মত দেখতে । তবু দেখতে পেলে মন্দ হত না। সিংহীর দেখা পেলাম, একদিকে লম্বা হয়ে ঘুম দিচ্ছে আরামের।

নেমে এসে খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে এক কোণায় সিংহকেও ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া গেল। ঘুম না ভাঙিয়ে টুপ করে ছবি তুলে নিলাম দুইজনেরই। যদিও ওদের কী নিয়ে ঝগড়া হয়েছে যে কারণে তারা আলাদা ঘুমাচ্ছে সেটা বোঝা গেল না। সবশেষে এলাম ভালুকের খাঁচার সামনে। এখানেও তখন লাঞ্চ আওয়ার চলছে।

কুমড়া নিয়ে মহা ব্যস্ততার সাথে ভালুকেরা লাঞ্চিত হয়ে চলেছে। শেষবারের মত আরও কিছু গ্রুপ ছবি তুলে নেয়া হল। এরপর বের হয়ে সবাই যখন ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত তখন আমাদের রাজামশাই ঘোষণা দিলেন সবাইকে ডাবের পানি খাওয়াবেন। মহা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আমাদের ডাবের পানি খাওয়া উৎসব সফলভাবে সম্পন্ন হল। ডাবের পানিই যে শুধু খাওয়া হয়েছে তা নয়, ডাবের শাসগুলোকেও ছাড় দেয়া হয়নি।

এরপর আবার হই হই করতে করতে রওনা দেয়া হল ইনানীর উদ্দেশ্যে। আবার সেই হাউ-কাউ পার্টির গান। কিন্তু ক্লান্ত শরীরে আর কত কাউ মাউ করা যায়। একটু পর সবাই ঝিমানো শুরু করল। এই ফাঁকে চলল আরও কিছু স্পেশাল ফটোসেশন।

থাক ঐ ব্যাপারে না হয় না-ই বললাম।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.