আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষক যখন যৌন নির্যাতনকারী: সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে

facebook.com/almamun.sohag ঢাকার ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার শিক্ষক পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করে ঐ স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। স্পর্শকাতর বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে, তবে রুমানা-সাঈদ ঘটনার মত প্রচার পায় নি। এই পোস্ট সাম্প্রতিক এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা। পত্রিকার খবর অনু্যায়ী- নির্যাতনের শিকার মেয়েটি কোচিং করতে স্কুলের বাংলা-শিক্ষক পরিমলের বাসায় যেত। একদিন দেরী করে যাওয়ার পর পরিমল কৌশলে দরজা আটকে তার কিছু নগ্ন ছবি (কোন কোন পত্রিকানুযায়ী ভিডিও) তুলে (মে ২৮)।

পরবর্তীতে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে ধর্ষণ করে (জুন ১৭) এবং জানাজানি হলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। মেয়েটি ও তার পরিবার স্কুলের বন্ধুরা শাখার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমানের কাছে অভিযোগ করে। প্রধান শিক্ষক বিচারের আশ্বাস দেয় কিন্তু কিছুই করে না। গত ২৮ শে জুন স্কুলের শিক্ষার্থীরা পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে একটি লিখিত আবেদন জমা দেয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাছে। তারপরও স্কুল কমিটি তদন্ত করে না ও বিচারের কোন উদ্যোগ নেয় না।

গত ৩ জুলাই অধ্যক্ষ হোসনে আরার বসুন্ধরা শাখায় গিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কথা থাকলেও সে অনুপস্থিত ছিল। অভিভাবকদের প্রতিবাদে পরে তার কাছ থেকে টুকরো কিছু বক্তব্য আসে। প্রিন্সিপাল হোসনে আরা কর্তৃক ছাত্রী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে অমৃত বচন "এটা rape না, এটা mutual sex। " সবাই তখন পেপার রেফারেন্স দেখালে বলে, "এই মাসের শেষে তোমাদের প্রিটেস্ট, সেটা নিয়ে চিন্তা করো। এসব ভেবে সময় নষ্ট করে লাভ নাই।

যা হওয়ার হয়ে গেছে। " -------------------------------------------------------------------------- পত্রিকার খবর পড়ে ও আমার বান্ধবী, যারা প্রাক্তন শিক্ষার্থী, তাদের সাথে কথা বলে মূল বিষয় সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ- ১। অভিভাবকদের মতে পরিমল জয়ধরের নিয়োগ অবৈধভাবে দেওয়া হয়েছে। মূলত রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয়েছে। ২।

পরিমল জয়ধর এর আগে রাজউক মডেল স্কুলের শিক্ষক ছিল। সেখানেও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তার চাকরি চলে যায়। প্রশ্ন হল – এরকম একজন শিক্ষককে কেন নিয়োগ দেওয়া হল? তার শিক্ষাগত যোগ্যতা যাই হোক এরকম নিয়োগের স্পষ্ট জবাব চাই। ৩। যৌন নির্যাতনের এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে একই স্কুলের আরো কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয় এরা ক্লাসে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করত আর কুৎসিত ইঙ্গিত দিত। আগে এই নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও এই প্রথম (২৭ জুন) লিখিত অভিযোগ আনা হয়। কুলাঙ্গার সেইসব শিক্ষকেরা – বরুণ চন্দ্র বর্মণ বিষ্ণুপদ বড়াই বাবুল অভিজিৎ অভিভাবকদের মতে এইসব শিক্ষকদের নিয়োগ অবৈধ। উল্লেখ্য এই চারজন ও পরিমল - সবার দেশের বাড়ি গোপালগঞ্জ। বলাই বাহুল্য গত এক সপ্তাহে এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি।

গতকাল খবরের কাগজে আসার পর জানতে পেরেছি তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ৪। গত ৪ জুলাই পর্যন্ত থানায় কোন মামলা করা হয়নি। তবে ৫ তারিখ দুপুরে মামলা করার পরে বাড্ডা থানার পুলিশ পরিমলকে খুঁজছে। পরিমল প্রথম দিন থেকেই পলাতক।

৫। ঘটনার প্রথম পর্যায়ে প্রিন্সিপাল হোসনে আরা ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমানসহ স্কুল কমিটির পুরো বিষয়টাকে নির্লজ্জভাবে চাপা দেওয়ার চেষ্টা লক্ষ্যণীয়। অভিযোগের প্রথম পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান পাশ কাটানোর চেষ্টা করেন এই বলে যে সে শুধু বসুন্ধরা শাখার ভারপ্রাপ্ত প্রধান। এইটা ম্যানেজিং কমিটির/ কার্যকরী পরিষদের ব্যাপার। কার্যকরী পরিষদের সভাপতি রাশেদ খান মেনন সেই সময় বিদেশে ছিল।

এই অজুহাতে সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হয়! (অন্যান্য শিক্ষকেরা ও দায়িত্বরত গভর্নিং বডির অন্যান্যরা তখন কোন মাঠের ঘাস খাচ্ছিল জানতে ইচ্ছা হচ্ছে। ) আদতে ৫ তারিখের আগে কোন জরুরী সভাও আহবান করা হয় নি। ৬। অভিভাবকদের মতে - এই স্কুলের প্রিন্সিপাল হোসনে আরা সবকিছুতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটায়। তার বিরুদ্ধে স্কুলের তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ আছে।

এই সেই মহিলা যে ভিকারুন নূন নিসা স্কুলের নাম বদলে বেগম ফজিলাতুননেসা স্কুল (প্রধানমন্ত্রীর মা) রাখার চেষ্টা করেছিল। পরে পুরানো শিক্ষক ও অভিভাবকদের চাপে সেই সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়। ৭। অভিভাবক ও সহপাঠীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আসুন সরাসরি অংশগ্রহণ (মানব বন্ধন, অভিভাবকদের আইনি পরামর্শ) বা অন্তত অনলাইনে প্রতিবাদ করে আমরাও সহযোগিতা করি।

৮। সাধারণত এই ধরনের ঘটনায় নির্যাতিতার নাম ও ছবি পেপারে চলে আসে। এবার তার ব্যতিক্রম দেখলাম। দেরীতে হলেও গণমাধ্যম কর্মীদের বোধোদয় হয়েছে। --------------------------------------------------------------------------------------- শিক্ষাঙ্গনে যৌন নির্যাতনের ঘটনা এই প্রথম না।

বরং সময়ের সাথে এই ধরনের ঘটনা বেশি শুনছি। শক্তভাবে এর প্রতিবাদ করা দরকার। # ফেইসবুকে অ্যাক্টিভ বা বাংলা ব্লগের অনেক পাঠকই আইনের ছাত্র। আপনারা ওপেন ফোরামে পরামর্শ দিন কিভাবে এর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যায়। অনেকেই জানাজানি হওয়ার ভয়ে থানায় মামলা করে না।

থানায় অনলাইন জেনারেল ডায়েরি করা যায় বলে শুনেছি। এক্ষেত্রে কী কী উল্লেখ করা প্রয়োজন। # শিক্ষাঙ্গনে যৌন নির্যাতনকারীদের সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। সামাজিক মেলামেশা, অনুষ্ঠান এসব বর্জন তো বটেই, যে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে এরা যাতে ঢুকতে না পারে এজন্য অনলাইনে এদের নামে ছবিসহ এন্ট্রি করে রাখা উচিত। যাতে গুগল করলেই এদের পাওয়া যায়।

পুলিশের কাছে ধর্ষণসহ অন্যান্য যৌন নির্যাতনকারীদের তালিকা হালনাগাদ করা থাকে। সেই তালিকা প্রিন্ট করে আপলোড করা দরকার। প্রয়োজনে বিভিন্ন স্কুল,কলেজ বা বেসরকারী কম্পানির HR ডিপার্টমেন্টে মেইল করা দরকার। # বাধ্যতামূলক অবসর, সাময়িক/সম্পূর্ণভাবে বরখাস্ত, অর্থদন্ড - এগুলো বিচারের শেষ কথা নয়। সকল যৌন নির্যাতনকারী যাতে আইন অনু্যায়ী শাস্তি পায় সেদিক নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যৌন হয়রানিমুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মপরিবেশ তৈরিতে হাইকোর্টপ্রণীত নীতিমালার বাস্তবায়ন আবশ্যক। এই নীতিমালার ধারা - ৯ অনুযায়ী অভিযোগ গ্রহণকারী কমিটিঃ ক) অভিযোগ গ্রহণের জন্য, তদন্ত পরিচালনার জন্য এবং সুপারিশ করার জন্য সরকারী বেসরকারী সকল কর্মক্ষেত্রে এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংশিস্ন­ষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গ্রহণের জন্য কমিটি গঠন করবে। খ) কমপক্ষে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হবে যার বেশীর ভাগ সদস্য হবেন নারী। সম্ভব হলে কমিটির প্রধান হবেন নারী । গ) কমিটির দুইজন সদস্য সংশিস্ন­ষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে হবে, যে প্রতিষ্ঠান জেন্ডার এবং যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করে।

ঘ) অভিযোগ কমিটি সরকারের কাছে এ নীতিমালা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বাৎসরিক অভিযোগ প্রতিবেদন পেশ করবে। স্কুলের প্রিন্সিপাল প্রথম থেকেই ন্যাক্কারজনকভাবে অভিযুক্ত শিক্ষকদের পরোক্ষভাবে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছিলেন। এরকম ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা দরকার। ব্যক্তিগত বয়ান: আমার পাঁচ বোন, অন্তত গোটা পঞ্চাশেক বান্ধবী ভিকারুন নূন নিসা স্কুলের। নটরডেমের জীববিজ্ঞানের গাজি আজমল স্যার ও পদার্থবজ্ঞানের সুশান্ত স্যারও ঐ কলেজে পড়াতেন।

স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে বিতর্ক করার সুবাদে এই স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আমার কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়। রাজনৈতিক চাপ, কর্মকর্তাদের অর্থলিপ্সা ও শিক্ষকদের নৈতিক স্খলনের জন্য এরকম একটা ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে হাল হচ্ছে তা সত্যি দুঃখজনক। অতীতে ছাত্রী ও অভিভাবকরা নানা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। এবারো তারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। আসুন আমরা তাদের পাশে দাঁড়াই ও সাহস যোগাই।

যৌন নির্যাতনের এমন ঘটনা কোন স্কুলের অভ্যন্তরীন ঘটনা না। এটা আমাদের সমাজের নিত্যদিনের ঘটনা। সবাই সচেতন হই, একতাবদ্ধ হয়ে সমাজের যে কোন স্তরের যৌন নির্যাতনকারীকে মোকাবেলা করি। সূত্র ও বিবিধ: কালের কণ্ঠ: Click This Link প্রথম আলো: Click This Link Daily Star: Click This Link মানবজমিন পত্রিকা: Click This Link রেডিও তেহরান Click This Link যৌন হয়রানিমুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মপরিবেশ তৈরিতে মহামান্য হাইকোর্ট প্রদত্ত নীতিমালা Click This Link # বাংলাদেশের সংবিধানের কিছু প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদ অনুচ্ছেদ ১০: জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের সকল ব্যবস্থা গৃহীত হবে। অনুচ্ছেদ ২৮ (১): রাষ্ট্র কর্তৃক শুধুমাত্র ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক বৈষম্যের শিকার হবে না।

অনুচ্ছেদ ২৮(২): রাষ্ট্রীয় এবং জনজীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সমান অধিকার পাবে। অনুচ্ছেদ ২৮(৪): রাষ্ট্র নারী ও শিশু বা অনগ্রসর নাগরিকদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অনুচ্ছেদ ২৯ (২): প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা সেবা পাবার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র লিঙ্গ ভেদের কারণে কোন নাগরিক অযোগ্য বা বৈষম্যের শিকার হবে না অনুচ্ছেদ ২৯ (৩)গ: বিপরীত লিঙ্গের জন্য যোগ্য নয় এমন কিছু ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান ও দাপ্তরিক কাজ রাষ্ট্র কর্তৃক সংরক্ষিত করতে পারবে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কিছু বিশেষ আইন (যেগুলোর বাস্তব প্রয়োগ খুব কমই দেখা যায়) যৌতুক বিরোধী প্রতিরোধ আইন ১৯৮০, নারী নির্যাতন অধ্যাদেশ ১৯৮৩, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৪, অনৈতিক পাচার নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯৩, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইন ২০০০, এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০২ # আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে জাতিসংঘ সিডো সনদ Convention of the Elimination of All Forms of Discrimination Aganist Women - CEDAW। বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালের ৬ নভেম্বর সিডও সনদে স্বাক্ষর করে।

কিন্তু বাস্তবায়ন নৈব চ! লিঙ্ক: http://www.un.org/womenwatch/daw/cedaw/ ----------------------------------------------------------------------------------------------------সহযোগিতা ও কৃতজ্ঞতা: অপর্ণা হাওলাদার ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.