আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রামপুলিশের মানবেতর জীবন-যাপন

আল্লাহর উপর আস্থা রাখ সব ঠিক হয়ে যাবে। চৌকিদার ও দফাদার পদবীধারী ব্যক্তিরা সেই ব্রিটিশ আমল হইতেই গ্রামীণ সমাজজীবনে অতি পরিচিত। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় তাহাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে কমবেশি অবহিত সবাই। তৃণমূল পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অপরিহার্য দায়িত্ব পালনের নিমিত্তেই এখনো টিকিয়া রহিয়াছেন তাহারা। বাংলাদেশ স্বাধীন হইবার পর সরকার চৌকিদারের ঔপনিবেশিক পদবীর বদল ঘটাইয়া গ্রামপুলিশের পদমর্যাদা দিয়াছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রাপ্ত ভাতার পরিমাণও বাড়িয়াছে কিছু কিছু। কিন্তু দীর্ঘকাল পরও সেই চৌকিদার-দাফাদার তথা গ্রামপুলিশের অবস্থার উন্নতি হয় নাই। গত রবিবারে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে বলা হইয়াছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে কর্মরত ১৫০ পুলিশ অর্থাভাবে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করিতেছে। পদবীর পরিবর্তন ঘটিলেও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে নাই তাহাদের। দিন দিন কাজের পরিধি বাড়িয়াছে, কিন্তু সুযোগ-সুবিধা বাড়ে নাই।

বাড়ে নাই জীবন-যাপনের মানও। বলা বাহুল্য, মূল কারণটা অবশ্যই অর্থনৈতিক। স্বাধীনতার পর গ্রামপুলিশের বেতন ধার্য হয় ২২০ টাকা। ১৯৯৫ সালে বেতন বাড়াইয়া দফাদার পদের জন্য ১০০০ টাকা ও চৌকিদার পদের জন্য ৭০০ টাকা বেতন নির্ধারিত হয়। একই সঙ্গে দুই ঈদে বেতনের সমপরিমাণ দুইটি বোনাস পাইবারও অধিকারী হন তাহারা।

বর্তমানে একজন দফাদার সরকারের ১৩০০ টাকা ও স্থানীয় সরকারের কাছে ৮০০ টাকা পাইবার কথা। অন্যদিকে চৌকিদার তথা গ্রামপুলিশের মোট বেতন ১৯০০ টাকা, যাহার মধ্যে ১১০০ টাকা দেয়ার কথা স্থানীয় সরকারের। কিন্তু সারা দেশের বাস্তবতা হইল, ইউনিয়ন পরিষদের বেতন নিয়মিত ও নিশ্চিতভাবে পান না গ্রামপুলিশরা। বেতন তুলিতে বিস্তর ঝামেলা ও দুর্ভোগ সহিতে হয়। গ্রামে একজন দিনমজুর এখন ১৫০ হইতে ২০০ টাকা রোজগার করিয়া থাকে।

দিনমজুরের তুলনায় কম বেতনে নিয়োজিত গ্রামপুলিশ ইউনিয়ন পরিষদের কাছে বৈধ পাওনাটাও নিয়মিতভাবে পান না। এই অবস্থায় তৃণমূল পর্যায়ে জনজীবনের নিরাপত্তা বিধানের কাজ করিবে যাহারা, তাহাদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করিবে কে? গ্রাম পুলিশরা তাহাদের যুক্তিসঙ্গত দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরিয়া আন্দোলন করিয়া আসিতেছে। তাহারা চাকরি জাতীয়করণের দাবিও তুলিয়াছে। গ্রামপুলিশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দফাদার পদের জন্য ৩০০০ হাজার টাকা এবং গ্রামপুলিশ পদের জন্য ২ হাজার টাকা বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়াছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই ঘোষণা বাস্তবায়িত হয় নাই।

এমনকি গ্রামপুলিশ তাহাদের জন্য বরাদ্দকৃত জ্যাকেট, জুতা, ক্যাপ ও লণ্ঠনও নিয়মিত পান না বলিয়া জানা যায়। আমরা মনে করি, গ্রামপুলিশের বর্তমান দুরবস্থার সঙ্গে দেশের স্থানীয় সরকার তথা ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দুর্বলতা অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। স্থানীয় সরকার হিসাবে এলাকার উন্নয়নে তাহাদের নিজস্ব আয় এবং নিজস্ব বাজেট নাই। সব কিছুতেই কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী হইয়া থাকে তাহারা। ফলে যাহাদের বেতন দেওয়ার কথা, তাহাদের সক্ষমতা না বাড়িলে গ্রাম পুলিশের দুরবস্থা ঘোচাইবে কে? কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয়করণের মাধ্যমে দেশের সকল পেশাজীবীর বেতন বাড়াইয়া তাহাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ঘুচাইবে, ইহা কোনো সমাধান হইতে পারে না।

গ্রামপুলিশকে কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় বা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হইলে, অযথা তাহাদের চাকুরি জাতীয়করণ কিংবা বেতন বাড়াইবার আশ্বাস দেওয়া কেন? তবে বেতন-ভাতা বাড়াইবার যে ঘোষণা দেওয়া হইয়াছে, উহা অবশ্যই বাস্তবায়ন করা উচিত। গণতন্ত্রের স্বার্থে সর্বদাই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার কথা বলা হয়। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তাহাদের নিজস্ব আয় ও বাজেট ব্যবস্থা গড়িয়া তোলার উপর গুরুত্ব দেওয়া না হইবে, ততক্ষণ সব কিছুতেই কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী হইয়া থাকার মতো প্রবণতা ঘুচিবে না। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। সমপ্রতি দেশব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইয়াছে।

আমরা আশা করিব, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নিজস্ব আয়ের মাধ্যমে গ্রাম পুলিশসহ প্রয়োজনীয় কিছু খাতে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের ব্যয় নির্বাহের সক্ষমতা যাহাতে বাড়ানো যায়, সরকার এইবার সেই উদ্যোগ গ্রহণ করিবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।