আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাচ্চারা যখন মা-বাবার দোষ বলে

"আমার মনে হয় একজন শিশু যখন মা-বাবার দোষ বলে, মা-বাবার উচিত সাথে সাথে সেটাকে না মেনে নেয়া, যদি সত্যিও হয়, আর বাচ্চাটার গালে কষে কমপক্ষে একটা থাপ্পর মারা। " অনেকটা এমন মন্তব্য করেছিলেন আমার এক পরিচিতজন যখন আমি তার সাথে শিশুদের লালন-পালন নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিলাম এক আসরে। অথচ আমি শিবলী মনে করি, যখন একটা শিশু (বিশেষ করে যদি সে হয় ৪-৫ বছর বা হোক না ৮-১০ বছর) মা-বাবার দোষ বলে, মা-বাবার উচিত সেটাকে মেনে নেয়া বা সেই অভিযোগকে সত্য বলে ধরে নেয়া এবং তার উপর কাজ করা। আমি এটা দাবী করছিনা যে শিশুরা ১০০% সত্যটাই বোঝে। কিন্তু এটা বিশ্বাস করি ওরা সত্য বিচারক ওদের জ্ঞানের সাপেক্ষে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একজন শিশুর বোঝা ও মন্তব্য খুব একটা ভুল হয়না তার চারপাশের মানুষদেরকে নিয়ে। (শিশুরা যে খুব দক্ষ দর্শক সেটা শেয়ার করছি এই ঘটনায় 'আমার আত্নবিশ্বাস ও শিশুর আত্নসম্মান ') তবে একজন শিশু যখন কোন অভিযোগ করে সেটার গভীর মর্মটা বুঝতে হবে আমাদেরকে। ওর সাদামাটা কথাটাকে আভিধানিক অর্থে বুঝলে হবেনা। একটা শিশুর শব্দ ভান্ডার আমাদের চাইতে কম হয়ে থাকে। আর তাই হতে পারে আমাদের সন্তান যে সকল শব্দ দিয়ে অভিযোগ করছে, আসলে ও সেটাই বোঝাতে চাইছেনা।

আমাদেরকেই সেই সঠিক কথাটা বুঝে নিতে হবে। আর একজন শিশুর মনের কথা সহজে বোঝা যায় যদি শিশুটির সাথে আপনার বন্ধুত্ব একটু বেশীই থাকে। যেমন আমার বাচ্চাদুটি একদিন কড়া সুরে অভিযোগ করে বসে এভাবে, - বাপু, তুমি আমাদের সাথে কোনদিন খেলা করনা কেন? - (আমি অবাক হয়ে) বলিস কি! আমিতো বলতে গেলে প্রতিদিনি তোদের সাথে অনেকক্ষন খেলি! - না, তুমি সেইদিন খেলনি। (যেই দিনের কথা ওরা বলেছিল সেটা সত্য ছিলো) আমি বুঝে গেলাম ওরা 'কোনদিন' বলতে আসলে 'একদিনও না' বোঝায়নি। সাথে আমি আরো বুঝে গেলাম আসলে ওরা চায় আমি যেন ওদের সাথে আরো বেশি বেশি খেলা করি।

এতো গেলো খুবই ছোট্ট একটা ঘটনা। এইতো সেদিন আমরা দুজন (আমি ও আমার বউ) ওদের সামনে একটা ভুল কাজ করে ফেলি। বাচ্চারা (৬ বছর চলছে) আমাদের সেই ভুল বিষয়টিকে এভাবে তুলে ধরে: - (কাঁদো কাঁদো স্বরে) বাপু, তোমরা দুজন একটা পচা কাজ করেছো। - (আমিতো জানি কি করেছি, তাও বললাম) কি করেছি সোনামনি? - (কাঁদো কাঁদো স্বরে) তোমরা দুজন ঝগড়া করেছো। - (আমি আর এক বিন্দু দেরি না করে বলি) সরি আম্মুরা।

আমি এই কাজটা করে ভুল করেছি। আর করবো না। আর যদি করতে যাই তোরা দুজন থামিয়ে দিবি সাথে সাথে। তোরা দুজন ভয় পেয়ে অন্য ঘরে চলে না গিয়ে আমাদেরকে জড়ীয়ে ধরবি। অনেক বাচ্চারা ভয় পেয়ে অন্য ঘরে চলে যায় আর তখন ঐ মা-বাবারা আরো বেশী ঝগড়া করে ফেলে ভুল করে।

বাই দ্যা ওয়ে, আসলে ঐ রাতের ঘটনাটা সেই অর্থে ঝগড়া ছিলোনা। তবে স্বাভাবিকের চাইতে একটু উচ্চ স্বরে কথা হয়ে গিয়েছিলো, তাও ১ কি ২ মিনিট হবে। আমার কাছে মনে হয়েছে, বাচ্চারা যখন মা-বাবার দোষ বলে সাথে সাথে অনুতপ্ত হওয়া উচিত আর এর দ্বারা বাচ্চাটাও শিখবে কিভাবে নিজের প্রকৃত দোষকে মেনে নিয়ে শোধরানো যেতে পারে। আমি মনে করি, আমাদের উচিত যখন বাচ্চারা আমাদের দোষ বলে: ক) সেটাকে মনোযোগ দিয়ে শোনা। এবং তাকে এই অনুভুতি দেয়া যে তার কথা অতি মনোযোগ দিয়ে শুনছি।

খ) বাচ্চারা মনের ভাব প্রকাশে কিছুটা লম্বা সময় নিয়ে থাকে। ওর কথা শুনতে শুনতে পরিকল্পনা করে ফেলা যে কিভাবে পরের পদক্ষেপটা নেয়া যায়। গ) দেখা যায় একটা কথা বলতে গিয়ে একজন শিশু অনেক সময় অপ্রাসংগিক কথাও এনে ফেলতে পারে আসল কথায় যাবার আগে। তখন ওকে ধমক দিয়ে বলার দরকার নেই, "আসল কথাটা কি?" বা "তো সমস্যাটা কোথায়?" বা "তোমার কাজ তুমি করো, আমাদের ব্যাপারে এতো মনোযোগ দেবানা। " বা "ও সব কিছু না।

একটু ঝগড়া ঝাটি হতেই পারে। যাও পড়তে বসো। " ঘ) ওর কথা বলা শেষ হলে, সেটাকে মেনে নেয়া ও সরি বলা উচিত। ঙ) ভুলটা যে সত্যিই ভুল হয়েছে সেটাকে নিজ মুখে বলা এবং ওর কাছে ওয়াদা করা যে অমন ভুল আর করবোনা। চ) সন্তানকে দায়িত্ব দেয়া যেন যদি আমি সেই ভুল আবার করতে যাই তবে যেন সেটাকে ধরিয়ে দেয়।

ছ) সত্যিই সত্যিই মন থেকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া যে, যা কিছু আমাদের শিশুর বিকাশে বিঘ্ন ঘটায় তা যেন না করি। অন্তত ওর সামনে বা ওর বুঝে আসে অমন সময় না করি। যাই হোক, বাচ্চাকে দায়ীত্ব দেবার পর থেকে একটা কাজ আমাদের দুজনের জন্য খুব সহজ হয়ে গেছে। মানে, ওরা হয়ে গেছে আমাদের মনিটর। এখনতো আমরা দুজন কোন বিষয়ে রেগে গেলেও একটু উচ্চ-বাচ্চ করার উপায় নেই।

ওরা সাথে সাথে কাছে এসে আমাদেরকে শান্ত হতে বলে। ওরা কিন্তু ভয় পেয়ে অন্য ঘরে চলে যায় না। কাছে এসে বলে, "শান্ত হও, পাতলা হও"। আরেকটা মজার কাজ করে। ওরা আমাদের দুজনকে সালাম দেয়া শুরু করে।

ওরা নিজেরাই আবিষ্কার করেছে এই সালাম দেয়ার পদ্ধতি। আমি অবশ্য ওদেরকে বুঝিয়েছিলাম যে, আমরা সালাম দেয়ার মাধ্যমে কি বলি। ওটা বোঝার পর ওরা নিজেরাই বের করলো যে, মা-বাবার ঝগড়ার সময় সালাম দেয়া যেতে পারে। শিশুরা সত্যিই মজার, তাই না? আপনারা কে কি ভাবছেন এই বিষয়ে? আসুন না একটু আড্ডা দিয়ে জানাশুনা করি... আর শিশু লালন-পালন বিষয়ক আমার আরো লেখাগুলি দেখতে এখানে ক্লীক্‌ করুন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।