আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ "একটি গোলাপী ছাতা, অতঃপর গোলাপী ভালোবাসা"

"আমারে ফিরায়ে লহো অয়ি বসুন্ধরে, কোলের সন্তানে তব কোলের ভিতরে"-শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "ঐ মামা যাইবা?" আশে পাশে আর কোন রিক্সা নেই। তাই বাধ্য হয়ে দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীর ভাব ধরে সিটের উপরে পা তুলে বসে সিগারেট টানতে থাকা হারামজাদা রিক্সাওয়ালাকে অতিব মমতার সহিত মামা বলে সম্বোধন করতে হলো। ৫, ফুলার রোড , ব্রিটিশ কাউন্সিল। ব্রিটিশ কাউন্সিলের পাস ( pass ) সেকশনে প্রায়শই আমার আনাগোনা। বেলা ১০ টায় এসেছি এখন ২টা।

সূর্যিমামা রূপকথার মত মাথার উপরে রুদ্র মূর্তিতে মূর্তমান আছেন। ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বিশাল প্রশস্ত রাস্তা থেকে ধোয়া উঠছে আর আমি চামড়ার স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে সেই তাপে অসহায় চিকেনের মত গ্রিল হচ্ছি। মনে হচ্ছে আধঘন্টা পরে এসে আমাকে ঝিগাতলার বি এফ সি তে উঠালে ভালোই দাম পাওয়া যাবে। গ্রিলের কথা মনে পরতেই পেটের মাঝে সবকিছু ওয়াশিং মেশিনের মত ঘুরপাক খেতে শুরু করলো। বামপাশের ছোট দোকানটার সামনে দেখি একটা টোকাই ছেলে মনের সুখে কলা খাচ্ছে।

ধুর! এখনতো ঐ ছেলের কলায় ভাগ বসাতে ইচ্ছে করছে। "কই যাইবেন?" অর্ধেক সিগারেট টা শেষ করে রিক্সা ওয়ালা এই কথা বলছে। হোকনা একটু দেরীতে বলছে। আশেপাশে তো অন্য কোন রিক্সাও নাই। থাকলে অবশ্য এই কামিনাকে একটা থাপ্পর বসাইয়া দিতাম।

সব জ্বেদ সেন্টমার্টিনের বিশাল প্রস্তর খন্ডে চাঁপা দিয়ে হিন্দি সিনেমার ফ্লপ নায়ক ফারদিনের খানের মত মনভুলানো হাসি দিয়ে বললাম মতিঝিল। আশে পাশে তাকিয়ে কি যেন ভাবলো। তারপর বিজ্ঞ বিদ্যানের মত বললো "যেই রোদ। রাস্তায় জ্যাম। যামু না।

" মাথায় পালসারের ১৮০ কি.মি. বেগে রক্ত উঠলো। " হারামি, যাবি না তাহলে জিগাইলি কেন?" রিক্সাওয়ালা গাল ধরে একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পারলে এই দৃষ্টিতে জ্বালিয়ে আমাকে ভষ্ম করে বুরিগঙ্গায় ভাসিয়ে দিবে। ডান হাতটা জ্বলছে, এত জ্বোরে মারাটা ঠিক হয়নাই। এখন পাঁচমিনিট হাত জ্বলবে নিশ্চিত।

"এই রিক্সা যাবে?" ঘার ঘুরিয়ে দেখি টলটলে এক মেয়ে। টলটলে না বলে উপায় নেই। বড় বড় চোখ, টোপা টোপা গাল, স্লিম ফিগার, সিল্কি চুল, চোখে কাজল আর কপালে ছোট একটা টিপ পরেছে। হাতে এপ্রন দেখে বুঝলাম মেডিকেলে পড়ে। বয়স বেশী না, ফার্ষ্ট ইয়ারে হতে পারে।

অবশ্য আজকাল স্কুল কলেজেও মেয়েরা সাদা এপ্রন পরে। উদয়ন স্কুলে এপ্রন নাই। সুতরাং এই ঘামাচি পাউডার নিশ্চই মেডিকেলে পড়ে। "কই জ্যাবেন আফা?" সুরের ঝঙ্কার তুলে আওয়াজ আসলো ব্যাঙ্ক কলোনি, মতিঝিল। আমার চোখ টম এন্ড জেরী কার্টুনের টম এর মত বড় হয়ে গেল।

রিক্সাওয়ালাকে জেরি ভেবে আমি টমের মত মনে মনে নেল কাটারের ছোট ছুরি থেকে শুরু করে রামদা, ডলফিন পর্যন্ত সাজিয়ে রিক্সাওয়ালার উত্তরের জন্য ওয়েট করতে লাগলাম। "যামু, কত দিবেন?" আমার চোখের সবগুলা লাল রগ ভেসে উঠলো," অই কামিনা, তুই না কইলি যাবি না। রাস্তায় জ্যাম। মাইয়া দেখলে সহ্য হয়না? আমারে নেস নাই , ওনাকেও নিতে পারবি না। আমি আগে বলছি গেলে আমারে আগে নিতে হইব।

নইলে আইজকা তোরে এইখানে টুকরা কইরা ফালামু। " টলটলে সুন্দরী দেখি আমার দিকে আজিব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিজেকে রোমিও ভাববো নাকি চিরিয়াখানার জন্তু ভাববো ভেবে পেলাম না। বাপ মায়ের বদৌলতে পাওয়া চেহেরা খারাপ না। যেকোন মেয়ে পাল্টি খাইবে সেটা আত্মবিশ্বাশের সহিত গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়।

" আপনি এত বিশ্রি ভাষায় কথা বলেন কেন? উনি যেতে চাচ্ছে আপনি বাধা দিবেন কেন। আশ্চার্য লোক তো আপনি! " টলটলে সুন্দরীর কথাগুলা কেমন যেন আমার আত্মবিশ্বাসে ভাটা ফেলে দিল আর গ্যারান্টির ব্যাপারটা ততক্ষনে ওয়্যারেন্টি হয়ে গেছে। মেয়েটার মুখে ক্ত্ত মায়া। আহা! আমার প্রথম গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে পরে গেল। এর পর কত জন এলো গেলো।

সেই শান্তি কি আর আছে? প্রথম প্রেম প্রথম প্রেমই। "কি হলো? তাকিয়ে আছেন কেন?" একবার ভাবলাম সালমান খানের হাসি দেব, পরে ভাবলাম মেয়ে ক্যাটরিনার সাথে জেলাস হতে পারে, তাই জনি লেবারের মত হাসি দিয়ে বললাম," দেখুন ওকে আমি আগে বলেছি দিলকুশা যেতে। বজ্জাত রাজি হয়নাই। এখন আপনাকে নিতে চাইতেসে। আমি ছেলে এইটাই কি আমার অপরাধ? বলেন? " "দেখুন আমাকে যেতে হবে প্লিজ।

আপনি ওকে বাধা দিয়েন না। " এবার সকল ভাব ছেরে অশায়ের মত বললাম," আমিও এখানে থাকতে চাই না। দেড় ঘন্টা হলো এখানে দাড়িয়ে আছি। আমিও দিলকুশা যাব, চাইলে একসাথে যেতে পারি। আমি ভাড়া দিয়ে দেব।

" "আশ্চার্য আমি আপনার সাথে যাব কেন? আর আপনার ভাড়া দেবার প্রশ্ন আসলো কোথা থেকে? এই রিক্সা চলো। " সুন্দরীর প্রবলেম কি ? কথায় কথায় আশ্চার্য বলে। এবার নিতান্তই ভালোমানুষ সেজে আকুতি শুরু করলাম। " দেখুন আমাকে আর কতক্ষন দাড়িয়ে থাকতে হবে জানি না। আমি ভালো ঘরের সন্তান।

বিশ্বাস না হলে আমার আম্মুকে ফোন করি? কথা বলে সিওর হন। একবার এক ইহূদী মহিলা কুত্তারে পানি দিয়া বেহেশতে গেছে, আপনি নাহয় আমারে লিফ্ট দেন। আমার ব্যান্কে জরুরী যেতে হবে। প্লিজ । " হাহ শেষ পর্যন্ত রাজি করানো গেলো টলটলে সুন্দরীকে।

দেখতে যেমন নরম মনটাও তেমনি নরম। কত্ত সুইট। আমার মিথ্যা কথা বিশ্বাস করে ফেলছে। শুধু একটাই শর্ত কোন কথা বলা যাবে না। "আফা, উনারে নিলে আমি যামু না" এবার বাধ সাধলো কামিনা রিক্সাওয়ালা।

কি মুসিবত? অনেক বাপধন বলে বুঝাইয়া অবশেষে দশটাকা বেশী দেবার আশ্বাস দিয়ে কামিনাকে রাজি করালাম। আমি উঠে রিক্সার বাম পাশে উঠে বসলাম। মেয়ে উঠতে যেয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বুঝলাম এমন কিছু একটা ঘটেছে যাতে করে মায়ে বলে উঠবে "আশ্চার্য!!!"। "এক্সকিউজমি! মেয়েরা বামপাশে বসে সেটা কি আপনি জানেন না?" কি বলবো মাথায় আসছে না।

নেমে তাকে বসতে দিয়ে এবার ডান পাশে বসে বললাম,"জানি কিন্তু বসে অভ্যাস নেইতো, কারো পাশে কখনো বসিনি তাই" অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে টলটলে সুন্দরী তাকিয়ে আছে আমার দিকে। সুন্দরীর পাশে বসে আমি প্রথম প্রেমের স্মৃতি রোমন্থন করতে লাগলাম। 3D হয়ে সব স্মৃতি ভাসতে লাগলো চোখের সামনে। রিক্সার হুড তোলা যাচ্ছে না। এদিকে আমার ধবল চামরা রোদে পুড়ে কালো হওয়ার ভয়।

আমি টলটলে সুন্দরীকে বললাম ছাতা আছে? আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন স্বতী সাদ্বী সীতা রাবনের দিকে তাকিয়ে আছে। শর্ত ভংঙ্গের অপরাধবোধ আমার চেহারায় নেই। নির্লজ্জের মত বললাম, "সমস্যা নাই আমি হুড তুলে দিচ্ছি। " এবার দেখি সুন্দরী চোখ সরিয়ে কি যেন খুঁজতেছে। হুম ছাতা, একটা গোলাপি ছাতা।

আমি ছাতাটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে মেলে ধরলাম। গোলাপি ছাতার নিচে আমাদের দেখে অনেকই ঝুটি ভেবে নিল। নিজেকেও রোমিও রোমিও মনে হতে লাগলো। আহা, এতদিন পরে নিজেকে রোমিও ভাবতে ভালোই লাগছিলো। ভার্সিটি লাইফ ছেরেছি একবছর হলো।

কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে হয়, এক বছরে কোন প্রেম করা হয়নি। ইচ্ছে করছে মেয়েটিকে প্রস্তাব দেই। ধুর! কি ভাবছি, এভাবে কোন মেয়ে রাজি হয় নাকি? আর মেয়েটি কি না কি ভাবছে? এদিকে আমাকে প্রচন্ড সিগারেটের নেশায় চাপছে। এমন অবস্থা যে কেউ যদি বলে ধ্রুপদীর বস্ত্রহরনের পরে সিগারেট টানতে দিবে তাতেই আমি রাজি। কিন্তু এই মেয়ের পাশে সিগারেট টানলে কি মনে করবে? প্রথম জি এফ অবশ্য পারমিশন দিত।

এই মেয়ে কি ভাবে কে জানে। সকল দ্বিধা দন্ধ হাওয়ার বেলুনে উড়িয়ে এবার ছাতাটা মেয়ের হাতে দিয়ে সিগারেট বের করে ধরিয়ে ফেললাম। মুখ ভর্তি ধুয়া বের করে স্বস্তি!!! মেয়ে দেখি তাকিয়ে আছে। অমায়িক একটা হাসি উপহার দিলাম , এই হাসিটা উত্তম কুমারের না হয়ে পারে না। " সিগারেট ফালান, ফালান বলতেসি, মেনার শিখেন নাই? একটা মেয়ের পাশে বসে সিগারেট ধরাইছেন? হাউ কুড ইউ ডেয়ার ইট?" "এক্সিউজমি!!! ডোন্ট ফ্লার্ট মি, ইউজ বাংলা।

হোয়াট ডু ইউ থিন্ক? ভাইসা আসছি? ইটস নট ফেয়ার!!!" "আপনি আশ্চার্য তো! উল্টা বয়ান দিতেসেন! সিগারেট ফেলেন , নাহয় নামায় দিম কিন্তু" সুন্দরীর পাশে বসে দারুন লাগছিলো। নামিয়ে দিবে বলতেই চুপসে গেলাম। এতক্ষন এই মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখলাম। হানিমুনও করলাম। কিউট দুইটা বেবী!!! বেবীর নামও রাখলাম সূর্য আর রাত্রি!! মেয়ে কিনা বলে আমাকে নামায় দিবে।

সিগারেট ফেলে দিয়ে বললাম স্যরি। এবার মেয়ের মুখে মুচকি হাসির রেখা দেখতে পেলাম। একটা কথা আছে, " লারকি হাসি তো সামাঝলো ফাস গায়ি। " বুঝলাম মেয়েটার মন আসলেই নরম। আমি যেমন একটু দূর্বল হয়েছি মেয়েরও তেমন একটু একটু লাগতেসে।

" কিছু মনে না করলে আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি?" সুন্দরী এবার রাগমাখা কর্কশ সূরে বললো," আপনাকে না শর্ত দিয়েছি কথা বলতে পারবেন না? নামিয়ে দেব কিন্ত?" বেয়াদব রিক্সাওয়ালা হাসতেছে। আমাদের পারসোনাল মেটারে কামিনা হাসতেছে। কিন্তু এটা আমাদের মেটার , কিন্তু পারসোনাল তো না?রিক্সাওয়ালাকে ধমক দিয়ে বললাম," সামনে দেইখা চালা" "আসলে ভাবলাম চুপচাপ বোর হচ্ছেন তাই আস্ক করেছিলাম আর কি। না বলতে চাইলে প্রব নাই। থ্যান্কস।

" মুখটা বিষন্নতার ইমর মত বাঁকা করে উদাস হয়ে ভাবতে লাগলাম। আহা, এর মাঝে যদি বৃষ্টি আসতো। ভিজিয়ে নিত দুজনকে। একবার ভাবলাম দেরী নাকরে ভালোলাগার কথা বলো। আবার ভাবলাম সুন্দরী যেই রাগী না জানি আবার থাবরা দিয়ে নামিয়ে দেয়।

উদাসীন হয়ে একবুক ভালোবাসা চেপে বসে রইলাম। " কি যেন বলতে চাইছিলেন?" হঠাৎই সুন্দরীর গলায় ঝমঝম কুপের নহর বই্তে লাগলো। আপ্লুত হয়ে একবার সুন্দরীর চোখের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় চোখ নামিয়ে বললাম ছাতাটা আমার হাতে দিন। " আপনি এইটা বলতা চাইছিলেন? আগে বলবেন না?" "নাহ আপনার নাম জানতে চেয়েছিলাম" সুন্দরীর নাম কথাকলি। মেডিকেলে সেকন্ডইয়ারে পড়ে ।

ব্যাঙ্ক কলোনীতে থাকে। বাবা সরকারী চাকরী করে। একমাত্র সন্তান। ব্রিটিশ কাউন্সিলে লিসেনিং ক্লাস করে। এবার আমি ওয়েট করতে লাগলাম আমার সম্বন্ধে কথাকলি কখন জিজ্ঞাসা করবে।

মনে মনে আমার ভারী প্রোফাইলটা সাজিয়ে বসে রইলাম কিন্তু সুন্দরী আর জিজ্ঞাসা করে না। শেষে বাধ্য হয়ে নিজেই বলা শুরু করলাম, আমি রিক । একটা মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানির ম্যানাজিং এ আছি এক বছর। ধানমন্ডিতে থাকি, ব্লা ব্লা ব্লা। সুন্দরী এবার ভূরু কুঁচকে বললো, " আমি কি আপনার কাছে কিছু জানতে চাইছি?" রিক্সাওয়ালা আবার হেসে উঠলো।

ভাবতে লাগলাম ধরণী তুমি এখনো কেন পুরাপুরি দ্বিধা হলেনা? আমি প্রবেশ করিতে গিয়া চিপায় আইটকা গেলাম। হাইকোর্ট মাজারের সামনে যখন রিক্সা তখন আকাশ কালো হয়ে থম থমে হয়ে গেলো। আজকাল আকাশও ভাব লয়। বৃষ্টি আসবে বলেও আসে না। হঠাৎ দমকা হাওয়ায় ছাতা উড়ে গেল আমার হাত থেকে।

আমি তেমনি হাত মুঠ করে বসে কিন্তু হাতে ছাতা নেই। " বসে আছেন কেন ? যান ছাতাটা নিয়ে আসুন। বৃষ্টি আসবে। এই রিক্সা থামাও। " আমার মাঝে কোন ভাবান্তর হলো না।

মমতার স্বরে বললাম আমি আরেকটা ছাতা কিনে দেব। এইবার মেয়ের চিৎকার শুনে কে? " হাতে কি ছাতা ধরার জোর নাই? এইটা আমার প্রিয় ছাতা? নামেন এক্ষুনি নিয়ে আসেন। " অশায়ের মত পিছনে দৌর দিলাম। অনেক দিন হলো দৌড়ানো হয় না। চার্লি চ্যাপলিনের মত দৌরাতে দেখে অনেকে না হেসে পারলো না।

একটু পরে হাপাতে হাপতে রিক্সার কাছে এসে আহত ছাতাটা কথাকলিরঝাতে দিয়ে বললাম," আহত হইসে, এখনও মরে নাই। " বেচারীর মুখ ছোট হয়ে গেল। এবার নিজেকে অপরাধী মনে হলো। বললাম," আমি সেম একটা ছাতা কিনে দেব। আমি কি রিক্সায় উঠবো?" ঘোরার মত করে মাথা নেড়ে কথাকলি সম্মতি দিল।

উঠে বসলাম, রিক্সা টান দিতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। কথাকলির অর্ধমৃত ছাতা দিয়ে এই বৃষ্টি প্রতিরোধ সম্ভব না। সুতরাং....। ভিজে চুপসে গেছে কথা কলি। আমার মন কয়েকবার দুষ্ট দৃষ্টিতে তাকানোর তাগাদা দিচ্ছিলো।

আত্মসংবরণ যে কতটা কঠিন সেদিন টের পেলাম। ব্যাঙ্ক কলোনীর কাছাকাছি একসময় বলেই ফেললাম, " কথাকলি, আমি তোমার প্রেমে পরে গেছি। তুমি চাইলে ওয়েট করবো। তোমার সিদ্ধান্তের। যদি না অন্য কারও সাথে রিলেশন না থাকে।

আমি আবার রিলেশনে শ্রদ্ধা করি ( জীবনেও না )। জানি এত স্বল্প সময়ে কোন ডিসিশন নেয়া কঠিন। তুমি সময় নিয়ে আমাকে যাচাই করতে পারো। প্লিজ আমাকে না করো না। " অবাক হওয়ার ইমর মত তাকিয়ে রাগ হওয়ার ইমর মত চোখ রাঙিয়ে চুপ করে থাকলো।

এবার মুখ খুললো রিক্সাওয়ালা। " আফা মাইনা লন, হের লাহান াবাল পোলা জীবনে পাইবেন না, যেমনে নাভচাইবেন হেমনেই নাচবো। " ও ঠিক বলচে কথাকলি, আমার মত াবাল!!! ওপস স্যরি!!! বোকা ছেলে আর পাবা না। প্লিজ রাজি হও। সেদিন কথাকলি রিক্সায় আর বেশীকিছু বলেনি।

যাওয়ার সময় বলে গেলো যে বাসায় প্রস্তাব পাঠাতে। যদি ওর বাবা মা রাজি হয় তাহলে...। মেয়ে কঠিন ঝানু, নিজের মোবাইল নম্বর না দিয়া বাসার ফোন নম্বর দিয়ে গিয়েছিলো। সেদিন আমাকে াবাল বলা স্বত্বেও রিক্সাওয়ালাকে খুশি হয়ে দশটাকার বিনিময়ে বিশ টাকা দিয়েছিলাম। আমার কনফিডেন্স লেভেলের কথা কি আর বলতে হয়।

এর পর পারিবারিক ভাবে আমাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। আমিও সেদিন ঠেকে পুরনো সব ইতিহাস ঝেরে নতুন করে শুরু করলাম। আমার সবটুকো ঘীরে শুধু কথাকলি। কিন্তু বিধিবাম, এরপর একদিন........... " এই কথা শুন, আজ তুমি নীল শারী পড়ে নীল টিপ দিয়ে থেকো। আমি অফিস থেকে এসে একসাথে দুজবে ডিনার করবো।

ওকে এন্জেল বাই। লাভ ইউ " রাতে বাসায় যেয়ে দেখি সবকিছু এলোমেলো পড়ে আছে। কথাকলি মুখটা হুতুমপেঁচার মত করে আমার দিকে তাকিয়ে আছি। বুঝতে পারলাম ঝগরা করার মুডে আছে। আজকে স্বংয়ং ইশ্বর আমাকে বাঁচাতে আসবে না।

আমি কাচিমাচু হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম," কি হয়েছে লক্ষিটি? এইতো আমি চলে আসছি। " এরপর কথাকলি আমাকে যা শুধাইলো নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারলাম না। হাত থেকে একটা ডায়েরী আমার দিকে ছুরে বললো," কুত্তা, তুই এতটা হারামি বুঝতে পারি নাই। কত্তগুলা প্রেম করছিস? কতটা মেয়ের জীবন নষ্ট করছিস? তুই আমার আগে কয়টা মেয়ের সাথে সংসার করেছিস? তোর মত কালপ্রিটকে বিয়ে করে আমার লাইফটা ডেসট্রয় করলাম। তুই আমার সাথে আর জীবনেও কথা বলার চেষ্টা করবি না।

তোরে াবাল ভেবে শেষে এসে ভালোবেসে ফেলছি। জানতাম না এটার ফল এমন হবে। " নিচের দিকে ডায়েরীটার দিকে তাকালাম। আমার এক্স সব জি এফের নাম আর ফোন নম্বর আর দেখা করার রুটিন ছিল ঐটাতে। এতদিন পরে এই ডায়েরী আমার সাথে বেইমানী করবে কে জানতো? অনেক কষ্টে কথাকলিকে বুঝাইলাম যে আমি ভার্সিটিতে ফাইনাল ইয়ারে থাকাকালীন জুনিয়র দের টিউটর ছিলাম।

তাই স্টুডেন্টদের নম্বর আর ক্লাস রুটিন এইগুলা। অনেক কষ্টে সত্যকে ধামাচাপা দিলাম। এরপর দুইজন ছাদে উঠে সেই বেইমান ডায়েরীকে আগুনে পুড়িয়ে আমার পূর্বের সব অপকর্মের অনুশোচনা করে চিরতরে কথাকলির হয়ে গেলাম। আর সেদিন যখন কথাকলি আমার হাত চেপে ধরে বললো যে শুধু ওকেই ভালোবাসতে হবে, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, কথাকলিও আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। ওহ, ভালো কথা, এরপর কথাকলিকে আমি অনেকগুলা গোলাপি ছাতা কিনে দিলেও সেই আহত ছাতা এখনও আলমারিতে স্বযত্নে রেখেছে আমাদের প্রথম পরিচয়ের স্মৃতি হিসাবে।

***************************************************************** আজ হঠাৎ করেই উদ্ভট একটা গল্প লিখতে ইচ্ছে করলো। এক বাসায় লিখলাম এটা। ফাঁকিবাজি একটা লেখা। তেমন একটা মানসম্মত হয়নি হয়ত । কারো বিরক্তির উদ্রেক ঘটালে আন্তরিকভাবে দুক্ষিত।

আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে কাকতালীয় ভাবে গেলে গেলে লেখক দায়ী নয়। সম্পূর্ণটাই বিকৃত মস্তিষ্কের উদ্ভট চিন্তা থেকে। ******************************************************************  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।