আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাজোট সরকার এবং সাম্রাজ্যবাদী তেলগ্যাস কোম্পানীর সাথে সম্পাদিত জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবীতে ৩ জুলাই ঢাকা শহরে অর্ধদিবস হরতাল সফল করুন

যা এখনও জানিনা তা বলতে চাই না জাতীয় সম্পদ লুণ্ঠনসহ সাম্রাজ্যবাদী-সম্প্রসারণবাদী নীলনকশার বিরদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন! সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের তাঁবেদার মহাজোট সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসন উৎখাতের সংগ্রাম বেগবান করুন! প্রিয় দেশবাসী, ১৬ জুন ২০১১-এ দেশ, জাতি ও জনগণের জন্য এক কালো দিনে পরিণত হয়েছে। এদিন সরকার বঙ্গোপসাগরের দু’টি গ্যাসব্লক (১০ ও ১১) কনোকো ফিলিপস্ নামের এক মার্কিন কোম্পানীর হাতে তুলে দিয়েছে। দেশবাসী ক্ষোভ ও যন্ত্রণাসহ দেখল, কিভাবে জনগণের দীর্ঘদিনের দাবী উপেক্ষা করে তাঁবেদার মহাজোট সরকার আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশ বিক্রি করছে। সরকার বলছে, জঘন্য জাতীয় স্বার্থ বিরোধী মডেল পিএসসি ২০০৮ অনুসারে চুক্তি হয়েছে। যদিও মূল চুক্তি এখনও গোপন।

এ চুক্তির ফলে ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকের মোট গ্যাসের ৮০ ভাগ সাম্রাজ্যবাদী কোম্পানী লুটে নেবে। কেবল এ তথ্য থেকে জোচ্চুরির ভয়াবহতা বোঝা সহজ নয়। এক হিসাবে দেখা যায়, দেশি তেলগ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স ১ টাকা বিনিয়োগ করে ৫০ টাকার গ্যাস উত্তোলন করতে সক্ষম। অর্থাৎ, অদ্ভুত শোনালেও সত্য, যেখানে দেশি কোম্পানীকে দিয়ে মাত্র ২-৪ টাকা বিনিয়োগ করলে আমরা ১০০ টাকা মূল্যের ১০০ ভাগ গ্যাসের মালিক হতে পারি, সেখানে বিনিয়োগের টাকার অভাব দেখিয়ে সরকার ২০ টাকার গ্যাস পাওয়ার শর্তে বাকি ৮০ টাকার গ্যাস বিদেশীদের হাতে তুলে দিচ্ছে! গ্যাসের অপ্রতুলতার কথা তুলে চুক্তি করা হলেও, এ চুক্তির ফলে প্রকারন্তরে সমস্ত গ্যাসই বিদেশে রপ্তানীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাহিদা অনুসারে আগামী ৫০ বছরে আমাদের ১৫০ টিসিএফ গ্যাস দরকার।

কিন্তু, গ্যাস-কয়লা সব মিলিয়ে আমাদের আছে মাত্র ৫০ টিসিএফ, অর্থাৎ ১০০ টিসিএফ ঘাটতি। জ্বালানী স্বনির্ভরতা ও নিরাপত্তা বিবেচনা করলে দেশের মজুদ জ্বালানী সম্পদ কোনভাবেই রপ্তানীর কথা কল্পনাও করা যায় না। চুক্তি অনুযায়ি যদি এই গ্যাস বাংলাদেশ কাজে লাগাতে চায় তবে কোম্পানীর ৮০ ভাগ গ্যাস আন্তর্জাতিক দামেই কিনতে হবে। এতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম পড়বে প্রায় ৩ ডলার বা ২১০ টাকা। এ দর দেশী কোম্পানীর গ্যাসের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি।

সুতরাং ঐ গ্যাস কিনতে হলে সরকারকে হয় গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে, নয়তো জনগণের করের টাকায় হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে পেট্রোবাংলার লোকসান ও দায় পরিশোধ করতে হবে। এ চুক্তিতে ক্ষতিপূরণ আদায়েরও কোন বিধি নেই। তাছাড়া এদেশের তথাকথিত দেশপ্রেমিক সরকারগুলো, যারা পুঁজির অভাবে কথা বলে গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্ব বিদেশীদের হাতে তুলে দিচ্ছে, তারা মাগুরছড়া দূর্ঘটনার ৩৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ে কোন চেষ্টা করেনি। টেংরাটিলার দূর্ঘটনার জন্য দায়ী নাইকো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই দেশ ছেড়েছে। দেশে কোন বিচার না হলেও সম্প্রতি কানাডার আদালতে এক দুর্নীতির মামলায় নাইকো বাংলাদেশে ঘুষ দিয়ে পার পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে।

সুতরাং চুক্তির ফলে ‘দূর্ঘটনার রাজা’ খ্যাত কনোকো ফিলিপসের হাতে আমাদের সম্পদ ও সমুদ্র হূমকির মুখে পড়ল। এ চুক্তিতে বাংলাদেশের সমূদ্র অঞ্চলের মধ্যে ভারত ও বার্মার দাবী ছেড়ে দিয়ে সমূদ্র ব্লক ইজারা দেয়া হয়েছে। এভাবে প্রকারন্তরে বাংলাদেশের সমুদ্রমূখ ভারত, মাকির্ন ও বার্মার দখলে চলে গেল। আমরা জানি, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বঙ্গোপসাগর সংঘাতময় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। ভারত, বার্মা, চীন, মার্কিনসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বিশ্ব শক্তি এখানে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে।

কনোকো ফিলিপস কোম্পানীর অন্যতম কর্ণধার হলো জেনারেল রিচার্ড আর্মিটেজ, যিনি ইরাক ও আফগানিস্তানে সামরিক হামলার কট্টর উদ্যোক্তাদের একজন। বঙ্গোপসাগরে এ কোম্পানীর অনুপ্রবেশের পেছনে গ্যাস নয়, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক স্বার্থই আসল বিষয় বলে ধারণা করা হয়। ফলে এ পিএসসি চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ মার্কিন সামরিক তৎপরতা ও যুদ্ধ ঝুঁকির অংশীদার হয়ে পড়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না। এই একটি মাত্র চুক্তি সরকার ও শাসকশ্রেণীর দেশ ও জাতি বিরোধী ভয়ঙ্কর চরিত্রকে উন্মোচনের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এই চুক্তি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

এ চুক্তি ২৮টি ব্লকে বিভক্ত সমগ্র সমুদ্র সাম্রাজ্যবাদের হাতে তুলে দেয়ার প্রথম পদক্ষেপ মাত্র। শুধু তাই নয়, বর্তমান মহাজোট সরকার ইতিমধ্যে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রিসহ রফতানির অনুমতি দিয়ে সন্তোস ও হেলিবার্টন কোম্পানীর সাথে চুক্তি করেছে। দেশী কোম্পানী আবিষ্কৃত অন্যতম বৃহৎ সুনেত্র গ্যাসক্ষেত্রটি বিদেশী কোম্পানীকে ইজারা দেয়ার পাঁয়তারা করছে। তারা জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কয়লানীতি-২০১০ তৈরী করেছে। ফুলবাড়ির রক্তস্নাত সংগ্রামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফুলবাড়ি ও বড় পুকুরিয়ায় উন্মুক্ত কয়লা খনি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকারের এসব কর্মকাণ্ডের সাথে সাম্রাজ্যবাদসহ অন্যান্য শক্তি কিভাবে প্রত্যক্ষ হুকুমদারি করছে উইকিলিকস-এর ফাঁস করা দলিলে তারও প্রমাণ মিলেছে। কনোকো ফিলিপসকে সাগরের গ্যাসব্লক বরাদ্দ দেয়ার জন্য কোন এক গোপন সভায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি ও প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক ইমামের মধ্যে যোগসাযোসের ঘটনা প্রকাশ করেছে উইকিলিকস। নির্বাচন, সংসদ ইত্যাদি পর্দার আড়ালে কিভাবে বিদেশী শক্তির গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন হচ্ছে, তাদের নির্দেশে দেশ চালানো হচ্ছে-এটা তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। আমরা বারবার তুলে ধরেছি, মহাজোট সরকার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য ক্ষমতায় বসেছে। এ নীলনকশা বাস্তবায়নের অর্থ বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ক্ষেত্রে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন নয়-বরং এক সামগ্রিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।

এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদেশী প্রভুদের স্বার্থে কি বিরাট আকারে এ নীলনকশা বাস্তবায়নের কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে-তার ফিরিস্তি এখানে দেয়া সম্ভব নয়। এটুকু বলা যায়, ক্ষমতায় এসে সরকার বিদেশী স্বার্থে একের পর এক চুক্তি করেছে, তেল-গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর, পরিবহন, টেলি যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি, কৃষি, বাণিজ্য, শিল্পসহ গোটা অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে অসংখ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নানা সামরিক চুক্তি ও মহড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশকে এ শক্তিগুলোর সামরিক পরিকল্পনার অন্তর্গত করেছে। একই সাথে সরকার শাসকশ্রেণীর জীর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সংস্কার ও জনগণের সংগ্রামকে দমন করার জন্য নানা হাতিয়ার তৈরী করেছে। এভাবে সরকার বিদেশী শক্তির রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এজেন্ডাও বাস্তবায়ন করে চলেছে।

সুতরাং এ সরকার ও শাসকশ্রেণীর কাছে জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন তথা জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ আশা করা বাতুলতা ছাড়া কিছু নয়। লক্ষ করুন, আজ ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের তৈরী মডেল পিএসসি-২০০৮ অনুসারেই হাসিনা সরকার চুক্তি কররছে এবং সবক্ষেত্রেই তারা এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে। সুতরাং, আমরা আবারও তুলে ধরতে চাই যে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের স্বার্থে এ দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সামরিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রসহ গোটা সমাজটাকেই পুনর্বিন্যস্ত ও নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে এক নীলনকশা বাস্তবায়নের প্রয়োজনে ১/১১-এর ক্যু-দেতার মাধ্যমে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সরকার গঠিত হয়েছিল। শক্তির সমীকরণে, নির্বাচনপূর্ব সমঝোতার মাধ্যমে মহাজোট সরকার এ নীলনকশা বাস্তবায়নের ঠিকাদারি অর্জন করেছে। আর দুর্নীতির শিরোমণি সন্তান, সম্পদ ও গদীর রাজনীতি রক্ষার বিনিময়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সেদিন চারদলীয় জোট সমঝোতা করেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল এবং এখনও এ নীলনকশা বাস্তবায়নে নীরব সমর্থন দিয়ে চলেছে।

অন্যদিকে কয়েকটি কথিত বাম দল “ডোন্ট ডিস্টার্ব হাসিনা” নীতি গ্রহণ করে জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনকে পেছন থেকে খামচে ধরছে। তারা হাসিনার হাত ধরে সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় স¤প্রসারণবাদ এবং তাদের দালাল শাসকশ্রেণীর ক্লাবে প্রবেশ করেছে। মন্ত্রীত্বসহ নানা সুবিধার বিনিময়ে সেই নীলনকশা বাস্তবায়নের অংশীদার হয়েছে। ঘরে বিভিষণ রেখে শত্রুর সাথে লড়াই করার অর্থ নিশ্চিত পরাজয়। সুতরাং, আন্দোলনের আন্তরিক নেতা-কর্মী-সমর্থক ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এদের মোকাবেলা করতে হবে।

ইতিমধ্যে হাসিনাসহ মহাজোটের এমপি, মন্ত্রীরা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে ‘আমার চাইতে বড় দেশপ্রেমিক নাই’, ‘যত ইচ্ছা চিৎকার করতে থাকুন’, ‘হরতাল করার অধিকার নাই’ বলে দম্ভোক্তি করেছে। আন্দোলনকারীদের ‘টোকাই’এবং তাদের দাবীকে ‘ননসেন্স’ বলে জঘন্য ভাষায় আক্রমণ করেছে। শোষণ ও নিপীড়ন বাড়িয়ে তোলার জন্য, জনগণের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের বহুযুগের অর্জিত অধিকার গুঁড়িয়ে দেয়ার যুক্তি হিসাবে হিটলার-মুসোলিনিরা এককালে শ্রেষ্ঠত্ব ও দম্ভের আদর্শ তুলে ধরেছিল-এটাই ফ্যাসিবাদের চরিত্র। সরকারের পক্ষ থেকে এসব আক্রমণ দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, বিপ্লবী ও সাম্যবাদী শক্তি ও জনগণের উপর ফ্যাসিবাদী দমনাভিযানেরই লক্ষণ। এ ভয়াবহ দুর্দিনে আসুন, প্রকৃত দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, বিপ্লবী ও সাম্যবাদী শক্তি এবং জনগণের সংগ্রামী ঐক্য গড়ে তুলি।

কনোকো ফিলিপস-এর সাথে জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবীতে সোচ্চার হই। ব্যাপক জনগণকে জাগ্রত ও সমবেত করি। জাতীয় সম্পদ রক্ষাসহ সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদী নীলনকশা প্রতিরোধ করি। শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি ও দেশপ্রেমিক জনগণের স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সরকার, সংবিধান ও রাষ্ট্র কায়েম করার লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের তাঁবেদার মহাজোট সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসন উৎখাতের সংগ্রাম বেগবান করি। জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ অস্থায়ী কার্যালয়: ৮৪/ক/এ, সাদেক খান রোড, রায়েরবাজার, ঢাকা-১২০৯।

২৭ জুন ২০১১ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.