আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৌসুমি বুঝে গেছে, এইবারও বিয়েটা হচ্ছে না।

মৌসুমির নিজের নাম সম্পর্কে একটা এলার্জি আছে। কেও যদি চিৎকার করে ডাকে, এই মৌসুমি! মৌসুমি! তখন কেবলই নিজেকে নায়িকা নায়িকা মনে হয়। ওতো সৌন্দর্যের দিক দিয়ে নায়িকা মৌসুমির ধারে কাছেও নাই। একেতো গায়ের রং কালো তারপর উচ্চতায় টেনেটুনে ৫ ফুট দুই ইঞ্চি! ওর নাম কেন যে “মৌসুমি” রাখতে গেলেন দাদী, এইটা কোনভাবেই মৌসুমি মিলাতে পারে না। ওর নাম যদি শিউলি, রুপা, সহেলী গোছের কিছু হত তাহলে কি খুব সমস্যা হত? দাদী বেঁচে থাকলে তাকে জিজ্ঞেস করা যেত।

তবে মাঝে মাঝে আয়নার সামনে যেয়ে মৌসুমি অনেকটা সময় ধরে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে দেখে, নায়িকা মৌসুমির সাথে তার চেহারার অদ্ভুত মিল আছে। দুই জনের হাসি-ই এক। গত পরশু আয়নার সামনে যেয়ে হাসার সময় পিছন থেকে ছোট ভাই টগর দেখে ফেলেছে। টগর দিন দিন যত বড় হচ্ছে তত বেশী ঠোঁট কাটা হয়ে যাচ্ছে। ও ফিক করে হাসি দিয়ে বলে উঠেছেঃ আপু! তোমার হাসি এমনিতেই অনেক সুন্দর।

আয়নার সামনে যেয়ে আর প্র্যাকটিস করতে হবে না! মৌসুমির লজ্জায় আয়নার ভীতরে ঢুঁকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল। মৌসুমি নিজেও জানে ওর হাসি সুন্দর, সমস্যা শুধু গায়ের রঙটা নিয়ে। কেও বলে গায়ের রং চাপা, কেও বলে শ্যামলা আবার কেও রাখঢাক না করে বলে কালো। আজ ছেলে পক্ষ মৌসুমিকে দেখতে আসবে। এই নিয়ে এই বছরে ৫ম বারের মত তাকে দেখতে আসছে।

সব কিছু ঠিকঠাক থাকে কিন্তু গায়ের রঙয়ের ওজুহাতে বিয়ে ভেঙ্গে যায়। মৌসুমির ছোট খালা গত দুই মাস ধরে কি সব সৌন্দর্য বর্ধন ক্রিম সাপ্লায় দিয়েছে, যাতে মুখের রঙটা অন্তত একটু ফর্সা হয়। মৌসুমি কয়েকবার মুখে লাগিয়েছেও কিন্তু মুখে কিছু ব্রণ ছাড়া আর কিছুই হয় নাই। এইবারের ছেলেটা একটা কনস্ট্রাকশন ফার্মের ম্যানেজার। বরাবরের মত বড় মামাই বিয়ে নিয়ে এসেছেন।

মৌসুমি ছবি দেখেছে। ছেলেটা গায়ে গতরে একটু মোটা, মাথার মাঝ বরাবর চুল নাই। মৌসুমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না, একটা ছেলে ছবি তোলার আগে কিভাবে পান খেয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারে! ঠোঁট দুটো লাল টকটকে! বড় মামা বলেছেন, ছেলে অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের! মাথায় টাক, আভিজাত্যের নিদর্শন। ড্রইং রুমে ছেলে আর ছেলের বয়স্ক মামা বসে আছেন। দরজার ফাঁক দিয়ে মৌসুমি দেখেছে, ছেলেটা পায়ের উপরে পা তুলে নাচাচ্ছে।

চোখে মুখে দস্যু বনহুরের ছায়া! মৌসুমি নাস্তার ট্রে নিয়ে রুমে গেল। ছেলেটার সামনে ট্রে ধরতেই ছেলেটা বল্লঃ ওনলি এক গ্লাস পানি। মৌসুমির খুব ইচ্ছে হল ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করতেঃ এই ছেলে ইংলিশ-বাংলা গুলায়ে কথা বল কেন? --কোন সমস্যা? --অবশ্যই সমস্যা! একদম বাংলায় কথা বলবে। আর পা নাচানি বন্ধ কর। একদম পা নাচাবে না।

--ইয়েস। --আবার ইয়েস! বল হ্যাঁ! --হ্যাঁ! --তুমি আমাকে বিয়ে করবে? --না। --না কেন? আমি কাল বলে? --হ্যাঁ! --তোমার কি সাদা রং কি খুব পছন্দ? --হ্যাঁ! --কালো রং পছন্দ না? --না! --তাহলে তোমার চোখের মনি দুইটা আমাকে খুলে দাও, ওইগুলো তো দেখতে কালো। ঐ কালো রং দিয়ে সাদা দেখে মন ভরানোর দরকার নাই। আর তোমাকেও আমি বিয়ে করবো না।

কেন জান? --কেন? --তোমার মাথায় চুল নাই। চুলহীন মানুষকে আমার ভয়ঙ্কর লাগে। একটা ভয়ঙ্কর মানুষের সাথে সংসার করবো না। তুমি এখনই এখান থেকে বিদায় হবে তানাহলে এই কাটা চামচ তোমার টাক মাথায় গেথে দিব। কিন্তু মৌসুমি কিছুই বলতে পারলো না।

এই সব কাল্পনিক কথোপকথন কল্পনাতেই রয়ে গেল। ছেলেকে, ছেলের মামাকে যথা সম্ভব আপ্যায়ন করলো। ছেলের মামা ঢেঁকুর তুলতে তুলতে বল্লেনঃ আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিব। মৌসুমি বুঝে গেছে, এইবারও বিয়েটা হচ্ছে না। মৌসুমির মাঝে মাঝে প্রকৃতির উপরে ভীষণ অভিমান হয়।

কালো রঙয়ের প্রতি যদি এতোটা অনিহা তৈরি করবে তাহলে কেন এই রঙয়ের সৃষ্টি? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৪৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।