আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৈতালের সারমেয় গবেষণার সারমর্ম

বৈতাল বাবা মা-র আদরের তৃতীয় সন্তান। যথারীতি তৃতীয় সন্তানেরা হয় বৈতাল তাহা হইতে খুব একটা তফাৎ ছিলোনা। ছাগ শিশুর ন্যায় চঞ্চল ভাব তাহার মধ্যে সর্বদাই বিরাজ করিত, তদুপরি বাল্যকাল হইতে তাহার সহিত ছাগশিশুর তুলনামূলক আচরণ শুনিতে শুনিতে শেষমেষ তাহার জীবনের প্রত্যয় হইলো- কাভি না কাভি সে কাজ করিবে ছাগু লইয়্যা, নহে গাভী। ইতিমধ্যে এক ধবল বিগত যৌবনা ও বর্তমানে গৃহহীনা বিধবা হঠাৎ করিয়া ছাগশিশু পালন লইয়া হই-চই শুরু করিলেন। বৈতালও মজা পাইয়া তাহাদের ভিড়ে সমপৃক্ত হইয়া যাইতে চেষ্টা তদবির করিতে থাকিল।

সহসাই তাহার অনুধাবন হইল, সে তাহার মস্তিষ্কের হলুদ অংশের যথার্থ প্রয়োগ করিয়া ছাগশিশু পালন হইতে আরও মহতি কাজ, উন্নতমানের ছাগশিশুর উৎপাদনে লিপ্ত হইতে পারে। ইত্যাবসরে সে ছাগশিশু লইয়া তাহার মহতি গবেষণা শুরু করিল। কিন্তু শিক্ষাজীবনের সমাপ্তির পথেও কোন গবেষণা পত্রে নিজের নাম না দেখিয়া বৈতাল ঠিক করিলো এই হতভাগাদের দেশে আর না! না আছে গবেষণার পরিবেশ, না আছে মন খুলিয়া রুপসীদের সহিত ফিকির করিবার ধান্ধা! সেই থেকে শুরু হইল বৈতালের বিদেশ যাত্রা লইয়া নতুন এক অধ্যায়! বৈতাল সহসাই হানগুক নামক এক দেশে তাহার বিস্তর গবেষণার ক্ষেত্র বিস্তারের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করে। দেশ হইতে হাজার মাইল পাড়ি দিয়া অধ্যাপকের সহিত আগ্রহ ভরিয়া দেখা করিবার নিমিত্তে দরজায় টোকা দেয়া মাত্রই তাহার বজ্রকন্ঠে আদেশ; দরজার ওপার্শ্বেই দাড়াইয়া থাক, আমার হাতের কাজ শেষ করিবার পরে প্রবেশ করিবে। বেচারা বৈতাল আর বুঝিয়া উঠিতে পারেনা তাহার দোষ খানা কোথায়? হাজার মাইল পাড়ি দিয়া আসায়, দরজায় টোকা দেওয়ায়, নাকি তৃতীয় বিশ্বের এক গর্বিত প্রতিনিধি হিসাবে এই হানগুক দেশে আসায়! দিন যায়, বৈতালের গবেষণার আকাঙ্খা আরও চাঙ্গা হইয়া ওঠে, সাথে এদিক-সেদিকেও নজর এড়ায় না অবশ্য।

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিধেয় বস্ত্র (তাহাকে নাকি মাইক্রো স্কার্ট বলে) সম্বলিত হাস্যরত নাক বোঁচা নারী মুখ গুলো বৈতালের হৃদয়ে উঁকি মারে, হয়তো দাগ কাটিয়াও যায়। কিন্তু বৈতাল তাহার সংযম রক্ষায় অনবদ্য! বিপুল পরিমানে সয়াসস আর ব্রকোলি খাইয়া তাহার যৌনাকাঙ্খা নিবৃত্তি করে। সহসাই বৈতালের অধ্যাপক এইমর্মে অধ্যাদেশ প্রনয়ন করেন, ছাগ লইয়া যেই গবেষণা চলিতেছিলো তাহা বৈশ্বিক মন্দাজনিত কারনে অর্থাভাবে বন্ধ হইবার উপক্রম। বৈতাল যদি তাহার গবেষণাগারে কাজ চালাইয়া যাইতে চায় তাহা হইলে ছাগ নয় বরঞ্চ সারমেয় লইয়া গবেষনা করিতে পারিবে, অন্যথায় বৈতালকে তাহার গবেষণা হইতে নিবৃত্তি দেয়া হইবে। বৈতাল আর ভাবিয়া পায়না, ছাগ হইতে শেষ-মেষ সারমেয়? চোখ বন্ধ করিলেই সে তাহার দিব্যদৃষ্টিতে দেখিতে পায় লোকে তাহার দিকে আঙ্গুলি উঠাইয়া বলিতেছে, ওইদেখ – সারমেয় গবেষক যায়! অথবা কোন নাক চ্যাপ্টা রমনী তাহার সহিত সারমেয়র তুলনা করিতে লাগিতেছে; এসব মনে পড়িলে তাহার পেট হইতে ক্রমাগত বায়ু নির্গত হওয়া শুরু হয়! তবুও দাঁত চাপিয়া কোমর বাঁধিয়া বৈতাল সারমেয় লইয়া তাহার গবেষণা চালাইতে থাকে।

দিন যায়, মাস যায় বৈতাল তাহার গবেষণা লইয়া কিছু পত্র প্রকাশ করিবার মনোঃকামনায় অধ্যাপকের দড়জায় উঁকি দেয়, কিন্তু অধ্যাপক মহোদয় তাহার গবেষণা পত্র ঘ্যাচাং করিয়া কাটিয়া দিয়া আবার নতুন করিয়া শুরু করিতে বলে। সে বৈতালকে আরও, প্রাচ্য দেশীয় দর্শনও মনে করাইয়া দেয় “কামকে দমন কর, কর্মেই মুক্তি”। ইহা শুনিয়া বৈতালের মেজাজ তিরিক্ষি হইলেও সে মনে মনে ইহা ভাবিয়া উৎফুল্লিত হয়, তাহার অধ্যাপক মহোদয়ও নিশ্চয়ই যৌবনকালে যবন দেশ আম্রিকায় তাহার অধ্যাপক কর্তৃক এই ধরনের ‘পুঙ্গা’ খাইয়াছে। বৈতালের মনে সেই আম্রিকিয় অধ্যাপকের প্রতি এক প্রশান্তি কাজ করে। বৈতালে আজকাল মন বড়ই উচাটন।

দিনরাত গবেষণা করিতে করিতে সে তাহার পরিবার পরিজনের সহিত যোগাযোগ রাখিবার সময় পায়না। আবার নিজেকে গবেষক বলিয়া পরিচয় দিয়া জনগনের প্রশংসা কুড়াইলেও দেখিতে পায় মাস শেষে তাহার নগদ নারায়নের সঞ্চয়ী হিসাব শুণ্যের কোঠায়। অথচ বিদ্যালয়ের উচ্চ-মাধ্যমিকে অকৃতকার্য লাফাঙ্গা সেই বালকটি আপিস-আদালতে রুটি চালান বানিজ্য করিয়া টয়োটা-নোয়াহ নামক এক গাড়িতে নিত্যনতুন বান্ধবী লইয়া ঘুড়িয়া বেড়ায় আর মুখচ্ছবি নামক এক সামাজিক যোগাযোগের পাতায় তাহার হাস্যোজ্জল ছবি প্রদান করে, ইহা দেখিয়া বৈতাল মার্ক জুকবার্গ নামক এক ব্যাক্তিকে অভিসম্পাত করে আর তাহাকে মাঝে মধ্যে দুষ্টু ইয়াহুদি বলিয়াও ফোড়ন কাটে। দৈনিক মতিলাল আলু-তে জনৈক অধ্যাপকের কলাম পড়িয়া বৈতাল ভাবিয়াছিলো সে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা আর পিয়াজডি কাটিয়া বহু অর্থ আভিজাত্যের মালিক হইবে, কিন্তু হায়! এ কি হইল বৈতালের? সে কোনভাবেই বঙ্গদেশে প্রত্যার্পন করিতে চাহে না, ওইদশে চটকদার লোকজন অর্থের মালিক হয় কিন্তু গবেষকদের ভাত নাই! হতাশ হইয়া বৈতালের সংযমের বাধ ভাঙ্গিয়া যায়, বৈতাল অবশেষে বোতল ধরে। তাহাতে লাভ বা ক্ষতি কতটুকু হইয়াছে ইহার হিসাব মিলানো অত্যান্ত দুরুহ হইলেও সঞ্চয় হইতে অর্থ উঠাইয়া বান্ধবী পরিবেষ্টিত অবস্থায় মদ্যপান করিতে করিতে বৈতাল স্মৃতিচারন করে আর ভবিষ্যতের কথা ভাবিয়া সেই সময়টুকুতে শঙ্কায় জর্জরিত হয়না।

সে ভূলিয়া থাকিতে চায় ভূত-ভবিষ্যতের অজানা আশঙ্কা, গোপন করিতে চায় দীর্ঘশ্বাস- কিন্তু পারে কি? যদি সারাটি জীবন চলিয়া যাইত এইভাবে, মন্দ হইত না, ভাবে বৈতাল আর আনমনেই হাসিয়া ওঠে একা একা।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.