আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোলা মানবের কষ্ট................... ২৩-০৩-২০০৬////////বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী


উনার খ্যাতি এখন পৃথিবী ছাড়িয়ে এন্ড্রোয়েডের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়েছে। ঊনাকে নিয়ে পড়াশোনা হচ্ছে এখন প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি উনার সেমিনারে ডাক পাবো সেটা আমার সারা জীবনের কামনা ছিল। আমি আজ সব চেয়ে সুখি মানুষ। এখন আমি বের হবো।

আমার এই সুখবর টা ব্লগের মাধ্যমে সবাইকে জানাচ্ছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। এখন আমার পোর্টফলিও জমা দিতে যাব উনার ইন্সটিটিউটে। আজকে আসি। ভাল থাকবেন।

২২.০৮.২০২১ সকাল ১০.৩৫ সৈকতের ব্যাক্তিগত ব্লগ- আজ আমি নতুন একটা টেট্রনের কোট কিনেছি। কালো আর নীলের অদ্ভুত মিশ্রণ। আমি এটা পড়ে আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। আমাকে যে কি সুন্দর দেখাচ্ছে...... কাল সেমিনার আমার খুব নার্ভাস লাগছে। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন...... ২৩.০৮.২০২১ সকাল ১০.৩৫ সৈকতের ব্যাক্তিগত ব্লগ- সেমিনার টা হবে বাংলাদেশের সাবেক রাজধানী ঢাকায়।

সেখানে এক সুবিশাল সেমিনার রুমে আমি গেলাম একটা ট্রায়োযানে করে। এই ট্রায়োযান গুলো মাত্র মাস চারেক আগে বের হয়েছে। অনেক দাম। কিন্তু আমাকে ডঃ আকমল একটা পাঠিয়ে দিয়েছেন। নিজেকে রাজা রাজা মনে হচ্ছে।

হবেনা? প্রতিটা ট্রায়োযানের দাম ১০ কোটি টাকার ও বেশি। আকাশে ঊড়তে পারে- যে কোন স্থানে নামতে পারে। দেখতে খানিকটা ১০-১৫ বছর আগের বিলুপ্ত সি-এন-জি চালিত ত্রিচক্রযানের মত। সেমিনাররুমে ঢোকার আগে আমি সহ ২৩ জন তরুণ কে একটা রুমে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে মেটা স্ক্যানার দিয়ে আমাকে স্ক্যান করে দেখা হল।

কি দেখল আমি জানিনা। তারপর আমাদের প্রত্যেকের শরীরে কেমন একটা সবুহ টাইপের ঔষধ রিমোট ইঞ্জেক্ট করা হল। সামান্য ব্যাথা পেলাম। কিন্তু শরীর ফুটো না করে ইঞ্জেক্ট আমার ভিষন প্রিয়। আগেকার দিনে নাকি মানুষকে জোড় করে ধরে এক বিশাল সুঁই ফুটিয়ে শরীরে তরল দেয়া হত।

কি সব বোকার দল যে ছিল। ভাবলেই হাসি পায়। তারপর আমরা একে একে প্রবেশ করলাম সেমিনার রুমে। সেমিনার শুরু হবার সাথে সাথে হলগ্রাফিক স্ক্রিনে দেখা গেল ডঃ আকমল কে। উনি এখন আর সেমিনার গুলোতে স্বশরীরে আসেনা- কিন্তু মিনিট খানেক পড়েই দেখতে পেলাম আরেক জন ডঃ আকমল প্রবেশ করলেন।

আমরা সবাই অবাক হলাম। আসলে আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে উনি স্বশরীরে আমাদের সেমিনারে উপস্থিত হলেন। তারপর আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে এক বক্তৃতা দিলেন- আমি বিজ্ঞানের মানুষ না-তাই কিছু কিছু বুঝলাম। তবে একটা জিনিস বুঝলাম- যে তিনি জিন ট্রান্সপ্লান্ট নিয়ে কোন একটা প্রজেক্টের কথা বললেন। আমি নিজের মান বাঁচাতে মাথা নেড়ে গেলাম যেন অনেক কিছু বুঝেছি।

তারপর আমাদের একটা ডকুমেন্টারি দেখানো হল- মানব কল্যাণে ছোলার গুরুত্ব ও এর অবদান নিয়ে। সব শেষে আমাদের একটা লাঞ্ছ পেক দিল-আমরা সবাই খেলাম। সেখানে অন্যান্য খাবার ছিল কিন্তু ছোলা দিয়ে রান্না করা তিনটা আইটেম ছিল। একটা ও নাম জানিনা। তবে খেতে ভালই ঠেকল।

সেমিনার শেষে ডঃ আকমল সবাইকে অবাক করে দিয়ে গান গাইলেন। উনি যে গান গাইতে পারেন সেটা জানা ছিলনা। তাই সেমিনার শেষে একটা ভাল লাগার অনুভুতি নিয়ে ঘরে ফিরলাম। আজ আর লিখবোনা। শরীর টা ভাল লাগছে না- সারা দিন উত্তেজনার পর এখন নিস্তেজ হয়ে আসছে মন।

আমি গেলাম – ভাল থাকবেন বন্ধুরা। ২৬.০৮.২০২১ সকাল ১০.৩৫ সৈকতের ব্যাক্তিগত ব্লগ- আমি খুব অসুস্থ – আমার জন্য একটু দোয়া করবেন। শরীরটা হটাত করে খারাপ হয়ে গেল। কি যে করি- সারা শরীরে ব্যাথা- হাতে পায়ের গিটে অসহ্য যন্ত্রণা- আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম। কিন্তু ডাক্তার আমাকে এতগুলো টেস্ট করিয়ে ও কিছু বলতে পারলোনা।

তাই সামান্য সিটামল দিয়ে বিদায় করে দিল। ভাবছি ডঃ আকমল এর কাছে যাবো- উনার সেমিনার থেকে আসার পর থেকে আমার এই অবস্থা। সবাই ভাল থাকবেন। বিদায়... ২৮.০৮.২০২১ সকাল ১০.৩৫ সৈকতের ব্যাক্তিগত ব্লগ- ডঃ আকমল খুব ভাল ব্যাবহার করলেন আমার সাথে গতকাল। উনি আমাকে একটা মেডিসিন দিলেন।

আমি সেটা নিতেই প্রায় ৩০ মিনিটের মাথায় ভাল হয়ে গেলাম। জ্বর কমে গেছে। মাথা ব্যাথা ও নেই। দোয়া করবেন আমার জন্য। আমি যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে আপনাদের মাঝে ফিরতে পারি।

বিদায়। । ২৯.০৮.২০২১ সকাল ১০.৩৫ সৈকতের ব্যাক্তিগত ব্লগ- আমার শরীরে এক ধরনের ফোড়ার উৎপন্ন হয়েছে। বুঝতে পারছিনা কেন- ডঃ আকমল এর সাথে মেইলে যোগাযোগ হয়েছিল- উনি বলেছেন আমার সিটামলের প্রভাব। আমাকে খাওয়া দাওয়া কমাতে বলেছেন।

জানিনা কি হবে। ৩০.০৮.২০২১ সকাল ১০.৩৫ সৈকতের ব্যাক্তিগত ব্লগ- এই মাত্র গরম পানি দিয়ে গা থেকে ফোড়া গুলো থেকে পুঁজ বের করলাম। কিন্তু একটা আজব কান্ড ঘটল। আমার বাম হাতের কনুইয়ের কাছে যে ফোড়াটা হয়েছিল সেটা থেকে পুঁজ বের করতে যেতেই একটা ছোট্ট সবুজ দানা বের হল। আমি আরও জোড়ে চাপ দিতে একটা ছোট সবুজ ছোলা বের হল।

আমি প্রচন্ড আতঙ্কের মাঝে আছি। কি হচ্ছে বুঝতে পারছিনা। ২.০৯.২০২১ সকাল ১০.৩৫ সৈকতের ব্যাক্তিগত ব্লগ- আমার সারা শরীরে ছোলা গাছ বেরিয়ে পড়েছে। আমি কোন রকমে ব্যাথা সহ্য করে কয়েকটা তুললাম- কিন্তু রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। আমি ডঃ আকমলের সাথে যোগাযোগ করতেই দুইজন লোক এসে আমাকে পাহাড়া দিতে শুরু করল।

আমার কাছ থেকে আমার পিসি কেড়ে নেয়া হল। আমি আমার মোবাইল ডিভাইস থেকে চুড়ি করে ব্লগ লিখছি। আমার এখানে কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না- ব্লগার ভাইয়েরা আমাকে বাঁচান... ৪.৯.২০২১ সকাল ১০.৩৫ সৈকতের ব্যাক্তিগত ব্লগ- আমাকে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে ওরা- জানি ডঃ আকমলের জন্য এই অবস্থা। আমি বাঁচতে চাই। কিন্তু বেঁচে থেকে ই বা কি হবে? আমার ডান চোখের উপর একটা ছোলা গাছ বেরিয়েছে।

আমি আর আমার চোখ দিয়ে দেখতে পাবোনা। কি দুঃখ...... এতটুকু পড়ার পর হটাত করে ই যেন শেষ হয়ে গেল পেইজ টা। আজ সারাদিন বসে বসে ইন্টারনেট ঘেটে ঘেটে এটা বের করেছে সুদিপ্তা। নিহাল নিখোঁজ হবার পর প্রায় পাগল হতে যাওয়া সুদিপ্তা ওর এক ফেসবুক বন্ধুর কাছে নিহালের এই ব্লগটার খোঁজ পেয়েছে আজ। পড়তে পড়তে চোখদুটো কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে উঠেছে বার বার সুদিপ্তার।

নিহালের সাথে একমাস পড়েই বিয়ের কথা ছিল তার। আজ কি থেকে কি হয়ে গেল। নিহাল নিখোঁজ হয়েছে প্রায় ১ মাস... দুমাস পর একদিন সকালে ঘর থেকে বের হল সুদিপ্তা- আজ ওকে কিছু একটা করতেই হবে। ডঃ আকমলের উপর প্রতিশোধ নিতেই হবে। অর ভালবাসাকে এভাবে মেরে ফেলেছে সে।

আসলে মেরে ফেলেনি- ছোলা মানব নামের একটা বিশাল প্রজেক্ট বানিয়ে ২৪ টা স্যাম্পল হাজির করেছে সবার সামনে- তারপর তাকে আর পায় কে- সারা বিশ্বে এখন ডঃ আকমলের জয়জয়কার। আজ ওকে মেরে ফেলতেই হবে। তাই অনেক কষ্টে দুমাস ধরে লেগে থেকে ডঃ আকমলের কাছ থেকে সময় বের করেছে সে। বেশ সহজেই সে ঢুকে পড়ল আকমলের বাসায়। ওর কাছে থাকা আপয়েনমেন্ট অর্ডার দেখিয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশ করল সে আকমলের বিশাল অট্টালিকায়।

ডঃ আকমল তখন ল্যাবে কাজ করছিল। সামনে রাখা একটা মেয়ের মডেল। হয়ত এবার কোন এক মেয়ের জীবন নিয়ে খেলা শুরু করেছে শয়তান টা। চুপি চুপি ড্রয়িং রুম থেকে বের হয়ে ল্যাবের সামনে এসে ঢুকে পড়ল ডঃ আকমলের ল্যাবে। তারপর পেছন থেকে হাতের ব্যাগটা দিয়ে বাড়ি মারতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ল সে।

তারপর কি করবে বুঝতে না পেরে সাইড টেবিলে রাখা অনেক গুলা ইঞ্জেক্ট থেকে একটা তুলে নিয়ে পুশ করাল আকমলের শরীরে। তারপর আরেকটা টেবিলের ঊপর রাখা কিছু টেস্টটিউব থেকে সবগুলা স্যাম্পল আকমলের মুখের ঊপর ঢেলে দিল। যেটা ঢেলে দিল সেটা জানলে সে মজা পেত অনেক বেশি। কিন্তু সেটা জানার আগেই দৌড়ে ল্যাব থেকে বের হয়ে গেল সে- তারপর রওনা দিল বাসার উদ্দেশ্যে। এক সপ্তাহ পরে- খবরের কাগজ ঊল্টাতেই একটা খবর দেখতে পেল সুদিপ্তা- খবরটা ছিল- ডঃ আকমলের আরেক আবিষ্কার পেয়াজ মানব- বাংলাদেশের উজ্জ্বল নক্ষত্র ডঃ আকমলের নতুন আবিষ্কার পেঁয়াজ মানব আকমলের বাসার ল্যাবে পাওয়া গেছে।

এই পেঁয়াজ মানব কথা বলতে পারেনা। কিন্তু হাঁটতে পারে। আগের বারে ছোলামানব গুলোর মত এবারের পেয়াজ মানব কিন্তু মারা যায়নি। দিব্যি বেঁচে আছে- এব্যাপারে ডঃ আকমলের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি কারন উনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। উনি হয়ত নতুন কোন কিছু আবিষ্কারের আশায় গা ঢাকা দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি...... খবরটা দেখতে দেখতে সুদিপ্তা খাবার টেবিলে রাখা সালাদ থেকে এক টুকরা পেঁয়াজ মুখে দিল। তারপর সজোরে মনের আনন্দে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে লাগলো...... (সমাপ্ত) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.