আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরশিতে প্রিয়দর্শিণী, নারীত্বের অবসাদ, একটি গল্প, গল্পে গল্পে সাম্প্রতিক ব্লগ এবং আমার কিছু কথা!

সত্য একবার বলতে হয়... সত্য বারবার বললে মিথ্যার মত শোনায়... মিথ্যা বারবার বলতে হয়... মিথ্যা বারবার বললে সত্য বলে মনে হয়... মুখবন্ধ: আমি স্বীকার করছি পোস্ট অনেক বড় হয়েছে। পাঠ ও বিশ্লেষণ সময়সাপেক্ষ। তবে লেখার প্রয়োজন আর পটভূমি এতটাই বিস্তৃত যে ওটুকুর খাতিরেই বড় হয়ে গেল। তাই প্রথমেই আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আরশিতে প্রিয়দর্শিণী: মাঝে মাঝে ভেবে গর্বিত হই যে আমি একজন নারী।

কারন আমার মাঝে আছে আবেগ, অনুভূতি আর বিবেকের মেলবন্দ্ধন। প্রেমিকারূপে আমিই তো তাবৎ সৌন্দর্য্যের প্রতীক। সহধর্মিণী হয়ে তোমাদের কারো কারো জন্য আমি বেঁচে থাকার প্রেরণা। মাতৃসম হয়ে সম্মান প্রদর্শণ কিংবা প্রতিবাদের বিষয়বস্তু। আমার মাঝে খুঁজে পাবে নদীর মত ছুটে চলা কিংবা পাখির মত ডানা মেলা।

আমি সেটা দিয়ে জয় করব তোমাদের এই বিশ্বকে। আমি তোমাদের হাসতে, ভালোবাসতে শেখাবো। আমার ভালোবাসা ভেসে চলা নদীর মত। আমার ফুটে ওঠা ফুলের মত!! আমি সর্বেসর্বা আমিই তো তোমাদের অন্নপূর্ণা!! আরশিতে তাকিয়ে আমার এই ভাবনা। হঠাৎ অট্টহাসিতে আমার ফেটে পড়া!! হাহা হাহা হাহ্!!!! অন্নপূর্ণা? নিজের ছেলে ভোলানো ভাবনায় নিজেকেই হাসির খোরাক হতে হল! কেন জানতে চাও? জানতে চাও তোমরা আমার এই হাসির কারন? তবে তোমাদের বলছি শোন... নারীত্বের অবসাদ: এই তোমাদেরই কারনে 'নারী' শব্দটা আজ আমার কাছে এত বিষাদ, এত অবসাদগ্রস্থ লাগে।

তোমরা আমাকে আমার গর্বের জায়গাটাতে গিয়েই পদে পদে আঘাত কর। কেননা তোমাদের সাথে পায়ে চলার পথে আমার দেখা পেয়ে যখন অশ্লীল আচরণ কর কিংবা কুৎসিত বাক্যবানে জর্জরিত কর তখন আমাকে মাঝে মাঝে হয়ে যেতে হয় মেরুদন্ডহীন। কিংবা সন্ধ্যা হলে গুপচি গলিটুকু পার হতে গিয়ে আমাকে হতে হয় ভীত হরিনী। কেননা ওৎ পেতে থাকা বাঘেরা জানে আমি নারী। আমি জানি আমার প্রতিবাদকে তোমরা উপেক্ষা করবে।

আমার সম্মানকে জলাঞ্জলি দেবে । তখন আমাকে সার্কাস ভেবে দশজনের হা করে চেয়ে থাকার বদান্যতায় আড়ষ্ট আমি। কেননা, আমি নারী। আবার আমি যখন পেটের দায়ে তোমাদের দ্বারগ্রস্থ সামান্য এক ঝি, তখনও আমি তোমাদের রক্তলোলুপ চোখের শিকার। সেখানে ইতর শ্রেনীর অবাঞ্ছিত একজন হয়েও আমি নারী।

ভালোবাসার মানুষের সাথে কাটানো সময়ে শরীরের কত টুকিটাকি লোভ। তাকে শাসনের দায়ভার কেবলি আমার। কেননা আমি নারী। একজন পতিতা হয়েও আমার ছুটি মেলেনা। তোমাদের সব মুখরোচক রসালো কথার খোরাক যোগায় আমার জীবনের সবচে' বড় বেদনা।

লোক-চোক্ষুর অন্তরালে থেকেও আমি আছি নোংরা মানসের চিন্তায়-চেতনায়, অস্তিত্বে। আমি ভুলতে পারিনা আমি নারী। নারীত্বের এই অবসাদ থেকে আমার মুক্তি মেলে না। এভাবে জন্মের পর থেকেই আমাকে পদে পদে মরতে হয়। এক জীবনে আমি আর কত মরণ মরব বলতে পারো? চিল, কাক, শকুনেরা আমার যখন বসন্ত থাকে তোরা কেন কোকিল সাজিস? জানি, কারন একটাই; আমার নারীত্ব।

তোমাদের মন খারাপ করে দিলাম? গল্প শুনবে?? এই গল্পেও তোমরা আমার নারীত্বের অবসাদকে খুঁজে পাবে। একটি ছোট গল্প: সুমন ছোটবেলা থেকেই একটা বন্ধুর পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। ছেলেটা বেশ নি:স্সঙ্গ। পড়াশুনার বাইরে সারাদিন নেটে পড়ে থাকে। ফেইসবুকে বসে বসে সুন্দরী মেয়েদের এ্যাড রিকোয়েস্ট পাঠায়।

কেউ রিজেক্ট করলে তাকে অপমানজনক মেসেজ পাঠায়। মাঝে মাঝে মেজাজের ওপর নির্ভর করে সেগুলো হয় চরম অশ্লীল। ইদানিং ব্লগেও বেশ জমে। "তৃতীয় মাত্রা" ব্লগটায় ওর অনেকগুলো নিক আছে। ভার্চুয়াল লাইফের 'ব্লগ' বিষয়টা বেশ ভালো লাগে ওর।

অনেকটা ডায়েরির মত। যা খুশি লিখে ফেলা যায়। আর ভালো লাগাটাও একটু অন্যরকম। কারন এখানে সহব্লগারদের ভালো কিংবা মন্দ লাগার বিষয়টা খুব দ্রুত জেনে নেয়া যায়। আর সেই সাথে যদি বিপরীত লিঙ্গের কারো সাহচার্য বা প্রশস্তিসূচক মন্তব্য পেলে তো আহ্‌লাদে আটখানা হওয়া! কিন্তু দুখ:জনক হলেও সত্য যে ব্লগে কেন যেন তার পোস্টে কারো খুব একটা মন্তব্য বা ভালো লাগা নেই।

ভিজিটরও অনেক কম। অথচ নতুন হোক আর পুরনো, ভালো হোক আর মন্দ, নারী ব্লগারদের পোস্টে কত হিট। হঠাৎ করেই রাগে জ্বলতে থাকে সুমন। মোবাইলের কন্টাক্ট লিস্ট থেকে সোহেলের নাম্বারটা খুঁজে নিয়ে ডায়াল করে......... - হ্যালো দোস্ত -দোস্ত তোর একটা হেল্প লাগব -কি হেল্প?? -একটা প্ল্যান আছে সুমন তার বন্ধু সোহেলকে প্ল্যানটা বুঝিয়ে দিতে লাগল। ব্লগে এক মেয়ে আসছে।

বেশ এলিট। ওরে একটু টিজ করা হবে যাতে ব্লগিংয়ের ভূত মাথা থেকে নামে। তার বন্ধু বলল এতে তোর কি লাভ? আরে বোকা!! লাভ কিছু না। টিজিং তো একটা মজা!! বেশি কিছু করব না তো। শুধু ভদ্র ভাষায় একটা চুলকানি পোস্ট দিব।

বাকিটা এলার্জির কাজ। আমার চুলকাইতে হবে না। আপন গতিতেই চুলকানি উঠে যাবে। মাইয়া যদি স্ট্রং হয় তাইলে টিকে যাবে। সে নিজের গতিতে চলবে।

আর যদি উয়িক হয় তাইলে কাহিনী খতম। মানে এটা এক ধরনের টেস্টও বলতে পারিস। আর যদি কোন ব্লগার ডিফেন্ড করতে আসে তাইলে?? তাইলে ওরে ধইরা লুল ট্যাগ লাগায়ে দিব! ব্যাস!! হুম। আমি কি করব? কলকাঠি যা নাড়ার আমিই নাড়ব। তোর কাজ হল শুধু তোর নিজের আর বন্ধুদের রিয়েল আর মাল্টি নিকগুলো থেকে আমারে সাপোর্ট দিবি।

আর মাইয়া বেশি চিল্লা-পাল্লা করলে ছাগু/ভাদা ট্যাগ দিয়া দিব। তাইলে এটা নিয়া কেউ আর বেশি ঘাটাতে আসবে না। ব্যাস!!সবাই মিলে সাপোর্ট দিলে সুশীল ব্লগাররাও দূরে থাকবে। মাঝখান দিয়া আমরা হিট খামু। দোস্ত মজাই মজা!! সেইরকম প্ল্যানতো! প্রথম প্রথম ওরা মেয়েদের টিজ করত।

পরে মেল-ব্লগারদেরও টিজ করা শুরু করল। যাকে খুশি তাকে কোন একটা লঘু পাপ ধরে নিয়ে গুরু দন্ড দিয়ে দেওয়াটা ধীরে ধীরে একটা সিস্টেমে পরিণত হতে লাগল। যারা ব্লগের মায়া ছাড়তে না পেরে ধোপে টিকতে পারল তারা রয়ে গেল। কিন্তু অধিকাংশ ব্লগারই ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের কিছু অপরিচিত মানুষের সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়ানোর চেয়ে ব্লগ ছেড়ে চলে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করলেন। এভাবে ব্লগটা সুমনদের মত কিছু মানুষের বাপ-দাদার সম্পত্তিতে পরিণত হতে লাগল।

তারা নিজেদেরকে ব্লগের বাদশাহ্ মনে করে। যাকে যখন খুশি ব্লগ থেকে বের করে দেবার ক্ষমতা রাখে। আর সুশীলরা ভাবেন, ভাই আমি তো ব্লগটাকে একটা বিনোদনের মাধ্যম মনে করি। এখানে আসি একটুখানি আনন্দের জন্য। এটা কোন ব্যাপার নয়।

আমাদের চোখ আছে। তারপরও আমরা অন্ধ সেজে বসে থাকব। আমাদের অত-শত ঝামেলা নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। কেননা আমরা সুশীল। যে সব কিছুর মাঝে টিকে থাকতে শিখবে সে থাকবে, যে পারবে না তাকে চলে যেতে হবে।

লাইফটাই হল "সারভাইভাল অব দি ফিটেস্ট"। এভাবেই সময় বয়ে যেতে লাগল। ওমা! হাসছ তোমরা? এটা একটা নিছক একটা গল্প সেজন্যই কি হাসিতে ফেটে পড়া? আচ্ছা তাহলে বাস্তব আর গল্পের মাঝে যদি সেতু-বন্ধন তৈরি করে দেই তাহলে হাসি থামবে তো? শোন তাহলে...এবার সত্যি করেই বলছি! সাম্প্রতিক কালে ব্লগের কিছু টুকরো ঘটনা: ঘটনা-১: আচ্ছা...দূরদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটার কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় তোমার কেমন লাগবে? চোখের পানিতে ঐ মেয়েটার কিন্তু গাল ভেসে গিয়েছিল। প্রিয় ক্যাম্পাসটাতে হয়ত আর ফিরে আসা হবে না। বিদেশ বিভুঁইয়ে হয়ে সব কিছু ছেড়ে চলে যাচ্ছিল সে সময় আসলেই বুঝতে পারেনি একা থাকতে কতটা কষ্ট হবে।

সবাইকে ছেড়ে অনেক দূরে থাকার কষ্টটা বোধ হয় কাউকে বোঝানোর মত নয়। তার উপর যদি হয় নিজেই আয় করে নিজেকে চালানোর টেনশন তাহলে তো কথাই নেই। খুব বেশী বয়স না হতেই কেমন যেন বুড়ো হয়ে যাওয়া। ছোট থেকে বুদ্ধি হওয়া পর্যন্ত যাদের সাথে থাকা সেই সব প্রিয় মানুষদের থেকে অনেক দূরে থাকার কষ্টটা দিন রাত কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। নিজের ভাষায় না লিখতে পারা, বাংলা বলতে না পারাটাও যে তো অনেক বড় একটা যন্ত্রণা! এই ভয়াবহ নিঃসঙ্গতা থেকে বের হবার জন্য মেয়েটা নিজের পরিচয় লুকিয়ে ব্লগে একটা আইডি খুলে নিজের মনের এলোমেলো ভাবনাগুলো লিখতে শুরু করল।

বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজে মনের সব বাঁধ ভেঙ্গে গেল। ছোটখাটো সব কথা লিখে রাখতো। কেউ পড়বে তার জন্য নয় বরং নিজের ভাষায় কথা বলতে না পারার যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবার জন্য। ব্লগে ভার্চুয়াল জগতের অনেক মানুষের সাথেই অনেক আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে মেয়েটির। হয়ত তোমার সাথেও ছিল তার আন্তরিকতার সম্পর্ক।

তোমরা সবাই লেখা পড়ে এতো আপন করে নিয়েছ দেখে তার মধ্যে একটা ভালো লাগা তৈরি হল। এই পথ পরিক্রমায় অনেক আপু ভাইয়াদের সাথে পরিচয় হয়েছে। সেই সব ভাইয়া আপুরা এতো ভালো যে আপন মানুষ হয়ে সব সময় পাশে থেকেছেন। হয়ত তুমিও থেকেছ। অনেকেই বলে ব্লগ খারাপ।

কিন্তু মেয়েটা ভাবতেই পারে না সাহিত্য চর্চার জায়গাটা খারাপ হয় কেমন করে? খুব মমতা নিয়ে একটা লেখা দিল সে। যারা পড়েছে তারা সবাই সেই মমতা উপলব্ধি করতে পেরেছে। সেই লেখাতে একজন সহ-ব্লগার এমন একটা মন্তব্য করলেন যে রীতিমত সবাই আশ্চর্য হল। শুধু বাজে একটা কমেন্ট করেই শান্ত হল না, সাথে সাথে ঐ আপুর লেখার অংশ কপি করে ব্লগে একটা পোষ্ট দিয়ে দিলেন। মেয়েটা আপুদের সাথে যেই আন্তরিকতা নিয়ে কথা বলে, সেটা দেখলে নাকি তার রাগে ঐ মেয়েকে স্যান্ডেল দিয়ে পেটাতে ইচ্ছা করে? আরো অনেক বাজে ভাবে মেয়েটা কে ছোট করে লেখা ঐ ব্লগে ব্লগারের মত মানসিকতা সম্পন্ন আরো কিছু মানুষ এসে অনেক নোংরা মন্তব্য করে গেল।

কিন্তু তুমিই বল এটা কেমন কথা হল? একজন মানুষ কেমন করে লিখবে কেমন করে কমেন্ট করবে সেটা তার এবং যার ব্লগে গিয়ে সে লিখছে সেটা তো তার বা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার হওয়া উচিত। তাই না? তাহলে অন্য কারো কিসের দায় পড়েছে তাকে নিয়ে ব্লগে পোষ্ট দেবার? এমন ঘটনা একটা না। আরো আছে! আমি তোমাকে বলি। তুমি কান পেতে শোন। ঘটনা-২ একটা ছোট্ট মেয়ে, যে কিনা মাত্র কলেজ শেষ করতে যাচ্ছে।

যার লিখতে খুব ভালো লাগে। যখন যা মনে আসে তাই লিখে ফেলে। পড়তে ভালো লাগছে না, আমার মন খারাপ, আমার আঁকা ছবিগুলো, এমন যা-ইচ্ছা টাইপের অনেক অনেক পোষ্ট। খুব সহজ ভাষায় লেখা মনের কথাগুলো পড়তে তোমারো ভাল লাগতো। ছেলে মানুষীতে ভরা লেখাগুলো আন্তরিকতার সাথে সবাই পড়তো আর অসাধারণ আঁকা ছবিগুলো দেখে মুগ্ধ হতে হত।

যেই কেউ যে কোন একজন ব্লগার কে পছন্দ করতেই পারেন। তার লেখা, তার মন্তব্য ভালো লাগতেই পারে। সেই ভালো লাগার কথা তার ব্লগ-বাড়িতে গিয়ে বলেও আসা যায়। কিন্তু ভালো লাগার কথাটা নিজের ব্লগে পোষ্ট দিয়ে জানানো মানে সেই ছোট্ট মেয়েটাকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দেয়া। একজন ব্লগারের এই ছোট মেয়েটা কে এতোই বেশি ভালো লেগে গেল যে সে তাকে নিয়ে মুভি রিভিউ এর মত ব্লগার রিভিউ বানিয়ে ছেড়ে দিল।

এই কাজে শুধুমাত্র এই ব্লগার নিজেই হাসির পাত্র হননি, সেই সঙ্গে মেয়েটিকেও হাসির পাত্র করেছেন। তিনি যা করতে চেয়েছেন তা তার মন মত হলো না দেখে এই মেয়েটি কে নিয়ে সারা দিনে অসংখ্য পোষ্ট দিয়ে যেতে থাকলেন। মেয়েটার নাম দিয়ে দিয়ে লিখেছেন এই গানটা তোমার জন্য, এই ছবিটা তোমার জন্য কিংবা এই ফুলটা তোমার জন্য! তুমি কি ভার্চুয়াল টিজিংয়ের ব্যাপারে জান? দেখেছ কখনো? একেই বোধহয় বলে ভার্চুয়ালি মেয়ে নিকের ইভ-টিজিং! বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজে টিজিং এর বাঁধ ভেঙ্গে গেল। আমি, তুমি এবং আমরা চেয়ে চেয়ে দেখলাম। ঘটনা-৩: এই আপুর কত না লেখা তুমি আমি প্রিয়তে নিয়েছি।

কত না লেখা বারে বারে ঘুরে ফিরে পড়েছি। কারন আপুর লেখায় আমরা যে সারল্য খুঁজে পেয়েছি, তা খুব কম ব্লগারের লেখায়ই আছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপু তার সারল্যে ভরা লেখা দিয়ে আমাদের কাছে একজন প্রিয় ব্লগার হয়ে উঠলেন। আর সেটাই আপুর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। আপুর অসম্ভম মিষ্টি একটা পোস্টকে কিছু মানুষ তামাশা বানিয়ে রেখে দিল।

সম্ভবত নারী ব্লগার বলেই সেটা সম্ভব হয়েছিল। তারপর একজন ব্লগার তো তাকে ফেইসবুকে কেন এ্যাড করা হল না এবং এতে তার যে বিশেষ অনুভূতি হল সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে একটা ব্লগ দিয়ে বসলেন। যেখানে মাল্টি নিকের আশ্রয় নিয়ে আপুকে আর আপুর সমর্থকদের তামাশা বানিয়ে রাখা হল। ব্যক্তিগত ক্ষোভের মুখে ব্লগ ভাসল। এটা কোন ধরনের ভদ্রতা? ওহ! এটা তো বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ।

তাই এক ভাবে না হোক, অন্য ভাবে বাঁধ তো ভাঙ্গবেই। আর সেই আওয়াজের সুরে ব্লগ ভাসবেই। ঘটনা-৪: এই আপুকে তো আমরা সবাই চিনি। আপু আমাদের সবার সাথে কত আন্তরিক। আপু সবার ব্লগ বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নেন।

আমি তুমি আমরা সবাই কম বেশি আপুর ফ্যান। কারন আপু একজন কর্পোরেট লেডি হয়েও ঠিকই নিজের জন্য আলাদা সময় বের করে আমাদের কাছে চলে আসেন। আপুর নানা জানা অজানা অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন। আপু একবার তার দেশি ভাষায় একটা গল্প পোস্ট দিলেন। তুমি আমি আমরা সবাই খুব মজা করে পড়লাম।

অথচ হামবড়া একজন ব্লগার এলেন। তিনি আপুকে খুবই অবজেকশনেবল ভাষায় সম্বোধনপূর্বক অনতিবিলম্বে পোস্ট মুছে ফেলার জন্য বললেন। নিজের শেকড় আর সংস্কৃতির টানে দেয়া পোস্টও কারো কারো কাছে তিতকুটে লাগে যদি সেটা কোন আপুর দেয়া পোস্ট হয়! এবার বল বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজে আমি আমরা কিভাবে বাঁধ ভাঙ্গছি আর তুমি তোমরা কিভাবে ভাঙ্গছ? ঘটনা-৫ ঐ আপুটাকে চেন? যে কিছু না বুঝেই ব্লগে চলে এসেছিল? আপুর পরিচয় দেয়ার মত তেমন কোন মৌলিক লেখা নেই। কারন সেই সুযোগটাও তাকে দেয়া হয়নি। তবে আপু একজন পাঠক।

সব রকমের পোস্ট পড়ার চেষ্টা করেন। কিছুদিনের মধ্যেই ব্লগে মেয়েটা বেশ মজা পেয়ে যায়। অনেকের সাথে চেনা জানা হতে থাকে। ব্লগের অনেকেই তাকে ফেইসবুকে ভার্চু্য়াল বন্ধুতার হাত বাড়িয়ে দেয়। কিছু সিনিয়র ব্লগার নিষেধ করেছিলেন পার্স্যন্যাল একাউন্টে ব্লগারদের হুট-হাট করে এ্যাড না করার জন্য।

আপুর মনে কোন মার-প্যাঁচ ছিল না। আর তাই না বুঝেই আপন মনে করে একে একে ব্লগারদের বাড়ানো বন্ধুতার হাত ধরে ফেলেন। বেশি আন্তরিকতা দেখানো যে ভাল না, সেটা খুব শীঘ্রই হাড়ে হাড়ে টের পেলেন। একজন ব্লগার ফেইসবুকের কিছু বিষয়ের জের ধরে আপুর নামে পোস্ট দিয়ে বসেন। যেখানে অন্যরাও পুরো ব্যাপারটায় ব্লগারকে আহা! সাধু সাধু বলে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন।

আপু তার কিছুই জানতেন না। খোঁচা দিয়ে সেটাও জানানোর চেষ্টা করা হয়। নানা ভাবে আপুর পোস্টে, ফেইসবুকে আক্রমণাত্মক মন্তব্যে জর্জরিত করা হয়। আমাকে কি বলতে পারো এভাবে কাউকে গায়ে পড়ে আক্রমণ করা কোন দেশি ভদ্রতার সংজ্ঞায় পড়ে? ওহ! ভুলে গেছি এটা তো বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজের আসর। আসর গরম করতে ওরকম দু চারটা ব্লগ না দিলে কি সাধু হওয়া যায়? নিজেকে সচেতন দেশ প্রেমিক আর আবেগী প্রমাণ করা যায়? ঘটনা-৬: আচ্ছা! তুমি যখন সাম্প্রতিক মন্তব্যে কোন নতুন মন্তব্য দেখ তখন তোমার কেমন লাগে? খুশিতে প্রাণটা ধিন-তা-ধিন নেচে ওঠে না? আমি জানি, কারো কারো মন্তব্য তোমার কাছে একটা উৎসাহের মত করে কাজ করে।

যদি তা না হত, তাহলে ব্লগে আমরা শুধুই লিখতামই। মন্তব্য করে নিজের ভালো লাগা বা না-লাগার ব্যাপারটা অন্যকে জানাতাম না। তুমি কি জান, একটা আপু যত না বেশী লিখতেন তার চেয়ে অন্যদের লেখা পড়তেই অনেক বেশী পছন্দ করতেন? সবার লেখা পড়তেন আর উৎসাহ দেয়ার জন্য অনেক অনেক মন্তব্য করতেন। আপু কে সবাই চেনেন এবং পছন্দও করেন। হয়ত তুমিও কর।

একজন ছেলে ব্লগারও হয়ত এতটা জনপ্রিয় হতে পারেন নি যতটা না আপু ছিলেন। এটা অনেকেরই চোখের কাঁটা হয়ে গেল। ব্লগে আপু সারাদিনে কতগুলো মন্তব্য করেন এই পরিসংখ্যান নিয়ে একজন তো রীতিমত স্ক্রিন-শর্ট নিয়ে পোষ্ট দিয়ে দিলেন। তার মতে আপু নাকি মন্তব্য করেন কোন গঠনমূলক সমালোচনা ছাড়াই আর সেগুলোর অধিকাংশ নাকি লেখা না পড়েই! আমার কথা হল একজন মানুষ লেখা পড়ে মন্তব্য করছেন, নাকি না পড়ে করছেন সেটা অন্য একজন তৃতীয় ব্লগার যার সাথে সেই লেখার বা লেখকের কোন সম্পর্ক নেই, সেটা কি তার দেখার বিষয়? তুমি বলবে ব্লগ তো সবার জন্য খোলা। খোলা চিঠির মত সবাই পড়ে।

আমিও আমার বক্তব্য সবাইকে জানাতে পারি। এটা আমার বাধ ভাঙ্গার আওয়াজ। তুমি কেন কেড়ে নিতে চাও? ঠিক আছে তুমি তোমার মূল্যবান বক্তব্য জানাতে চাও। ভাল কথা। কিন্তু তাই বলে এভাবে? ব্লগে পোস্ট দিয়ে? ব্লগে পোস্ট দেয়ার বিষয়বস্তুর কি এতই অভাব পড়ল? নাকি এভাবে একজন মেয়েকে নাজেহাল করটা সবচেয়ে সহজ?? এই জন্যেই কি এই সব বিষয় নিয়ে পোষ্ট দেয়া? তুমি কি বুঝতে পারছ আপুর মানসিক অবস্থা? আমাকে উত্তর দাও? বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজে আমরা এ কোন ভাবে আওয়াজের বাঁধ ভাঙ্গলাম তুমি বলতে পারো? আমরা কি চাইলে আরেকটু সহনশীল হতে পারতাম না? পরিশেষে আমার কিছু কথা: একটা মেয়ে যখন ভালো লিখতে শুরু করে তখন কিছু অসহনশীল মানুষেরা তাকে টার্গেট করে ফেলে।

কেউ পজিটিভলি টার্গেটেড কেউ বা নেগেটিভলি। তাকে তাড়ানোর জন্য যতভাবে সম্ভব বিরক্ত করা হয়। ভালো সম্পর্কের জের ধরে যদি কাউকে ব্লগ থেকে ফেসবুকে এ্যাড করা হয় কিছু মানুষ সেই ফেসবুকের স্ক্রিন শর্ট নিয়েও পোষ্ট দিয়ে দেয়। ফোন নাম্বার নিয়ে ব্লগে ছড়িয়ে দেয়। ছবি কপি করে সেই ছবি দিয়ে ব্লগের হিট বাড়ানোর মত নোংরা কাজ করে।

এভাবে যতভাবে সম্ভব তাকে ভার্চুয়ালি টিজ, কালে-ভদ্রে ভার্চুয়ালি তার ইমেজকে রেপ করা হয়। তাদের মানসিকতা দেখে কিছু মানুষ সাধু সাধু বলে বন্য উল্লাসে করতালিতে ফেটে পড়ে। তখন মেয়েটির মনের অবস্থা কি হয়? 'সামহোয়্যার-ইন ব্লগ' বাঁধ-ভাঙ্গার আওয়াজে সবারই মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। যে কেউই তার মতামত জানাবে। সেটা কোন সমস্যা নয়।

সমস্যা হল মতামত জানানোর 'ভাষা' ও 'উপায়'। ব্লগ পোস্ট কেন সেই উপায় হবে? আক্রমণাত্মক মন্তব্য, ক্ষেত্র বিশেষে গালোগালাজ কেন তার ভাষা হবে? আমি জানি এই লেখার কারনে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে আমাকেও নাজেহাল হতে হবে। কিন্তু এটা ভেবে কি আমি, আমরা চুপ করে থাকব? কাউকে না কাউকে তো শুরু করতেই হবে! বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজে আমরা কি পারি না মনের সব বাঁধ ভেঙ্গে ফেলে ঐ সকল মানুষকে উৎসাহ না দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় একটা অবস্থান তৈরি করতে? আমরা কি পারি না সামহোয়্যারইন-ব্লগ কে সত্যিকারের বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজের একটা প্ল্যাটফর্মে হিসেবে রূপান্তর করতে? কৃতজ্ঞতা স্বীকার: এই পোস্টটি আমি আমার সমস্ত নারী সহব্লগারের নামে উৎসর্গ করলাম। এতো বড় একটা ব্যাপার আমার একার পক্ষে কখনো একসাথে ব্লগ-বন্দি করা সম্ভব হত না যদি না সহব্লগারদের (শুকনা মরিচাপু,নষ্টছেলে, ইষ্টিকুটুমাপু, সরলতা, জেরীপুর) উৎসাহ ও সহযোগিতা না পেতাম। আর মেঘ_মেঘাপু তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য ও প্রেরণা দেয়ার জন্য।

সবাইকেই আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।