আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রূপকথায় প্রতিচ্ছবি

এই ব্লগের কোন লেখা আমার অনুমতি ব্যতীত কোথাও ব্যবহার না করার অনুরোধ করছি অনেক বছর আগে পৃথিবীর কিছু একর জমির উপর স্বাধীনতা লাভ করেছিল ছোট্ট একটি দেশ। সেই দেশে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল সম্রাটের। সম্রাটের খুবই অনুগত একটা মন্ত্রীপরিষদ ছিল। সেই পরিষদে, প্রধানমন্ত্রী, উপ-প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী সব ধরণের মন্ত্রীই ছিলেন। দেশের প্রজাগণ সম্রাট ও তাঁর মন্ত্রীদের দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।

মন্ত্রীগণ নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে বসে চুরি করতেন জনগণের পরিশ্রমের ফসল। দেশ গরিব হচ্ছিল, কিন্তু রাজকোষ ফুলেফেঁপে উঠছিল প্রতিনিয়ত। প্রজাগণ খাজনা দিত, মন্ত্রীগণ খাজনা গ্রহণ করেই অস্বীকার করতেন, প্রজা খাজনা দেয়নি বলে। প্রতিবাদ করার মতো কেউ ছিল না। যাঁরা ছিল, তাঁরা চুপ করে থাকত।

প্রজাদের ভেতর যারা একটু অবস্থাসম্পন্ন ছিল তারা মন্ত্রীবর্গের সুনজর পেতে খাজনার সাথে সাথে যথেষ্ট পরিমাণে চাটুকারিতাও প্রদান করত। মন্ত্রীবর্গও ঐ ধরণের মোসাহেবী প্রজাদের পছন্দ করতেন। সম্রাটের এসব নিয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না, সম্রাট মগ্ন ছিলেন বহির্বিশ্বের সাহায্য সংগ্রহ করে তা ভোগ করতে। সম্রাট প্রায়শই শিকারে বেরুতেন, তাঁর বাহন ছিল চকচকে কালো তাগড়া একটা ঘোড়া। সম্রাটের শখ ছিল শিকার করা আর দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করা।

মূলত মন্ত্রীবর্গই দেশ পরিচালনা করতেন, আর এদিকে চাটুকরের দল কুমন্ত্রণা দিত মন্ত্রীবর্গকে, তাই প্রজারা সর্বদা চাটুকারদের ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকত। চাটুকাররা এর সুযোগ নেয়া শুরু করে একসময়। তারা নিজেরা খাজনা দেয়া বন্ধ করে দেয়, তাদের খাজনাও সাধারণ প্রজাদের দিয়ে দিতে হত। সাধারণ প্রজারা একসময় মন্ত্রীবর্গের কাছে প্রতিবাদ জানানো শুরু করল, কিন্তু তাতে করে নিজেদের কয়েকজনকে শূলে চড়ানো ছাড়া অন্য কোন লাভ তারা পেল না। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত ছিলেন না, তবে তাঁরা মেরুদন্ডহীন ছিলেন।

নিজেরা সৎ থাকার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করলেও তাঁরা মূলত ধীরে ধীরে অন্য সবার মতোই হয়ে যেতেন। দেশটির ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সহসা সেখানে কেউ মারা যেত না, সবাই দীর্ঘজীবি ছিল। সম্রাটের বয়স ছিল দেড়শ বছর প্রায়, আর সচরাচর দেশটির কোন মানুষ একঘেঁয়েমিতে আক্রান্ত হতো না, বিয়েও করতো না। এহেন অত্যাচার আর দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত জনপদে দরিদ্র কৃষক প্রজার ঘরে একদিন জন্ম নিল এক বালক, তাঁর জন্মের সাথে সাথে আলোকিত হয়ে উঠল দেশটির আকাশ, রাত শেষ হয়ে এল এক প্রহর আগে, বিস্মিত জনগণ পথে নেমে এল কী হয়েছে জানতে। আকাশে বাতাসে আলোড়ন উঠল না খুব একটা, কেবল মন্ত্রীপরিষদ হঠাৎ করেই বিপুল বিষণ্নতা অনুভব করলেন।

সম্রাট ঘুমের মাঝেই চিৎকার করে জেগে উঠলেন। সবাই ছুটে এল দরিদ্র কৃষকের কুঁড়েঘরে, আলোকিত বালকের ঔজ্জ্বল্যে তাঁরা বিমোহিত হয়ে গেল। বালকটিকে দেখে দেশটির রাজজ্যোতিষী মন্তব্য করলেন- এই বালক সম্রাটের জন্য বয়ে এনেছে ভয়াবহ দুঃসংবাদ, তবে একে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। সম্রাট চিন্তিত হয়ে তলব করলেন রাজ-জল্লাদকে, জল্লাদকে হুকুম করা হল আলোকিত বালককে হত্যা করতে। জল্লাদ বালককে হত্যা করার সম্ভাব্য সকল চেষ্টাই করল, কিন্তু ব্যর্থ হল।

অবশেষে জল্লাদ উপায়ান্তর না পেয়ে আলোকিত বালককে একটা অন্ধকূপে ফেলে রেখে সম্রাটকে গিয়ে কুর্ণিশ করল- আলোকিত বালকের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশের মানুষ ভয়ে আবার কেঁপে উঠল, কিন্তু সম্রাট ও মন্ত্রীবর্গ খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেলেন। এদিকে আলোকিত বালক খুব দ্রুত উঠে এল অন্ধকূপের পিচ্ছিল দেয়াল বেয়ে, গ্রামের অদূরে খেলতে থাকা শিশুদের দলে ভিড়ে গেল খুব সহজেই। এরপর ধীরে ধীরে পাঠশালার পাঠ চুকিয়ে, আলোকিত বালক দেশের একমাত্র নিষিদ্ধ ঘোষিত, বিদ্যাশ্রমের বিদ্যার্থী হিসেবে গোপনে প্রবেশ করল। নিশিদিন, বছরের পর বছর, কত ঋতু এল, কত ঋতু গেল, আলোকিত বালক নিজের লক্ষ্যচ্যুত হল না কিছুতেই।

শিক্ষকহীন আলোকিত বালক ধ্যানমগ্ন হয়ে জ্ঞান আহরণে ব্যস্ত রইল দীর্ঘ অনেক বছর, এদিকে সম্রাট ও তাঁর মন্ত্রীবর্গ গ্রাস করে নিলেন সমগ্র রাষ্ট্র, তিক্ত হয়ে উঠল দেশের মানুষ, মন্ত্রণালয়গুলোতে এবং দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়োগ দেয়া হতে লাগল মেধাহীন চাটুকারদের ও তাদের আত্নীয়দের, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হল সমগ্র দেশ জুড়ে। বন্ধুহীন, নিঃসঙ্গ নিঃস্বার্থ আলোকিত বালক কি পারবে সম্পূর্ণ একা এই অন্ধকার রাষ্ট্রে সুস্থতার শিখা জ্বালাতে? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।