আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাস্ট ডেইট

আমি আমার আনন্দে লিখি!!! হাঁ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে কবির যেন সেখানে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া আছে। আসলে সে ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারছে না সে কী করবে? তার কি করা উচিত! সুরভী ফোন দিয়েছিল একটু আগে, সুরভীর বিয়ে সামনের সপ্তাহে, সব কিছু ঠিকঠাক, কলেমা পড়াতে যা বাকি। নাহ, সে আর সুরভী দীর্ঘদিনের কোন প্রেমিক প্রেমিকা নয়, তারা বরং বেশ ভাল পরিচিত দুই বন্ধু। ফাল্গুনের আকাশে সানলাইট বাল্বের মত জ্বলজ্বল সূর্য, বেশীক্ষন এক নাগাড়ে তাকিয়ে থাকা দায়- সেটা যতখানি শকিং নিউজই হোক না কেন! মাথা নামায়ে একটা সিগারেট ধরায় কবির, আনমনে ভাবে সুরভীর কথা, সুরভীর হাসিটা বড্ড মনে পড়ে এবং সেই সাথে মুখের ভেতরটা ক্যামন যেন তেতো লাগে। সুরভীর সাথে তেমন কোন স্মৃতি নেই, তারা বার তিনেক দেখা করেছে, ফোনে কথা হয়েছে বেশীরভাগ সময়।

কবির কি সুরভী কে ভালবাসে? আনমনে নিজেকে নিজেই শুধোয় কবির? জবাবের বদলে বুকের ভেতর একয়টা চিনচিনে ব্যাথা বেশ বুঝতে পারে কবির-সে ব্যাথা যে সুরভীর জন্য সেটা বুঝতে প্রেমিক হতে হয়না। আদতে সুরভীকে সে মনের কথা ইশারায় বহুবার বোঝাতে চেয়েছে, সরাসরি বলার মত সাহসী পুরুষ হয়ে উঠেনি কবির, সেই সাথে কবিরের মনে ছিল সুরভী কে হারানোর ভয়, যদি প্রত্যাখানে বন্ধুত্বটাও নস্ট হয়ে যায়! তবে সে এটুকু বেশ বুঝতে পারে- সুরভী যতক্ষন তার আশপাশে থাকে ঘড়ির কাটা খুব দ্রুত ঘুরতে থাকে, শেষ বিকেলটা কখন সন্ধ্যা হয় টের পায়না কবির। বেইলী রোডের বেইলী স্টারের বুমার্সে প্রথম দেখা হয় সুরভী-আর কবিরের, শেষ দেখাও সেই বেইলী রোডেই হয়। ককটেল বিস্ফোরনের দায় থেকে ডাকা হরতালে বিশাল এক ধাওয়া খেয়ে কবির বেশ দ্রুত পৌছে যায় বেইলী স্টারের সামনে। সুরভী তাকে ৫.৩০ এ আসতে বলেছিল, পারলে কবির আগেই পৌছাত! বেইলী স্টারের গেটের সামনে উঁচু-নিচু দাঁতের সুরভীর হাসিটা দেখে বুকটা ভরে যায় কবিরের, কবির প্রায়ই ঠাট্টা করে বলত-এরকম উচুঁনিচু হওয়ার কারনে হাসির সৌন্দর্য শাপে বর হয়ে গিয়েছে, বড্ড ভাল লাগে সেই হাসি কবিরের।

পিকেটাররা মাঝে মাঝে ভালোবাসার উপকরন হয়ে আসতে পারে ব্যাপারটা প্রথম উপলব্ধি করতে পারে কবির। মুহুর্মুহু হামলায় ঝাপি ফেলে দেয় বেইলী স্টার, তারা দুজন বিস্মিত আতঙ্কিত হওয়ারর বদলে কেন জানি খুব আনন্দিত হয়! লিফটে করে তিন তালা পৌছাতে পৌছাতে হঠাত সুরভীর অতর্কিত অপ্রত্যাশিত হামলার মুখে কবির ত্বড়িৎ জবাব দেয়। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে বের হয়ে রিক্সা নেয় কবির আর সুরভী, পাশাপাশি দুই কানে হেডফোন লাগিয়ে দেয় সুরভী, চলতে থাকে ভালবাসা এক্সপ্রেস। কবিরের ডান হাত কখন সুরভীর দুই হাতের মাঝে পৌছে যেয়ে আকঁড়ে ধরে সুরভির হাত হয়ত কবির নিজেও জানেনা! কবিরের খুব বলতে ইচ্ছে করে- হাওয়াতে এলো চুল, যদি না থাকি তা, কে সরাবে?! কবিরের বলা হয়না, তারচে কবির উড়ে আসা চুল গুলো দুই ঠোটের মাঝে নেয়ার চেস্টা করে, নাকের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে গন্ধ নিতে চায় সুরভীর চুলের-সে গন্ধের মাদকতায় হারিয়ে যাওয়ার মত একটা ব্যাপার আছে, ব্যাপারটা বেশ বুঝে গেছে কবির। টিএসসি যেয়ে চা খেয়ে ঝটপট চারু কলার উদ্দেশ্য হাটা দেয় তারা, তারা ছবি দেখে, সেইসব ছবি গুলো বেশ ভাব গাম্ভীর্যের সাথে সমালোচনাও করে তারা, ড্রয়িংরুমে কোন ছবিটা দেয়ালের রঙের সাথে মানানসই হয়ে ফুটে উঠবে, কিংবা ড্রয়িংরুমে কোন ছবিটা লাগানো অশ্লীলতা হয়ে যায় এই নিয়ে দুজনের ব্যাপক খুন-সুটি হয়ে আনন্দময় মধুর ঝগড়া।

সেখান থেকে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যায়, আশপাশের সিদ্ধির ব্যাপক ব্যবহার দেখে কিছুটা উতকন্ঠিত সুরভী কে সাহস দেয় কবির- ভয় কিসের? আমি আছি না!সেই সাহসের হাত ধরে সুরভিরা চলে যায় পুকুর পাড়ে-সেখানেও না বলা কথা গুলো বলার চেস্টা পুনরায় বৃথা হয় কবিরের। ঢাকার শহরে নন্দীপাড়া নামে একটা জায়গা আছে-সুরভীর সাথে পরিচয়ের পর প্রথম জানতে পারে কবির। টিএসসি থেকে নেয়া শেষ রিক্সা ভ্রমনের রিক্সায় তারা তাদের আবাগের বহিঃপ্রকাশের উদ্যোগ হয়ত নিয়েছিল তারা, কিন্তু শহর ভর্তি মানুষ তাদের সেই প্রচেস্টা কে বৃথা করে দিতে হরদম চেস্টা চালিয়ে গিয়েছে। তারা পারেনি তাদের না বলা কথা গুলো বলতে- অথচ তারা পরস্পর কে ভালোবেসেছিল! কবির বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসতে আসতে বহুবার বহুভাবে চেস্টা করে, এই শেষ বেলায় সে চেস্টাটাকে বেশ শান্তনা মনে হয়! কাল সুরভীর বিয়ে, কবির বুঝে উঠছে না তার কি করা উচিত…সে আগের মতই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সেখানে এখন মেঘ করেছে, সূর্যরা মেঘের আড়ালে লুকিয়েছে, আকাশে উত্তর সন্ধানে ব্যাস্ত কবির এখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে-সেখানে এখনো কোন উত্তর দেখা যায়নি।

কেন যেন খুব অপরাধবোধ হতে থাকে কবিরের… ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।