আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্জনতা, নির্জনতায় আমি একা!!! (স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে বুঝি এমনই হয়)

টেনে হিঁচড়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো ফেলে আসা অতীতের দিনগুলোতে। বাতাসের চলার গতি রুদ্ধ করে বের করে আনবো ধূলো জমা বিবর্ন সময়টাকে। হাতের মুঠোয় ধরে থাকা ধারালো ছুরির ফলা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করবো অসহায় মুহূর্তগুলো। তারপর... অট্টহাসিতে ফেটে পড়বে মুখোশের অন্ত রাত ৪ টা বাজে। মিতুলের ঘুম আসছে না।

ডেস্কটপ কম্পিউটারে বেজেই চলেছে... অন্ধকার ঘরে কাগজের টুকরো ছিঁড়ে কেটে যায় আমার সময় তুমি গেছো চলে যাওনি বিস্তৃতির অতলে যেমন শুকনো ফুল বইয়ের মাঝে রয়ে যায় রেখেছিলাম তোমায় আমার হৃদয় গভীরে তবু চলে গেলে এই সাজানো বাগান ছেড়ে আমি রয়েছি তোমার অপেক্ষায়... নিকশ কালো এই আঁধারে স্মৃতিরা সব খেলা করে রয় শুধু নির্জনতা, নির্জনতায় আমি একা একবার শুধু চোখ মেলো, দেখো আজ পথে জ্বালি আলো তুমি আবার আসবে ফিরে বিশ্বাসটুকু দু'হাতে আকড়ে ধরে... গান শুনতে শুনতে পুরোনো ডায়রির পাতা উল্টাতে থাকে মিতুল। উল্টাতে উল্টাতে অতীতে ফিরে যায় সে... ছেলেদের একটা বয়স থাকে যখন পৃথিবীটা অনেক রঙ্গিন মনে হয়। যা দেখে এবং যা করে সবকিছুই ভালো লাগে। ঠিক তেমনি দুষ্টু, প্রানচঞ্চল এবং হাসিখুশি স্বভাবের মিতুলের ভালো লাগতো আড্ডা দিতে, গান শুনতে, বই পড়তে এবং দেশের আনাচে কানচে ঘুরে বেড়াতে। সবকিছুই যখন ভালোলাগার সময় তখন নারীদের প্রতি তীব্র একটা টান অনুভব করতো মিতুল।

জীবনে নারী সঙ্গ পেলে জীবনটা কত সুন্দর হয়ে উঠতে পারে সেটা মিতুলের কখনও জানা ছিল না। আগে যে গানটা শুনতে ভালো লাগতো তখন ঐ গানটা শুনলে হারিয়ে যায় সে। মিতুলের বৃষ্টি ভালো লাগতো কিন্তু এখন বৃষ্টি হলে সব কাজ ফেলে বৃষ্টিতে ভেজার তীব্র একটা অনুভূতি কাজ করে তার মধ্যে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে অনেক ভালো লাগে ঠিকই কিন্তু সব সময়ই ঐ একজনের কথাই ঘুরে ফিরে মনে পড়ে যায় তার। আগের মত ঘুরে বেড়ানোর নেশা আছে ঠিকই কিন্তু যখন ঘুরতে যায় তখন মনে হয় মহা মূল্যবান কিছু একটা ফেলে এসেছে সে।

কেউ তার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে। তাকে ফিরে যেতে হবে। তার মনে হতে থাকে সে যেন তার জীবনটাই ফেলে এসেছে এরকম বিচিত্র একটা অনুভূতি কাজ করে তার মধ্যে। তার চঞ্চলতাও বেড়ে যায় কয়েকগুন। সবকিছু মিলিয়ে এক স্বপ্নময় জগতে চলে যায় মিতুল।

সেই জগতের বাসিন্দা শুধুমাত্র সে এবং তার ভালোবাসার মানুষটি। আর কোন কিছুর স্থান নেই। মানুষের জীবনের সুখ এবং দুঃখ দুটোই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুখের পরে দুঃখ আসে আর দুঃখের পরে সুখ। ঠিক তেমনি অন্ধকার ঘনিয়ে এলো মিতুলের জীবনে।

ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে গড়া স্বপ্নের জগৎটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে যায় এক নিমেষে। এতদিন যে সম্পর্কটুকু ছিল মিতুলের সাথে সেটা ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলনা। মেয়েটির আগের একটা রিলেশন ছিল একটা ছেলের সাথে। ঐ ছেলের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হবার পর মিতুল ওকে অনেক সময় দেয় তার থেকে একসময় মেয়েটি মিতুলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মিতুলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু একটা সময়ের পর মেয়েটি বুঝতে পারে সে আসলে মিতুলকে কখনও ভালোবাসেনি।

যা ছিল তা পুরোটাই ছিল ইনফ্যাচুয়েশন। মিতুল শুধুই তার ভালো একজন বন্ধু। আর তাই ভালোবাসার মানুষটি মিতুলকে একা রেখে চলে যায়। যাবার বেলায় এতটুকু করুনাও দেখায়নি মিতুলের জন্য। স্বপ্ন যখন ভেঙ্গে যায় তখন যা হয় আর কি তাই হলো মিতুলের জীবনে।

ভালো লাগে না এখন আর আড্ডা দিতে, কারো সাথে মেলামেশা করতে, ভালো লাগেনা বই পড়তে বোরিং লাগে গান শুনতে। বৃষ্টি হলে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তার চেয়ে বেশি অসহ্য লাগে বৃষ্টির শব্দ। নিজেকে এখন চার দেয়ালের মাঝে বন্দী করে রাখতে ভালোবাসে মিতুল। মিতুল কাঁদতে ভুলে যায়।

এখনও হাসে ঠিকই কিন্তু সে হাসি মিথ্যের চাতুর্যতার খোলসে আবদ্ধ। স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে বুঝি এমনই হয়। এমনটা ভাবতে ভাবতে সে আবার বাস্তবতায় ফিরে আসে। এই মিতুলকে তার একটুও ভালো লাগে না। সে ফিরে পেতে চায় আগের সেই দুষ্টু, হাসিখুশি, প্রানচঞ্চল মিতুলকে।

সে আবারও নতুন করে কাউকে ভালোবাসতে চায়। ভালোবাসা পেতে চায়। তার ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নের জগতকে সাজাতে চায় লক্ষ কোটি তারা দিয়ে। কিন্তু বরাবরেই মতই ব্যর্থ হয় মিতুল। আর হারিয়ে ফেলে নিজের উপর আত্নবিশ্বাস।

মিতুল ভাবে এমন কেউ কি নেই যে কিনা ফিরিয়ে দিতে পারে তার স্বপ্নের জগত। সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া পুরোনো মিতুলকে। ডায়রিটা তুলে ধরে মহাদেব সাহার প্রিয় একটি কবিতা উচ্চস্বরে আবৃত্তি শুরু করে... একবার সেভাবেই ডাকো যাতে আটলান্টিকের বুকে ঝড় উঠে ফুঁসে ওঠে সমুদ্রের জল; যেমন সীতার ডাকে দ্বিধা হয়েছে ধরিত্রী যদি ডাকো সেইভাবে ডাকো সেইভাবে বুকে টেনে নাও অচল পাহাড়ও ছুটে যাবে তোমার সান্নিধ্যে যদি পারো সেইভাবে ডাক দাও খুলে যাবে বন্ধ দুয়ার, ছুটবে ঝর্ণাধারা, গলবে পাথর। একবার সেইভাবে ডাকো মহাশুন্য থেকে নভোযান আসবে এখানে নেমে নক্ষত্র পড়বে খসে, গ্রহ কক্ষচ্যুত হবে যদি ডাকো সেইভাবে ডাকো ছুটে যাবে বাঁধভাঙ্গা নদী। একবার সেইভাবে ডাকো যাতে আটলান্টিকের বুকে ঝড় ওঠে, সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে ভূমিকম্প হয়।

কঠিন পাথর ফেটে বের হয় জল..........  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।