আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবাদপতে কালোদিবসে কলঙ্কিত আ.লীগ

আমি বাংলার গান গাই আমি বাংলায় গান গাই আমি আমার আমাকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই আজ ১৬ জুন, সংবাদপত্রে কালোদিবস। ১৭৭৫ সালের এই দিনে শেখ মুজিবের বাকশালী সরকার এক কালো আইন জারির মাধ্যমে সরকারের তল্পীবাহি মাত্র ৪টি সংবাদপত্র রেখে দেশের সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিল। কবর রচিত হয়েছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্রের। সেদিন বেকার হয়ে পড়েছিলেন শত শত সাংবাদিক। অনেকে উদরের জ্বালা নিবারনের জন্য বায়তুল মোকাররমের ফুটপাতে, কেউ শ্যামবাজারের মুদিখানায় সদাই বিক্রির পেশা গ্রহণে বাধ্য হয়েছিলেন।

মুজিব-রোষানলে পড়ে জেলে যেতে হয়েছিল পথিকৃৎ সাংবাদিক এজেডএম এনায়েতুল্লাহ খানকে। ‘সুপ্রিম-স্ট্রেট’ নামে বহুল আলোচিত সম্পাদকীয় লেখার কারণে বাংলাদেশ অবজারভার সম্পাদক আব্দুস সালামকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অনুরূপভাবে পদচ্যুত হন দৈনিক বাংলা-এর প্রধান সম্পাদক কবি হাসান হাফিজুর রহমান ও সম্পাদক তোয়াব খানকে। তাদের অপরাধ ছিল ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসকাবের সামনে পুলিশের গুলিতে দুই ছাত্রের নিহতের খবরটি গুরুত্বের সাথে ছাপা! এর আগে অবজারভার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক মাহবুবুল হককে সরকার মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে দেড় বছর জেলে আটকে রাখে। ১৯৭৪ সালের ২১ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাক-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্ট ছিল এরকম-‘গত ১৭ মার্চ রাত ৩টার সময় তিন ট্রাকবোঝাই রক্ষীবাহিনী ও পুলিশ দৈনিক গণকন্ঠ কার্যালয়ে প্রবেশ করে এবং সোমবার প্রকাশিতব্য শেষ ফর্মা (১ম ও অস্টম পাতার) মেশিন হইতে নামাইয়া ফর্মাটি ভাঙিয়া ফেলে।

তারা কার্যালয়ের প্রতিটি কক্ষের জিনিসপত্র তছনছ করে এবং কর্মরত-কর্মচারীদের ওপর নির্যাতন চালাইয়া ৭জনকে গ্রেফতার করে। একই সময় বাসভবন হইতে গণকন্ঠ সম্পাদক কবি আল মাহমুদকেও গ্রেফতার করা হয়। একই সময় ছাপাখানা হইতেও সোমবারের শেষ ফর্মারও সিলোফিন পেপারসহ প্লেটটি আটক করে। সোমবারের পত্রিকা প্রকাশ কার্যত বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। সোমবার ও মঙ্গলবার সারাদিন ও রাত ধরিয়া পুলিশ ও রক্ষিবাহিনী কিছুক্ষণ পরপর গণকন্ঠ কার্যালয়ে যাইয়া সেখানে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হইয়াছে।

পত্রিকার বার্তা সম্পাদকসহ অন্য সাংবাদিকরা বাড়িঘর ছাড়িয়া অন্যত্র রাত কাটাইতে বাধ্য হইতেছেন। রিপোর্টাররা সংবাদ সংগ্রহ করিতে যাইয়া হুমকির সম্মুখীন হইতেছেন। কারাগারে গণকন্ঠ সম্পাদকের সহিত সাক্ষাতের চেষ্টা ব্যর্থ হইয়াছে। তাহাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে রাখা হইয়াছে বলিয়া খবর পাওয়া গিয়াছে। তাহা ছাড়া মফস্বল সংবাদদাতাসহ গণকন্ঠ কার্যালয় থেকে গ্রেফতারকৃতদের কোন সংবাদ পাওয়া যাইতেছে না।

’ স্বাধীনতার পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা চলতে থাকে। ১৯৭২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হককথা, মুখপাত্র ও ঝঢ়ড়শবংসধহ সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয়। পরের বছর সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রবিরোধী খবর ছাপানোর অভিযোগে ৫টি সাপ্তাহিক বন্ধের মুখ দেখে। একই বছরের ১৩ মে দৈনিক স্বদেশ ও ’৭৪ সালে চট্টগ্রামের দেশবাংলা বন্ধ করা হয়। নয়াবাংলা কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয় ১০জন।

সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বাক, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হলেও প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অর্ডিন্যান্স, বিশেষ ক্ষমতা আইনে পত্রিকা বন্ধের ক্ষমতা, জরুরি আইনের মতো কালো আইনে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর চালানো হয় নজীরবিহীন বর্বরতা। এরপর চূড়ান্ত আঘাত ১৯৭৫ এর ১৬ জুনে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে। সেদিন জারী করা হয় ‘সংবাদপত্র (প্রকাশনা বাতিল) অধ্যাদেশ, ১৯৭৫। এর প্রতিবাদে এদেশের সাংবাদিক সমাজ ১৬ জুনকে সংবাদপত্রে কালোদিবস হিসেবে পালন করে আসছে। শেখ মুজিবের মতো তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবারসহ দু’বার ক্ষমতায় আসার পর দেশের সংবাদপত্র এবং সাংবাদিক দলননীতি অব্যাহত রাখে।

১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পিতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত করে বন্ধ করে দেন দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস ও সাপ্তাহিক বিচিত্রা। সরকারি গণমাধ্যমে চলে বেধড়ক ছাঁটাই। জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমান ও আবু তাহেরের মতো আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত হন অসংখ্য সাংবাদিক। ফেনীতে অকথ্য নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক টিপু সুলতান আজও তার জ্বলন্ত প্রমাণ। সেদিন শেখ হাসিনা বিদ্রুপ করে বলেছিলেন, ‘টিপু সুলতান কি সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সাংবাদিক?’ যশোরে নির্মমভাবে হত্যা হয়েছিলেন দৈনিক রানার সম্পাদক আরএম সাইফুল আলম মুকুল ও দৈনিক জনকণ্ঠর বিশেষ প্রতিনিধি সামছুর রহমান কেবল।

আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিজদলের অনুসারী সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক স.ম. আলাউদ্দিনকেও হত্যা করেছে। শেখ হাসিনার বর্তমান শাসনামলে ৭ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে সারাদেশে। নির্যাতিত হয়েছে ২ হাজার সাংবাদিক। মামলা ও হয়রানীর শিকার হয়েছেন ৭৬ জন। কক্সবাজার, কুমিল্লা, সিলেট, নরসিংদী প্রেসকাব ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির নির্বাচিত কমিটিগুলোকে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিগত নির্বাচনের সময় জাতীয় প্রেসকাব অপদখলের চেষ্ঠা চলে। আমারদেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আটক ও অকথ্য নির্যাতনের ইতিহাস নিকট ইতিহাসমাত্র। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.