আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রুপকথার জীবন

ছেলেটাকে অনেকক্ষণ ধরেই খেয়াল করছিলাম আমি। বিয়ে বাড়ির বর-কনের চাইতে বাচ্চা ছেলেটার কাজ কর্মই বার বার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল আমার। ৪-৫ বছরের বাচ্চা একটা ছেলে। মাথা ভর্তি কোঁকড়ান চুল। এখন সে পান খাওয়ার জন্য আবদার করছে।

ওকে প্রথম আমার চোখে পড়ে বিয়ে বাড়ির গেটে। বর এসেছিল ঘোড়ায় চড়ে। তাই দেখে মাকে জিজ্ঞেস "মা, ও কি ডালিম কুমার? " আজকালকার বাচ্চারা যে ডালিম কুমার এর গল্প জানে, আমার ধারনা ছিল না। হ্যাঁরী পটার, সুপার ম্যান, স্পাইডার ম্যানদের মত হিরোদের মাঝে আমাদের চকলেট বয় ডালিম কুমার আর তার পঙ্খিরাজের অবস্থা বেশ সঙিন বলেই জানতাম। আর কঙ্কাবতীর জন্য দৈত্য- দানোর মত উটকো বিপদ ডেকে আনার চাইতে ক্যাঁট ওমেনের সাথে রোমান্সের সাথে সাথে শক্তিবৃদ্ধির দিকেই ওদের আগ্রহ বেশি।

আর তাই ওর মুখে ডালিম কুমার এর নাম শুনে আমি পিছে পিছে ঘুরতে লাগলাম আমার হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলার খোঁজে। খাবারের পর্ব শেষ। বর-কনেকে একসাথে বসানো হয়েছে। ছেলেটার পিছু পিছু আমিও হাজির সেখানে। যেটা শোনার ক্ষীণ আশা ছিল, তা পূর্ণ হল।

ছেলেটা মাকে জিজ্ঞেস করল "মা, ও কি কঙ্কাবতী?" মার উত্তর "হ্যাঁ", "ডালিম কুমার কি দৈত্যকে মেরে ফেলেছে, মা? ", "হ্যাঁরে বাবা, মেরেছে"। মনে মনে ভাবি, দৈত্য- দানো না মারলেও অনেক হাতি- ঘোড়া ঠিকই মারতে হয়েছে। আজকাল কার দিনে বিয়ে করা মানে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে মড়া হাতি কেনা। আর প্রেমের বিয়ে হলে তো কথাই নেই। নিজের প্রেমিকার চাইতে অন্যের প্রেমিকাকে বিয়ে করা এখন অনেক বেশি সহজ।

এই পিচ্চি বড় হলে কি অবস্থা হবে কে জানে? বর-কনেকে আয়না দেখানো হল, কে কি দেখল কে জানে? তবে দুইজনেরই দাবি তারা চাঁদ দেখেছে। সেটা শুনে আবার আবদার, "আমিও চাঁদ দেখব"। যাই হোক, সবশেষে আবার প্রশ্ন "এখন কি হবে মা?" "কেন আব্বু, তুমি কি পড়েছিলে বইতে?" মা উল্টো জিজ্ঞেস করে। "ওরা সুখে শান্তিতে থাকবে?" "হ্যাঁরে সোনা, এবার ওরা সুখে শান্তিতে সারা জীবন কাটাবে"। এই বলে পিচ্চিতাকে কোলে নিয়ে চুমু খেল মা।

আমাদের জীবনটা রুপকথা না। বাস্তবের ডালিম কুমাররা সব সময় সুখে শান্তিতে কাটায় না। বাস্তবের ডালিম কুমার মাঝে মাঝে কঙ্কাবতীর চোখ উপরে ফেলে। নিভিয়ে দিতে চায় না-দেখা সপ্ন, দেখা বাস্তব। ক্ষত- বিক্ষত করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

রুমানা ম্যাডামের খবরটা পরার পর বার বার মনে হচ্ছিল, ওনাদেরও তো কথা ছিল সুখে শান্তিতে ঘর করবার। বিয়ের সময় ওনাদের বাবা-মা ও তো আশীর্বাদ করেছিলেন "সুখে থেকো"। আমরা সব সময় সুখে থাকার কথা বলি। অথচ সুখে থাকার আর সুখে রাখার ক্ষেত্রে আমারাই বার বার নিজেদের অযোগ্য প্রমান করি। হাসান সাইদরা এই সমাজের নিকৃষ্টতম উদাহরন, বিকারগ্রস্ত মানুষ।

এই সমাজে অনেক ভুমিকা পালন করতে হয় আমাদের। স্বামী হিসেবে, বাবা, ভাই, ছেলে, বন্ধু, নাগরিক, শিক্ষক, ছাত্র, কাস্টমার, এমনকি রিকশা আরোহী হিসেবেও। এই বিকারের শুরু অনেক তুচ্ছ পর্যায় থেকে। রিক্সাওয়ালার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, স্ত্রীকে ভালবাসলে হয়ত ভাল স্বামী হওয়া যায়, তবে ভালো মানুষ হওয়া যায় না। সপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে, আমরা সবাই ভালো মানুষ হবার চেষ্টা করছি, আর এই অসুস্থ মানুষ গুলো শাস্তি পেয়েছে সারা জীবনের মত।

তখন হয়ত সেই বাচ্চা ছেলেটার চাঁদ দেখার সপ্ন সত্যি হবে। আর তারপর কখনো চাঁদের কলঙ্ক চোখে পড়বে না তার, বরঞ্চ জ্যোৎস্নাকেই সারা জীবন ভালবাসতে শিখবে সে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.