আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ পার্কে বসা মেয়েটি !

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! মেয়েটি আমার দিকে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে রইলো । চোখে কিছুটা অবাক হওয়ার চিহ্ন । এই দেশে মেয়েরা অপরিচিত ছেলেদের কাছ থেকে ব্যড কমান্ট স হজ মানে নেয় কিন্তু ফুল নেওয়া ক্ষেত্রে একটু অস্বস্থি বোধ করে ! মেয়েটি আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিল ! চেহেরা মোটামুটি ভদ্রই বলা চলে আমার । অন্তত প্রথম দর্শনেই কেউ অন্তত আমাকে ইভটিজার বলবে না ! আমি মেয়েটির দিকে ফুলটা ধরেই রইলাম ! মেয়েটি কে বললাম -ফুল নিতে সমস্যা ? -কেন নিবো ? আপনাকে কে কি আমি চিনি ? -না চিনলে ফুল নেওয়া যাবে না ? কিছু খেতে দিলে হয়তো না নেওয়া স্বাভাবিক ছিল। অজ্ঞান পার্টির লোক মনে করতেন ! যদি কিছু মিশিয়ে দেই ।

ফুলে নিশ্চই এই সমস্যা নাই ? -বলা যায় ? যদি আপনি ক্লোফরম জাতীয় কিছু মিশিয়ে দেন ! আমি খানিকটা হতাশ হলাম । কি করে ভাই । একটা ছেলে একটা মেয়েকে ফুল দিতে পারে না ? স্বাভাবিক ভাবে একটা মেয়েকে একটা ছেলের ভাল লাগতে পারে না ? অবশ্য আমি মেয়েটিকে ফুল দিলাম অন্য কারনে ! ক্যাম্পাস থেকে একটু আগেই বের হতে হয়েছে । বাসায় গিয়ে আবার টিউশনীতে আসাটা একটু কষ্ট কর হয়ে যায় । তাই ঠিক করলাম এই একটা ঘন্টা পার্কেই কাটিয়ে দেব ! রুপসী বাংলার ঠিক পিছনের পার্কটাতে ঢুকতে যাবো তখনই একটা সাইনবোর্র চোখে পড়লো গেটের কাছে ।

স্কুল/ কলেজের পোষাক পরে অপত্তিকর অবস্থান নিষেধ ! তার মানে কি ? স্কুল কলেজ ড্রেস বাদে অন্য সকল ড্রেসে আপত্তিকর অবস্থানে কোন বাধা নেই ? আমি আপত্তি কর অবস্থান দেখতে পার্কের ভিতরে ঢুকলাম, কিন্তু আমাকে খানিকটা হতাশই হতে হল । সবাই খুব অআপত্তিকর ভাবেই বসে আছে । একটু খানি ঘুরে ফিরে যখন বসতে যাবো একটা পিচ্চি মেয়ে আমার দিকে একটা ফুল এগিয়ে বলল -স্যার, একটা নেন স্যার । সারা দিনে একটাও বিক্রি হয় নাই ! চেহারা দেখে আসলেই মনে হল যেন ফুলের বাজারের অবস্থা ভাল না ! আমি পিচ্চি মেয়েকে বললাম -আমি ফুল দিয়ে কি করবো ? দেওয়ার কেউ নাই ! -নেন স্যার একটা ! -আরে কি করবো নিয়ে ! নষ্ট হবে ! -ঐ আফা মনিরে দিয়া দিয়েন ! বলেই পিচ্চি মেয়েটা আমাকে হাতের ইশারায় সামনে বসা একটা মেয়েকে দেখালো ! মেয়েটা আমার দিকে পেছন ফিরে বসে আসছে সামনের বেঞ্চে । চেহারা দেখা যাচ্ছে না ।

কেবল পেছনে লম্বা চুল দেখতে পাচ্ছি ! মেয়েটা নিশ্চই কারো জন্য অপেক্ষা করছে । যাক একটু সময় কাটানো যাক ! আমি পিচ্ছির কাছ থেকে একটা বেশ বড় সাইজের গোলাপ কিনে মেয়েটার দিকে হাটা দিলাম ! আমি ফুলটা মেয়ের পাশে রেখে বললাম -একটু বসবো আপনার পাশে ? মেয়েটা কিছু বলল না । অবশ্য বললেও আমি কেন শুনবো ? এই টা পাবলিক পার্ক ! আমি বসতেই পারি ! আমি বসতে বসতে বললাম -কার জন্য অপেক্ষা করছেন ? আপানর বয়ফ্রেন্ড ? -জি ! -এতো দেরি করছে কেন ? -জ্যামে আটকে আছে ? -ও আচ্ছা ফোনে কথা হয়েছে ? -হুম ! -আচ্ছা আপনার মনে হয় নি আমি এতো মেয়ে কে রেখে কেন আপনাকেই ফুলটা দিতে এলাম ! মেয়েটি এতোক্ষন সোজা তাকিয়ে ছিল এখন আমার দিকে তাকালো ! -আপনি আমাকে কেন বিরক্ত করছেন ? -বিরক্ত ? আমি আপনার সাথে একটু কথা লার চেষ্টা করছি ! বিশ্বাস করেন লাইন মারার চেষ্টাও করছি না ! -আমার তো তাই মনে হচ্ছে ! -মেয়েরা এমনিতেই একটু কম বোঝে ! -কি বললেন আপনি ? কি বললেন ? -আমি ? আমি কিছু বল নি তো ! কিছু বলি নি ! আসলে ঐ মেয়েটা কে দেখছেন না ! আমি হাত দিয়ে ফুল বিক্রেতা মেয়েকে দেখালাম । মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল -কি হয়েছে ঐ মেয়েটার ! -আসলে ঐ মেয়েটার মায়ের খুব শরীর খারাপ ! ঔষধ কিনতে হবে ! এই জন্য ফুল বিক্রি করছে । আমার কাছে আসলে আমি ওকে সাহায্য করতে চাইলাম ।

বললাম যে ফুল লাগবে না এমনি তুমি টাকা নাও ! সে বলল যে না ! এমনি এমনি সে টাকা নিবে না ! আমি বললাম আরে ফুল নিয়ে আমি কি করবো ! নষ্ট হবে তো ! মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল -কেন আপনার ফুল দেওয়ার কেউ নাই ! -কেউ থাকলে কি আপনার সাথে টাংকি মারার চেষ্টা করি ? -মানে কি ? -কোন মানে নাই । জাষ্ট জোকিং ! আমি মেয়েটার কাছ থেকে ফুল কিনলাম ! তারপরই দেখলাম আপনি বসে আছেন । আমার কাছেও মনে হল আপনি আপনার বয়ফ্রেন্ডের জন্যই অপেক্ষা করছেন ! এখন আমার ফুল তো কাজে লাগবে না। কেবলই নষ্ট হবে ! তাই ভাবলাম আপনাকে উপহার দেই । আপনি আপনার বয়ফ্রেন্ড কে দিতে পারবেন ! ভাল না ? মেয়েটি কিছু বলতে যাবে তখনই মেয়েটির ফোন বেজে উঠল ! মেয়েটি ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেল ! আমি আবারও আপত্তিকর অবস্থান দেখার জন্য আশেপাশে তাকাতে শুরু করলাম ।

ঐ তো দেখা যাচ্ছে । একটা ছেলে আর মেয়ে বসে আছে কোনার দিকের একটা বেঞ্চে ! মেয়েটা যেন ছেলেটার শরীরটাকেই পার্কের বেঞ্চ মনে করেছে । যেভাবে হেলান দিয়ে বসেছে ! আর ছেলেটাও !! আমি আর একটু ভাল করে দেখতে লাগলাম ! -কি দেখছেন ? -জি ? মেয়েটি ততক্ষনে কথা বলা শেষ করে ফেলেছে । -আসলে চারিপাশে পরিবেশ দেখছি ! -তাই ? -হুম ! তা আপনার বয়ফ্রেন্ড কত দুর ? -এখনও বনশ্রী ! -ওরে বাবা ! আজকে আর দেখা হয়েছে ! তার চেয়ে বরং এক কাজ করেন আমার সাথে আজকে আড্ডা দেন । কি বলেন ! -বলুন ! -আপনার নাম জানা হয় নি ! -নামটা না হয় নাই জানা হোক ! আমরা এমনি কথা বলি ! -তা অবশ্য ঠিক ।

নাম জানার দরকার কি ? আচ্ছা এখন কি আপনি ফুলটি নিবেন ? মেয়েটি নিজেই হাত বাড়িয়ে ফুল নিল ! তারপর বলল -তা আপনি যখন মেয়েটিকে সাহায্যই করতে চাইলেন একটা ফুল কেন কিনলেন ? সব গুলো কিনলে ভাল হত না ? -উহু ! আমি তো চেয়েছিলাম কিন্তু মেয়েটিই তো আমার কাছে বিক্রি করলো না ! -কেন ? কেন বিক্রি করলো না ? -আরে বলবেন না ! মেয়েটি যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান এবং বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন ! আমি যখন কিনতে চাইলাম তখন মেয়েটি বলল আপনার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে আপনার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল না ! সব গুলো ফুল কেনা আপনার জন্য ঠিক হবে না দেখলাম মেয়েটিও আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! কিছু যেন একটা খুজতেছে । তারপর বলল -আসলেই মেয়েটি ধারনা ঠিক ! আপনার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল মনে হচ্ছে না । -হুম ! ঠিকই বলেছেন । মেয়েটি বলল যে তার উপকার করার জন্য যেন আবার আমার ক্ষতি না হয় । তাই আমার কাছে একটার বেশি ফুল বিক্রি করতে রাজিই হল না ! -হুম ! বুঝলাম ! বড় মানবিক গুনাবলি সম্পন্ন ফুল বিক্রেতা দেখতেছি ! -নয়তো আর বলছি ! এর পর মেয়েটি বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল -চাপা তো ভালই মারতে পারেন দেখছি ! -মানে কি ? চাপা ? -আপনি ঠিকই জানেন ! মেয়েটি কিন্তু আামর কাছেও এসেছিল ফুল বিক্ড়ি করতে ! আমাকে তো কিছু বলল না ! -বলেনি ! সেটা আমি কিভাবে বলবো ? আপনি বিরক্ত হচ্ছেন ? -দেখেন প্রথমে আমি যথেষ্ঠ বিরক্ত হয়েছিলাম কিন্তু সময় কাটছে ভালই ! চালিয়ে যান ।

বসে বসে বিরক্ত হওয়ার চেয়ে আপনার চাপাবাজি শুনি ! -হাহাহাহা ! -হাসির কি হল ? তাই তো হাসির কি হল ? আমি কেনই বা হাসলাম ! এই ভাবেই আস্তে আস্তে কথাচলতে থাকেন মেয়েটার সাথে ! একটা সময় মেয়েটার ফোন বেজে উঠলো ! মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে মেয়েটার মুখ কিছুটা উজ্জল হয়ে উঠলো । নিশ্চই মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড চলে এসেছে ! তার মানে আমাকে এখন উঠতে হবে ! মেয়েটি ফোন রিসিভ করল ! -হ্যালো ! নিরবতা ! -হ্যা ! এই দিকে ! আমি একদম গেটের কাছে ই আছি ! নিরবতা -আচ্ছা ! আচ্ছা ঠিক আছে ! মেয়েটি ফোন রাখতেই আমি বললাম -চলে এসেছে ? -হুম ! -ওকে আমার যাওয়ার সময় হয়েছে ! -হুম ! আমি উঠে গেলাম ! একটু দুরে গেছি তখনই মেয়েটা আমাকে ডাক দিল ! -এই যে শুনছেন ! আমি ঘুরে দাড়িয়ে বললাম -জি ? -গোলাপ ফুলের জন্য ধন্যবাদ ! আর আপনার সাথে সময় ভাল কাটলো ! এই বলে মেয়েটা হাসলো ! আমিও হাসলাম ! আমি আবার ঘুরে হাটা দিলাম ! টিউশনীর সময় হয়ে এসেছে ! রওনা দেওয়া দরকার ! Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।