আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গেরিলা, আমি এবং অন্যান্য

একলা, কিন্তু একা নই ১১ জুন, শনিবার। সকাল থেকেই খুব ব্যস্ত সময় কাটছে। গত কিছুদিন যাবৎ বু্য়ার দেখা নাই। রান্নায় আম্মুর অ্যাসিস্টেন্ট হয়ে গেলাম। রান্না মানে যে সে রান্না নয়, একেবারে ৭টি পদ।

এদিকে বেলা গড়ায় গেলো। দুপুরের খাবারের সময় আম্মুর প্রশংসা, নুডুলস আর ঢেড়স ভাজিটা নাকি বেশ ভালো বানাইছি! যাই হোক আমি খুশিতে ৮+৮= ১৬ খানা হয়ে গেছি, এমন সময় বন্ধুর ফোন বন্ধু: তুই কি ফ্রি আছিস? আমি: ১০০% বন্ধু: চল মুভি দেখে আসি, ''গেরিলা''। আমি: দোস্ত আমিতো ৩ দিন আগেই এটা দেখে এলাম বন্ধু: তাইলে ''আমার বন্ধু রাশেদ'' আমি: হুমম ভাল আইডিয়া, কিন্তু আমার কাছেতো টাকা নাই বন্ধু: আমি দিমুনে। আমি: (মনে মনে) ওয়াহ!! আমি বন্ধু আসার ৫ মিনিট আগেই বসুন্ধরার লেভেল ৮ এ হাজির। ও আসার আগেই সূচি দেখতে গিয়েতো খাইলাম ধরা, ''আমার বন্ধু রাশেদ'' দেখানো বন্ধ করে দিছে।

এখন উপায়?? ইতিমধ্যে বন্ধুর আগমন, সে বলে চল তাইলে গেরিলাই দেখি। ভাবলাম বেচারা গার্লফ্রেণ্ডের অভাবে আমারে নিজের পয়সা খরচ করে ছবি দেখাতে আনলো তারে ১লা ফেলে যাওয়াটা ঠিক না। তাছাড়া গেড়িলা ছবি হিসেবে দারুন, ২য় বার দেখাই যায়। কিন্তু সিনেপ্লেক্সের গেরিলা শো ১৫ মিনিট আগেই শুরু হয়ে গেছে। বন্ধু শুধায় চল বলাকায় যাই, ওখানেও এসি আছে, টাকাও কম লাগবে।

ভাবলাম ঢাকা কলেজে পড়ার সময় বলাকায় ৩/৪ টা ছবি দেখার পর তো বহুদিন যাই না, একটু স্মৃতিচারণ করে আসি। ২ জন হাঁটতে হাঁটতে বলাকায় এসে গেলাম। এখানে দেখি ২টা ছবি চলতেছে, গেরিলা আর শাকিব খান অভিনিত "মাটির ঠিকানা"। আমাগো কিং খানরে দেখে বন্ধুরে কইলাম আয় এইডা দেখি। হালায় কয়, না! গেরিলা দেখুম।

টাকার গরম দেখায় আমার লগে। দেখলাম শাকিব খানের ছবি যে হলে চলে( বলাকায় ২টা হল) সেটায় মানুষ লাইন দিয়া ঢুকতেছে আর গেরিলার ময়দান ফাঁকা। আমাদের সিটের সিরিয়াল ছিল এ ৪, এ ৫। ওরে গালি দিয়া কইলাম এইডা কি আনছস?! সামনে বইসা ঘাড় বাঁকায় মুভি দেখতে হইব। ঢুইকা দেখি আমাদের বসায় দিল এক্কেবারে পেছনের আগের সারির এক কোণায়।

কিন্তু এটাতো এ ১২ আর ১৩ নম্বর সিট!! আমাদের তো ৪ আর ৫! পেছনে তাকায় দেখি এক কাপল, কাহিনি বুইঝা গেলাম। সিট দেখানি মামা কিছু খাইয়া আমাগোরে এক সাড়ি সামনে বসায় দিছে। এরপর বেশ কিছু উপদেশ মূলক কথাবার্তা দেখালো মনিটরে থুক্কু পর্দায়। বেশ বিনোদোন। সিনেমা শুরুর আগে গুনে দেখলাম দর্শক মাত্র ১৯ জন।

শুরুতেই যে বিষয়টা চোখে লাগলো, বলাকায় সাবটাইটেল দেখায় না, যেটা সিনেপ্লেক্সে ছিল এবং বলাকার প্রজেক্টরের ছবি অনেক ঘোলা। গেরিলাতে পরিচালকের যে কাজটা আমার খুব চোখে পড়েছিলো সেটা হল ঐ সময়ের ব্যানার ও দেয়াল লিখন গুলো তুলে ধরা হয়েছে অসাধারণ দক্ষতার সাথে, এ ব্যপারটা আর কোন মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় এভাবে চোখে পড়েনি। কিন্তু বলাকার নিম্নমানের প্রজেক্টরের কারণে যার অনেক গুলাই পড়া যাচ্ছিল না। সিনেপ্লেক্সে আগে দেখায় সবচেয়ে বড় যে ত্রুটিটা চোখে পড়লো তা হল বেশ কিছু যায়গায় অল্প অল্প করে সিনেমার অংশ কেঁটে ফেলা হয়েছে। মাঝখানের বিরতিতে আমাদের সিনেওয়ার্ল্ড ক্যাফেতে যাবার আমন্ত্রণ জানানো হল( এটা ওদের নিজস্ব ক্যাফে, যেখানে কিছু চিপস ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না)।

আবার সিনেমা শুরু হবার প্রাক্কালে শুরু হল ট্রেইলার। কোন ছবির? মাটির ঠিকানা!! সে এক চরম বিনোদন প্রথমেই লেখা এটা নাকি নতুন ছবি, নতুন কাহিনি! আমি ভাবি বাহ!। তারপর বলতেছে এটাতে ৪ সুপারস্টার একত্রে আছে, পয়লা তো আপনারা জানেনই শাকিব খান!!! উনি তখন ঠোঁটে লিপস্টিক মেখে গোলাপি রঙের একটা টিসার্ট পড়ণে, ওয়াও! ২য় স্টার: ঢালিউড+বলিউড মাতানো গায়ক জেমস!! আমি ভাবতেছি ও কি অভিনয় করলো নাকি!! পরে দেখি একটা ভাবের গান গাইছে। ৩য় স্টার: বাংলার Heart Trob মিলা!। পাঠক আমি ভুল লিখি নাই এভাবেই ট্রব লেখা ছিল।

হাসতে হাসতে গড়াগড়ি অবস্থা। মিলা আপা হইছেন আইটেম গার্ল, খান সাহেবের সাথে নাচতেছেন ৪র্থ স্টার: সালমা! উনিও ১টা ভাবের গান গাইছেন এখানে, তখন আমাদের কিং খান মদ্য পান করছেন, আহা! সে কি গান! এই ছবিতে আরেকটা চমক আছে! খান সাহেবের প্রেতাত্মা টাইপের কিছু একটা দেখানোর চেষ্টা করেছেন পরিচালক, জিনিসটা আলিফ লায়লাতে দেখা দৈত্যের মত, হাসতে হাসতে পড়ে যাবার অবস্থা। যাই হোক ছবি শেষ হল। গেরিলার পরিচালক নাসিরউদ্দিন ইউসুফকে অভিনন্দন জানাই মুক্তিযুদ্ধের উপর ভালো একটি ছবি উপহার দেবার জন্য। আর পাঠকরা যারা এখনো দেখেননি দেখে আসতে পারেন, ভালো লাগবে আশা করি।

তবে সিনেপ্লেক্সে গেলেই ভালো হবে, একই ছবি ৪ দিনের মাঝে ২টা হলে দেখে পার্থক্যটা খুব বড় আকারে চোখে পড়লো। গেরিলার মত ছবির আরো দর্শক প্রয়োজন, নাহলে ভালো নির্মাতারা তো উৎসাহ হারিয়ে ফেলব। প্রিয় ২টি গান, গেরিলা থেকে জয় সত্যের জয় তেপান্তরের মাঠে বি.দ্র: আমি নিতান্তই আনাড়ি লেখক। তাই লিখি না বললেই চলে। ভুল ভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।