আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উড়াল মন আসার দেহ ঃ

উপক্রমণিকাঃ আমার মৃত্যু পথযাত্রী একান্ত বিশ্বস্ত বন্ধু অমিতের নিজের বর্ণিত জীবনগাঁথা নিয়ে এই গল্প । জীবনবোধ নিয়ে আনাড়ি হাতের এই ধরনের কোন লেখা অনেকের ভাল লাগে না । তবে আমি জানি আমার খুব কাছের বন্ধু ছামির এই লেখাটা পছন্দ হবে । তাই লিখছি । হয়ত ছামির মত অন্য কারোও পছন্দ হতে পারে ।

তাতে বাড়তি কিছু ভাল লাগা সঞ্চয় হতে পারে । ছামি হয়ত এই লেখাটা পড়বে না । কারণ সে এখন অনেক ব্যস্ত । মেডিকেল এর ছাত্র বলে কথা! তবে আমি ওর জন্যই লিখছি । আমি এখন অনেক দূরে বলে এই কথাগুলো ওকে বলতে পারছি না ।

না হয় এই চিন্তামূলক প্রবন্ধটা না লিখে ছামির সাথে সারাদিন কথা বলে – যুক্তি তর্ক করে দিন শেষে একটা সমাধান বের করার চেষ্টা করতাম । ইশফাক গানিতিক যুক্তি কৌশল ছাড়া অন্য ব্যাপার তেমন একটা বুঝে না বলে ওর সাথে শরীর-মন বিষয়ক কথা বলে কোন সমাধান আশা করা যায় না । আমার মনে আছে একদিন ছেলেদের জীবনে ঘটে থাকা একটা বিশেষ শারীরিক ঘটনা ইশফাক আমাকে বলতে গিয়ে অনেক বার আটকে গিয়েছিল । না হয় ইশফাক কেউ বলতাম এই কথাগুলো । এমন অনেক দিন গিয়েছে ছামির সাথে কিংবা ইশফাক এর সাথে কথা বলে কাটিয়েছি ।

আসলে এরা হয়ত জানে না আমার দিন যাপন ,চিন্তা চেতনার কেন্দ্র বিন্দুতে এদের বসবাস । হয়ত এভাবে আর কোনদিন কথা হবে না । কিন্তু তবুও নির্জনে আমি এদের সাথে কথা বলি, তর্ক করি , মারামারি কাটাকাটি করি । যখন লন্ডনের বেথনাল গ্রীন পার্কের চেয়ারে কিংবা টেমস নদীর পাড়ে বা রিজেন্ট লেকের কার্নিশে একা দাঁড়িয়ে থাকি তখন ছামি কিংবা ইশফাকের সাথে কথা বলি । ।

সেই আগের দিন গুলোতে ফিরে যাই । কিছুদিন ধরে কিবরিয়ার সাথেও কথা হয় । কথার চেয়ে ওর সাথে উপদেশ আদান প্রদানই বেশি হয় । তবুও ভাল লাগে । ভীষণ ভাল লাগে ।

কারণ এরা আমার ভিতরের বন্ধু বাহিরের বন্ধু । নিশ্চিত মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে জীবনের পোস্টমরটেম _ পটভূমি ঃ আমার এক বন্ধু কিছুদিন হল ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয়েছে । আসলে অনেক আগেই এই মরন ব্যাধি তাকে চেপে বসেছিল । তবে ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পরল এই কিছুদিন হল। ও আমার খুব ভাল বন্ধু ।

কিন্তু কেউ তাকে আমার মত করে চিনে না । তাকে নিয়ে আমার মত করে কেউ ভাবে না । ওর নাম অমিত। জীবন এখন অমিতের কাছে কেমন তা ও ছাড়া আর কেউই বলতে পারবে না । নিশ্চিত মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে জীবনের পোস্ট মরটেম করা আর দশ টা সাধারণ কাজের মত হতে পারে না ।

তবুও অমিত আমার সামনে অবিশ্বাসস্য একটা শক্তি আর চেতনা নিয়ে ঐ দিন ওর জীবনের ব্যাবচ্ছেদ করে আমাকে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছে ওর জীবনের নাড়ি- নক্ষত্র, রূপ -রেখা, আলো – অন্ধকার, সত্য – মিথ্যা গুলোকে । আমি বিস্মিত হয়ে দেখলাম জীবনের সমস্ত কল কব্জা, ভুল ভ্রান্তি, সাফল্য ব্যাথর্তা , হাসি কান্না , আনন্দ অশ্রু গুলোকে । ওর জীবনের সকল আক্ষেপ, সুখ- দুঃখ , চাওয়া –পাওয়া, হাসি কান্নার সব না বলা কিংবা একান্ত নিজস্ব কথাগুলো আমাকে বলেছিল । আর বলেছে আমি যেন ওর জীবন নিয়ে একটা গল্প লেখি । খুব ছোট ।

। যেন এক বারেই পড়ে শেষ করা যায় । সাথে সাথেই অমিত আমাকে রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের সংজ্ঞাসম বর্ষাযাপন কবিতাটা আমাকে শুনিয়ে দিল । “ছোট প্রান ছোট ব্যাথা ছোট ছোট দুঃখ কথা সহস্র বিসৃত রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি তারি দু চারিটি আস্রু জল নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে , শেষ হয়ে হইল না শেষ”। অমিত একদিন ভেবেছিল আত্ম হত্যা করবে ।

কিন্তু ভেবে দেখল এই কাজের চেয়ে অসুখে ভোগে কিংবা না খেয়ে অবদ্ধ ঘরে জীবনের স্বাদ উপভোগ করে, সমস্ত বাসনা সাঙ্গ করে আস্তে আস্তে কিংবা হঠাৎ করে মৃত্যুর অচেনা জগতে পাড়ি দেওয়া কিছুটা হলেও পরিপূর্ণতার স্বাদ দিবে । যে যত কিছুই বলুক না কেন মরতে তো তাকে একদিন হবেই । তাহলে সেই প্রান্তিক কালের আগেই মরে যেতে চাওয়ার চিন্তা অর্থহীন , অমূলক । যতই অসুস্তহ কিংবা অস্থির হোক না কেন একটা সাধারণ বিবেক বোধ মৃত্যু অবদি মানুষের থাকে । আর তাই অমিত নিজেকে এই কষ্টের জীবন থেকে নিজে মুক্তি দেয় নি ।

কারণ এটা কোন মানুষের কাজ হতে পারে না । এমন কি কোন প্রাণীর কাজও হতে পারে না । এর চেয়ে নিজের সব পরিচর কিংবা স্বভাব বদলে অন্য মানুষে কিংবা অন্য প্রানীতে পরিনিত হাওয়া অনেক ভাল । সেই বোধ শক্তি আছে বলেই অমিত আমার এত ভাললাগার, ভালবাসার মানুষ । তার চলে যাওয়া আমি মানতে পারব কিনা জানি না।

কারণ সে একাধারে আমার বন্ধু , আমার সহপাঠী , আমার আত্মার আত্মীয় , আমার অন্য রূপ , আমার অংশ বিশেষ । অমিতের মধ্যে এখন যে কথা গুলো ঘুরপাক করে বেড়াচ্ছে আর ওকে অস্থির করে দিয়ে যাচ্ছে তা বহু দিন আগেই রবীন্দ্রনাথ তার নিজের জীবনের প্রান্তে এসে বলেছিলেন । অমিতের মাঝেও এখন রবি ঠাকুরের বসবাস । সেও হয়ত মনে মনে বলছে, “প্রথম দিনের সূর্য প্রশ্ন করেছিল কে তুমি? মেলে নি উত্তর বৎসর বৎসর কেটে গেল শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল পশ্চিম সাগর তীরে নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় কে তুমি? পেল না উত্তর” অমিতের চোখ ভিজে এল । তবু দু চোখের পাতা গুলোকে এক করছে না ।

যেন সেই লোনা জল গড়িয়ে না পড়ে । এতে হয়ত ওর লজ্জা হত । এমন একজন মানুষ আর মাত্র কিছুদিন বেঁচে থাকবে , তারপর চিরতরে হারিয়ে যাবে । এই কথা ভাবতেই বুকের মধ্যে একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করি । মনে হয় যেন কেউ অতি সূক্ষ্ম একটা কাঁটা দিয়ে বুকের গভীরে কোথাও ঘা মেরে যায় ।

আমিত হয়ত কাঁদতে চেয়েছিল । কিন্তু পারছিল না । কারণ ও কাঁদতে জানে না । কাঁদতে চেয়েও কাঁদতে না পারার মত গোপন কষ্ট খুব কমই আছে মানুষের জীবনে । সেদিন অমিতকে দেখে কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমার মনটা বিষণ ভারী হয়ে উঠেছিল ।

বার বার মনে পরছিল তারাশঙ্করের কবি উপন্যাসের একটা কবিতা , “এই খোদ মোর মনে ভালবেসে মিটিল না স্বাদ কুলাল না জীবন জীবন এতো ছোট ক্যানে”। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.