আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামতলার রসগোল্লা, যশোর ।

অবুঝ ম্যান। কিচ্চু বুঝি নাই। সৌর্য কোন দিক দিয়া উত্থান হয় । হি হি । যশোরের শার্শা উপজেলার জামতলার মিষ্টির এখন দেশজোড়া খ্যাতি।

বিশেষ করে এখানকার রসগোল্লা এখন ‘গিফট আইটেমে’ পরিণত হয়েছে। ঢাকা কিংবা অন্য কোন জায়গা থেকে ভিআইপিরা আসলে তাদেরকে জামতলার রসগোল্লা দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। যাবার সময়ও বেঁধে দেয়া হয় কিছু মিষ্টি। রাজধানী শহরে নানা তদবিরের কাজ ছাড়াও বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য উপঢৌকন হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয় এই জামতলার মিষ্টি। যশোরের বিভিন্ন বেকারী ও ফাস্টফুডের দোকানেও বিশেষ ব্যবস্থায় জামতলার মিষ্টি সংরক্ষণ করা হয়।

যাতে অতিথি আপ্যায়নে গাড়িভাড়া ও সময় ব্যয় করে সুদূর জামতলায় না যাওয়া লাগে। কিন্তু যেখানেই সমস্যা সেখানেই যেমন সম্ভাবনা থাকে, তেমনি যেখানেই থাকে সুখ্যাতি, সেখানেই ঘটে নানা বিড়ম্বনা। তা ছাড়াও নামি দামী কোম্পানির মাল যখন লেবেল বদলে অবলীলায় ডুপ্লিকেট হয় তখন, খ্যাতি অর্জন করা যশোরের জামতলার রসগোল্লা কেন ‘ডুপ্লিকেট’ হবে না? খবর মিলেছে এখন এ সুস্বাদু মিষ্টি শুধু ডুপ্লিকেটই নয়, ‘ট্রিপলিকেট’ ছাড়াও আরো অনেক ভাগে হচ্ছে। এক অনুসন্ধানে মিলেছে জামতলার রসগোল্লা এখন বটতলা, আমতলা, বেলতলা, তালতলায়ও হয়। একেবারে তেতো ফলের নামকরণে হওয়া সূদূর ঢাকার নিমতলাতেও যশোরের জামতলার রসগোল্লা তৈরি হচ্ছে।

শুধু মোড়কে নিমতলীর জায়গায় জামতলা বসে যাচ্ছে। সম্প্রতি এক ভোজন বিলাসী যশোরের কোন মেহগনীতলার হোটেলে বসে জামতলার রসগোল্লা খেয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, জামতলার মিষ্টি আর কোন কোন তলায় হয়? সে প্রশ্নের মীমাংসা হয়নি। সকলেরই ‘হানড্রেড পার্সেন্ট’ গ্যারান্টি মেলে সর্বত্র। ‘রসগোল্লা’ নামটির সাথে জড়িয়ে আছে গল্পকার সৈয়দ মুজতবা আলীর নাম। কারণ রসগোল্লার স্বাদে আপ্লুত হয়ে তিনি লিখেছিলেন ‘রসগোল্লা’ রম্য রচনা।

যশোরের দোকানে দোকানে বিশেষ স্বাদ সমৃদ্ধ প্যাকেটকৃত এক ধরনের রসগোল্লা পাওয়া যায়, যা জামতলার মিষ্টি নামে পরিচিত। সে মিষ্টির স্বাদ সৈয়দ মুজতবা আলীর মত অনেককে মুগ্ধ করেছে। যশোরের শার্শা উপজেলার একটি জায়গার নাম জামতলা। এ জামতলা রসগোল্লার জন্যে বিখ্যাত। এখানে যে রসগোল্লা তৈরি করা হয় তাই জামতলার মিষ্টি নামে পরিচিত।

এ মিষ্টি এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করা হয়। মিষ্টি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে এ অঞ্চলের প্রায় শতাধিক পরিবারের জীবন জীবিকা জড়িত। এ মিষ্টি স্থানীয়ভাবে আবার ‘ সাদেক গোল্লা’ নামেও পরিচিত। কারণ এ বাজারের সাদেক আলীই এ মিষ্টির উদ্ভাবক। পঞ্চাশ বছর আগে সাদেক আলী প্রথম এ মিষ্টি বানানো শুরু করেছিলেন।

আজ সাদেক আলী বেঁচে নেই। কিন্তু তার উদ্ভাবিত মিষ্টি পুরোনো ঐতিহ্যকে ধারণ করে আজো সে খ্যাতি ধরে রেখেছে। জামতলার মিষ্টির ইতিকথা একটি বিশাল জামগাছের নিচে অর্ধশত বছর আগে একটি ছোট্ট বাজার গড়ে উঠেছিল। ঐ গাছের নিচে ছিল সাদেক আলীর একটি ছোট্ট চায়ের দোকান। সে সময়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো সাদেক আলীর।

একদিন একজন বৃদ্ধ এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন সাদেক আলীর কাছে। সেই বৃদ্ধ এক ধরনের স্পন্স জাতীয় রসগোল্লা তৈরির ফর্মূলা দিয়েছিলেন সাদেক আলীকে। সেটি ছিল পঞ্চাশের দশকের কথা। সেই থেকে সাদেক আলী মিষ্টি বানানো শুরু করেন। কথাগুলো জানান সাদেক আলীর ছেলে শাহজাহান কবির।

তিনি বলেন, প্রথম দিকে মিষ্টিটি স্থানীয়ভাবে নাম কাড়ে। পরবর্তীতে আশির দশকে মিষ্টিটি দেশ জোড়া খ্যাতি অর্জন করে। বর্তমান অবস্থা এখন জামতলা বাজারে ১২ থেকে ১৫ জন ব্যবসায়ী মিষ্টি উৎপাদন করছেন। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে তারা এ মিষ্টি উৎপাদন করেন। যে কারণে তারা পরিমিত পরিমাণে প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহার করেন না বলে দাবি করেন শাহজাহান কবির।

ফলে মিষ্টিটি পুরানো ঐতিহ্য হারাতে বসেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। শাহজাহানের এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মিষ্টির কারিগর ইউনুস আলী বলেন, ‘জামতলার মিষ্টি এখন আগের চেয়ে আরো উন্নত, আরো ঐতিহ্যমন্ডিত। ’ যে কারণে এ মিষ্টি এখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি হচ্ছে। খারাপ হলে বা মান হারালে নিশ্চয় আমদানিকারকরা মিষ্টিটি আমদানি করতেন না। ইউনুস আলী জামসেদ আলীর কারখানায় ৮/৯ বছর যাবত মিষ্টি তৈরি করছেন বলে জানান।

নিয়মিত জামতলার মিষ্টি খান এমন একজন হাফিজুর রহমান। পেশায় ট্রাক চালক। তিনি বলেন, এ মিষ্টির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে মিষ্টির পরিমাণ কম। যে কারণে ডায়োবেটিস রোগীরাও মিষ্টিটি খেতে পারেন। তিনি অভিযোগ তুলেছেন আগের তুলনায় মিষ্টিটি সাইজে অনেক ছোট হয়ে গেছে।

সাইজটি কেন বড় হচ্ছে না সেটিই বুঝি না। তারা মানুষকে ঠকাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। এ রকম অভিযোগ আরো অনেকের। প্রসার ও রপ্তানি ব্যবসাবাণিজ্য বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যারা এ এলাকায় আসতেন তারা এখানকার রসগোল্লার স্বাদে আপ্লুত হয়ে ফিরে যাওয়ার সময়ে কিছু মিষ্টি নিয়ে যেতেন। এখনো লোকজন ঐ কাজটি করেন।

মূলতঃ এভাবেই মিষ্টিটির প্রসার ঘটেছে। ৫ টাকা ও ১০ টাকা মূল্যের দুই সাইজের মিষ্টি বানানো হয়। যশোর শহরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের ছোট বড় দোকানগুলোতে এ মিষ্টি সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাট, বরিশাল, নওয়াপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপারিরা প্রতিদিন এ বাজারের মিষ্টি আমদানির জন্যে কিনতে আসেন। তাছাড়াও বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে ভারতের সীমান্তবর্তী লোকজন এখান থেকে মিষ্টি নিয়ে যান বলে একজন মিষ্টি ব্যবসায়ী জানান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.